| নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
জেড আই অর্ণব
আমার নিজেস্ব কোন পরিচয় নেই, সহজাতই আমি মানুষের ফ্রেমে বন্দী এক অজ্ঞাতনামা✔

০১
-যাযাবর চেনো?
:কেনো?
রুদ্র লম্বা দম নিয়ে কিছু একটা বলতে চেয়েও বললো না। যার উপস্থিতি গুরুত্ব পাচ্ছে না, তার কথায় কেউ আগ্রহ পাবে কিভাবে? মাথা দুলিয়ে ছেলেটা শুধু বললো,
-এমনি।
:কাফি আসে নি।
-সে আসতে পারবে না। আমাকে পাঠিয়েছে এই চিঠি দিয়ে।
রুদ্র পকেট থেকে একটা খাম বেড় করে দেয় ইশিতার দিকে। ইশিতা খামটি নিতে নিতে বললো,
:ও আসবে না কেন? কি সমস্যা ওর?
-প্রোজেক্টের কাজ চলছে।
:আচ্ছা, তবে উঠি।
ইশিতা উঠে চলে যাচ্ছে। রুদ্র মুচকি হেসে নিজেই নিজেকে বললো,
-তার আশেপাশে লক্ষ প্রহরী, তবু বারবার তার জন্যই মরি।
ম্লান আলোয় ইশিতা হারিয়ে গেছে। ফিরেও তাকায়'নি একবার। চিঠি পাবার পর ডাকপিয়নকে কেউই ফিরে দেখে না। এরা শুধু খুশি বয়ে বেড়ায়, খুশি হতে পারে না।
কাফি, রুদ্রের রুমমেট। একই ছাদের নিচে থাকলেও দুজনে বিস্তর ব্যবধান। কাফি গোছালো রোবটিক ছেলে। মোটা কাঁচের পেছনে একজোড়া মায়াহীন চোখ। ভ্রু ভাঁজ করা ছেলেটির ফর্সা গাল ক্লিন সেভড। অথচ রুদ্র তার উল্টো। আদ্র চোখে ফাঁকা দৃষ্টি দেখে মনে হবে “এই বুঝি ভেজা চোখ মুছে এলো”। শ্যামলা ছেলেটা বড্ড অগোছালো। যার কাজ বলতে সারা দিন ঘুম, তার আবার কিসের নিয়ম। পড়ালেখার পাঠ চুকিয়েছে সেই কবে, অথচ চাকরি নেবার তাড়া নেই। যার কেউ নেই, তার তাড়াও নেই। হবে সব ধীরে!
ইশিতা খাটের উপর পা তুলে বসেছে। হাতের মুঠোয় কাফি'র দেয়া হলদে খাম। সে ভাবছে, আজকাল কাফি কেমন বদলে যাচ্ছে। কল করলে পাওয়া যায় না। মেসেজের রিপ্লাই নেই, দেখা করতে বললেও অন্য কাউকে পাঠায়।
অন্যমনস্ক হয়ে ইশিতা খাম থেকে চিঠিটা বেড় করে। ঝকঝকে অক্ষরে কয়েকটি লাইন লিখা, কিন্তু এ হাতের লেখা কাফি'র না। তবে কার? রুদ্রের? ইশিতা পড়তে শুরু করে-
“মেঘের পর মেঘ করে যায়, বৃষ্টি থেমেই ঝড়
আলোর পর আঁধার এলেই ভাঙ্গে গলার স্বর।
একটা মেয়ে চুপটি করে মানিয়ে নেয় ভীষণ
ভালবেসে যে আগলে রাখে নড়বড়ে বাঁধন।”
মানুষ কি অদ্ভুত! যার কাছে আমরা নিছক একটা পরিচিত মুখ, তার জন্যই মায়া হয়। তাকে ভেবেই বিভোর হই সারাক্ষণ। ইশিতারও কাফি'র জন্য মায়া হয়, অভিমান হয়, ভীষণ রাগ হয়। তার জন্য সে এতো এতো উতলা, অথচ সে কেমন বেখেয়ালি। এমন নিরস একটা ছেলের প্রেমে সে কিভাবে পড়লো ভেবে পায় না। ইশিতা হাতের চিঠিটা আবার পড়লো, ঠিকি তো! সে'ই আগলে রাখছে ভালবাসা নামক নড়বড়ে বাঁধন। ইশিতা হাল ছেড়ে দিলে দু'দিনে মুখ থুবড়ে পড়বে এই সম্পর্ক। সে ভাবছে, রুদ্র হঠাৎ কেন এমন কবিতা দিল! কি উদ্দেশ্য তার!
