![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন
বাজারের একপাশে একটা তাল গাছ। পুষ্পর ওড়না কেড়ে নিয়ে চেয়ারম্যানের ছেলে ওর বখাটে বন্ধুদের সাথে তাল গাছের নিচে আড্ডা দিচ্ছিলো। জব্বার ছুটে গিয়ে প্রথমে চেয়ারম্যানের ছেলের হাত থেকে ওড়না কেড়ে নেয়। তারপর লাঠি দিয়ে সবাইকে এলোপাথারি মারা শুরু করে। চেয়ারম্যানের ছেলের সাথে আরো ছয়জন বখাটে ছেলে ছিলো। ওরাও জব্বারকে মারতে থাকে। কিন্তু জব্বারের প্রচন্ড শক্তির কাছে ওরা কুলিয়ে উঠতে পারে না। মারামারির এক পর্যায়ে জব্বার মট্ মট্ করে চেয়ারম্যানের ছেলের দুটো হাতই ভেঙ্গে দেয়। বাকিরা ভয় পেয়ে পালিয়ে যায়। চেয়ারম্যানের ছেলে ভাঙ্গা হাত নিয়ে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে থাকে। আর জব্বার পা দিয়ে একের পর এক ওর শরিরে প্রচন্ড লাথি দিতে থাকে। এমন সময় রুদ্ররা জব্বারের কাছে পৌছে যায়। সবাই মিলে জব্বারকে সরিয়ে আনে। জব্বার চিতকার করে বলতে থাকে- ছেড়ে দাও আমাকে। শুয়োরটাকে আজ আমি মেরেই ফেলবো।
জব্বারকে বুঝিয়ে বাড়ি আনে ওরা। সব কিছু শুনে রুস্তম সর্দার ভয় পেয়ে যান। চেয়ারম্যানের গুন্ডা বাহিনি আছে। ছেলের হাত ভাঙ্গার খবর শুনলে তিনি রুস্তম সর্দারের পিছনে গুন্ডা বাহিনি লেলিয়ে দিবেন। হয়তো জব্বারকে পুলিশে ধরিয়ে দিবেন। চেয়ারম্যানের ছেলেকে উচিত শিক্ষাই দিয়েছে জব্বার। কিন্তু জব্বারের এখন কি হবে? রুস্তম সর্দার এখন কি করবেন কুলকিনারা খুজে পান না। ছেলেকে বললেন- তুই কয়েক দিন পালিয়ে থাক। তারপর পরিস্থিতি ঠিক হলে ফিরে আসিস।
রুদ্র বাধা দিয়ে বললো- রুস্তম ভাই কেন পালিয়ে থাকবেন? উনি যা করেছেন ঠিকই করেছেন। চিন্তা করবেন না সর্দার। চেয়ারম্যান আপনার কিছু করতে পারবে না।
সর্দার বললেন- তুমি ওদেরকে চেনো না বাবা। ওরা পাখি মারার মতো মানুষ মারে। ওরা ভয়ংকর।
বাহাদুর ওস্তাদ বললেন- ওরা কতোটা ভয়ংকর সেটা আপনি জানেন সর্দার। কিন্তু এরা কতোটা ভয়ংকর সেটা আপনি জানেন না। রুদ্রদেরকে দেখিয়ে দিলেন বাহাদুর ওস্তাদ।
রুস্তম সর্দার রুদ্রের দিকে তাকালেন। জব্বারের সাথে রুদ্রের কুস্তি লড়াইটা তার চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এবার আর অবহেলার দৃষ্টিতে তাকাতে পারলেন না। বাহাদুর ওস্তাদের কাছে জানতে চাইলেন- কে এরা?
বাহাদুর ওস্তাদ রুদ্রদের পরিচয় দিলেন। রুস্তম সর্দার রুদ্রের নানা বোরহান উদ্দিনকে না দেখলেও নাম শুনেছেন অনেক। বোরহান উদ্দিনের কথায় বাঘে মহিষে এক ঘাটে জল খায় সেটাও তিনি শুনেছেন। বললেন- এটা তো আগেই বলতে পারতে!
