নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

.. তবুও আমি আঁধার পথিক, আঁধারের অতিথি হয়েছি আজ বিনা নোটিশে। ঘুম নেই চোখে, ক্লান্তি নেই চরণে... জানি না চলছি কোন্ মেঠো পথ ধরে! *facebook.com/shimulzia *facebook.com/ziaulshimul *ziaulshimul.blogspot.com

জিয়াউল শিমুল

মনের বাগিচা পায়ে দলে হালের অবার্চীন, মুখোশের অন্তরালে তারা মরুয়তে দীন

জিয়াউল শিমুল › বিস্তারিত পোস্টঃ

চন্দ্র ।। পর্ব - ৩৩

২৫ শে জুলাই, ২০১৮ বিকাল ৩:২০

রুদ্র ফকিরের ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করেছে। তিন দিন সজল পাগলের পিছনে ঘুরে ওর যা জানার সেটা জানা হয়ে গেছে। পাগলের প্রতি কারো কোন আগ্রহ নেই। কেউ পাগলের সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করে নি। যদিও তিন দিন খুবই অল্প সময় তারপরেও ওর মনে বিশ্বাস জন্মেছে সজল পাগলকে কালো বাদুর ব্যবহার করছে না। তবে রুদ্র লক্ষ না রাখলেও স্পেশাল টিম পাগলকে লক্ষ রাখবে। রুদ্রকে পাগলের পিছনে আর বেশি সময় দেয়া চলে না। চন্দ্রকে উদ্ধারের জন্য দ্রুত কিছু একটা করতে হবে এবার।

ঢাকার টিমের সাথে সকালেই আবুল চলে এসেছে। আবুলকে রুদ্রের কাছে রেখে ওরা ওদের কাজে চলে গেছে। আজ ওদের অনেক কাজ। কাজে ব্যস্ত স্পেশাল টিমও।

বন্ধুকে কাছে পেয়ে খুশিতে মন ভরে উঠলো আবুলের। আবুল তিন দিন রুদ্রদের বাড়িতে ছিলো। রুদ্রদের বাড়ির কেউ বসে নেই। সবাই চন্দ্রকে উদ্ধারের জন্য পুরো দেশ চষে বেড়াচ্ছে। প্রতিটা জেলায় রুদ্রদের কেউ না কেউ পৌছে গেছে। প্রতিটা থানায় খবর নেয়া হচ্ছে। গাইবান্ধা থানায় পুলিশ বিভাগের সব চেয়ে চৌকশ অফিসারদের একটা টিম আনা হয়েছে। আরশাদ তার প্রধান টিমের দুই সহযোগিকে নিয়ে নিয়মিত শলাপরামর্শ করছে। চন্দ্রকে অপহরনের পিছনে স্থানিয় যে কালপ্রিটের কথা ভাবা হচ্ছে তাকে খুজে বেড় করার জন্য আপ্রান চেষ্টা করছে তারা। ব্লাড ডোনেশন ক্যাম্পের নার্স, ল্যাব টেকনিশিয়ান, অ্যাম্বুলেন্সের ড্রাইভার, রিদয় ক্লিনিকের মালিক জব্বার শেখ, মেলা কমিটির সদস্য, সার্কাস দল, সার্কাস দলের জন্য চাদা প্রদানকারি মনিষ মুখার্জি, মেলার দোকানি, জুয়ারি সবার পিছনেই লোক লাগিয়ে দিয়েছে তারা। এমন কি যাদেরকে একটু সন্দেহ হচ্ছে তাদের পিছনেও। বৈশাখি মেলার শেষ দিনে যারা মেলায় গিয়েছিলো তাদেরকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। ইতিমধ্যে আশপাশের দশ জেলার প্রতিটি গ্রামে তিন জন করে লোকও সেট করে ফেলেছে তারা। সেই লোকদেরকে নিয়ন্ত্রনের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আলাদা বাহিনিও। পুলিশের সাথেও নিয়মিত বসছে তারা। রুদ্রের নানা বোরহান উদ্দিনের সাথে মাঝে মাঝেই সরকার ও বিরোধি দলের উচু মহলের কেউ না কেউ দেখা করছেন। চন্দ্রকে কিডন্যাপের বিষয়টা নিয়ে সরকার ভালই বিপদে পড়েছে। ভিতরের অবস্থা হয়তো আরো খারাপ। আবুল যেটুকু দেখেছে তাতেই বুঝতে পারছে বোরহান উদ্দিন কতোটা ক্ষমতাশালি। কিন্তু যেটুকু ও দেখেছে সেটা তো বিশাল সমুদ্রের এক ফোটা পানির সমান। তাহলে পুরো সমুদ্রটা কতো বড়? আবুল অবাক হয়ে শুধু ভাবে বোরহান উদ্দিন কি এদেশের সবচেয়ে ক্ষমতাশালি পুরুষ! কিন্তু কিভাবে? গাইবান্ধা জেলার মতো ছোট্ট একটা শহরের একটা গ্রামের এমন এক জন লোক কি করে এতোটা ক্ষমতার অধিকারি হন?

