নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
‘বয়কট’ শব্দটা শুনলে আমাদের মাথায় যেটা ঘুরঘুর করে ইংরেজি ঠিক তাকেই ‘ক্যানসেল কালচার’ বলা হয়৷ ‘ক্যানসেল কালচার’ মূলত এমন একটা টার্ম যা দিয়ে কোনো কিছু গণ-পরিত্যাগের মাধ্যমে দমন করা হয়৷ এই ধরুন কয়েক বছর আগে রাসুলুল্লাহ স.-এর ব্যঙ্গচিত্র (নাউজুবিল্লাহ) তৈরি করার দরুন ফ্রান্সকে বয়কটের ডাক দেওয়া হয়েছিল৷ অনুরুপ ভারতের পণ্য বয়কটের কথায় উঠেছিল৷ আরব বিশ্বের বয়কটের ফলাফল মোটামুটি সবারই জানা৷ এরকম বয়কটের মাধ্যমে যে সকল জিনিস দমন করা হয় তাকেই ‘ক্যানসেল কালচার' বলে।
মেরিয়াম ওয়েবস্টার ডিকশনারিতে ক্যানসেল কালচারের সংজ্ঞায় বলা হয়, “The practice or tendency of engaging in mass canceling as a way of expressing disapproval and exerting social pressure”
ক্যাম্ব্রিজ ডিকশিনারিতে এর সংজ্ঞা আরও নির্দিষ্ট করে বলা হয়, “A way of behaving in a society or group, especially on social media, in which it is common to completely reject and stop supporting someone because they have said or done something that offends you.”
সহজভাবে বলা যায়, ক্যানসেল কালচার এমনটা পথ, পদ্ধতি বা সংস্কৃতি যার মাধ্যমে সমাজের ত্রুটিপূর্ণ ও সমস্যাযুক্ত লোকজনকে মূলধারার সমাজব্যবস্থা থেকে সরিয়ে ফেলা যায়৷ জাতিগতভাবে মুসলিম বিশ্ব খুব কম সময় বয়কট তথা ক্যানসেল কালচার সংস্কৃতির অনুসরণ করেছে৷ এজন্য আমাদের কাছে খুব একটা পরিচিত টার্ম না এটা৷ ইতিপূর্বে বয়কটের জন্য অবশ্য অনেক পাতি বুদ্ধিজীবী মুসলিম বিশ্বকে নিয়ে হাসি-তামাশাও করেছে৷ অথচ পশ্চিমা দেশে এটা হরহামেশাই হয়ে থাকে।
বেশ কয়েক বছর আগে বিখ্যাত হ্যারি পটারের লেখিকা জে. কে. রোউলিং ক্যানসেল কালচারের শিকার হন৷ বিভিন্ন বইমেলা ও অনুষ্ঠান থেকে তার বই বিক্রি করা বাতিল করা হয়েছিল৷ তার অপরাধ ছিল সমকা মিতা বিরোধী মন্তব্য করা৷ একইভাবে হলিউড অভিনেতা জনি ডেপের কথাও ধরা যায়৷ নারীবাদী কমিউনিটির প্ররোচনায় ফিল্ম ইণ্ডাষ্ট্রি ও অডিয়েন্স থেকে তাকে বয়কট করার আহ্বান করা হয়৷ যদিও পরবর্তী সময় সে কেস জিতে যায়৷
ক্যানসেল কালচার সংস্কৃতি কীভাবে কাজ করে সেটা ব্যাখ্যা করে বোঝানোর কিছু নেই৷ ক্যানসেল কালচারের শিকার হওয়া ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ক্যারিয়ার ও অর্থনৈতিক অবস্থা নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে। আর ব্যাপারে কথিত মত প্রকাশে স্বাধীনতা দানকারী পশ্চিমা দেশগুলো সর্বাগ্রে। ইতিপূর্বে বেশ কিছু মিডিয়া ব্যক্তিত্বদের ক্যারিয়ার এই সংস্কৃতির কারণে বিপর্যয়ের শিকার হয়েছে৷
