নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি একজন ছাত্র৷ সারাজীবন ছাত্রই থেকে যেতে চাই৷ আমি সকলের কাছ থেকে শিখতে চাই৷ এবং যা শিখেছি তা শিখাতে চাই৷

যুবায়ের আলিফ

যুবায়ের আলিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুসলমানদের স্পেন বিজয়

১১ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:২৯





আফ্রিকায় মুসা: ২০০০ সৈনিকের সেনাপতি কুতাইবা মধ্য এশিয়া এবং চীনা তুর্কিস্তান দখল করেন। মুহাম্মদ বিন কাসিম পশ্চিম ভারতের সিন্ধু ও মুলতান অধিকার করেন। ইয়ামানের অধিবাসী মুসা বিন নুসাইর মিশরের শাসনকর্তা আব্দুল আজিজ কর্তৃক আফ্রিকার গভর্নরের নিযুক্ত হন। মুসা আফ্রিকার পশ্চিম সীমান্ত আইবেরিয়ান উপদ্বীপ জয় করেন। মুসার অধিনে ইফ্রিকিয়া মিশরের নাগপাশ হতে স্বাধীনতা লাভ করে বিজিত অঞ্চলে তার শাসনকে সুসংহত করে দুই পুত্রের সহোযোগিতায় তিনি দ্রুত গতিতে পশ্চিম দিকে অগ্রসর হন এবং তার দাসত্ব হতে মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস তারিক বিন জিয়াদকে তাঞ্জিয়াতে প্রতিনিধি হিসেবে প্রেরণ করেন।

৭১১ খ্রীস্টাব্দে মেজোরকা ও সার্দিনিয়াতে মূসা কর্তৃক নৌবাহিনী প্রেরিত হয়। সেসময় গথিক স্পেনের অন্তর্গত জিব্রাল্টার প্রণালীর দক্ষিণে আফ্রিকার উপকূলে অবস্থিত সিউটার (সেপ্টেম) শাসনকর্তা কাউন্ট জুলিয়ান।

তারিকের স্পেন পদার্পণ: সিউটার গভর্ণর জুলিয়ান এবং উত্তর আফ্রিকার স্পেনীয় উদ্বাস্তুদের অনুরোধে মুসা বিন নুসাইর স্পেন অভিযানে জন্য দামেস্কের খলিফা ওয়ালিদের অনুমতি প্রার্থনা করেন। খলিফা গনিমতের উদ্দেশ্য শুধু আকস্মিক আক্রমণে আবেদন মঞ্জুর করেন। মুসার প্রতি বিশ্বস্ততার প্রমাণস্বরূপ জুলিয়ানের অনুগত কিছু ব্যক্তি ৭০৯ খ্রীস্টাব্দে অক্টোবরে জিব্রাল্টার প্রণালী অতিক্রম করে স্পেন আক্রমণ করে। মুসা তারিক বিন জিয়াদকে ৭১০ খ্রীস্টাব্দে জুলাই মাসে চারশ' পদাতিক এবং একশ' অশ্বারোহী বার্বার সৈনিক সহ স্পেনের দক্ষিণ উপকূল জরিপ এবং প্রাথমিক পর্যবেক্ষণের জন্য প্রেরণ করেন।

তারা চারটি জাহাজে করে স্পেন পৌঁছেন। তারিক বিন জিয়াদের কাজ শেষ হলে ফিরে যান এবং অভিযান পরিচালনার অনুকূলে রিপোর্ট পেশ করেন। মুসা বিন নুসাইর ৭১১ খ্রীস্টাব্দের ৩০ শে এপ্রিল ৩০০ আরব এবং ৭০০০ হাজার বার্বার সৈন্যের একটি দল তারিক বিন জিয়াদের নেতৃত্বে স্পেনে প্রেরণ করেন। পরবর্তীতে সৈন্য সংখ্যা ১০ হাজারে বা ১২ হাজারে উন্নীত হয়। কাউন্ট জুলিয়ান কর্তৃক প্রেরিত চারটি জাহাজে তারিক বিন জিয়াদ জিব্রাল্টা প্রণালী অতিক্রম করে স্পেনের পার্বত্য অঞ্চলে অবতরণ করেন। এই স্থান আজও জাবালুত তারিক (তারিকের পর্বত) নামে তার স্মৃতি বহন করছে। পরবর্তীতে তিনি সেখানে রাবাত নামে একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। আলজাসিরা শহরকে ঘাটি হিসেবে সুরক্ষিত করে তারিক বিন জিয়াদ জিব্রাল্টার হতে উপকূল পথে পশ্চিমে অগ্রসর হন এবং কারতোয়া ও লাগুন দে জান্দা অধিকার করেন। দক্ষিণপূর্বাঞ্চলের গভর্নর থিউডোমির এই সংবাদ পেয়ে বিচলিত হয়ে রাজা রডারিককে মুসলিম বাহিনীর আগমন সম্পর্কে অবহিত করেন।

