নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ছাত্র৷ সারাজীবন ছাত্রই থেকে যেতে চাই৷ আমি সকলের কাছ থেকে শিখতে চাই৷ এবং যা শিখেছি তা শিখাতে চাই৷

যুবায়ের আলিফ

যুবায়ের আলিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

হিজরতঃ ইসলামের সার্বিক প্রচার ও প্রসারে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ

২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১০:২৩




ইসলামের সার্বিক প্রচার ও প্রসারে হিজরতের গুরুত্ব ছিল অপরিসীম এবং এটা সংঘটিত হওয়াটা ছিল অত্যাবশ্যকীয়। এ ব্যাপারে রাসূলুল্লাহ (সা.) নবুওয়্যত প্রাপ্তির শুরুতেই অবগত ছিলেন। আর এটা সম্ভব হয়েছিল এভাবে, যখন সর্বপ্রথম জিবরীল (আ.) তাঁর (সা.) কাছে ওহী নিয়ে আসলেন এবং বললেন, ইকরা ..., অতঃপর তিনি (সা.) কাঁপতে কাঁপতে খাদীজা (রাদ্বিঃ) কাছে এসে বললেন, আমাকে কম্বল দিয়ে ঢেকে দাও। অতঃপর তাঁর কাঁপুনি চলে যাওয়ার পর তিনি (সা.) খাদীজা (রাদ্বিঃ) কে সব খুলে বললেন। অতঃপর তিনি তাঁকে (সা.) তার চাঁচাতো ভাই ওরাকা বিন নওফেল এর কাছে নিয়ে গেলেন, যিনি তখন নাসারা ছিলেন এবং আরবীতে ইঞ্জিল লেখতেন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ। তিনি তাঁর (সা.) নিকট থেকে সবকিছু শোনার পর বললেন, এটা সেই ফেরেশতা যিনি মূসা (আ.) এর কাছে এসেছিলেন। হায় আফসোস! তোমার গোত্র যখন তোমাকে তাড়িয়ে দিবে তখন যদি আমি জীবিত থাকতাম এবং যুবক থাকতাম! তখন তিনি (সা.) তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, তারা কি আমাকে বের করে দিবে? ওরাকা বললেন, তুমি যে কাজ নিয়ে এসেছ, এ পর্যন্ত যারা এ কাজ নিয়ে এসেছে তারা সবাই অন্যদের ক্রোধের রোষানলে ও দুশমনে পরিণত হয়েছে। যদি সেদিন পেতাম তাহলে আমি তোমাকে কোমর বেঁধে আমার সাধ্যমতো সাহায্য করতাম। তার কিছুদিন পরেই তিনি পরলোক গমন করেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিম।

তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) এটা স্পষ্ট বুঝতে পেরেছিলেন যে তার এ দাওয়াতী মিশন অনেক কঠিন হবে। তাঁকে (সা.) অনেক প্রতিকুল ও সঙ্গিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে এবং প্রয়োজনে দেশত্যাগও করতে হবে।

এরই প্রেক্ষিতে তিনি (সা.) নবুওয়্যতের পঞ্চম বর্ষে কতিপয় সাহাবীদেরকে হাবশায় বা আবিসিনিয়ায় (বর্তমান নাম ইথিওপিয়া) হিজরত করার অনুমতি দিলেন এবং বিশেষকরে হজ্জের সময় দূর-দূরান্ত থেকে আসা লোকদেরকে ইসলামের পথে আহবান করতেন। এর একটি উদ্দেশ্য ছিল, কোন গোত্রের লোকেরা তাঁর (সা.) ডাকে বেশি সাড়া দেয় এবং প্রয়োজনে সেখানে হিজরত করে তিনি (সা.) ইসলামের ঝান্ডাকে সমুন্নত করবেন ও এর প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিবেন।

