![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সাফল্লের সারথি হতে পেরে সত্যি ভাল লেগেছে
বাংলা অভিধানে সফল দুটো রাস্তা খোলা ছিল তাঁদের সামনে। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে পাস করে যেকোনো প্রতিষ্ঠানে নয়টা-পাঁচটার রোজগেরে জীবন বেছে নেওয়া। কিংবা নিজেরাই হয়ে যাওয়া উদ্যোক্তা। প্রথম পথটি যতটা মসৃণ, দ্বিতীয়টা যেন ততটাই বন্ধুর। দ্বিতীয় পথে যেমন সফল হওয়ার হাতছানি, তেমনি আছে ব্যর্থতার ঝুঁকিও।
প্রথমে কিছুদিন তাঁরা চাকরিই করলেন। কিন্তু পরে ভেবে দেখলেন, রুটিন ছকে নিজেদের স্বপ্নগুলো ডানা মেলার সুযোগ পাচ্ছে না। এবার পথবদল। তাঁরা হাঁটলেন দ্বিতীয় পথেই। ভাগ্যিস হেঁটেছিলেন। আর হেঁটেছিলেন বলেই আজ বাংলাদেশের অন্যতম সেরা অ্যাপস নির্মাতা হয়ে উঠেছেন তাঁরা। পায়ের নিচে শক্ত মাটি খুঁজে পেয়েছে তিন বন্ধুর গড়া প্রতিষ্ঠান টিওএস—টপ অবস্ট্যাক সফটওয়্যার।
শাহরিয়ার কবীর তপু, ওসমান গণি, সাদী মোহাম্মদ হোসেন—তপুর টি, ওসমানের ও এবং সাদীর এস—এই তিন আদ্যক্ষর নিয়েই প্রতিষ্ঠানের নাম টিওএস। ওসমান পরে যুক্তরাষ্ট্রে চলে গেলেও বন্ধুর অবদানের কথা মনে রেখে নামটি আর পাল্টাননি তাঁরা। ওসমানের শূন্যস্থান পূরণ করতে পরে তাঁদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন বুয়েটেরই এক বড় ভাই শহীদুজ্জামান।
টিওএস এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অসাধারণ অ্যাপ বানিয়েছে। এর মধ্যে আছে বাংলা অফলাইন ডিকশনারি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারিতে যাত্রা শুরু হয়েছিল তাঁদের প্রতিষ্ঠানের। ভাষার মাসে যাত্রা শুরুর বিষয়টি মাথায় ছিল। এ কারণেই এমন একটা উদ্যোগ। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপস্টোরে আসার পর মাত্র নয় মাসে নামানো হয়েছে এক লাখ ১৬ হাজার বার! রেটিং পেয়েছে প্রায় সাড়ে তিন হাজার। বর্তমান রেটিং ৪.৮/৫।
অন্যদের জন্য তৈরি করা অ্যাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ফিফটি ল্যাঙ্গুয়েজ। যেটি নামানো হয়েছে ২০ লাখ বার! রেটিং পড়েছে ১৪ হাজারেরও বেশি! টিওএসের বানানো অন্যান্য জনপ্রিয় অ্যাপের মধ্যে আছে স্মার্টফোনের কন্ট্যাক্ট সংরক্ষণ এবং এসএমএস কিংবা ই-মেইলের মাধ্যমে শেয়ারের জন্য কন্ট্যাক্ট ব্যাকআপ নামের একটি অ্যাপ্লিকেশন।
তিনজনই ছিলেন যাকে বলে জানি দোস্ত। দিনের প্রায় পুরোটা সময়ই একে অন্যের ছায়াসঙ্গী। বুয়েটের একই বিভাগে পড়তেন। থাকতেনও একই হলে। ফলে একজনের ভাবনা ও স্বপ্নের সঙ্গে লতার মতো জড়িয়ে যেত অন্যজনের স্বপ্ন, ভাবনা ও পরিকল্পনা। নিজেদের একটা সফটওয়্যার ফার্ম দেওয়ার ইচ্ছা তাঁদের ছিলই।