আর রুদ্র? রুদ্রের বিশ্লেষনি ক্ষমতা, তিক্ষ বুদ্ধি, প্রচন্ড সাহস, আর অসিম শক্তি ওকে সব চেয়ে বেশি অবাক করেছে। রুদ্রের চেয়ে বয়সে অনেক বড় যে ভাইয়েরা তারাও ওর দিকনির্দেশনা অবলিলায় মেনে নিচ্ছে। ওর নির্দেশে কাজ করে সবার মাঝেই এক অফুরন্ত অনুপ্রেরনার সৃষ্টি হয়েছে। এতো কম বয়সের কারো দিকনির্দেশনা মেনে সবাই এভাবে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করছে এটা আবুলের কাছে কল্পনাতিত। কিন্তু বাস্তবে সেটাই হচ্ছে।

রুদ্র আবুলের কাছে জানতে চাইলো- এ কয়েক দিন কেমন কাটলো তোর?

- ভালোই। নিজেকে মনে হচ্ছিলো বিশাল কোন যুদ্ধের ভিতরে আছি!

- কেন?

- তোদের বাড়ি তো এখন যুদ্ধ ক্ষেত্রই। কেউ বসে নেই, সবাই ছুটছে। বড়রা যেমন ছুটছে তেমনি তোর মামাতো চাচাতো ভাইয়েরাও প্রতিদিন ছুটোছুটি করছে। কেউ পরিকল্পনা করছে, কেউ তথ্য সংগ্রহ করছে, কেউ তথ্যগুলো বিশ্লেষন করছে, কেউ বা অন্যের পিছনে ছায়ার মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। বড় বড় হোমরা চোমরারা তোর নানুর সাথে দেখা করছে, পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তারা আসছে। সে এক এলাহি কান্ড। একে শুধু যুদ্ধের সাথেই তুলনা করা যায়।

- এতো কিছু করেও চন্দ্রকে পাওয়া যাচ্ছে না। কিডন্যাপাররা সব কিছুকে টেক্কা দিয়ে এখনো লুকিয়েই আছে!

- তোর ভাইয়েরা যেভাবে পুরো দেশে লোক লাগিয়ে দিচ্ছে তাতে এ দেশের প্রতিটা মানুষের খবর তোদের কাছে আসতে খুব বেশি দিন দেরি নেই। কিন্তু আমি ভাবছি, চন্দ্রকে যদি কালো বাদুর অপহরন করে তাহলে সারা দেশে লোক লাগানোর দরকার কি? কালো বাদুরকে ধরার পরে যদি দেখা যায় তারা চন্দ্রকে অপহরন করেনি তখন এ সব করা যেতো না? এ সবের পিছনে আপাততো শক্তি এবং জনবল ব্যয় না করে সে শক্তি এবং জনবল কালো বাদুরের পিছনে লাগিয়ে দিলেই কি ভালো হতো না? তখন হয়তো কালো বাদুরকে তাড়াতাড়ি ধরা যেতো।

