নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ২৭

২৩ শে জুলাই, ২০১৮ দুপুর ১২:০৩

গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি উপজেলা।

বিকালে মিজুর সাথে ওদের বাড়িতে চলে এসেছে রুদ্র আর আবুল। হোসেন স্যার ওদের কাউকে বাধা দেন নি। রুদ্র হোসেন স্যারের জন্য রাতে যে ভৌতিক নাটক মঞ্চস্থ করেছিলো তাতে পুরোপুরি সফল হয়েছে। ভৌতিক নাটকে অভিনয় করেছিলো মোট আট জন ছাত্র। চার জন রেইন্ট্রি গাছে, এক জন কুকুরের ডাক ডেকে, এক জন শেয়ালের ডাক ডেকে, এক জন নাকি সুরে কান্নার আওয়াজ করে এবং আরেক জন রুদ্রদের টিনের চালে মাটির ঝুরঝুরে ঢিল ছুড়ে। যে ঢিল ছোড়ার দায়িত্বে ছিলো সেই পরে হোস্টেলের কারেন্টের লাইট অফ করার দায়িত্বও পালন করেছে যখন হোসেন স্যার রেইন্ট্রি গাছের কাছে গিয়েছিলেন। আর পুরো নাটকটির রচনা এবং নির্দেশনার দায়িত্বে ছিলো রুদ্র। আশা করা যায়, এরপর রাতে হোসেন স্যারের পশ্চিম হোস্টেলে যাওয়ার সাহস আর কোন দিন হবে না।

মিজুর বাবা ধান পাটের ব্যবসা করেন। আধপাকা বাড়ি। ওরা দুই ভাই দুই বোন। সব চেয়ে বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। বোনের পরে ওর বড় ভাই সোহেল, নার্স তাহমিনার স্বামি। চন্দ্রকে অপহরনের দিন তাহমিনা ঠাকুর পাড়া মেলায় ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পে ছিলো। ওরা শহরে বাসা ভাড়া করে থাকে। বড় ভাইয়ের পরে এক বোন আছে, ইন্টারে পড়ে। নাম মেহেরুন। মিজু সবার ছোট।

ফ্রেস হয়ে ভাত খেয়ে ওরা থানা রোড ধরে তিস্তামুখ ঘাটে চলে এলো। যমুনা নদীর সাথে তিস্তা নদীর মিলিত স্থানের নামানুসারে ঘাটের তিস্তামুখ নামকরণ করা হয়। ১৮৯৯ সালে পাক-ভারত উপ-মহাদেশে ইংরেজ শাসনামলে প্রথম তিস্তামুখ ঘাট নৌবন্দর হিসেবে স্বীকৃতি পায়। সে সময় আইজিএন ও আরএসএন নামে ২টি কোম্পানীর ২টি জাহাজ দিয়ে প্রথমে নৌযানের যাত্রা শুরু হয়েছিলো এই ঘাটে। এরপর ব্রিটিশরা ১৯৩৮ সালে তিস্তামুখ ঘাট থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত রেল ফেরি সার্ভিস চালু করে। উত্তরাঞ্চলের ১৬ জেলার বিশাল জনগোষ্ঠির তিস্তামুখ-বাহাদুরাবাদ ঘাট এবং সিরাজগঞ্জ-জগন্নাথগঞ্জ ঘাটের মাধ্যমে রেল যোগাযোগের মাধ্যমেই যাত্রী ও পণ্যবাহী জাহাজ পারাপার হতো। কলকাতা-আসাম রুটের লঞ্চ, স্টিমার এই ঘাটেই ভিড়তো।

নব্বই দশকের আগ পর্যন্ত এই ঘাট দিয়ে বড় বড় জাহাজ, লঞ্চ, স্টিমার নিয়মিত যাতায়াত করতো। হাজার হাজার মানুষের ভিড়, হকার আর ফেরিওয়ালাদের হৈ-হুল্লোড়, রাতের ফেরির সার্চলাইটের ঝলকানি, খাবার হোটেলের বয়দের ডাকাডাকিতে এই ঘাট সব সময় মুখরিত থাকতো। ঘাটে ছিল বড় বড় পাটের গুদাম। এই ঘাটকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিলো বহুমুখি ব্যবসা।