যেসব কারণে হিজরত সংঘটিত হয়েছিলঃ

একঃ মক্কার লোকসকল তাঁর (সা.) আহ্বানে যথাযথ ভাবে সাড়া না দেওয়াঃ

মক্কায় ইসলাম প্রবর্তিত হয়েছিল বটে তবে সেখানে তা প্রতিষ্ঠিত হয়নি, প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল মদীনায়। রাসূলুল্লাহ (সা.) অক্লান্ত পরিশ্রম করেছিলেন মক্কাবাসীকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করতঃ ইসলামের বিজয় নিশান উড়াতে। আর এ দাওয়াতী কাজের জন্য তিনি (সা.) সব রকম জ্ঞান-প্রজ্ঞা ও হেকমত ব্যবহার করেছিলেন এবং নম্র ও ভদ্রোচিতের চরম পরাকাষ্টাও প্রদর্শন করেছিলেন যাতে কাফেরদের শক্ত মনে প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। কিন্তু প্রাথমিক পর্যায়ে তাঁর (সা.) আহবানে মক্কাবাসীদের মধ্যে অত্যল্প লোকই সাড়া দিয়েছিল।

দুইঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর নানাবিধ অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হওয়াঃ

রাসূলুল্লাহ (সা.) কঠিন থেকে কঠিনতর অপ্রীতিকর পরিস্থিতি ও প্রতিবন্ধকতার শিকার হতেন। তাঁর (সা.) গোত্র তাকে নানাবিধ কষ্ট দিতে সদা সজাগ দৃষ্টি থাকত। তারা তাঁর (সা.) ওহীর নূরকে নির্বাপিত করতে ও তাঁর (সা.) দাওয়াতী মিশনকে অংকুরেই বিনাশ করতে বহুমূখী অপকর্ম অবলম্বন করেছিল। কখনও বা কথায় আবার কখনো কাজে তাঁকে (সা.) কষ্ট দিত।

কথার দ্বারা তাঁকে (সা.) কষ্ট দিত। যেমন বলত, জাদুকর, কবী, পাগল। বিশেষ করে যখন নাযিল হল, তোমার নিকট আত্মীয়দেরকে ভীতি প্রদর্শন কর। এরই প্রেক্ষিতে তিনি (সা.) যখন ছাফা পাহাড়ে আরোহণ করে বিভিন্ন গোত্রের লোকদের নাম ধরে ডেকে এনে ইসলামের দাওয়াত দিলেন, তখন আবু লাহাব বলল, তোমার সারাদিন ধ্বংস হোক! এ কারণেই কি তুমি আমাদের ডেকেছিলে?

আবার কাজের দ্বারাও তাঁকে (সা.) কষ্ট দিত। যেমন, উরওয়া বিন যুবায়ের আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আল-আসকে জিজ্ঞাসা করলেন, মক্কার কাফেররা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে সব চাইতে পাশবিক আচরণ কি করেছিল? তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) একদা কা‌’বা ঘরে নামায পড়ছিলেন। ইতোমধ্যে উক্ববা বিন আবি মুয়াইত আসল এবং তার কাপড় দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর গ্রীবা পেঁচিয়ে ধরে টান মারল। এমতাবস্থায় আবু বকর (রাদ্বিঃ) আসলেন এবং উক্ববাকে কাঁধে ধরে টান দিয়ে সরিয়ে দিয়ে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে শ্বাসরোধে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করলেন। সহীহ বুখারী।

অন্য আরেকটি ঘটনায় আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) কা’বা ঘরে নামায পড়ছিলেন। আবু জাহল তার সাথীদেরকে নিয়ে বসে ছিল। একে অন্যকে বলতে লাগল, কে গরুর নাড়ী-ভূড়ি এনে মুহাম্মদ যখন সেজদায় যায় তার পিঠে রাখতে পারবে? তখন এক কমবখত ব্যক্তি উক্ত আবর্জনা এনে তাঁর (সা.) পিঠে রাখল এবং তারা হেসে লুটোপুটি খেয়ে একে ওপরের উপর আছড়ে পড়ে যেতে লাগল। এমতাবস্থায় রাসূলুল্লাহ (সা.) সেজদা থেকে মাথা উঠালেন না যাবত না ফাতেমা (রাদ্বিঃ) এসে তা অপসারণ করলেন এবং তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর কাছে বদ দোয়া করলেন। সহীহ বুখারী ও মুসলিম।

