নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন জেনারেল ব্লগারের নিজের সম্পর্কে বলার কিছু থাকে না ।

আবদুর রব শরীফ

যদি তোর লেখা পড়ে কেউ না হাসে তবে একলা হাসো রে!

আবদুর রব শরীফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবন মানেই গল্প (২০১৭ সালের বই মেলায় প্রকাশিত আমার গল্প)

২২ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ৮:০৫

গল্প নিয়ে ছেলেটির দুই চারটি গল্প থাকে ৷ কিন্তু সে কখনো গল্প লিখতো না ! সব গল্পের ভিতরে গল্পের আকার দেওয়ার জন্য একজন গল্পকার থাকে ৷ আমার গল্পটির যে আকার দিবে তার নাম বশির উদ্দীন মাহমুদ ৷ সে একদিন পড়ার টেবিলে একটি চিরকুট লিখেছিলো, 'গল্পকাররা একদিন চলে যাবে কিন্তু সার্টিফিকেট রয়ে যাবে !' সত্যি গল্প লেখার বিরতিতে ওভার ড্রয়ার খুলে দেখি মাস্টার্সের সার্টিফিকেটটি রয়ে গেছে ৷ আমাদের জীবন গল্পের সূচনা এখানেই, প্রতিটি গল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য একদিন নিশ্চুপ হয়ে যায় গল্পকারও ! একজন মায়ের গল্প, বাবার গল্প, ছোট বোনের গল্প থেকে শুরু করে একটি পিছুটানের গল্প জীবনের গল্প উল্টে পাল্টে দেয় ৷
.
গল্পের আকার পাল্টাবো ৷ এবারের গল্পে আকার দিবে একজন রমিজ উদ্দিন ৷ অক্সিজেনের মোড়ে রোজ করে পকেট মারতো ৷ চকচকে প্যান্ট আর ফুলহাতা শার্ট বোতাম খুলে রেখে একহাত পকেটে ডুকিয়ে রাখতো সবসময় ! বাসের দরজায় ভিড় বেড়ে গেলে দৌড়ে গিয়ে সে বাসে উঠার চেষ্টা করতো এমন ভাব যেনো তার জীবনের প্রতিটা সময় মহামূল্যবান ৷ একহাত তখন তার পকেটে থাকতো কারণ সে বিশ্বস করতো অন্তত একহাত প্যান্টের পকেটে না থাকলে কেউ নিজেকে ব্যস্ত মানুষ হিসেবে দাবী করতে পারে না এবং একহাত পকেটে রেখে অন্য হাত দিয়ে অন্যের মানিব্যাগ বের করতে না পারলে সেও নিজেকে পকেটমার হিসেবে দাবী করতে পারে না ! পকেটমারদের জগতেও সর্দার আছে ! সর্দারনী আছে ! সর্দারনী মুখে পান গুঁজে দিয়ে ঠেস্ দিয়ে বলে, 'কিসের মুরোদ তোমার ? সারাদিনেতো একটা পকেটও মারতে পারলে না হু ! চুড়ি হাতে দিয়ে বউয়ের আঁচল ধরে বসে থাকো সেইই ঢেড় ভালো !'
.
বস অব দি বসেস্ আছে সেখানেও কেউ একজন শার্টের কলার ধরে নাড়া দিয়ে বলে, 'দেখ্ দোস্ত একানব্বইতম সফলতা আর নয়টা মারলেই টেন্ডুলকারের মতো চেইন চুরি করমু !' না তার একশ করা হয়নি ৷ বিরানব্বইতম ব্যানেটি ব্যাগ চুরি তার জীবন পাল্টে দিয়েছে ৷ সেটি ছিলো কেডিএসের এক গার্মেন্টস কর্মীর ব্যানেটি ব্যাগ ৷ পকেটমাররাও সৃষ্টিকর্তার নাম নিয়ে মানিব্যাগ খুলে সেখানে পরতে পরতে রহস্য খেলা করে ! এই বুজি পেয়ে গেলাম কিছু একটা ৷ মানিব্যাগেও জন্মনিয়ন্ত্রণের সরঞ্জাম তাদেরও পীড়া দেয় ওখানে পাঁচটা একহাজার টাকার নোট থাকলে কি এমন ক্ষতি হতো ! বলছিলাম ব্যানেটি ব্যাগের কথা ৷ পুরুষ মেয়েদের মনের মতো তাদের সবকিছুর মধ্যে রহস্য খুঁজে নেয় তেমনি চিনতাইকরা ব্যাগে ও, সেখানেও কেমন জানি ভালবাসার গন্ধ পাওয়া যায় ! ব্যাগ খুলতেই দেখা মিললো ফেয়ার এন্ড লাভলীর মিনি প্যাক ! তার পাশে একটি চিঠি ৷ ওখানে লেখা মা ! জীবনের প্রথম আয় ৷ পাঁচ হাজার দুইশ টাকা ৷ তার থেকে চারহাজার টাকা পাঠিয়ে দিলাম তোমার এজমার চিকিৎসাটা করিয়ে নিও ৷ বাইন্নার মা'র কাছে গিয়ে কেউ বান টোনা মারছে কি না দেখিয়ে আইস্সো ৷