তিস্তামুখ ঘাটের সেই জৌলুস এখন আর নেই। যমুনা নদীর নাব্য সংকটের কারনে ১৯৯০ সালে প্রায় ত্রিশ কোটি টাকা ব্যয়ে রেল ফেরি সার্ভিস বালাসিঘাটে স্থানান্তর করা হয়। তারপর থেকেই এই ঘাট ধিরে ধিরে ধ্বংস স্তুপে পরিনত হয়। এখন যাত্রি পারাপারের জন্য কিছু ইঞ্জিন চালিত নৌকা চলছে। একদা যেখান দিয়ে দিনভর চলত রেলগাড়ি, সেখানে পরিত্যক্ত রেললাইনে শত শত ঘরবাড়ি। সবাই নদি ভাঙ্গনকবলিত মানুষ।

রুদ্রদেরকে ঘাটের কাছে একটা ক্লাব ঘরে নিয়ে গেলো মিজু। কয়েক জন ছেলে ক্লাব ঘরে কেরাম খেলছিলো। মিজু তাদের সাথে রুদ্রদের পরিচয় করিয়ে দিলো। পাশের চায়ের দোকানে চায়ের অর্ডার দেয়া হলো। কিছুক্ষন পরে একটা ছেলে চা দিয়ে গেলো। সিগারেটও আনা হলো। রুদ্রের উদ্দেশ্য শুনে মকবুল নামের একজন বললো- কালো বাদুর সম্পর্কে কেউ তেমন কিছু জানে না। যেটুকু আমরা জানি সবই ভাসাভাসা। এগুলো সব আগের কাহিনি। পুলিশ বেশ কয়েক দিন থেকে কালো বাদুরকে ধরার চেষ্টা করছে। চন্দ্র নামের একটা মেয়েকে নাকি কালো বাদুর কিডন্যাপ করেছে। আমাদের এখানকার অনেক ছেলেকেই পুলিশ থানায় ধরে নিয়ে গেছে। তাদেরকে পিটিয়ে কালো বাদুরের তথ্য আদায় করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কে তথ্য দিবে? কেউ তো কিছু জানেই না।

ক্লাব ঘর থেকে বেড় হয়ে জেলে, মাঝি, ঘাটের দোকানদার, বিভিন্ন চর থেকে আসা লোক জনসহ বিভিন্ন লোককে কালো বাদুরের কথা জিজ্ঞেস করলো রুদ্র। কিন্তু আবছা ধারনা ছাড়া কেউ কিছু জানাতে পারলো না। সে দিনটা এভাবেই শেষ হলো।

পরদিন সকালে ওরা গেলো বালাসি ঘাটে। ঘাটে একটা লঞ্চ দাড়িয়ে আছে। একটা তেলের ট্যাংকার থেকে তেল নামানো হচ্ছে। রেল ফেরি রেলের জন্য দাড়িয়ে আছে। রেল আসতে এখনো অনেক দেরি আছে। কুলি, দিন মজুর আর হকারদের ডাকাডাকিতে মুখরিত হয়ে উঠেছে পুরো বালাসি ঘাট। ইঞ্জিন চালিত অসংখ্য নৌকা ঘাটে বাধা আছে। একটা জাহাজ এই মাত্র ছেড়ে গেছে। যমুনার বুকে ধিরে ধিরে ছোট হয়ে যাচ্ছে জাহাজটির কাঠামো।

সামনে বিশাল যমুনা নদি। যতদুর চোখ যায় শুধু পানি আর পানি। যমুনার পুর্ব নাম ছিলো জোনাই। যমুনা মুলত ব্রহ্মপুত্র নদ থেকে উতপত্তি হয়। ১৭৮২ থেকে ১৭৮৭ সালের মধ্যে সংঘটিত ভুমিকম্প ও ভয়াবহ বন্যার ফলে জামালপুর জেলার দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার বাহাদুরাবাদ নামক স্থানে ব্রহ্মপুত্র নদের গতিপথ পরিবর্তন হয়ে এই নদির সৃষ্টি হয়। এই নদিটি আরিচায় গঙ্গা নদির সাথে এবং গোয়ালন্দের কাছে পদ্মা নদির সাথে মিশেছে।