এর চেয়েও আরো লোমহর্ষক কাণ্ড হল, মক্কার কাফেররা তাঁকে (সা.) হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিল। এজন্য তারা প্রত্যেক গোত্র থেকে শক্তিশালী যুবকদেরকে নির্বাচন করল। তারা তাদের সবাইকে একটি করে তলোয়ার দিয়ে বলল, তোমরা সবাই একসাথে মুহাম্মদের উপর হামলা করবে যাতে তাঁর (সা.) কিসাসের বিষয়টি প্রত্যেক গোত্রের মাঝে ছড়িয়ে পড়ে, ফলে তাঁর (সা.) গোত্র কোন বদলা নিতে পারবে না। কিন্তু আল­াহ তায়ালা তাদের এ হীন কুপরিকল্পনা থেকে রাসূলুল্লাহ (সা.) কে মুক্তি দিয়েছিলেন। কারণ, ইতিহাস সাক্ষী, দুশমনরা নবীদেরকে হত্যা করতে পারে, রাসূলেদরেক নয়। স্মর্তব্য যে, রাসূল হলেন তারা যারা আল্লাহর পক্ষ থেকে নতুন বিধান নিয়ে এসেছেন। আর নবী হলেন তারা যারা পূর্ববর্তী রাসূলের বিধান প্রচার করেছেন।

তিনঃ নব মুসলিমগণ বহুমূখী নির্যাতনের শিকার হতেনঃ

যারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর প্রতি ঈমান আনতেন তারা কাফের কর্তৃক নানাবিধ বর্ণনাতীত শাস্তির সম্মুখীন হতেন। কাফেররা তাদেরকে সদাসর্বদা ভীত সন্ত্রস্ত করে রাখত। তাদের কেউ ছিল না যিনি তাদের রক্ষণাবেক্ষণের দায়ীত্ব নিবেন, যাতে করে তারা নিরাপদে এক আল্লাহর এবাদত করতে পারেন।

ইয়াসির গোত্রকে মক্কার কাফেররা কঠিনতম লাঞ্চনাকর শাস্তি দিয়েছিল যাতে তারা ইসলাম থেকে সরে আসে। একদা রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন এমতাবস্থায় যে তারা শাস্তি পেতেছিল। তিনি (সা.) তাদেরকে সান্তনা দিয়ে বললেন, ধৈর্য্য ধারণ কর, তোমাদের প্রতিদান হল জান্নাত।

উপরন্তু, শাস্তি পেতে পেতে সুমাইয়া (রাদ্বিঃ) ইসলামের শহীদের খাতায় প্রথম নাম লেখালেন। আর বেলাল (রাদ্বিঃ) এর সম্বন্ধে আমরা কে না জানি। তার মালিক গ্রীস্মকালের মরুভুমির তপ্ত বালুর উপর তাকে উপর করে শোয়াত এবং তার পিঠের উপর পাথর চাপা দিত যাতে সে তার দ্বীন ইসলাম থেকে ফিরে আসে। আর তিনি আহাদ আহাদ বলতেন। আবু বকর (রাদ্বিঃ) তার অবর্ণনীয় শাস্তি দেখে নিজে ঠিক থাকতে পারলেন না। অতপর বেলালের মালিকের সাথে একটি চুক্তিতে সম্মত হলেন যে আবু বকর (রাদ্বিঃ) তার মুশরিক গোলামকে বেলালের মালিককে দিবেন, প্রতিদানে সে বেলালকে আবু বকরের (রাদ্বিঃ) কাছে সোপর্দ করবে। অতপর আবু বকর (রাদ্বিঃ) বেলালকে পাওয়ার পর আযাদ করে দিলেন।