ওয়াদী লাক্কার যুদ্ধ ও ভিজিগথদের পরাজয়: মুসলমানদের স্পেনে আক্রমণের সময় রাজা রডারিক দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিদ্রোহ দমনে ব্যস্ত ছিলেন। তারিক বিন জিয়াদের অভিযানের খবর পেয়ে তিনি দ্রুত রাজধানী টলেডোতে প্রত্যাবর্তন করেন। রাজধানীতে পৌঁছে তিনি সামন্ত রাজদেরকে তাদের নিজ নিজ বাহিনী নিয়ে কর্ডোভাতে তার সাথে একত্রিত হতে আদেশ দিলেন। তার নিজেরও বিরাট সেনাবাহিনী ছিল। সামন্ত রাজাদের সেনাসহ তার অধীনে সম্মিলিত সেনা সংখ্যা দাঁড়ালো এক লক্ষ। অপরদিকে তারিক বিন জিয়াদের সৈন্য ছিল মাত্র ১২ হাজার। উভয় পক্ষের এই অস্ম সেনাবাহিনী ২৭ শে রমজান ৯২ হিজরি (১৯ শে জুলাই ৭১১ খ্রী.) আকরোশ দে-লা ফ্রন্টেরার সন্নিকটে শারিশাতে (স্পেঃ জেরেজ) ওয়াদী লাক্কার উপত্যকায় লাগুন দে জান্দা নদীর উপকূলে মেদিনা সিদনিয়ার শহর ও হ্রদের মধ্যবর্তী স্থানে তাদের শক্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হয়। উভয় পক্ষের মধ্যে সংঘটিত এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ স্থায়ী হয় সাত দিন। উইতিজার পুত্র আচিলা ও ভ্রাতা বিশপের আক্রোশ ও অনিচ্ছা সত্ত্বেও রডারিকের অনুরোধে স্পেনের সম্মিলিত বাহিনী পরিচালনা করতে বাধ্য হন। তারা আন্তরিকভাবে স্পেনে মুসলিম শাসনকে অভিনন্দন না জানালেও মনে প্রাণে রাজা রডারিকের পতন কামনা করত। তাদের ঘৃণা ও বিদ্বষই অন্যায়ভাবে ক্ষমতা দখলকারী রাজা রডারিকের পরাজয়ের মূল। কারণ। তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল মুসলিম বাহিনী গনিমতের মাল নিয়ে ফিরে যাবে এবং রডারিক যুদ্ধ ক্ষেত্রে নিহত বা পরাজিত হবে। এই সুযোগে তাদের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করা নিরাপদ হবে।পূর্বপরিকল্পনা মোতাবেক তারা প্রথম আক্রমণেই যুদ্ধ ক্ষেত্র থেকে পলায়ন করে।রডারিকের পরিচালনাধীনে ছিল উন্নতমানের অস্ত্রশস্ত্রে সুসজ্জিত সুশিক্ষিত ও সুশৃঙ্খল সেনাবাহিনী। এই সেনাদলে অন্তর্ভুক্ত ছিল সার্ফগণ (ভূমিদাস)। তারা শত্রুদের আক্রমণের সাথে সাথে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পশ্চাদপসরণের জন্য আগ থেকেই প্রস্তুত ছিল। মুসলিম বাহিনীর প্রথম আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হলেও শেষপর্যন্ত তারিক বিন জিয়াদের প্রচণ্ড আঘাতের সম্মুখে গথিকবাহিনী পরাজয় বরণ করতে বাধ্য হয়। রাজা রডারিক যুদ্ধ ক্ষেত্র হতে পালানোর সময় নদী পার হবার সময় দূর্ঘটনায় পতিত হন এবং শোচনীয়ভাবে মৃত্যু বরণ করেন।

সমস্ত সৈন্যকে এক সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে সমাবেশ করে রাজা রডারিক মারাত্মক ভুল করেন।তিনি মুসলিম সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য অভিযানকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত সেনাসহ সমস্ত সেনা প্রেরণ করেন।যুদ্ধে এমন বিরাট সাফল্যের কথা তারিক বিন জিয়াদ চিন্তা করতে পারেন নি। তিনি মুসা বিন নুসাইরকে স্পেন অভিযানের ফলাফল বিস্তারিতভাবে অবহিত করেন। উত্তরে মুসা তার অগ্রাভিযান স্থগিত রাখতে বলেন। কিন্তু বিচক্ষণ সমরবিদ তারিক বিন জিয়াদ ভিজিগতদের পুনরায় সংঘবদ্ধ হওয়ার সুযোগ না দিয়ে অনতিবিলম্বে আক্রমণ করার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। তিনি গনিমতের মাল নিয়ে আফ্রিকায় না ফিরে গিয়ে রডারিকের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে অবাক করে শহরের পর শহর দখল করে চললেন।

অবশিষ্ট এলাকা সমূহ বিজয়: এই পরাজয়ের ফলে খ্রীস্টানদের মধ্যে বিরাট প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। তারা পুনরায় স্থানীয়ভাবে বা আঞ্চলিকভিত্তিক যুদ্ধ ব্যতীত বিশাল যুদ্ধক্ষেত্রে মুসলমানদের মোকাবিলা করতে সাহস পায়নি। দেশের বিপর্যস্ত সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ও অস্থিরতার দরুন সমগ্র স্পেন মুসলমানদের করতলগত হয়। রডারিকের পরাজয়ের পর খ্রীস্টানগণ জাল-মালে প্রভূত ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দেশ থেকে পলায়ন করে। ভূমিদাস ও ইহুদিগণ মুসলমানদের বিরোধিতা না করে সাদরে গ্রহণ করে। কিন্তু অভিজাত শ্রেণি ও স্বাধীন সামন্ত সর্দারগণ বিভিন্ন অঞ্চলে বাধা প্রদান করে। একটি ক্ষুদ্র দলের আক্রমণে এলভিরা ও আর্কিডোনার পতন ঘটে। তারিক বিন জিয়াদের প্রধান বাহিনী অতিদ্রুত গতিতে এচিজার মধ্য দিয়ে গথ রাজধানী টলোডের দিকে অগ্রসর হয়৷ পলায়নপর গথগণ তাদের আশ্রয় স্থান থেকে মুসলিম বাহিনীকে এচিজাতে বাধা প্রদান করতে পারত; কিন্তু সম্মানজনক শর্তে তারা আত্মসমর্পণ করে।