জামালপুরের বাহাদুরাবাদ ঘাট এখান থেকে প্রায় বাইশ কিলোমিটার দুরে। রুদ্ররা একটা ইঞ্জিন চালিত নৌকা ভাড়া করে আশপাশের কয়েকটি চর ঘুরে বেড়ালো। চরগুলোতে মুগ ডাল, বাদাম, সরিষা, টমেটো, আখ, ভুট্টা, লাউ ইত্যাদির চাষ করা হয়েছে। বেশ কয়েক জন চাষির সাথেও কথা বললো ওরা। কালো বাদুর সম্পর্কে তাদের ভিতরে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো। কারো কাছে কালো বাদুর গরিবের বন্ধু আবার কারো কাছে ডাকাত ছাড়া কিছু নয়। জানা গেলো পুলিশ এক সপ্তাহের মধ্যে দুই বার করে চরগুলোতে হানা দিয়েছে। কয়েক জন চাষিকে ধরেও নিয়ে গেছে।

দুপুরের কিছু পরে ক্লান্ত হয়ে আবার বালাশি ঘাটে ফিরে এলো ওরা। একটা হোটেলে গরুর মাংস দিয়ে ভাত খেয়ে নিলো। তারপর দেখা করতে গেলো তাহের ব্যাপারির সাথে। চরের দায়িত্বে থাকা টিমের টিম লিডার চাচাতো ভাই আজমলের দেয়া তথ্য মতে, তাহের ব্যাপারি ওদের আত্মিয়, বড় চাচির মামাতো ভাই। তাহের ব্যাপারি চরের রবি শস্য কৃষকের কাছ থেকে কিনে ঢাকার বিভিন্ন বাজারের আড়তে বিক্রি করেন। ব্যবসা করে অর্থ সম্পদ ভালোই রোজগার করেছেন তিনি। ঘাটের পাশেই তার বিশাল আড়ত। আড়তের গদিতে বসে আছেন তাহের ব্যাপারি। রুদ্রকে প্রথমে তিনি চিনলেন না। পরিচয় পেয়ে তার চোখদুটো খুশিতে জ্বলে উঠলো। বললেন- তোমরা তো এদিকে আসোই না। কয়েক দিন আগে আজমল এসেছিলো। বললো চন্দ্র নাকি হারিয়ে গেছে! ওকে পাওয়া গেছে?

- না মামা। ওর খোজ করতেই আপনার কাছে এলাম।

তাহের ব্যাপারি দির্ঘনিশ্বাস ফেলে বললেন- চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার কথা শুনার পর থেকেই আমার মনটা একদমই ভালো নেই বাবা। অমন সুন্দর মেয়েটা কিভাবে হারিয়ে গেলো?

তাহের ব্যাপারি রুদ্রদের জন্য দুপুরের খাবার আনতে চাইলে রুদ্র জানালো ওরা খেয়েছে। একটা ছেলেকে চানাস্তা আনতে দিয়ে বললেন- কালো বাদুরের বিষয়ে জানতে এসেছো?

- জ্বি মামা।

- আজমল এসেও কালো বাদুরের বিষয়ে জানতে চেয়েছিলো। যতটুকু জানি সেটা ওকে বলেছি। কালো বাদুরকে ধরার মতো তথ্য আসলে কেউ জানে না বাবা।

- আপনি কতটুকু জানেন?

- আমার মনে হয় কালো বাদুর আশপাশেই কোথাও আছে। তাদের অস্তিত্ব অনুভব করতে পারি কিন্তু চিনতে পারি না।

- কিভাবে অনুভব করেন?

- এই ঘাটে অনেক চুরি ডাকাতি ছিনতাই হয়। অনেক অপকর্মই হয়। কেউ ধরা পরে কেউ পরে না। কিন্তু কিছু অপকর্ম আছে যেগুলো কেউ করলে তার শাস্তি পেতেই হবে। তবে কে শাস্তি দিচ্ছে সেটা কেউ ধরতে পারে না।

- যেমন?

- এক বার এক ডাকাত দল একটা মেয়েকে ধর্ষন করে। কয়েক দিনের মধ্যেই পুরো ডাকাত দলের লাশ যমুনায় ভেসে ওঠে। সবারই গলা কাটা ছিলো। আরেক বার এক বৃদ্ধ কুলিকে বিনা দোষে জামালপুরের এক ব্যবসায়ি মেরে রক্তাক্ত করে দেয়। কয়েক দিনের মধ্যেই তার বাড়িতে ডাকাতি হয় এবং সেই ব্যবসায়ির হাত ভেঙ্গে দেয়া হয়। এ সব কারা করেছে সেটা পুলিশ এখনো জানতে পারে নি। তবে আমার ধারনা এ সব কালো বাদুরের কাজ।

- কালো বাদুরকে কেউ কি দেখেছে?