এহেন ন্যাক্কারজনক শাস্তির মূখাপেক্ষী হতেন সাহাবীগণ যাবত রাসূলুল্লাহ (সা.) তাদেরকে হিজরতের অনুমতি দিলেন। অতপর কতিপয় সাহাবাগণ-১০ সাহাবী ও ৫ জন সাহাবীয়া- কাফেরদের নির্যাতন থেকে নিরাপদ ও ঈমান রক্ষার জন্য নবুওয়্যতের পঞ্চম বৎসরে প্রথম হিজরত করলেন হাবশায়। তার কিছুদিন পরেই সেখানে ৮০ জনের অধিক সাহাবী হিজরত করলেন। এভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা তো মুসলিমদের শোভা পায় না। কেননা, তাদের আকাঙ্খা ছিল তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাথে থাকবেন এবং দ্বীন ইসলামের বাণী শ্রবণ করে নিজের ঈমান দৃঢ় করবেন। তাই সব নব মুসলিমদের এক সাথে থাকার নিমিত্তে একটি রাষ্ট্র গঠনের প্রয়োজন দেখা দিল তীব্র ভাবে, যেখানে তারা নির্বিগ্নে ধর্ম-কর্ম করতে পারবেন।

চারঃ রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দ্বীন-ইসলামের দাওয়াতে মদীনাবাসীর সাড়া দানঃ

হজ্জের সময় দূর-দূরান্ত থেকে আসা বিভিন্ন গোত্রের লোকদেরকে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে প্রবেশ করার জন্য আহবান করতেন। ঘটনাচক্রে হজ্জের সময় আক্বাবা নামক স্থানে মদীনার খাযরাজ গোত্রের ছয় জনের সাথে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর সাক্ষাত হল। তিনি তাদেরকে ইসলামের সারতত্ত¡ তথা একত্ববাদের দাওয়াত দিলেন।রাসূলুল্লাহর কি অপার কৃপা! মদীনায় তাদের প্রতিবেশী ছিল ইহুদী। ইহুদীরা তাদেরকে শেষ নবীর কথা বলত ও একত্ববাদের বৈশিষ্ট বোঝাত, আবার তাদেরকে হুমকিও দিত যে, ঐ নবীর অধীনে আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব এবং তোমাদেরকে পরাস্ত করব। বলা বাহুল্য যে, মদীনায় আওস ও খাযরাজ গোত্রের মাঝে শত শত বছর ধরে যুদ্ধ চলে আসছিল। তাই ইহুদীরা উভয় গোত্রকে শেষ নবীর অধীনে যুদ্ধ করতঃ তাদেরকে নিপাত করার ভয় দেখাত। এরই প্রেক্ষিতে আনসারগণ দুটি বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেছিলেন। একটি হল, একত্ববাদের এবং অপরটি হল শেষ নবীর। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দাওয়াতের আহবান পেয়ে তারা একে অপরকে বলতে লাগল, এতো সেই ব্যক্তি যার ব্যাপারে ইহুদীরা আমাদেরকে ভয় দেখাত। অতএব, চল আমরা শীঘ্রই ঈমান আনি যাতে করে ইহুদীরা আমাদের অগ্রে না যায়। অতপর তারা ঈমান আনল ও বাইয়াত গ্রহণ করল। তারপর তারা তাঁকে (সা.) বলল, আমরা আমাদের গোত্রকে এমতাবস্থায় রেখে এসেছি যে, তারা পরস্পরে ঝগড়া করে। আমরা প্রত্যাবর্তন করে তাদেরকে একত্ববাদের পথে আহবান করব। আল্লাহ যদি চান তাহলে তাদেরকে এক কাতারে শামিল করবেন। তারা যদি এক হয়ে যায় এবং আপনার অনুসরণ করে তাহলে এ দুনিয়ায় আপনার চেয়ে আর কেউ সম্মানি ব্যক্তি হবে না। অতপর তারা মদীনায় যেয়ে আওস ও খাযরাজের সবাইকে দাওয়াত পৌছাল এবং প্রতিটি ঘরে ঘরে ইসলাম ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর আলোচনা হতে লাগল।