মুগিম নামক জনৈক সেনানায়কের অধীনে সাতশ' অশ্বারোহীর একটি ক্ষুদ্র দল কর্ডোভা নগরী অবরোধ করে। দুই মাস অবরোধের পর এক রাখালের বালকের সাহায্যে মুসলিম বাহিনী কর্ডোভা নগরীতে প্রবেশ করতে সফল হয়। এই রাখাল বালক মুসলিম বাহিনীকে নগর প্রাচীরের একটি সুরঙ্গ পথের সন্ধান দিয়েছিল। এই পথেই মুসলিম বাহিনী নগরের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে। শহর প্রশাসকের নেতৃত্বে গীর্জায় আশ্র‍য় গ্রহণকারী খ্রীস্টান ব্যতীত অবশিষ্ট নাগরিকগণ মুসলিম বাহিনীর নিকট সানন্দে আত্মসমর্পণ করে। সেনাপতি মুগিম গীর্জায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

তিনি গীর্জায় আশ্রয়গ্রহণকারী খ্রীস্টানদের ইসলাম ধর্ম গ্রহণ বা জিজিয়া প্রদানে সম্মত হতে বলেন। খ্রীস্টানগণ উভয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। ৯৩ হিজরীর মহররম মাসে গীর্জায় অগ্নি সংযোগের তারা আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। মালাগা, অরিহুয়েলা আলজেরিয়ার রাজধানী এবং এলভিরা বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী পূর্ব স্পেনে (লভান্তে) গমন করে এবং রডারিকের পক্ষে থিওডোমির শাসানাধীন সম্পূর্ণ পূর্বস্পেন, ভ্যালেন্সিয়া ও আলমেরিয়ার মধ্যবর্তী এলাকা অতি দ্রুত মুসলিমদের অধীনে চলে আসে। মুরসিয়ার গিরিসংকটে থিওডোমি অল্পসময়ের জন্য মুসলিম বাহিনী বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে।

মুরসিয়ার পতনের পর থিওডোমির সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়ে যায়। অবশেষে তিনি পূর্বাঞ্চলের রাজধানী অরিহুয়েলাতে আশ্র‍্য গ্রহণ করেন। পরাজিত থিওডোমির শঠতার আশ্রয় গ্রহণ করে নগরীর উপকণ্ঠে পুরুষ সৈন্যের বেশে অসহায় নারী ও শিশুদের সন্নিবেশ করেন। মুসলিম বাহিনী লক্ষ্য করে যে, নগরীটি অসংখ্য সৈন্য দ্বারা পরিবেষ্টিত। থিওডোমির ছদ্মবেশে নিজেই দূত হিসেবে মুসলিম সেনাপতির নিকট প্রস্তাব পেশ করেন নগরীবাসীর জান-মাল ইজ্জতের নিরাপত্তার আশ্বাস দিলে তারা আত্মসমর্পণ করতে পারে। মুসলিম সেনাপতি রক্তপাতের পরিবর্তে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। সেনাপতি নগরে প্রবেশ করে থিওডোমির ও তার দুই চারজন ভক্ত ব্যতীত আর কোনো সন্য দেখতে না পেয়ে বিস্ময়ে হতবাক হয়ে জিগ্যেস করলেন "আপনার সেনাবাহিনী কোথায়?" উত্তরে থিওডোমির সম্পূর্ণ ঘটনা বর্ণনা করেন। থিওডোমির কৌশলে বিমুগ্ধ হয়ে সেনাপতি তাকে মুরসিয়া প্রদেশের গভর্নর নিযুক্ত করেন। পরবর্তীতে তার নামানুসারে মুরসিয়া প্রদেশ তুদমির নামে পরিচিত হয়।