রুদ্র বললো- আমরা সাধারনত কাউকে নানুর পরিচয় দেই না।
- তুমি যা কুস্তি জানো তাতে তোমার খুব একটা টিপসের প্রয়োজন নেই। তারপরেও আমি তোমার ছোটখাটো ভুলগুলো শুধরিয়ে দিবো। আগে পরিস্থিতিটা ঠিক হোক, তারপর তোমাকে প্রশিক্ষন দিবো।
- আমার সময় নেই সর্দার। আপনি রাজি থাকলে আমি কাল থেকেই আপনার কাছে প্রশিক্ষন নিতে চাই। আর চেয়ারম্যানকে নিয়ে আপনার ভাবতে হবে না, ওটা আমি দেখছি। আপনার কাছে চেয়ারম্যানের আসতে মনে হয় আরো দেরি হবে। তাই আমরাই ওনার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি।
চেয়ারম্যানের বাড়ি এসে রুদ্ররা ওনাকে পেলো না। তবে জানতে পারলো তার ছেলেকে সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, অবস্থা ভালো নয়। চেয়ারম্যান সকালে ইউনিয়ন পরিষদে গিয়েছেন। ইউনিয়ন পরিষদে এসে রুদ্ররা জানতে পারলো ছেলেকে দেখার জন্য তিনি সদর হাসপাতালে গেছেন। যাওয়ার আগে তার গুন্ডা বাহিনিকে রুস্তম সর্দারের বাড়ি ঘিরে রাখার জন্য বলে গেছেন, যাতে জব্বার পালিয়ে যেতে না পারে। হাসপাতাল থেকে ফিরে হয়তো জব্বারের ব্যবস্থা করবেন। ওরা এবার শহরে চলে এলো। হাসপাতালে এসে জানতে পারলো, চেয়ারম্যানের ছেলের হাত পুরোপুরি ভালো না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। ডান পাটাও ভেঙ্গে গেছে। চেয়ারম্যান থানায় গেছেন। রুদ্ররা এবার থানায় এলো। দারোগা সাহেবের রুমে চেয়ারম্যানকে পাওয়া গেলো। রুদ্রদের দেখে দারোগা মহব্বত আলি বসতে দিলেন। উনি নামেই মহব্বত, অপরাধির কাছে যমের চেয়ে কোন অংশে কম নন। দারোগা চেয়ারম্যানের সাথে রুদ্রদের পরিচয় করিয়ে দিলেন। চেয়ারম্যানের নাম মনিরুল পাটোয়ারি। ভুরি সর্বোস্ব লোক। মাথায় টাক। কালো বদখত চেহারা। চোখ দুটো শেয়ালের মতো ধুর্ত। দারোগা মহব্বত আলি বললেন- আরশাদ এসেছিলো। আমরা ঢাকা থেকে এক জন আর্টিস্ট এনেছিলাম, খুনের সময় যে অপরিচিত লোকদের জুয়ার ওখানে দেখা গিয়েছিলো তাদের স্কেচ আকার জন্য। তিন জনের স্কেচ আকা সম্ভব হয়। আরশাদ স্কেচগুলোর কপি নিয়ে গেছে।
- এ সব পরে শুনবো আংকেল। আগে চেয়ারম্যানের কাহিনিটা শুনি।
- চেয়ারম্যানের ছেলেকে আজ জব্বার নামের একজন ছেলে পিটিয়ে হাতপা ভেঙ্গে দিয়েছে। উনি এসেছেন ওটার অভিযোগ জানাতে।
- অভিযোগ জানাতে এসেছেন নাকি আপনাদেরকে বলতে এসেছেন, উনি জব্বারকে যাই করুক না কেন আপনারা যেনো না দেখার ভান করে থাকেন?
চেয়ারম্যান হুংকার ছেড়ে বললেন- ওই জানোয়ারটাকে আমি ছাড়বো না। খুন করবো।
- কেন খুন করবেন? আপনার ছেলেকে জব্বার নিশ্চয়ই এমনি মারে নি। কি করেছিলো আপনার ছেলে?