এরই সুবাদে পরের বছর হজ্জের সময় মদীনার আওস ও খাযরাজ গোত্র থেকে ১২ জন লোক আসলেন যাদের মধ্যে ৫ জন ছিলেন পুরাতন আর বাকি ৭ জন ছিলেন নতুন। উদ্দেশ্য ছিল ইসলাম গ্রহণ করবেন ও রাসূলুল্লাহ (সা.) এর কাছে বাইয়াত গ্রহণ করবেন। তাদের এ সারা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা.) ইবনে উম্মে মাকতুম ও মুসআব বিন উমাইর কে তাদের সাথে মদীনায় পাঠিয়ে দিলেন এজন্য যে, তারা সেখানে লোকদেরকে ইসলামের পথে আহবান করবে এবং তাদেরকে ইসলামের বিধি-বিধান শিক্ষা দিবে। তাদের আহবানে সেখানে অনেক লোক ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করলেন। আর এভাবে মদীনা গড়ে উঠল ইসলামী দাওয়াত ও ইসলামী রাষ্ট্রের জন্য উর্বর ভুমি। যার মৌল ছিল তিনটিঃ জনগণ, নেতৃত্ব ও রাষ্ট্র। রাসূলুল্লাহ (সা.) এর এ দাওয়াত আওস ও খাযরাজদের জন্য ভোরের উর্মি ও ইহুদীদের জন্য বুমেরাং হয়ে দেখা দিল।

পাঁচঃ ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার জন্য হিজরতের প্রয়োজনীয়তাঃ

মক্কায় রাসূলুল্লাহ (সা.) এর দাওয়াতী মিশনে কেটে গেল ১৩ টি বছর। কিন্তু তিনি (সা.) আশানুরুপ ফল পাননি। আবার এদিক দিয়ে কোরআনেরও অর্ধেক অবতীর্ন হয়ে গেল। সাহাবাগণ নিরাপত্তার জন্য এদিক সেদিক চলে যেতে লাগলেন যাতে তারা নিরাপদে এক আল্লাহর এবাদত করতে পারেন। যদি এদেরকে কোন এক ভূখন্ডে একত্র করা না যায় তাহলে ইসলাম তার অংকুরেই বিনাশ হয়ে যাবে। তদুপরি রাসূলুল্লাহ (সা.) কোন গোত্র বা অঞ্চলের নবী নন। তিনি হলেন বিশ্বনবী। যার ব্যপ্তি সারা বিশ্ব। সুতরাং যদি কোন ইসলামী রাষ্ট্রের জন্ম না দেয়া যায় তাহলে বহির্বিশ্বে এর প্রভাব বিস্তার লাভ করবে না; বরং হয়ে পড়বে আঞ্চলিক ও গোত্র কেন্দ্রিক। তাই তিনি (সা.) কায়মনোবাক্যে কামনা করতেন একটি ইসলামী সমাজ বা একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। কেননা, তিনি (সা.) যতধিক না ছিলেন ধর্মীয় নেতা ততধিক ছিলেন রাষ্ট্রীয় নেতা। অনুরুপভাবে ইসলাম শুধুমাত্র একটি ধর্মের নাম নয়; বরং ইসলাম হল একটি সভ্যতা ও সংস্কৃতির নাম, যে ধর্মের নিজস্ব ঐতিহ্য ও স্বকীয়তা রয়েছে। আর এসব বাস্তবায়ন করার জন্য প্রয়োজন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করার। তাই তিনি (সা.) প্রয়োজন বোধ করলেন হিজরতের, যে হিজরতের দ্বারা গঠিত হবে একটি রাষ্ট্র এবং যে রাষ্ট্রের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য থাকবে সৈন্য-সামন্ত। এ দৃষ্টিকোণ থেকে মক্কার চেয়ে মদীনা ছিল উর্বর। কেননা, মদীনার আওস ও খাযরাজ গোষ্ঠীরা আপসে ঝগড়ায় লিপ্ত থাকার কারণে তাদের রণ কৌশল ছিল রপ্ত। পক্ষান্তরে মক্কাবাসী এমন ছিল না। তারা ছিল ব্যবসায়ী।