০২
সোডিয়াম আলো খানিকটা চাঁদের আলোর মতো। ব্যবধান এই, স্ট্রিট লাইটের জিরো পয়েন্ট আছে, চাঁদের নেই। একটা ছেলে স্ট্রিট লাইটের জিরো পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছে বলে তার ছায়া পরছে না। অস্পষ্ট আলোয় মুখটা বোঝা না গেলেও ইশিতা বুঝতে পারে ছেলেটা রুদ্র। মাঝরাতে সে কেন বাড়ির সামনে আসবে! বার কয়েক উঁকিঝুঁকি দিয়ে দেখে, রুদ্র তার জানালার দিকেই তাকিয়ে আছে। কাফি'কে কল দিল সে, উত্তর নেই। মোবাইল ছুড়ে ফেলে বিরবির করে বলে, “এই ছেলেকে কখনই পাওয়া যায় না”। তখনই তার কাছে টুং করে একটা মেসেজ আসে। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত নম্বর।
-রাগ পড়ে গেলে বারান্দায় এসো।
ইশিতা বারান্দায় যায়। হালকা ঠান্ডা বাতাস তার রাগ কমাতে পারে'নি। সে দাঁত কটমট করতে করতে কল দিয়ে বলে,
:কী চাই?
-ভিখারির চাওয়া থাকে না, থাকে প্রত্যাশা।
:বিদায় হও, কেউ দেখে ফেললে কি ভাববে?
-দেখবে এক নিশাচর বেদুঈন ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে।
:কি সব আবোলতাবোল বলছো? বাড়ি যাও।
-একটা কবিতা লিখেছি, শুনবে?
:না, যাও তুমি।
-শুনলেই চলে যাবো।
:দ্রুত বলো
রুদ্র গলা খাকড়ি দিয়ে বলতে শুরু করে,
“কিছু স্মৃতি না হয় জমুক আমায় নিয়ে গোপনে,
রোজ রোজ না, হঠাৎ জল আসুক চোখের কোণে।
একলা বালিশ জানুক, এই মানুষকে ভীষণ-
ভালবেসেছিল সে ভুল সময়ে, কে জানে কখন!!”
রুদ্র রাতের আঁধার ফুঁড়ে চলে যাচ্ছে। একটি বারের জন্য পিছু ফিরে দেখি'নি। তাকালে দেখতো ইশিতা তখনো ফোন কানে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঘোর এখনো কাটে'নি।
অস্পষ্ট পা ফেলার শব্দে রুদ্র চট করে দাঁড়িয়ে যায়। পিছু ফিরে দেখে একটা লম্বা ছায়া চাঁদের ঘোরলাগা আলোয় তার দিকে এগিয়ে আসছে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। ছায়াটা কাফি'র। হঠাৎ যেন সব স্তব্ধ হয়ে গেল, থেমে গেল সমস্ত তাড়াহুড়ো। দূরে কোথাও একটা নিশাচর কুকুর ডেকে উঠলে রুদ্র নীরবতা ভাঙে। সে মলিন স্বরে বলে,
-কাফি!
:কোথায় যাচ্ছিস?
-হাঁটছি, তুই কোথা থেকে?
:ইশিতার কাছে এসেছিলাম।
-এতো রাতে?
:তুই আসলে আমি আসতে পারি না?
চমকে উঠে রুদ্র। কি বলবে সে, সে কি বলবে “বন্ধুর প্রেমিকার প্রেমে পড়েছে?”। এতটা স্বার্থপর সে হতে পারে? কেন জানি তার নিজের উপর হঠাৎ ঘৃণা চলে আসছে। দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে তার। সে কিভাবে এতোটা নিচে নামতে পারলো? রুদ্রের নীরবতা দেখে কাফি আবার বলে-
:ভালবাসিস?
রুদ্র “হ্যাঁ” বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। আদ্র হাসি দিয়ে বললো,
-না।
:তবে এই সব পাগলামি কেন?
-অর্থহীন কত কিছুই মানুষ তার জীবনে করে বেড়ায়।
:সোজা-সাপটা বল।
-কিছু উত্তর অজানা থাক না।
:ইশিতা তোকে ভালবাসে?
-ভালবাসা একবার আসে, বার-বার না।
:তবে তোর জন্য তার চোখে জল কেন?