- এক জন আছে যে নাকি দেখেছে। এখানকার এক চাষি। তবে তার কথা বিশ্বাস করা যায় না।

- কেন?

- ও সব সময়ই বানিয়ে কথা বলে। সত্যের চেয়ে মিথ্যা কথাই বেশি বলে। যেদিন ডাকাতদের গলা কাটা লাশ পাওয়া যায় তার কয়েক দিন আগে এখানকার একটা চরে ও নাকি পথ ভুলে রাতে আটকা পড়েছিলো। গভির রাতে দুরে কালো কাপড়ের একটা মুর্তি নাকি ও দেখতে পায়। অথচ চরটা নতুন জেগে উঠেছিলো। খুব একটা বড়ও ছিলো না। এখানকার চরগুলো সম্পর্কে ওর ধারনাও যথেষ্ট ভালো। ও কি করে পথ ভুলে চরে আটকা পড়ে সেটা বোধগম্য নয়। ওর মিথ্যা বলার সম্ভাবনাই বেশি।

- তাকে কি এখন পাওয়া যাবে?

- ওর বাড়িতে লোক পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে বাড়িতে ওর এখন না থাকার সম্ভাবনাই বেশি।

তাহের ব্যাপারি একটা ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন। চানাস্তা অনেক আগেই এসেছে। চা খেতে খেতে রুদ্র বললো- আপনার বাড়ি এখান থেকে কতদুরে মামা?

- এই তো মাইল দুইয়ের মতো হবে। তোমরা সবাই কিন্তু আজ আমার বাসায় থাকবে।

- রুদ্র মিজুকে দেখিয়ে বললো, আমরা ওনাদের বাড়িতে বেড়াতে এসেছি মামা। অন্য কোন দিন আপনার বাড়ি যাবো। আচ্ছা মামা, এই ঘাটে নাকি একটা পাগল আছে, বোবা আর কানেও শোনে না।

- সজলের কথা বলছো? ও কখন কোথায় থাকে তার ঠিক নেই। এক চর থেকে আরেক চরে ঘুরে বেড়ায়। কখনো লঞ্চ বা ফেরিতে চড়ে কয়েক দিনের জন্য গায়েব হয়ে যায়।

- ওকে লঞ্চ ফেরিতে উঠতে বাধা দেয়া হয় না?

- বাধা দিলেও ও চুরি করে উঠে যায়। আগে বাধা দেয়া হতো কিন্তু এখন কেউ আর বাধা দেয় না।

- ওকে এ ঘাটে কখন পাওয়া যেতে পারে?

- সেটা ঠিক ভাবে বলা যায় না। কয়েক দিন থেকে ওকে ঘাটে দেখা যাচ্ছে না।

- বাড়ি কোথায় ওর?

- এইতো রাস্তাটা দিয়ে কিছুদুর গেলেই হাতের বাম পাশে একটা খেজুর গাছ পাবে। ওখানে যে কাউকে বললেই ওদের বাড়ি দেখিয়ে দিবে।

- ও কি জন্ম থেকেই কানে শুনে না, কথা বলতে পারে না?

- আগে কথা বলতে পারতো। যখন ওর চার পাচ বছর বয়স হয় তখন হঠাত করে কথা বলা বন্ধ হয়ে যায়। তারপর থেকে কানেও শোনে না। ওর বাবা ঘাটে কুলির কাজ করে। তিন বছর বয়সে ওর মা মারা যায়। বাবা আরেকটা বিয়ে করে। ওরা কেউ ওর খোজ রাখে না।

এমন সময় রুদ্রের মামাতো ভাই কবিরকে দেখা গেলো। কবির আজমলের টিমের সদস্য। টিমের এক জনকে প্রতিদিন পাচটায় বালাসি ঘাটে থাকতে বলেছিলো রুদ্র। এখন সাড়ে চারটে বাজে। মিজু এবং আবুলকে আড়তে রেখে কবিরকে নিয়ে একটু নির্জনে চলে এলো রুদ্র। কবিরের কাছে বাড়ির সবার খবর নেয়ার পরে বললো- আজমল ভাইকে পাগলটার বিষয়ে ভালো করে খোজ খবর নিতে বলো কবির ভাই। ও আসলেই পাগল নাকি পাগলের বেশে অন্য কেউ? ওর পরিচয় সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া দরকার। পাগলটা এখন কোথায় সেটা জানতে হবে। কাল বিকেল পাচটায় এখানে আজমল ভাইকে থাকতে বলবে। তুমি এখন বাড়ি চলে যাও।