ছয়ঃ হিজরত নবীদের সুন্নতঃ

দ্বীনের ভাবমূর্তি সমুন্নত করতে, শান্তিপূর্ণ ও স্বধীনভাবে আল­াহর এবাদত করার জন্য হিজরতের গুরুত্ব অপরিসীম। তাই আল্লাহ তায়ালা কতিপয় নবীকে দ্বীন প্রচারের জন্য উপযোগী স্থলে হিজরত করার নির্দেশ দিয়েছেন। আর আমাদের নবী (সা.)ও এর বাইরে ছিলেন না।

নূহ (আ.) কে আল্লাহ নির্দেশ দিলেন কিশতি বানাতে এবং অতপর হিজরত করতে। ইবরাহীম (আ.) এর দাওয়াতের স্থান ছিল ইরাক। তিনি দ্বীন প্রচারের জন্য গিয়েছিলেন শাম, মিসর ও হেজায অঞ্চলে। তিনি নমরুদের অত্যাচার থেকে বাচার জন্য হিজরত করলেন ফিলিস্তিনে। উক্ত ফিলিস্তিনেই হিজরত করেছিলেন লূত (আ.)। তেমনিভাবে মূসা (আ.)ও হিজরত করেছিলেন নবুওয়্যত প্রাপ্তির আগে ও পরে। নবুওয়্যত প্রাপ্তির আগে এক ক্বিবতীকে মারার কারণে ফেরাউনের শাস্তি থেকে বাচার জন্য তিনি (আ.) হিজরত করেছিলেন ফিলিস্তিনে। আবার নবী হওয়ার পর হিজরত করেছিলেন তার গোত্রদেরকে নিয়ে যখন ফেরাউন তাঁকে নবী হিসেবে মানতে অস্বীকার করেছিল তখন। তাই এই অত্যাবশ্যকীয় হিজরত থেকে আমাদের নবী (সা.) ও বাদ ছিলেন না। আর তাঁর (সা.) হিজরত দেখা দিয়েছিল ইসলামের সুবর্ণ জয়ন্তী হিসেবে।

হিজরতের ফলাফলঃ

হিজরতের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ইসলামী রাষ্ট্র ও ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে প্রত্যেক মুমিন নিরাপদে এক আল্লাহর এবাদত করবে। কাফেররা শাস্তি দেয়ার জন্য ওঁত পেতে বসে থাকবে না। এ সমাজ অন্য সমাজের চেয়ে ভিন্ন ধরণের হবে। যার ভিত্তি হবে ন্যায়, সততা ও নিষ্ঠা। যেটা ইসলামী দাওয়াতের গুরু দ্বায়িত্ব আঞ্জাম দিবে। আর ইসলামের যে মহান শিক্ষা আছে, তা বাস্তবায়ন করবে। আর তা হল, আল্লাহর সাথে মুসলিমের কি সম্পর্ক, মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের কি সম্পর্ক, মুসলিমের সাথে অমুসলিমের কি সম্পর্ক। আল­াহর সাথে মুসলিমের কি সম্পর্ক তা বোঝানোর জন্য রাসূলুল্লাহ (সা.) মদীনায় যেয়ে সর্ব প্রথম যে কাজটি করলেন তা হল, মসজিদ প্রতিষ্ঠা করা। এর দ্বারা রচিত হল আল্লাহর সাথে বান্দার সম্পর্কের ইসলাম ধর্মের প্রথম সোপান।