-তুই থেকেও সে একলা ভীষণ।
:তোর চোখ তবে কেন চকচক করছে?
-মায়াতে। মায়া আর ভালবাসা এক না।
কাফি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে কেশে উঠে। থু করে একদলা থুতু ফেলে হাসতে হাসতে বলে,
:চল। অনেক রাত।
-তুই যা। আমার দেড়ি হবে।
রুদ্র আবার হাঁটতে শুরু করে। চলতে চলতে ভাবছে গল্পটা অন্যরকম হলেও পারতো। ইশিতা তার প্রেমে পড়তে পারতো। রাতের গভীরে তার সাথে বেড়িয়ে আসতে পারতো। রাতের শেষ ট্রেনে তারা চলে যেতে পারতো অজানায়, দূরে... বহুদূরে। রুদ্র কল্পনায় তলিয়ে যায়…
“হেলে দুলে চলছে ট্রেন। ট্রেনের খোলা জানালা গলে আসা হিমেল বাতাসে মেয়েটির কিছু চুল অবাধ্য হয়ে চোখে-মুখে পড়ছে। মেয়েটি কেমন ফাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে বাইরে। রুদ্র মেয়েটির হাত নিজের কোলে নিয়ে বললো,
-ইশিতা?
মেয়েটি উত্তর দিল না। না ফেরালো চোখ। অদূরে ভোরের ঈষৎ লাল আভায় ইশিতার চোখ চকচক করছে। রুদ্র আবার বলে,
-মন খারাপ?
:না!
-কি ভাবছো?
:তুমি আমি যাচ্ছি কোথায়?
-এই চোখ হবে সীমানা।
:এই যে সব ছেড়ে যাচ্ছি, এটা কি ঠিক হচ্ছে?
-হিসেব কষে কী আর ভালবাসা হয়?
:ভালবাসবে আমায়?
-উঁহু…
:কেন?
-গন্তব্য সামনে ভেবে হাজার মাইল হাঁটা যায়। পেয়ে গেলে বড় ক্লান্ত লাগে।”
রাতের শেষ ট্রেন শিস বাজালে রুদ্রের ভ্রম কাটে। ফিরতি পথে চোখ বুলিয়ে সে মৃদু হাসে। তারপর উঠেপড়ে ট্রেনে। চলতে থাকে ট্রেন। পড়ে থাকে শূন্য একা প্লাটফর্ম।
২৩০২২২০১
-একটা কবিতা লিখেছি, শুনবে?
:না, যাও তুমি।
-শুনলেই চলে যাবো।
:দ্রুত বলো
রুদ্র গলা খাকড়ি দিয়ে বলতে শুরু করে,
“কিছু স্মৃতি না হয় জমুক আমায় নিয়ে গোপনে,
রোজ রোজ না, হঠাৎ জল আসুক চোখের কোণে।
একলা বালিশ জানুক, এই মানুষকে ভীষণ-
ভালবেসেছিল সে ভুল সময়ে, কে জানে কখন!!”
রুদ্র রাতের আঁধার ফুঁড়ে চলে যাচ্ছে। একটি বারের জন্য পিছু ফিরে দেখি'নি। তাকালে দেখতো ইশিতা তখনো ফোন কানে চেপে দাঁড়িয়ে আছে। তার ঘোর এখনো কাটে'নি।
অস্পষ্ট পা ফেলার শব্দে রুদ্র চট করে দাঁড়িয়ে যায়। পিছু ফিরে দেখে একটা লম্বা ছায়া চাঁদের ঘোরলাগা আলোয় তার দিকে এগিয়ে আসছে। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। ছায়াটা কাফি'র। হঠাৎ যেন সব স্তব্ধ হয়ে গেল, থেমে গেল সমস্ত তাড়াহুড়ো। দূরে কোথাও একটা নিশাচর কুকুর ডেকে উঠলে রুদ্র নীরবতা ভাঙে। সে মলিন স্বরে বলে,
-কাফি!
:কোথায় যাচ্ছিস?
-হাঁটছি, তুই কোথা থেকে?
:ইশিতার কাছে এসেছিলাম।
-এতো রাতে?
:তুই আসলে আমি আসতে পারি না?
চমকে উঠে রুদ্র। কি বলবে সে, সে কি বলবে “বন্ধুর প্রেমিকার প্রেমে পড়েছে?”। এতটা স্বার্থপর সে হতে পারে? কেন জানি তার নিজের উপর হঠাৎ ঘৃণা চলে আসছে। দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে তার। সে কিভাবে এতোটা নিচে নামতে পারলো? রুদ্রের নীরবতা দেখে কাফি আবার বলে-
:ভালবাসিস?