- আমার ছেলে কিছু করে নি। জব্বারের বোন আমার ছেলেকে ডিস্টার্ব করছিলো। অনেক দিন থেকেই আমার ছেলেকে ফাদে ফেলার চেষ্টা করছিলো বজ্জাত মেয়েটা। বাজে মেয়ে একটা। আজ পাত্তা না পেয়ে বাপভাইকে গিয়ে বলেছে আমার ছেলে নাকি ওকে টিজ করেছে। আরো হয়তো বানিয়ে বানিয়ে অনেক কিছু বলেছে। সে সব শুনে জব্বার আমার ছেলের হাতপা ভেঙ্গে দেয়।
- বিশ্বাসযোগ্য হলো না চেয়ারম্যান সাহেব। আপনার মতো হিংস্র জানোয়ারের বখে যাওয়া নেশাখোর ছেলের পিছনে কোন মেয়ে ঘুরবে না। আর এটুকুর জন্য আপনার ছেলেকে মারার সাহসও কেউ করবে না।
রুদ্র চেয়ারম্যানকে জানোয়ার বলায় চেয়ারম্যান যেমন স্তম্ভিত হয়ে পড়লেন তেমনি দারোগাও কম বিষম খেলেন না। চেয়ারম্যান রাগে দাত পিষে বললেন- তোমার এতো বড় স্পর্ধা। আমাকে গালি দিচ্ছো!
- শুধু গালি নয়, জব্বারকে একটা টোকা দিলে আপনার অস্তিত্ব থাকবে না। মনে রাখবেন জব্বারের পিছনে আমরা আছি।
- ওই শুয়োরের বাচ্চা আমার ছেলের হাতপা ভেঙ্গে দিয়েছে। ডাক্তার বলেছে আমার ছেলের হাত কখনোই পুরোপুরি ভালো হবে না। আর তুমি বলছো আমি যেনে ওকে কিছু না করি!
- হ্যা, তাই বলছি। যদি নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চান তাহলে জব্বারকে কিছু করা চলবে না। জব্বারের জায়গায় আমি হলে আপনার ছেলের হাতদুটো কেটে ফেলতাম।
- আমি জব্বারকে খুন করবো, দেখি তুমি কি করো?
- জব্বারকে যা করবেন আপনার ছেলেকেও আমি ঠিক তাই করবো। পরিক্ষা করে দেখতে পারেন। পুলিশ কিছুই করবে না। তবে আপনার জন্য সব চেয়ে ভালো হয়, জব্বারকে কিছু করার আগে আমার সাথে লড়ে দেখুন। আপনার যতো ক্ষমতা আছে সব আমার উপরে প্রয়োগ করুন। আগে আমাকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা করুন। যদি আমাকে হারাতে পারেন তাহলে পরে জব্বারকে যা ইচ্ছা তাই করুন। অন্যথায় জব্বারকে কিছু করার পরে যদি দেখেন আমার সাথে আপনি কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তাহলে ছেলেকে তো হারাবেনই, নিজেও ধবংস হয়ে যাবেন।
দারোগা মহব্বত আলি কথা বলে উঠলেন এবার- রুদ্র, তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে তুমি ঘটনাটা জানো। একটু বলো তো ঠিক কি হয়েছে?
- চেয়ারম্যানের ছেলে ভরা বাজারের মধ্যে দিনদুপুরে জব্বারের বোন পুষ্পর ওড়না কেড়ে নিয়েছে। পুষ্পকে বাধ্য করেছে বাজারের সমস্ত লোকদের সামন দিয়ে ওড়না ছাড়া বাড়ি ফিরতে। বোনের এ ধরনের অপমান কোন্ ভাই সহ্য করবে? চেয়ারম্যানের ছেলের মতো জানোয়ারদেরকে খুন করা উচিত। এদের কারনে আমাদের মাবোনেরা আজ রাস্তায় নিরাপদে চলতে পারে না। আপনার বোন বা স্ত্রিকে কেউ এমন করলে আপনি কি করতেন দারোগা সাহেব?
- চেয়ারম্যানতো আমাকে এটা বলেন নি! কি ব্যাপার চেয়ারম্যান?