রাজধানী টলেডোর পতন: মুরসিয়া ও আরিহুয়েলা বিজয়ের পর সেনাপতি তারিক বিন জিয়াদ গথরাজধানী টলোডের অভিমুখে অগ্রসর হন। মুসলিম বাহিনীর দুর্বার অগ্রাভিযানে ভীত সন্ত্রস্ত রাজন্যবর্গ, অভিজাত শ্রেণি ও যাজকগণ রাজধানী পরিত্যাগ করে আস্তুরিয়ার পার্বত্য অঞ্চলে আশ্রয় নেয়। সাধারণ জনগণ ও ইহুদি সম্প্রদায় উৎফুল্লচিত্তে খ্রীস্টান ও অভিজাত শ্রেণি কর্তৃক পরিত্যক্ত শহর ও নগরের শাসনভার মুসলমানদের হাতে সমর্পণ করে। ইহুদিদের অসহযোগিতার ফলে খ্রীস্টানগণ শহরগুলো পরিত্যাগ করতে বাধ্য হয়। উইতিজার পুত্রগণ এবং কাউন্ট জুলিয়ান রাজধানীতে ছিলেন। মনে হয় তারিক বিন জিয়াদের নিকট নগর সমর্পণ করতেই তারা অপেক্ষমাণ ছিলেন।তারিক বিন জিয়াদ বিনা বাধায় নগরে প্রবেশ করেন। নগরবাসীদের সাথে তিনি অত্যন্ত ভালো ব্যবহার করেন। রাজধানী বিজয়ের পর মুসলিম বাহিনী প্রচুর গনিমত লাভ করেন। জন্ম তারিখ, নাম, অভিষেক ও মৃত্যু তারিখ উৎকীর্ণ করা স্বর্ণের চব্বিশ মুকুট ছিল এই গনিমতে। এগুলো গীর্জার গুপ্তস্থান থেকে উদ্ধার করা হয়।

তারিক বিন জিয়াদ বিজিত অঞ্চলে সুষ্ঠু শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় আত্মনিয়োগ করেন। উইতিজার পুত্র আচিলাকে মুসলিম শাসনের প্রতি আনুগত্যের স্বীকৃতি স্বরূপ তিন হাজার কৃষিখামার সমন্বয় গঠিত তার পূর্ব জমিদারী প্রত্যার্পন করা হয়। এতে প্রমাণিত হয় যে ভিজিগথদের হাতে সীমাহীন সম্পত্তি কেন্দ্রীভূত হয়েছিল। বিশপ অপ্পাসকে টলেডোর গভর্নর নিয়োগ করা হয়। কাউন্ট জুলিয়ান তার কাজে প্রতিদান হিসেবে সিউটা প্রদেশে শাসনভার লাভ করেন। তার পরবর্তী খ্রীস্টানগণ এই প্রদেশ শাসন করেন। মধ্য ও পূর্বাঞ্চলসহ অর্ধেক স্পেন ৭১১ খ্রীস্টাব্দের গ্রীষ্মকালের মধ্যে তারিক বিন জিয়াদের করতলগত হয়। এভাবে খলিফা ওয়ালিদের রাজ্যসীমা সুদূর ইউরোপের ভূখণ্ড পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। তারিক বিন জিয়াদ তার কৃতিত্বপূর্ণ সামরিক বিজয়ের জন্য স্মরণীয়। কিন্তু অভিযানের পর অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে মুসা বিন নুসাইরকে ক্ষুব্ধ করে রাজনৈতিক দিক থেকে তিনি মারাত্মক ভুল করেন। গথিক শাসক কে পরাজিত করে তিনি সীমাহীন খ্যাতি অর্জন করেন। মুসলমান ও তাদের মিত্রগণ দেশের উত্তরাঞ্চলে পলাতক খ্রীস্টানদের পরিত্যক্ত শহরগুলোতে বসতি স্থাপন করেন। মুসলমানদের নেতৃত্বে বিজিত শহর ও জেলাগুলোতে মুসলিম গভর্নর নিযুক্ত করা হয়। মুসলমানদের সংখ্যা স্বল্পতার জন্য প্রত্যেক শহরে প্রতিরক্ষা বাহিনী নিয়োগ করা সম্ভব ছিল না। তাই অনেক শহরের শাসনভার উপদেষ্টা পরিষদের উপর ন্যস্ত করতে হয়।

মুসা বিন নুসাইরের আগমন: তারিক বিন জিয়াদের স্পেন বিজয় তার উর্ধ্বতন ব্যক্তি ও পৃষ্ঠপোষক মুসা বিন নুসাইরের মনে ঈর্ষার সৃষ্টি করে। মুসা বিন নুসাইর এতদিন আফ্রিকায় নিরবে ছিলেন। ৯৩ হিজরীর রমজান মাসে তারিক বিন জিয়াদের অসমাপ্ত অভিযানকে সমাপ্ত করার উদ্দেশ্যে এবং স্পেন বিজয়ের সুনাম ও বৈষয়িক অংশ লাভে উদ্দেশ্যে আঠারো হাজার সৈন্য নিয়ে মুসা বিন নুসাইর স্পেনে রওনা করেন এবং কঙ্করময় খিদরা দ্বীপে পদার্পণ করেন। আরব অভিজাত ইয়ামানের হাবিব বিন আবু আবদাহ ফিহরী ইউসুফ আল ফিহরীর পূর্বপুরুষ, রাসুলের সাহাবাদের বংশধর এবং কিছু বার্বার সর্দার সমন্বয়ে গঠিত হয় তার বাহিনী। সংখ্যাগরিষ্ঠ বেদুইন সম্প্রদায়ের উপর কর্তৃত্ব করত আরবগণ। আফ্রিকায় আগত কাউন্ট জুলিয়ানরা আরবদের সঙ্গে যোগ দেয়। মুসা বিন নুসাইর ইচ্ছাপূর্বক তারিক বিন জিয়াদের অগ্রাভিযানের পথ পরিহার করে উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হন। প্রথমেই তিনি মেরিদা সিদনীয়া ও কারমোনা দখল করেন। এই দুই শহর মুসলমানদের অধীনে চলে আসে। কয়েক মাস অবরোধের পর মুসা বিন নুসাইর সেভিল অধিকার করেন। এরপরই নিয়েবলা ও বেজা বিজিত হয়। মুসা বিন নুসাইর মেরিদাতে ভিজিগথদের এক শক্তিশালী সৈন্য দলে দুর্লঙ্ঘ প্রতিরোধের সম্মুখীন হন। দীর্ঘ এক বৎসর অবরোধের পর মেরিদা শহর রক্ষায় নিয়োজিত সৈন্য দল ৯৪ হিজরীর শাওয়াল মাসে আত্মসমর্পণ করে।