তারপর তিনি (সা.) মুসলিমের সাথে অপর মুসলিমের কি সম্পর্ক তা প্রমাণ করার জন্য আনসার ও মুহাজেরদের মাঝে প্রতিষ্ঠা করলেন ভ্রাতৃত্ব বন্ধন। এমন ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করলেন যার দ্বারা প্রত্যেকের আমিত্বসুলভ অহংকার ও গোত্রীয়সুলভ পক্ষপাতিত্ব দূরীভূত হয়ে গেল এবং প্রত্যেকে সমাজে স্ব-পরমাত্মা ছেড়ে সামাজিক পরমাত্মা নিয়ে চলতে লাগলেন। সবাই সমাজের কল্যাণ ও উজ্জল ভবিষ্যতের চিন্তা মাথায় রেখে নব উদ্যমে জীবন যাপন করতে লাগলেন। আনসার ও মুহাজেরদের মাঝে ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এমন পর্যায়ে গিয়েছিল যে, আনসারগণ তাদের মুহাজের ভাইদের জন্য নিজের ধন-সম্পদেও শরিক করতে চাইলেন। যেমন, সা’দ(রাদ্বিঃ) আব্দুর রহমান (রাদ্বিঃ) কে বললেন, আমার অঢেল ধন-সম্পদ আছে। তার থেকে অর্ধেক আমি তোমাকে দিচ্ছি। এবং আমার দু’টি স্ত্রী আছে, তাদের মধ্যে কোনটি তোমার পছন্দ হয়, বল, আমি তাকে তালাক দিয়ে দিচ্ছি। অতপর ইদ্দত পূর্ণ হওয়ার পর তুমি তাকে বিয়ে করো। আব্দুর রহমান বললেন, আল্লাহ তোমার ধন-সম্পদে বরকত দান করুন। তোমাদের বাজার কোথায়? অতপর তারা তাকে বনি কায়নুকা বাজারের কথা বললেন। অতপর তিনি ঘি ও পনিরের ব্যবসা শুরু করে দিলেন। ... সহীহ বুখারী।

তারপর তিনি (সা.) প্রতিষ্ঠা করলেন মুসলিমের সাথে অমুসলিমের কি সম্পর্ক। আর এ জন্য তিনি (সা.) প্রণয়ন করলেন মদীনার সনদ, যেটির ব্যাপারে আমরা কম-বেশি সবাই অবগত আছি।

হিজতের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, রাসূলুল্লাহ (সা.) কাফেরদের হাত থেকে মুক্তি পেলেন ও জান সমেত নিরাপদে মদীনায় পৌঁছুলেন।

সারকথা, ইসলামের সার্বিক প্রচার-প্রসারের জন্য হিজরত সংঘটিত হওয়া ছিল একটি অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়। কিন্তু আজ আমরা কোথায় আর হিজরত ও হিজরতের শিক্ষা কোথায়? আজ ইসলামের নামটিই শুধু বাকি রয়েছে, কাজের বেলায় রিক্তহস্ত। আমরা আজ গতানুগতিক ধারার মুসলিম। বাবা মুসলিম, তাই আমিও মুসলিম। ডাক্তারের ছেলে হলেই যেমন ডাক্তার হওয়া যায় না; ডাক্তার হওয়ার জন্য মেডিক্যালে পড়তে হয়, তেমনি প্রকৃত মুসলিম হওয়ার জন্য ইসলামের প্রয়োজনীয় জ্ঞান শিখতে হয় এবং তা বাস্তব জীবনে বাস্তবায়ন করতে হয়। তবেই হওয়া যায় প্রকৃত মুসলিম। এবং কেবলমাত্র একজন প্রকৃত মুসলিমের মধ্যেই চেতনা জাগতে পারে ইসলামের সার্বিক প্রচার-প্রসারের জন্য কাজ করার দৃঢ় মনোবল। তাছাড়া বানের পানিতে ভেসে যাওয়া ময়লা-আবর্জনার মত নামমাত্র মুসলিম হয়ে লাভ নেই।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:০৪

নেওয়াজ আলি বলেছেন: সুন্দর উপস্থাপন । 

২| ২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: নবিজির দেখানো পথে চললে আজ করোনা নিয়ে আমাদের ভাবতে হতো না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.