- এটা নিশ্চিত যে পুরো দেশ লাগলেও কালো বাদুরকে ধরা সম্ভব নয়। সেটা যদি হতো তাহলে বহু বছর আগেই হতো। আবার যদি যথার্থ সুত্র পাওয়া যায় তবে একজনেই যথেষ্ট। যেহেতু আমরা জানি না চন্দ্রকে কালো বাদুরই কিডন্যাপ করেছে তাই সমস্ত শক্তিকে কালো বাদুরের পিছনে লাগালে ভুল হবে। কারন তখন অন্য সম্ভাব্য দিকগুলি নিয়ে ভাবার কেউ থাকবে না। কালো বাদুরের বিষয়ে যখন আমরা নিশ্চিন্ত হবো, জানি না কতো দিনে সেটা হতে পারবো এবং তখন যদি দেখা যায় কালো বাদুর চন্দ্রকে কিডন্যাপ করে নি তাহলে কি হবে? তখন অন্য সম্ভাব্য দিকগুলি নিয়ে মাথা না ঘামানোর ফলে এবং অনেকটা সময় বিলম্বিত করার ফলে অনেক সুত্রই আমরা হারিয়ে ফেলবো। আমি যা করছি কালো বাদুরকে ধরার জন্য এ ছাড়া হয়তো অন্য কোন উপায় নেই। আমি এ দিকে কালো বাদুরের পিছনে লেগেছি, অন্য দিকে আমার অন্য ভাইয়েরা বাকি সম্ভাব্য দিকগুলো খতিয়ে দেখছে। ফলে এ দিকে যেমন কাজের অগ্রগতি হচ্ছে তেমনি অন্য দিকগুলোতেও হচ্ছে। কালো বাদুর যদি চন্দ্রকে কিডন্যাপ না করে তাহলে অন্য ভাইয়েরা অন্য সম্ভাব্য দিকগুলোতে যতোদুর এগিয়ে যেতে পারবে সেটাই লাভ। আমি তখন সেখান থেকে শুরু করতে পারবো।

- বুঝলাম। কিন্তু কালো বাদুরকে ধরার ক্ষেত্রে তোর কতোটা অগ্রগতি হয়েছে।

- আজকে কালো বাদুরকে ধরার জন্য প্রথম জাল বিছাবো আমি।

- কিভাবে?

- কালো বাদুরকে ধরার পুরো পরিকল্পনাকে আমি চারটি ভাগে ভাগ করেছি। প্লান-এ, প্লান-বি, প্লান-সি এবং প্লান-ডি। আজ বাস্তবায়ন হবে প্লান-এ।

আবুল অবাক হয়ে বললো- কি সেই প্লান?

- সেটা সময় হলেই বুঝতে পারবি। আজ বিকালে আমরা বাহাদুরাবাদ ঘাটে যাচ্ছি।

আবুলকে সাথে নিয়ে দুপুরের খাওয়ার আগ পর্যন্ত উদ্দেশ্যহিনভাবে ঘুরে বেড়ালো রুদ্র। কয়েক বার সজল পাগলকেও দেখা গেলো। সজল পাগল আজও বালাসি ঘাটে আছে। যে কয়দিন ওর মন চাইবে হয়তো সে কয়দিন এখানে থাকবে। তারপর হঠাত একদিন নৌকায় চড়ে উধাও হবে। তারপর এ ঘাট ও ঘাট ঘুরে আবার এক দিন হাজির হবে এই ঘাটে।

দুপুরে তাহের ব্যাপারির আড়তে আবুলকে নিয়ে খেতে বসলো রুদ্র। তাহের ব্যাপারি কালো বাদুরের বিষয়ে আর কোন তথ্য দিতে পারেন নি। তিনিও চান কালো বাদুর ধরা পড়ুক। সবার প্রিয় নিষ্পাপ চন্দ্রকে যারা কিডন্যাপ করেছে তারা যতোই ভালো হোক না কেন তাদের শাস্তি হওয়া দরকার। খাওয়ার এক পর্যায়ে তাহের ব্যাপারি রুদ্রকে বললেন- কাল তোমার মামি তোমাদের বাড়ি যেতে চাচ্ছেন। চন্দ্র হারিয়ে যাওয়ার খবর শুনেই যেতে চেয়েছিলেন কিন্তু সুযোগ পান নি। কাল যাবেন।

- মামি আমাকেও সে কথা বলেছেন।

তাহের ব্যাপারি একটা দির্ঘ নিঃশ্বাস ছাড়লেন। জানতে চাইলেন- কালো বাদুরের বিষয়ে তোমরা কি কিছু জানতে পারলে?