বিজয়ী বেশে মুসা বিন নুসাইর টলেডোর নিকটবর্তী তারাভেরতে প্রবেশ করেন। সেখানে তারিক বিন জিয়াদ তার অপেক্ষা করছিলেন। সে যুগে প্রথা অনুযায়ী দুই বিজয়ী বীর তাদের অসি বিনিময় করেন। দুঃখের বিষয় এই খ্যাতিনামা বীরের সাক্ষাত আনন্দঘন পরিবেশ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হয়। ডজি ও হোলের মতে, "মুসা বিন নুসাইর তারিক বিন জিয়াদকে তার আদেশ অমান্য করার জন্য বেত্রাঘাত করেন।" প্রবল বিক্রমশালী বীর তারিক বিন জিয়াদ সামরিক শৃঙ্খলার প্রতি নজিরবিহীন শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে নীরবে এই অপমান সহ্য করেন। সম্ভবতঃ হজরত উমর রা. ও সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদ রা. এর ঘটনা তার স্মরণে ছিল। পরবর্তীতে মুসা বিন নুসাইর ও তারিক বিন জিয়াদের মধ্যে আন্তরিক বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। মুসার নামে ল্যাটিন ভাষায় স্বর্ণমুদ্রা চালু হয়৷ উভয় সেনাবাহিনী একত্রিত করে দুই বিখ্যাত সেনাপতি পুনরায় অভিযান শুরু করেন। মুসা বিন নুসাইর ও তারিক বিন জিয়াদ আরাগোনা অভিমুখে অগ্রসর হন। তারিক বিন জিয়াদ সেনাবাহিনীর অগ্রবর্তী দলের সেনাপতি ছিলেন। আরাগোনার গভর্নর কাউন্ট ফরচুন আত্মসমর্পণ করে ইসলাম গ্রহণ করেন। সারাগোসা, বার্সিলোনা আস্তুরিকা লিওন, লেগিও এবং ক্যান্টাবেরিয়ার রাজধানী আমায়্যা শর্তাধীনে মুসা বিন নুসাইরের নিকট আত্মসমর্পণ করে। উত্তরাঞ্চলে একের পর এক শহরের পতন ঘটে৷ ফলে অনধিক দুই বৎসরের মধ্যে সম্পূর্ণ স্পেন মুসলমানদের করতলগত হয় এবং উত্তরে পীরেনিজ পর্বতমালা পর্যন্ত এর সীমানা সম্প্রসারিত হয়। বার্সিলোনা, পাম্পলোনা, লেরিদা, হুয়েস্কা, জেরেনা এবং তরতোসা কর প্রদানে সম্মত হয়ে সায়ত্তশাসন লাভ করে।