কবির চলে গেলে রুদ্র আবার আড়তে ঢুকলো।।আড়তের একপাশে তরমুজ, কুমড়া, পিয়াজ, মরিচ গাদা করে রাখা হয়েছে। এগুলো রেল ফেরিতে করে জামালপুর হয়ে ঢাকা যাবে। আড়তে ঢুকে জানতে পারলো, যে চাষি কালো বাদুরকে দেখার দাবি করেছে সে বাড়িতে নেই। কখন আসবে সেটাও বাড়ির কেউ জানে না। রুদ্র বললো- মামা, আপনি ওনাকে বলে রাখবেন কাল সকাল দশটার দিকে উনি যেন আপনার এখানে থাকে। আমি দশটার আগেই চলে আসবো।

- তোমরা কাল যেয়ো বাবা, আজ আমার বাড়িতে থাকো। তোমাকে দেখলে তোমার মামি অনেক খুশি হবেন।

- আজ নয় মামা। মিজু ভাই বাড়িতে কিছু বলে আসেন নি। থাকলে ওনার বাড়িতে চিন্তা করবেন।

- তাহলে যাও। কিন্তু কাল আমার বাড়িতে থাকবে। তোমরা সবাই আসবে। আমি কিন্তু তোমার মামিকে বলে রাখবো তোমরা কাল থাকবে।

- ঠিক আছে মামা, আজ তাহলে আসি।

- আচ্ছা যাও।

আড়ত থেকে বেড়িয়ে আসতেই মিজু রুদ্রকে ধরে বসলো- চন্দ্র কে? পুলিশ যাকে খোজার জন্য এতোটা ক্ষেপে উঠেছে তার সাথে তোমার কি সম্পর্ক?

- চন্দ্র আমার স্ত্রি।

মিজু এবার আকাশ থেকে পড়লো। বললো- চন্দ্র তোমার স্ত্রি! তুমি বিবাহিত!

- হ্যা মিজু ভাই।

- আগে বলো নি কেন? হোস্টেলে থাকতে বলেছিলে কালো বাদুর তোমার পাশের গ্রামের দুটো ছেলেমেয়েকে অপহরন করেছে, তাই তুমি তাদের বিষয়ে জানতে চাচ্ছো।

- ওটাও সত্যি মিজু ভাই। কালো বাদুর আমাদের পাশের গ্রামের দুজন ছেলেমেয়েকে অপহরন করেছে। চন্দ্রের বিষয়টা তখন বলি নি কারন হোস্টেলের কেউ এটা জানতো না।

- কালো বাদুর তোমার স্ত্রিকে কেন অপহরন করবে?

- সেটা জানি না।

- কি ভাবে বুঝলে কালো বাদুর তোমার স্ত্রিকে অপহরন করেছে?

রুদ্র আবুলকে বললো- তুই বল। আমি একটু চুপ করে থাকবো।

আবুল বলতে শুরু করলো। মিজু হতবাক হয়ে শুনতে লাগলো। আবুলের কথায় রুদ্রের কান নেই। ও আপন ভাবনায় ডুবে গেলো। বালাসি থেকে চিলমারি পর্যন্ত যে কোন চরে কালো বাদুর থাকতে পারে। কিন্তু রুদ্রের অন্য কোথাও না গিয়ে প্রথমেই ফুলছড়ি ও বালাসিতে আসার পিছনে একটা কারন আছে। ও যে জন্য এখানে এসেছে সেটা তাড়াতাড়ি ওকে করতে হবে। কিন্তু ওর হাতে সব কিছু নেই। অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই এখন।

অপেক্ষা! কিন্তু কতো দিন অপেক্ষা করতে হবে? বুকের ভিতর চিন চিন করে ব্যাথা হচ্ছে। একা ভাবতে ধরলেই এ ব্যাথাটা তিব্র হয়ে পুরো বুককে পুড়িয়ে দেয়। সমস্ত শরিরে ব্যাথাটা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। চন্দ্রের মুখটা চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে। ভিষন দেখতে ইচ্ছে করছে ওকে। বুকটা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। ভিষন জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছে চন্দ্রকে। কবে দেখা পাবে চন্দ্রের? কবে দেখতে পাবে ওর প্রানপ্রিয় স্ত্রির জোৎস্না মাখা মুখটি?

চলবে.......

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.