- ও যা বলছে সব মিথ্যে।
- যখন এ ঘটনা ঘটে তখন আমরা রুস্তম সর্দারের বাড়িতেই ছিলাম। আমরা দৌড়ে গিয়ে যদি জব্বারকে না সরাতাম তাহলে আপনার ছেলে লাশ হয়ে পড়ে থাকতো। যাই হোক, আপনার ছেলে উচিত সাজা পেয়েছে। তাই আপনার ছেলেকে আমরা কিছু করছি না। তবে ভবিষ্যতে যদি কখনো ভুল করেও কিছু করে তবে ওর হাতপা কেটে ফেলবো আমি। আর আপনি, এক সপ্তাহের মধ্যে চেয়ারম্যানের পদ থেকে পদত্যাগ করবেন। আপনার মতো জানোয়ার, বিশ্বাসঘাতকেরা জনগনের প্রতিনিধি হতে পারে না। যদি আমাদের বিষয়ে পুরোপুরি না জানেন তবে নিজ দায়িত্বে জেনে নিবেন। পদত্যাগ না করলে আমরা আপনাকে পদত্যাগে বাধ্য করবো। তখন আপনার সমস্ত অপকর্মের হিসেব হবে এবং আপনাকে জেলে থাকতে হবে। পদত্যাগের জন্য এক সপ্তাহ সময় দিলাম কারন এই এক সপ্তাহ আপনার আস্থাভাজনদের কাছে ঘুরে দেখুন আমি যা বললাম সেটা আমরা করতে পারবো কিনা? তারপর সিদ্ধান্ত নিবেন পদত্যাগ করবেন নাকি সব হারিয়ে জেলের ভাত খাবেন? দারোগাকে লক্ষ্য করে রুদ্র বললো- আমাদের বিষয়ে ওনাকে একটু জানিয়ে দিবেন আংকেল। আজ আসি। আরশাদ ভাইকে স্কেচগুলো দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।
- ঠিক আছে। আমি চেয়ারম্যানকে বুঝিয়ে বলছি।
থানা থেকে বেড়িয়ে ক্যারাটে মাষ্টারের সাথে দেখা করলো ওরা। ক্যারাটে মাষ্টার রুদ্রকে প্রশিক্ষন দেয়ার জন্য রাজি হলেন। ঠিক হলো, রুস্তম সর্দারের সাথে কুস্তির প্রশিক্ষনের সময় ঠিক করে ক্যারাটে প্রশিক্ষনের সময়টা ক্যারাটে মাষ্টারকে জানিয়ে দেয়া হবে।
এরপর রুদ্ররা বাড়ি চলে এলো। বাহাদুর ওস্তাদ দুপুরে এখানেই খেলেন। তাকে বিদায় দেয়ার সময় রুদ্র কাল সকালে আবার আসতে বললো। তাকে নিয়ে সকালে রুস্তম সর্দারের বাড়ি যেতে চায় ও। রুদ্র কোন রিস্ক নিতে চায় না। রাস্তায় চেয়ারম্যানের লোকেরা যে আক্রমন করবে না তার নিশ্চয়তা নেই। কোন সমস্যা না হলে কাল থেকেই রুস্তম সর্দারের কাছে কুস্তির প্রশিক্ষন নিতে চায় ও। রুদ্র চায়, চেয়ারম্যান মনিরুল পাটোয়ারি নিজ থেকেই পদত্যাগ করুক। যদি সে নিজ থেকে পদত্যাগ না করে তাহলে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করার জন্যও রুদ্রকে ছক কষতে হবে। কিন্তু এই মুহুর্তে চন্দ্রকে উদ্ধার করা ছাড়া অন্য কিছুতে জড়িয়ে পড়তে চায় না ও। তবে চেয়ারম্যান যদি নিজ থেকে পদত্যাগ না করে তবে ছক তো কষতেই হবে। আর ছকটা বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব অন্য কাউকে দিতে হবে, ও সময় দিতে পারবে না। নানুর সাথেও এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলা দরকার। ও আশা করছে, চেয়ারম্যান যার কাছেই যাক না কেন সাহায্য পাবে না। দারোগা যদি ভালো করে বোঝাতে পারে তাহলে চেয়ারম্যান স্বিয় পদে থেকে যন্ত্রণা সহ্য করার চেয়ে পদত্যাগটাই হয়তো বেছে নিবে।