উত্তর-পশ্চিম স্পেনের অবশিষ্ট অংশ বিজয়ের অপেক্ষায় থেকে মুসা বিন নুসাইর পীরেনিজ পর্বতমালা অতিক্রম করে গথিক শাসিত এলাকা লাংগোয়েডকের একাংশ অধিকার করেন। নারবোন, এভিগনন ও লুজুনের পতন ঘটে। ফ্রান্সের কারোলেনজিয়ান সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা হেরিষ্টিলের পেপিন— যাকে আরবগণ কারলাহ বলতেন। তিনি এভিগনন ও লুজুন দখল করে পুনরায় নারবোন অবরোধ করেন। কিন্তু এটা জয় করা পক্ষে সম্ভব হয়নি। ফ্রান্সের অন্তর্গত প্রদেশে ওয়ালিদের সমর্থন না থাকা মুসলিম সেনাবাহিনী রোন (রুদানো) নদী অতিক্রম করে না। রোন নদীর তীরে মুসলিমগণ আরবি ভাষায় উৎকীর্ণ লিপি দেখতে পায়৷ এটা ফ্রান্সের শাসক পেপিন অথবা খলিফা ওয়ালিদের দূত মুগিস স্থাপন করেছিলেন।এতে লিখা ছিল "ক্ষান্ত হও আর অধিক অগ্রসর হইও না, ইসমাইলের সন্তানগণ প্রত্যাবর্তন কর"। এই শিলালিপি দেখে মুসলিম বাহিনী নিরুৎসাহিত হয়। মুসলিম বিজয়ের জোয়ারে ওয়ালিদ আনন্দিত ছিলেন সত্য কিন্তু দূরদেশে সৈন্যদের দুঃখ-কষ্টের বর্ণনায় মর্মাহত হন। নারবোনে অবস্থানরত মুসলমানদের দুঃখ-কষ্টের সংবাদ ওয়ালিদের নিকট পৌঁছে। সম্পূর্ণ দক্ষিণ ইউরোপ জয় করে স্পেনকে সিরিয়ার সঙ্গে যুক্ত করার মুসা বিন নুসাইরের পরিকল্পনা ওয়ালিদ প্রত্যাখ্যান করেন। ফলে মুসা বিন নুসাইর ফ্রান্স অভিমুখে অভিযান পরিচালনা থেকে বিরত থাকেন। এতে দক্ষিণ ইউরোপের অবশিষ্টাংশ জয় করে ইউরোপ ও এশিয়া মাইনরের মধ্যে দিয়ে তার সিরিয়ায় প্রত্যাবর্তন করার পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়ে যায়। দামেস্কের অদূরদৃষ্টিমূলক বৈদেশিক নীতির ফলে মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃতির একটি সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট হয়। অতঃপর মুসা বিন নুসাইর স্পেনের পর্বতসঙ্কুল এলাকার প্রতি মনোনিবেশ করেন। সেখানে কিছু সংখ্যক পলাতক খ্রীস্টান আশ্রয় গ্রহণ করে সমরসজ্জায় লিপ্ত ছিল। তিনি গ্যালিসিয়ায় প্রবেশ করে লুগো দুর্গ ও অন্যান্য এলাকা অধিকার করেন এবং শত্রুকে আস্তুরিয়াসে কঙ্করময় সঙ্কীর্ণ গিরিসংকটে বিতাড়িত করেন। মুসলিম সেনাদের অপ্রতিরোধ্য গতি ও সাহস দেখে খ্রীস্টান গেরিলা বাহিনী একের পর এক আত্মসমর্পণ করে। ত্রিশ জন পুরুষ ও দশ জন নারীসহ পিলাইও আস্তুরিয়াসের কঙ্করময় গিরিসংকটে কোভাডোংগাতে আত্মগোপন করে রক্ষা পায়। পিলাইও অপরাজিত থাকে এবং আস্তুরিয়া অনধিকৃত থাকে। এই অপরাজিত সর্দার এবং অজেয় গিরিসংকটই পরবর্তীতে স্পেন হতে মুসলিম শাসনের অবসান এবং সেখান থেকে মুসলমানদের বিতাড়িত হওয়ার মূল কারণ হিসেবে কাজ করে।

ভিজিগথীয় শাসনামলে দেশের রাজনৈতিক ঐক্য ফাটল ধরে। মুসলিম শাসন কালে সেটা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। স্পেন ত্যাগের পূর্বে মুসা বিন নুসাইর সদ্য বিজিত রাজ্যে সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অবলম্বন করেন। তার পুত্র আব্দুল আজিজ উত্তর আফ্রিকার ভাইসরয়ের অধীনে স্পেনের গভর্নর পদে নিযুক্ত হন। রাজধানী প্রতিষ্ঠিত হয় সেভিলে। অন্য ছেলে বীর যোদ্ধা আব্দুল্লাহকে ইফ্রিকিয়ার দায়িত্ব ভার অর্পণ করেন। কনিষ্ঠ পুত্র আব্দুল মালিক মরক্কোর শাসন ভার গ্রহণ করেন। তাঞ্জিয়াকে সদর দফতর করে আব্দুস সালেহ উপকূল রক্ষা ও নৌবাহিনীর দায়িত্ব পালন করেন। এমন নববিজিত শাসনভার যোগ্য হাতে অর্পণ করে তিনি স্পেন পরিত্যাগ করেন।

সহজে স্পেন বিজয়ের কারণ সমূহ: মুসলিম সেনাবাহিনী শক্তি ও শান্তি উভয় নীতি অনুসরণ করে গথিক সাম্রাজ্য অধিকার করে। স্পেনের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুরাবস্থা মুসলিম অভিযানকে সাফল্য মণ্ডিত করতে সাহায্য করে। খ্রীস্টীয় পঞ্চম শতাব্দীতে আগমনকারী ভিজিগথ শাসক শ্রেণি ও রোমানদের মধ্যে তখনও বিরোধ বিদ্যমান ছিল। পূর্ববর্তী সুয়েভী ও ভ্যাণ্ডালদের বিরুদ্ধেও ভিজিকগথদের যুদ্ধ করতে হয়। আত্মকলহে অতিষ্ট, যুদ্ধ-বিবাদে অতিষ্ঠ স্পেনের সাধারণ জনগণ মুসলমানদেরকে তাদের ত্রাণকর্তা ও হিতাকাঙ্ক্ষী হিসেবে বিবেচনা করে। এজন্যই তারা মুসলিম আক্রমণ ও অভিযানকে সর্বোতভাবে সাহায্য করে এবং অভিনন্দন জানায়। ফলে মুসলিম বাহিনী অল্প সময়ের মধ্যে উপদ্বীপকে সম্পূর্ণভাবে অধিকার করতে সক্ষম হয়। ইসলামী আদর্শে বিশ্বাসী আরব সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করার ক্ষমতা স্পেনীয়দের ছিল না। বার্বারদের দ্বারা গঠিত অগ্রবর্তী সেনাদল কঠোর পরিশ্রম ও সাহসিকতায় আরবদের তুলনায় কোনো দিকে থেকেই নিম্নমানের ছিল না। ইবনে হাইয়ানের মতে, "স্পেন বিজয়ের অন্যতম প্রধান কারণ ছিল মুসা বিন নুসাইরকে আফ্রিকার গভর্নর নিযুক্ত করা।