বাকি দুজনের কাছে কে প্রথম প্রস্তাবটি পেড়েছিলেন, তা আর মনে নেই। বুয়েটের আর দশটা ছাত্রের মতোই নিয়মমাফিক আড্ডা আর রাতে ঠাটারিবাজারের পথে রিকশায় মাঝেমধ্যে আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে আসত ইচ্ছাটা। প্রথমে তাঁদের কাজের শুরু ফ্রিল্যান্সার হিসেবে। রেন্ট-এ-কোডার ডট কমে। প্রথম দিকে খুব একটা কাজই পেতেন না তাঁরা। কিন্তু নিজেদের ওপর আস্থা ছিল বলেই ধৈর্য ধরে লেগে ছিলেন। ফলও আসতে শুরু করল। ২০০৯-১০ সালের দিকে এই সাইটে নিবন্ধিত কয়েক লাখ ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে প্রথম ১০০০-এর মধ্যে চলে আসেন তাঁরা। এই সাফল্য আত্মবিশ্বাসের পালে জোগায় প্রবল হাওয়া। তাঁরা গড়ে তোলেন নিজেদের প্রতিষ্ঠান। গড়ে তোলেন নিজেদের স্বপ্নটাকে।
শুরুর বিনিয়োগের সেই সময়টা ছিল কঠিন। নিজেদের জমানো টাকা দিয়ে অফিসের খরচ চালাতে হতো। ছিল কাজ না পাওয়ার ঝুঁকি, অনিশ্চয়তা। ছিল বিশ্বের বাঘা বাঘা ডেভেলপারদের সঙ্গে সরাসরি প্রতিযোগিতা। ছিল কি, এখনো আছে। কিন্তু এত সব প্রতিকূলতা পেরিয়ে টিওএস যাত্রা শুরুর কয়েক মাসের মধ্যেই ফ্রিল্যান্সার ডট কমের অ্যান্ড্রয়েড শাখায় সারা বিশ্বের ডেভেলপারদের মধ্যে এক নম্বরে চলে আসে। ধীরে ধীরে অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, ব্রিটেন, ইতালি, পর্তুগাল, কানাডা, জার্মানিসহ বিভিন্ন দেশের ক্লায়েন্টদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ ঘটে।
একটা সময় গিয়ে আউটসোর্সিংয়ের পাশাপাশি নিজেদের পণ্য বাজারে আনার চিন্তা শুরু হয়ে যায়। অ্যাপস্টোরে তাঁদের প্রকাশ করা প্রথম অ্যাপটি হলো কুইক ডায়েরি। সাড়া মেলে ভালোই।
তবে টিওএসের স্বপ্নের প্রকল্প হলো অফলাইন ডিকশনারি। অ্যাপ্লিকেশনটি নিছকই শব্দের মানে বলে দেওয়া একটি ডিজিটাল অভিধান নয়, এটি মূলত ভাষা শেখার টুল। শব্দার্থ জানা, শেখা ও অনুশীলনের বিভিন্ন ব্যবস্থা রয়েছে অ্যাপটিতে। একবার ডাউনলোড করে নিলে পরে ব্যবহারের জন্য আর ইন্টারনেট-সংযোগ লাগে না। বাংলা অফলাইন ডিকশনারির সাফল্য তাঁদের আরও বড় প্রকল্প নিতে অনুপ্রাণিত করেছে। এখন তাঁরা কাজ করছেন বিভিন্ন ভাষার জন্য এ রকম ডিকশনারি নিয়ে। এ পর্যন্ত অফলাইন ডিকশনারি বাংলা, হিন্দি, গুজরাটি, আরবি, মারাঠি, তামিল, তেলেগু, কানাড়া, জাপানি, রাশিয়ান, তাগালোগ, কোরিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান এবং গ্রিক ভাষার জন্য রিলিজ হয়েছে। এর মধ্যে আরবি ৬৩ হাজার, তাগালোগ ডিকশনারি ৩৪ হাজার বার নামানো হয়েছে।
©somewhere in net ltd.