বিকেল হয়ে গেছে। আজ আর জঙ্গলের গুপ্তগুহায় যাওয়া হলো না। রাজকিয় দরজার লকটা খোলা জরুরি। দরজার ওপাশে কি আছে সেটা জানা দরকার। লকটা খোলার জন্য একটা প্যাটার্ন ধরে এগুচ্ছো ও। কিন্তু এভাবে লকটা খুলতে কত বছর সময় লাগবে তার ঠিক নেই। সুত্র না পেলে লকটা আদৌ ও খুলতে পারবে কিনা সেটারও নিশ্চয়তা নেই। আর দরজাটা যেভাবে তৈরি তাতে ওটা ভাঙ্গাও যাবে না। গ্রেনেড ব্যবহার করে ভাঙ্গা যাবে কিনা সে বিষয়েও ওর সন্দেহ আছে। দেখা গেলো, গ্রেনেড ব্যবহার করে দরজা তো ভাঙ্গলোই না উপরন্তু পুরো গুহা ভেঙ্গে গিয়ে ওরা আটকা পড়ে গেলো। নাহ্! লকটা খোলার জন্য সুত্র খুজে পেতে হবে। আর যতো দিন সুত্র খুজে না পেয়েছে ততোদিন প্যাটার্নটাকেই অনুসরন করতে হবে। পাচটি বৃত্তকে বারবার বিচ্ছিন্নভাবে না বসিয়ে একটা প্যাটার্ন ধরে এগুনোই ভালো। তাতে সময় লাগলেও বোঝা যাবে কাজ এগুচ্ছে।
আরশাদ থানা থেকে স্কেচ নিয়ে এসে আবার বেড়িয়ে পড়েছে। চোর, পকেটমার, তালাচাবির মেকারদের খোজে যাদেরকে রুমন লাগিয়েছে তারা কতটা কি করতে পেরেছে সেটা জানার জন্য রুমনও বেড়িয়ে পড়লো। বাড়িতে পুরুষ মানুষ বলতে এখন শুধু রুদ্র আর আবুল। আবুলকে রুমে বিশ্রাম নিতে বলে মার সাথে দেখা করলো রুদ্র। ফারহানা বেগম বিছানায় শুয়ে ছিলেন। উনি অনেক ক্লান্ত। চোখের নিচে কালি পড়েছে। চোখ মুখ শুকনো। শরির ভেঙ্গে পড়েছে। খাটের সাথে স্যালাইন ঝুলানো। তবে এখন স্যালাইন দেয়া হচ্ছে না। উনি কিছুই খেতে পারছেন না। জোর করে কিছু খাওয়ানো হলে পরে বমি করে ফেলে দিচ্ছেন। ছেলেকে দেখে করুন স্বরে বললেন- চেহারার একি হাল করেছিস! কোথায় থাকিস বাবা!
মায়ের শিয়রে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে রুদ্র বললো- নিজের চেহারাটা একটু দেখো মা। এভাবে থাকলে হবে? তোমাদের চন্দ্রকে আমরা ঠিকই খুজে বেড় করবো। একটু সময় তো দিবে?
ফারহানা বেগম ছেলের হাত ধরে বললেন- যে মেয়েটাকে না দেখে আমাদের এক মুহুর্তও কাটতো না, তাকে আজ কতো দিন ধরে দেখি না রে! আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। ওকে বুকের ভিতরে ভিষন জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে।
ফারহানা বেগমের দুচোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। রুদ্র মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো- ভেঙ্গে পড়ো না মা, আরেকটু সময় দাও। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করো। তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। আমরা সবাই চন্দ্রকে খুজছি। ওকে নিশ্চয়ই তোমার বুকে নিয়ে এসে দিবো, চিন্তা করো না।
- কবে তোরা ওকে আনবি?
- আনবো মা, তাড়াতাড়ি আনবো। তুমি যদি এভাবে ভেঙ্গে পড়ো তাহলে তোমাকে দেখে আমরাও ভেঙ্গে পড়বো। তুমি সুস্থ হয়ে আমাদেরকে অনুপ্রেরনা দাও, আমাদেরকে দিকনির্দেশনা দাও, দেখবে চন্দ্রকে আমরা তাড়াতাড়ি খুজে বেড় করবো। আর এভাবে না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তুমি আমাদেরকে দিকনির্দেশনাও দিতে পারছো না, অনুপ্রেরনাও দিতে পারছো না। আর আমরাও তোমার চিন্তায় সব সময় অস্থির থাকছি, চন্দ্রকে ঠিক মতো খুজবো কি করে?