স্পেনে মুসা বিন নুসাইরের অভিযান ছিল পূর্বপরিকল্পিত। জুলিয়ান ও অন্যান্যদের দ্বারা আক্রমণ এই অভিযানের পটভূমি হিসেবে কাজ করে। কুতাইবা ও মুহাম্মদ বিন কাসিমের ন্যায় মুসা বিন নুসাইরও হাজ্জাজ বিন ইউসুফের সহিত দেশ বিজয়ের প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হয়ে পাশ্চাত্যের দিকে অগ্রসর হয়। সফল কূটনীতিবিদ হিসেবে তিনি রক্ত পিপাসু বার্বারদের অধিকাংশ সময় যুদ্ধ ক্ষেত্রে ব্যস্ত রাখতেন যাতে তারা আরবদের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে আসার সুযোগ লাভ করে। বার্বারগণ আরবদের আত্মম্ভরিতা ও প্রগলভতাকে ঘৃণা করত। তিনি ভ্রাতৃত্বসূলভ ব্যবহার দ্বারা বার্বাদের হৃদয় জয় করতে সক্ষম হন। বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে ইসলামের সাম্যের বাণী প্রচার করে তাদেরকে সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য জিহাদ করতে উদ্বুদ্ধ করেন। সেনাবাহিনীতে রণনিপুণ বহু বার্বারকে তিনি যথাযোগ্য পদমর্যাদা দান করেন। এদের মধ্যে তারিক বিন জিয়াদের নাম উল্লেখযোগ্য। স্পেনে অভিযান পরিচালনাকারীদের মধ্যে অধিকাংশ ছিল বার্বার। দুর্ধর্ষ বার্বারদের অসম সাহসিকতা ও রণনৈপুণ্য স্পেন বিজয়ের মূলে বিশেষ অবদান রেখেছে।

দক্ষিণাঞ্চলে মরুভূমিতে রাজ্য বিস্তারের অসুবিধার জন্য উত্তরদিকে সম্পদশালী স্পেনের প্রতি মুসা বিন নুসাইরের দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়। এদিকে ভিজিকগথদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দুর্বলতা এবং অন্যদিকে আরব ও বার্বার গোত্রীয় সংহতি ও ইসলামের আদর্শ তারিক বিন জিয়াদ ও মুসা বিন নুসাইরকে স্পেন বিজয়ের পথ সুগম করে। মুসা বিন নুসাইর উত্তর আফ্রিকার বিস্তীর্ণ এলাকা এবং স্পেন জয় করার আশা রাখতেন। গোয়াদালেতে ১২ হাজার সৈন্য নিয়ে যুদ্ধ জয়ের পর তারিক বিন জিয়াদ টলেডোর দিকে অগ্রসর হন। হিসপানীয় ও ভিজিগথদের মধ্যে মতবিরোধের ফলে তারা তারিক বিন জিয়াদকে বাধা প্রদানে ব্যর্থ হয়। এই ব্যর্থতার ফলে মুসা বিন নুসাইর উৎসাহ ও অনুপ্ররণা লাভ করেন। খ্রীস্টান শাসক ও সেনাপতিগণ আরামপ্রিয়তা ও কর্মবিমুখতার জন্য সেনাবাহিনীর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে। অপরদিকে সৈন্যগণ আক্রমণ প্রতিহত করে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার পরিবর্তে আত্মরক্ষায় ব্যস্ত হয়ে ওঠে। মুসলিম সেনাবাহিনী গোত্রীয় চরিত্র ও ইসলামী আদর্শের অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ ছিল। মুসলিম সেচ্ছাসেবকগণ গনিমত লাভ ব্যতীত, ধর্মীয় অনুপ্রেরণা যেমন— মরলে শহিদ ও বাঁচলে গাজী এই অনুপ্রেরণায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রাণপণ যুদ্ধ করে। মুসলিম সেনাগণ খ্রীস্টানদের তুলনায় দৈহিক শক্তি ও রণ নৈপুণ্যে উন্নত ছিল। ভূমিদাস ও ক্রীতদাসদের সমন্বয়ে গঠিত খ্রীস্টান সেনাবাহিনী যুদ্ধে জয়ে তাদের ভাগ্যের কোনো ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে না এই কথা স্মরণ রেখে যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করত। ফলে যুদ্ধের ময়দানে অগ্রসর না হয়ে পশ্চাদপসরণ করত। মুসলিম বাহিনী স্পেনে প্রবেশ করার পর নৌবহর জ্বালিয়ে দেয় এবং পশ্চাদপসরণের পথকে রুদ্ধ করে।

মাক্কারীর মতে, স্পেনীয়দের পরাজয়ের মূল কারণ ছিল ইল্লিয়ানের অসন্তুষ্টি। ইল্লিয়ান টলেডোর গথিক শাসক উইতিজার প্রতিনিধি হিসেবে সিউটা থেকে উত্তর আফ্রিকার একাংশ শাসন করছিলেন। অবৈধভাবে উইতিজারকে অপসারণ করে টলেডোর সিংহাসন অধিকার করায় তিনি রডারিকের প্রতি অসন্তুষ্ট ছিলেন। ফলে তিনি মুসলিম আক্রমণকে প্রতিহত করা তো দূরের কথা বরং মুসা বিন নুসাইরকে আন্দালুস আক্রমণ করার জন্য আমন্ত্রণ জানান।