- না, মামা। কেউ তেমন কিছুই বলতে পারছে না। যেটুকু বলছে তার কোন ভিত্তিই নেই।

তাহের ব্যাপারি আবার একটা দির্ঘনিঃশ্বাস ছাড়লেন। রুদ্র চুপচাপ খেয়ে উঠলো। আবুলের সাথে চায়ের দোকানে গিয়ে চা খেলো। তারপর সিগারেট টানতে টানতে ভিড়ের মধ্যে এদিক ওদিক হাটতে লাগলো। মাঝে মধ্যে প্যান্টের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দিলো। এক সময় রুদ্র অস্থির হয়ে পড়লো। সুর্য যতোই পশ্চিম দিকে হেলে পড়ছে ওর অস্থিরতা ততোই বাড়তে লাগলো। হঠাত করেই রুদ্রের মুখে অস্থিরতার ভাব কেটে গিয়ে সন্তুষ্ঠি ফুটে উঠলো। এবার পকেটে হাত দিয়ে একটা কাগজের টুকরো পেয়েছে ও। টুকরোটা বেড় করে সবার অলক্ষে এক বার চোখ বুলিয়ে নিলো। তারপর আবার পকেটে ঢুকিয়ে রাখলো সেটা। টুকরোটাতে শুধু একটা শব্দই লেখা ছিলো- প্রস্তুত।

বালাসি থেকে জামালপুরের বাহাদুরাবাদ নৌরুটে বিকালের পরে রেল ফেরি চলে না। তখন ইঞ্জিন চালিত নৌকায় যাতায়াত করতে হয়। বিকালের পরে দুইটি মাত্র নৌকা ছাড়ে ঘাট থেকে, সন্ধার আগেই বাহাদুরাবাদ ঘাটে পৌছে যায়। এই রুটে সন্ধার পরে হরহামেশাই ডাকাতি হয়। তাই রাত করার রিস্ক কেউ নিতে চায় না। তবে চন্দ্র কিডন্যাপ হওয়ার পরে এই এলাকার অনেক ডাকাতকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এখন ডাকাতের ভয় তেমন একটা নেই। তারপরেও সন্ধার পরে এই রুটে নৌকা চালানোর কেউ সাহস করে না। এখন শেষ নৌকাটা বাহাদুরাবাদ ঘাটে যাওয়ার জন্য ঘাটে অপেক্ষা করছে।

রুদ্র আবুলকে রেখে ঘাটের একটা শৌচাগারে গেলো। কিছুক্ষন পর ফিরে এসে শেষ নৌকায় আবুলকে নিয়ে উঠে পড়লো। এটাই শেষ নৌকা তাই যাত্রিও উঠেছে অনেক। নৌকা যাত্রি দিয়ে ভরপুর। ভয় হচ্ছে, ভালোভাবে বাহাদুরাবাদ ঘাটে পৌছাতে পারবে তো!

এক সময় হেলেদুলে এগিয়ে চললো নৌকা। যমুনা নদি বাংলাদেশের সব চেয়ে বড় নদিগুলোর একটি। এর বড় বড় ঢেউ সবার বুকেই কাপন ধরিয়ে দেয়। নৌকা একবার ঢেউয়ের মাথায় উঠছে আবার নামছে। অভিজ্ঞ মাঝির নিপুন দক্ষতায় প্রায় দেড় ঘন্টা ভালো ভাবেই এগিয়ে চললো নৌকা। রুদ্ররা এখন বালাসি আর বাহাদুরাবাদের মাঝামাঝি। চতুর্দিকে শুধু পানি আর পানি। এই পানির যেনো শেষ নেই। এমন সময় হঠাত করেই আকাশ কালো হয়ে উঠলো। সবার আশংকাকে সত্যি করে একটু পরেই শুরু হলো ঝড়। যমুনা যেন মাতাল দানব হয়ে ফুসে উঠলো। ঝড়ো বাতাস লেগে ঢেউগুলো বিশাল আকার ধারন করলো। ঢেউগুলো প্রচন্ড শক্তিতে নৌকায় আঘাত করতে শুরু করলো। প্রতিটা ঢেউ রুদ্রদেরকে ভিজিয়ে দিতে লাগলো। একটা করে ঢেউ আসছে আর মনে হচ্ছে এই বার বুঝি মাঝিরা নৌকাকে সামলাতে পারবেন না। কিন্তু আশ্চর্য জনক ভাবে দক্ষ মাঝিরা প্রতিটা ঢেউকে সামলিয়ে নিতে লাগলেন। কিন্তু এভাবে কতোক্ষন? একটু অসতর্ক হলেই রাক্ষসি ঢেউ মুহুর্তেই পুরো নৌকাকে উল্টিয়ে দিবে। অকালে প্রান হারাবে অনেক যাত্রি। যাত্রিদের ভিতরে ভিষন চিতকার চেচামেচি শুরু হয়েছে। ভয়ে কেউ হাউমাউ করে কাদছে। আল্লাহকে ডাকছে সবাই।