.
জীবনের প্রথম চিনতাইয়ের টাকা সে ও মায়ের কাছে পাঠিয়েছিলো ৷ তিন হাজার তিনশো টাকা ৷ সেই অনুভূতি রমিজ উদ্দীন এখনো ভুলতে পারে না ! কি আনন্দ ! আকাশে বাতাসে ৷ না এই টাকা সে ফেরত দিয়ে দিবে ৷ যেই ভাবা সেই কাজ ৷ রোজ মোড়ে দাঁড়িয়ে থাকে লাল টি শার্ট গা'য়ে সেখানে লেখা, লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশ ৷ টি শার্ট টি ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় কিনেছিলো ! সেদিন হেরে যাওয়ার বেদনায় সেও কেঁদেছিলো ! যাই হোক একজন ছিনতাইকারীর চোখে জল দেখার চেয়ে দল বেঁধে তাকে ধোলাই দেওয়ার দৃশ্য বেশ চমৎকার ৷ সে মেয়েটিকে আর খুঁজে পাইনি একদিন পেয়েছিলো সেদিন ব্যাগটি বাসায় রেখে এসেছিলো ভুলে তবুও তাকে ডেকে ব্যাপারটি খুলো বললো, পরের দিন ব্যাগটি ফিরিয়ে দিলো ৷ মেয়েটি ব্যাগ হাতে নিয়ে চিৎকার করে বলতে থাকলো, 'চিনতাইকারী ! চিনতাইকারী ! ওকে ধরো !' জনগন ধোলাই দিয়ে তাকে পুলিশ সোপার্দ করলো ৷ পুলিশের এএসপি সমস্ত ঘটনা শুনে আবেগআপ্লুতো হয়ে তাকে তার বাগানের মালির চাকরিটি দিলো আজ রমিজ উদ্দীনের বয়স বাষট্টি বছর ৷ সে পুলিশ সুপারের সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তি ৷ গল্পের ভিতরের গল্প এটি গল্পের যে আকার দিয়েছিলো অতি সাধারণ একজন মালি ৷
.
গল্পকার আসলে কে ! যে গল্প লেখে না যার জীবনের গল্প লেখায় ফুটে উঠে ? না যে গল্পের আকার দেয় ?
.
জীবন দিয়ে যে গল্প লেখা হয় সে গল্পের পাঠক সংখ্যক খুবই কম থাকে ৷ স্বাক্ষী হয়ে থাকে মহাকাল ৷ দেশের আঠারো কোটি মানুষ থেকে আঠারো কোটি সেরা গল্প পাওয়া যাবে ৷ গল্পের ভিতরেও হাজারো গল্প থাকে ৷
.
জীবনের গল্পগুলো অনেক বেশী উপভোগ্য ! জীবন গল্পের বইটি পড়তে এক কাপ চা'য়ের কাপে আরো বেশী ভালো লাগে ৷ জীবন পাতার কিছু গল্প কারো মাধ্যমে উঠে আসে বই মেলায় আর আপনি সে বইটি কিনে গল্প পড়ে মুগ্ধ হচ্ছেন ৷ সে রমিজ উদ্দীনকে এখন কাছে পেলে কি আরো বেশী মুগ্ধ হতেন না ?
.
একজন ইকবালের গল্প বলি যে কখনো ঢাকা যায়নি ৷ হঠাৎ একদিন তার মায়ের টিউমার ধরা পড়ে ৷ তার হাতে এক টাকাও নেই ৷ সে ই একমাত্র অবলম্বন ৷ সে ছেলেটি ঢাকায় গিয়ে তার মা'কে ছয়মাস চিকিৎসা করিয়ে সুস্থ করে নিয়ে এসেছে মনোবলের শক্তিতে বলিয়ান হয় সে সংগ্রাম মুখর প্রতিটা দিনের গল্প বললে ম্যাক্সিম গোর্কির মা উপন্যাসও হার মেনে যেতে পারে ৷ পাবেলের মা'য়েরটা ছিলো বিপ্লব আর এটা জীবন যুদ্ধ ! শুধু এখানেই তফাৎ !
.
এভাবে জীবনের গল্পবাজি চলতে থাকে ! চলতে থাকবে ! অনেক গল্প অগোচরে থেকে যাবে ! হারিয়ে যাবে ! ফুরিয়ে যাবে ! একদিন গল্পকার নিশ্চুপ হয়ে রবে ! মানুষের ভিতরে গল্প থাকে আর গল্পের ভিতরে মানুষ ! গল্পের মেলা হবে ! সেরা গল্পটি হয়তো অগোচরে থেকে যাবে ! গল্পের আকার দিয়ে কেউ হয়ে যাবে গল্পকার ! গল্পের নায়ক হারিয়ে যাবে!

বইঃ রেডিওমুন্না ফিচারিং 'গল্পের ভিতরেও গল্প থাকে!'

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.