স্পেন বিজয়ের অন্যান্য কারণসমূহর মধ্যে উত্তর আফ্রিকায় আশ্রয়গ্রহণকারী ইহুদি ও ক্রীতদাসদের অসন্তোষও গন্য করা যেতে পারে। ইহুদি, ভূমিদাস ও ক্রীতদাসগণ গথিক শাসনের নির্মম নির্যাতন থেকে অব্যাহতি পাওয়ার আশায় নবাগত মুসলমানদেরকে সাদরে গ্রহণ করে। গথিক সরকারের অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কথা পূর্বে আলোচিত হয়েছে; এটাও স্পেন বিজয়ের অন্যতম কারণ ছিল। ভৌগোলিক কারণসমূহও মুসলমানদের অগ্রাভিযানের সহায়ক হয়। উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনের মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র চৌদ্দ মাইল প্রশস্ত জিব্রাল্টা প্রণালী। তাই আগ থেকেই স্পেন ও উত্তর আফ্রিকার মধ্যে ব্যবসা বাণিজ্য চালু ছিল। উভয় দেশের মধ্যে যাতায়াত ও তথ্যাদি আদান-প্রদানে তেমন কোনো বাধা ছিল না। ফলে দক্ষিণে দিগন্ত প্রসারী সাহারা মরুভূমি এবং অপরদিকে আটলান্টিক মহাসাগরের অথৈ বারিধির প্রতি দৃষ্টিপাত না করে জিব্রাল্টা প্রণালী অতিক্রম করে ইউরোপে ক্ষমতা বিস্তার করা তাদের জন্য সহজ ছিল।

সূত্র:

১. দ্য তারিখ ই আন্দালুস
২. আল কামিল ফি তারিখ
৩. স্পেনিশ ইসলাম
৪. মাজমুয়া আখবার আন্দালুস
৫. তারিখে ইবনে খালদুন

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মে, ২০২০ বিকাল ৫:৪৯

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: এরা ছিল খুনি,ডাকাত ও ধর্ষণকারী

২| ১১ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: দুনিয়া সভ্য হবার পর মুসলমানরা আর বিজয় পায়নি। কিছু আবিস্কারও করতে পারে নি।

৩| ১১ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২৯

পলাতক মুর্গ বলেছেন: ++++++++++++++++

৪| ১১ ই মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:৩২

উদাসী স্বপ্ন বলেছেন: তখনকার মুসলমানদের ধিম্মিদের প্রতি আচরন বর্তমান বিদ্যানন্দ বা মসজিদে আজান দিয়ে হিন্দু কাদিয়ানিদের পিটনা বা তাদের দখল ধর্ষনের সাথে মিল পাওয়া যায়। তখনকার যারা নতুন জিজিয়া ট্যাক্সের পদে ঢুকতো তাদেরকে সিনিয়র মোল্লার ট্রেনিং দেবার সময় কলার ধরে বলতো টাকা দিবি না তোর পরিবার দাস বানাইয়া হাটে উঠাবো, জাহান্নামের লাকড়ি। পরে এটাই অনুসরন করে তার অনুসারীরা।

এছাড়া বিভিন্ন উৎসব অনুষ্ঠানে পার্শ্ববর্তী গ্রাম থেকে সুন্দরী ককেশীয়ান মেয়েদের উঠিয়ে অনেক কিছুই করতো।

এটা উমরের শাসনামল অনুসারে করতো। উমর খলিফা থাকাকালীন জিজিয়া কর ৫০ শতাংশে উন্নীত করে ধিম্মিদের ওপর সেরকম অপমান লাঞ্চনা চালিয়ে জানানো হতো তারা জাহান্নামী। আর বড় কোনো পদে তাদের পক্ষে যাওয়া অসম্ভব। যদি যেতেই হয় ধর্মান্তরীত হতে হবে। আবার অন্য ধর্মের লোকজন যারা তারা তাদের ধর্মের প্রচার করতে পারবে না, তাদের মন্দির চার্চ রেনোভট এমনকি উচ্চস্বরে কিছু করতে পারবে না। এই চল মুহাম্মদই চালু করে গেছেন যদিও ঘাতাফনে এটা উল্লেখ ছিলো স্বস্ব ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করতে পারবে কিন্তু তখন ইসলাম চালু হয়নি। যখন ইসলাম মদিনা মক্কা করায়ত্ত করলো তখন এমনভাবে তাদের সাথে আচরন করা শুরু করলো যে আদতে ভালো জীবন ও উত্সবে বলির পাঠা বা দাসে পরিনত হবার চাইতে ইসলামই গ্রহন করে ফেলতো

রেফারেন্স দিলাম না। কারন বেশীর ভাগ রেফারেন্স উপরেই বর্ননা করে দিছেন। বিশেষ করে সুন্নী স্কলার ইবনে খালদুনের তারিখ বইটি উল্লেখ যোগ্য যেখানে উমরের কান্ডকীর্তি বেশ সুন্দর ভাবেই বলা আছে।

বিদ্যানন্দের কাহিনীটা এজন্যই রিলেট করা যায়

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.