জে. কে রোউলিং ক্যানসেল কালচারের শিকার হওয়ার পর হার্পার ম্যাগাজিন ২০২০ সালের জুলাইয়ে “A Letter on Justice and Open Debate” শীর্ষক একটা প্রবন্ধ ছাপে৷ যা ছিল মূলত অঘোষিতভাবে (নাম গোপন করে) ক্যানসেল কালচারের উপর করা সমালোচনা৷ সেখানে ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার টেক্সট এণ্ড টেকনোলজির এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর মেল স্ট্যানফিল বলেন, “আমি মনে করি, ক্যানসেল কালচার মানুষের সচেতনতাকে এমনভাবে প্রতিফলিত করতে পারে যে আগে যা সেচ্ছায় গ্রহণ করত এখন সেটা আর করবে না৷ অথবা অতীতে যে বিষয়ে প্রতিবাদ করতে চাইত সেটায় এখন সক্ষম হবে৷ তবে এটা নিসন্দেহে অর্থপূর্ণ আতঙ্কের উদ্রেক ঘটায়৷”
ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট্রাল ফ্লোরিডার দর্শনের লেকচারার স্টেইসি ডিলিবার্তো ক্যানসেল কালচারের সঙ্গে পাবলিক শেইমিংকে মিলিয়ে বলেন, “নয়া সমাজব্যবস্থা গঠনের শুরু থেকে পাবলিক শেইমিং ও ক্যানসেল কালচার প্রচলিত ছিল৷ মধ্যযুগীয় ইউরোপ থেকে ঔপনিবেশিক আমেরিকায় পিউরিটানরা অপরাধীদের ন্যাড়া করে ও আলকাতরা মেখে শাস্তি দিত৷ এটা একধরনের শারীরিক শাস্তি যা মানুষকে অতঙ্কিত করত৷ এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যেসকল ফ্রেন্স মহিলারা বিশ্বাসঘাতক বলে বিবেচিত হয়েছিল তাদের মাথা ন্যাড়া করে শাস্তি দেয়া হয়।”
বিরোধী মত দমন করার ক্ষেত্রে ক্যানসেল কালচার কিছুটা সমালোচিত হলেও এটাকে সমাজের ইতিবাচক প্রথা হিসেবেই চর্চা করা হয়৷ এ ব্যাপারে সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক আমান্ডা কুন্তজ (Amanda Koontz) বলেন, “পাবলিক শেমিং একটি দীর্ঘস্থায়ী সামাজিক প্রথা যা সমাজের মানুষকে একে অপরের দায়িত্বগুলো বুঝতে সহায়তা করে৷ এবং কেউ খুব বেশি ধূর্ত ও ক্ষমতাবান না হয় সে ব্যাপারে নিশ্চিত হতে সাহায্য করে৷ ”
এই ব্যাপারটা শহরাঞ্চলে সামাজিক ভাবে না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় ব্যাপক আকারে আছে৷ তবে এখনও গ্রামে সামাজিক প্রথা হিসেবেই ক্যানসেল কালচার বা পাবলিক শেমিং রয়েছে৷ সেটা অবশ্য ভিন্ন নামে। সামাজিক অপরাধ কিম্বা অনৈতিক কোনো কার্যকলাপের ফলে গ্রাম পঞ্চায়েত কারও উপর হুলিয়া জারি করতে পারে, নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে৷ অনেক সময় অপরাধের মাত্রা বেশী হলে নির্বাসনেও পাঠানো হয়৷ তবে প্রত্যেক ভালো প্রথারই খারাপ প্রভাব থাকতে পারে৷ ক্যানসেল কালচার এটা থেকে মুক্ত নয়৷ বিনা অপরাধেও এই সংস্কৃতির শিকার হতে পারে মানুষ৷ এতে তার মানসিক, মনস্তাত্ত্বিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা একেবারে নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে৷
২৮ শে নভেম্বর, ২০২৩ রাত ১২:৩১
যুবায়ের আলিফ বলেছেন: ইহুদি পণ্য বয়কট করার সাথে বিষয়টা মিলিয়ে দেখতে পারেন।
২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৩
প্রথম সারির নিরাপদ ব্লগার বলেছেন: নতুন কিছু খবর জানলাম। এগুলো জানানোর জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৪০
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম।
কিন্তু পুরোপুরি বুঝতে পারলাম না।