কিছুক্ষন পরে ঝড় একটু কমলো, তবে পুরোপুরি নয়। যাত্রিরা সবাই ভিজে চুপছে গেছে। ঝড় কমায় সবার ভিতরে কিছুটা স্বস্তি ফিরে এলো। কিন্তু সেটা ক্ষনিকের জন্য। কোথা থেকে যেন হঠাত করে একটা নৌকা উদয় হলো এবার। মাঝিরা নৌকা সামলাতে এতোটাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন যে সময় মতো সেটা বুঝতেই পারলেন না। যখন বুঝতে পারলেন তখন সাবধান হওয়ার আর কোন সুযোগ ছিলো না। সবাই বুঝতে পারলো ঝড়ের কবল থেকে পুরোপুরি মুক্তি না পেতেই ওরা এবার ডাকাতের কবলে পড়েছে!

ডাকাত দল ওদের নৌকার পাশে নৌকা ভিড়িয়েই ঝাপিয়ে পড়লো। প্রত্যেকের মুখ কালো কাপড়ে ঢাকা। কালো কাপড়ে ঢাকা পুরো দেহটাও। এদেরকে দেখে রুদ্রের মনে একটা কথাই শুধু উচ্চারন হলো- কালো বাদুর!

রুদ্র কিছু করার সুযোগ পেলো না। নৌকায় এতো লোক গাদাগাদি করে আছে যে, কালো বাদুরের সাথে লাগতে গেলে ধস্তাধস্তির ধাক্কায় অনেক লোকই নিশ্চিত নদিতে পড়ে যাবে। ঝড় এখনো পুরোপুরি থামে নি। যমুনাও শান্ত হয় নি। এ সময় নদিতে কেউ পড়ে গেলে তার বাচার সম্ভাবনা নেই। তাই রুদ্র চুপচাপ থাকারই সিদ্ধান্ত নিলো।

ডাতাত দলের এক জন হুংকার ছেড়ে বললো- কেউ চালাকি করবে না, খুন করে ফেলবো।

ডাকাতের ভয়ে সবাই জড়োসড়ো হয়ে কাপতে লাগলো। ডাকাত দল কাউকে কিছু করলো না। কারো কোন কিছু নিলো না। তবে যেটা করলো তাতে আবুলের রক্ত পুরোপুরি জমে গেল। আতংকে ওর চোখ বিস্ফোরিত হয়ে গেলো। ডাকাত দলের এক জন সোজা রুদ্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে রুদ্রের পেটে সজোরে ছোড়া বসিয়ে দিলো। রুদ্র বাধা দিলো কিন্তু পারলো না। ডাকাতটা নির্মমভাবে রুদ্রের পেটে বেশ কয়েকবার ছোড়া চালালো। রুদ্রের পেট দিয়ে গলগল করে তাজা রক্ত বেড়িয়ে এলো। এরপর রুদ্রকে ধাক্কা দিয়ে উত্তাল নদির বুকে ফেলে দেয়া হলো। রুদ্রকে নদিতে ফেলে দিয়েই ডাকাত দল তাদের নৌকায় উঠে পালিয়ে গেলো।

রুদ্রের নিথর দেহটা দুরের একটা ঢেউয়ের মাথায় একবার দেখা গেলো। তারপর চিরতরে হারিয়ে গেলো রাক্ষসি যমুনার বুকে।

প্রান প্রিয় বন্ধুর এমন নির্মম পরিনতি দেখে এবার হাউমাউ করে কেদে উঠলো আবুল। রুদ্র যে আর কখনো ফিরে আসবে না, ওকে যে আর কখনো দেখতে পারবে না এটা বুঝতে বিন্দু মাত্র দেরি হলো না আবুলের। আবুলের বুক প্রচন্ড শোকে হাহাকার করে উঠলো। যেভাবে বার বার রুদ্রের পেটে পুরো ছোরা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে তাতে এতোক্ষনে প্রান চলে গেছে ওর। আবুলের চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি গড়িয়ে পড়ছে। ছোট্ট একটা বাচ্চার মতো মুখ ঢেকে হাউমাউ করে কেদে চলছে ও। নৌকার পুরো যাত্রি শোকে পাথর হয়ে গেছে। এটা যে কালো বাদুরের কাজ তাতে সন্দেহ নেই কারো।

চলবে......

চন্দ্র উপন্যাসের ভুমিকা ও পর্ব সমুহের সুচিপত্র
ফেসবুকে চন্দ্র উপন্যাসের পেজ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.