রুদ্র “হ্যাঁ” বলতে চেয়েও বলতে পারলো না। আদ্র হাসি দিয়ে বললো,
-না।
:তবে এই সব পাগলামি কেন?
-অর্থহীন কত কিছুই মানুষ তার জীবনে করে বেড়ায়।
:সোজা-সাপটা বল।
-কিছু উত্তর অজানা থাক না।
:ইশিতা তোকে ভালবাসে?
-ভালবাসা একবার আসে, বার-বার না।
:তবে তোর জন্য তার চোখে জল কেন?
-তুই থেকেও সে একলা ভীষণ।
:তোর চোখ তবে কেন চকচক করছে?
-মায়াতে। মায়া আর ভালবাসা এক না।
কাফি সিগারেটে লম্বা টান দিয়ে কেশে উঠে। থু করে একদলা থুতু ফেলে হাসতে হাসতে বলে,
:চল। অনেক রাত।
-তুই যা। আমার দেড়ি হবে।
রুদ্র আবার হাঁটতে শুরু করে। চলতে চলতে ভাবছে গল্পটা অন্যরকম হলেও পারতো। ইশিতা তার প্রেমে পড়তে পারতো। রাতের গভীরে তার সাথে বেড়িয়ে আসতে পারতো। রাতের শেষ ট্রেনে তারা চলে যেতে পারতো অজানায়, দূরে... বহুদূরে। রুদ্র কল্পনায় তলিয়ে যায়…
“হেলে দুলে চলছে ট্রেন। ট্রেনের খোলা জানালা গলে আসা হিমেল বাতাসে মেয়েটির কিছু চুল অবাধ্য হয়ে চোখে-মুখে পড়ছে। মেয়েটি কেমন ফাঁকা চোখে তাকিয়ে আছে বাইরে। রুদ্র মেয়েটির হাত নিজের কোলে নিয়ে বললো,
-ইশিতা?
মেয়েটি উত্তর দিল না। না ফেরালো চোখ। অদূরে ভোরের ঈষৎ লাল আভায় ইশিতার চোখ চকচক করছে। রুদ্র আবার বলে,
-মন খারাপ?
:না!
-কি ভাবছো?
:তুমি আমি যাচ্ছি কোথায়?
-এই চোখ হবে সীমানা।
:এই যে সব ছেড়ে যাচ্ছি, এটা কি ঠিক হচ্ছে?
-হিসেব কষে কী আর ভালবাসা হয়?
:ভালবাসবে আমায়?
-উঁহু…
:কেন?
-গন্তব্য সামনে ভেবে হাজার মাইল হাঁটা যায়। পেয়ে গেলে বড় ক্লান্ত লাগে।”
রাতের শেষ ট্রেন শিস বাজালে রুদ্রের ভ্রম কাটে। ফিরতি পথে চোখ বুলিয়ে সে মৃদু হাসে। তারপর উঠেপড়ে ট্রেনে। চলতে থাকে ট্রেন। পড়ে থাকে শূন্য একা প্লাটফর্ম।
২৩০২২২
২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:২৬
জেড আই অর্ণব বলেছেন: প্রেম মানুষকে গাধা করে সত্যি! এক কেন্দ্রিক চিন্তাধারাও তৈরি করে।
২|
২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৩:১৪
গেঁয়ো ভূত বলেছেন:
শায়মা বলেছেন: প্রেমে পড়লে মানুষ গাধা হয়।
এই তিনটারও তাই হয়েছে।
গাধারা প্রেমে পড়লে কি হয়?
মানুষ হয়?
২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:২৭
জেড আই অর্ণব বলেছেন: বুদ্ধিমান গাধা
৩|
২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৪:০৩
ভার্চুয়াল তাসনিম বলেছেন: ০২ খুব ভালো লাগলো।
২০ শে মে, ২০২২ বিকাল ৫:২৮
জেড আই অর্ণব বলেছেন: ভাই. ❤
৪|
২১ শে মে, ২০২২ রাত ১:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: সোডিয়াম আলো আর নিয়ন আলো কি একই জিনিস?
©somewhere in net ltd.
১|
২০ শে মে, ২০২২ দুপুর ১:১৭
শায়মা বলেছেন: প্রেমে পড়লে মানুষ গাধা হয়।

এই তিনটারও তাই হয়েছে।