রুদ্রের কথায় কাজ হলো। রুদ্র ওর মাকে বোঝাতে চেয়েছিলো, চন্দ্রকে খুজে বেড় করার জন্যই তাকে সুস্থ থাকতে হবে। চন্দ্রের জন্য এ বাড়ির সবাই যে কোন অসাধ্যকেও সাধ্য করতে পারে। ফারহানা বেগম কিছুক্ষন ভেবে বললেন- তুই ঠিক বলেছিস বাবা। আমাকে সুস্থ থাকতে হবে।
- হ্যা মা, তুমি সুস্থ না হলে চন্দ্রকে খুজে পেতে যেমন দেরি হবে তেমনি এ বাড়ির সবাই দিন দিন আরো চরম অসুস্থ হয়ে যাবে। তুমি সুস্থ হয়ে ওদেরকে একটু বোঝাও, দেখবে ওরাও সুস্থ হয়ে উঠবে।
- কিন্তু আমি যে খেতে পারি না!
- এতো টেনশন করলে কেউ খেতে পারে? এ বাড়ির অন্যদেরকে সুস্থ করার জন্য, চন্দ্রকে খুজে পাওয়ার জন্যই তোমাকে টেনশনমুক্ত থাকার চেষ্ঠা করতে হবে।
- চন্দ্রকে না পাওয়া পর্যন্ত আমি কি করে টেনশনমুক্ত থাকবো!
- পুরোপুরি টেনশনমুক্ত থাকতে না পারলেও একটু কমাও। টেনশন একটু কমালেই তুমি খেতে পারবে, তখন আর বমি হবে না।
- দেখি চেষ্টা করে।
- হ্যা চেষ্টা করো। দেখবে ধিরে ধিরে সুস্থ হয়ে উঠবে।
- তোর খুব কষ্ট হচ্ছে রে, তাই না?
- হ্যা মা।
- কোন্ অমানুষ আমাদের চন্দ্রকে কিডন্যাপ করলো? কার কি ক্ষতি করেছিলো অতটুকু মেয়ে?
- জানি না মা। তবে জানি আমরা কারো ক্ষতি করি নি, তাই চন্দ্রেরও কেউ কোন ক্ষতি করতে পারবে না। যে সমস্যাটা সৃষ্টি হয়েছে সেটা সাময়িক, খুব তাড়াতাড়িই সব ঠিক হয়ে যাবে।
ফারহানা বেগম ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন- মনে হচ্ছে তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস। বড়দের মতো কথা বলছিস। এখন মাকেও বোঝাতে পারিস।
- আমি কি এখনো ছোটটি আছি!
- কি আর বড় হয়েছিস? বয়সের চেয়ে তোর কথা, বুদ্ধি অনেক পরিপক্ক হয়েছে। তোর নানু তো এ জন্যই চন্দ্রের সাথে তোর বিয়ে দিয়েছে। তুই আমার বৌমাকে তাড়াতাড়ি খুজে এনে দে।
- দিবো মা, দিবো। তুমি শুধু তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে ওঠো। আর সবাইকে সুস্থ করে তোলো।
- ঠিক আছে, আমি চেষ্ঠা করবো। এখন বুঝতে পারছি আমি সুস্থ না হলে তোরাও অসুস্থ হয়ে যাবি। এই কয়েক দিনেই চেহারার কি হাল বানিয়েছিস তুই?
- তুমি এভাবে সব সময় শুয়ে থেকো না, একটু হাটাহাটি করো। আমি এখন যাচ্ছি।
- এখন আবার কই যাবি?
- না গেলে চন্দ্রকে কি করে তোমাকে এনে দিবো?
- তাহলে যা।
মায়ের মাথায় আরেকটু হাত বুলিয়ে দিয়ে বেড়িয়ে এলো রুদ্র। মায়ের টেনশন একটু হলেও কমলো। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? চন্দ্রকে পেতে আরো কতো দিন লাগবে? চন্দ্র এ বাড়ির সবারই প্রান। সেই প্রানকে না পেলে এদেরকে ও বাচাবে কি করে? নাহ্! কালো বাদুরের সন্ধানে খুব দ্রুতই ওকে বেড়িয়ে পড়তে হবে। আর বেশি সময় নেয়া যায় না।
চলবে.........
চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
©somewhere in net ltd.