নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"আমি এক মানবিক আবেগহীন বৃক্ষমানব। স্বপ্নের দলা পাকানো বাসি কবিতা। আমি এক নষ্ট গান!\"

ফয়সাল সোহাগ

একজন সাধারণ মানুষ। যার মাঝে অসাধারণ কিছু নেই।

ফয়সাল সোহাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

নবনী ০৩

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১২

নবনীর বিয়ে। আমাকে দাওয়াত করা হয়েছে। কার্ডটা অতি এক্সপেনসিভ। বিভিন্ন রংয়ের অনেক গুলো পু্ঁথি বসানো। লাল রংয়ের পুঁথি দিয়ে লাভ আঁকা আর তার মাঝে বর কনের কার্টুন। কার্ডের ভেতর মূল চিঠি ছাড়াও আর একটা চিরকুট। খুলে দেখলাম নবনীর হাতের লেখা। সে লিখেছে-"জানি তুমি আসবে না। তবু কার্ডটা পাঠালাম। আমাদের জন্য অন্তত দোয়া করো। কি দোয়া করতে হবে সেটাও নিশ্চই তোমাকে বলে দিতে হবে। দোয়া করবে, আমরা যেন সুখী হই। এটুকু করলেই চলবে। ইতি ---- নবনী ইসলাম।"

আমি নবনী আর তার বরের জন্য দোয়া করলাম। জানি না কবুল হলো কি না। শুক্রবার নবনীর ধারণা ভুল করে দিয়ে বিয়ে বাড়িতে উপস্থিত হলাম। খালুর দোতালা ডুপ্লেক্স বাড়ি। সারা বাড়িতে মরিচ বাতি লাগানো হয়েছে। এখন দুপুর তাই মরিচ বাতিগুলো অলস সময় কাটাচ্ছে। আমার মত ওরা বেকার এখন। বিয়ে বাড়িতে এসেছি কিছু নিয়ে আসিনি। পকেটে টাকাও নেই যে খেয়ে দেয়ে দেবো কিছু। তাছাড়া কনে দেখতেও কিছু তো লাগে। ভয়ে ভয়ে নবনীকেও দেখতে যেতে পাচ্ছি না। খালুকে কোথাও দেখতে পাচ্ছি না কেন? মনে হয় অন্য কাজে Busy.

আয়েশ করে খেলাম। খেয়ে দেয়ে দাঁত খোচাচ্ছি। হঠাৎ একটা সাজুগুজু করা মেয়ে এসে বললো, "নবনী আপু আপনাকে ডেকেছে। তাড়াতাড়ি আসুন।"
আমি গলা নামিয়ে বললাম, "সে এখন কোথায়?"
বললো," তার ঘরে কনে সেজে বসে আছে। জলদি আসুন।"
পেছন পেছন গেলাম। দরজায় দাঁড়াতেই প্রথম ধাক্কা খেলাম। এত সাজে কোনো ঘর সাজানো যেতে পারে আগে কখনো দেখিনি। তাই বোধহয় একটু হা গেলাম। দ্বিতীয় ধাক্কা খেলাম নবনীকে দেখে। চেনা যাচ্ছে না। সত্যি বলতে কি ওর ঠোটের নিচের তিলটা না থাকলে বুঝতাম না ও নবনী। শাড়িতে মেয়েদের এত সুন্দর লাগে আগে দেখিনি। তাই আর একটু হা হয়ে গেলাম।

পুরোপুরি হা হলাম যখন নবনী তার সাথী সঙ্গীদের বললো, তোমরা একটু বাইরে যাও। ওর সাথে একটু কথা বলবো।
সবাই বাইরে গেল। আমায় নবনী বললো, "অমন অত বড় হা হয়ে আছো কেন? বসো।"
বসলাম।
বললাম,"তোমায় চেনা যাচ্ছে না।"
নবনী বললো,"আমি কয়েকবার আয়নায় দেখেছি। তোমার কথা সত্যি আমাকে চেনা যাচ্ছে না। তুমি আসবে আমি জানতাম। আমিও চেয়েছিলাম তুমি আমার বিয়েতে আসো। সে জন্যই চিরকুটটা লিখেছিলাম। লিখেছিলাম তুমি আসবে না জানি। আমি জানতাম আমার এই ধারণাকে মিথ্যে করার জন্য তুমি আসবে। তুমি নিজেকে অনেক চালাক ভাবো। আসলে তুমি যে আস্ত একটা বোকা সেটা জানো?"
আমি বললাম,"আগে জানতাম না। আজকে জানলাম।"
"তুমি শুধু একটা বোকা নও একটা গাঁধাও।"
আমি চুপ করে রইলাম।
নবনীকে রাগলে পরী পরী লাগে। আজকে কেন যেন লাগছে না। মনে হচ্ছে ওর মন খারাপ। মন খারাপ থাকলে কোনো মেয়ে রাগলে তার মাঝে পরী পরী ভাব আসে না।
আমি বললাম,"নবনী তোমার মন খারাপ?"
নবনী বললো,"না।"
এই "না" এর মানে আমি জানি। এই "না" এর মানে হলো "হা"।
বললাম,"তোমার সে কি করে?"
সে রেগে বললো,"আমার সে মানে। সে আমার এখনো কেউ না। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার।"
আমি বললাম,"পিএইচডি করেছে আমেরিকা থেকে। "
সে বললো, "তোমার অনুমান পুরোপুরি ঠিক না। বেশি চালাকি করো। পিএইচডি এখনো চলমান।"
আমি বললাম, "তার মানে বিয়ের পর আমেরিকা চলে যাবে। সেখানে থাকবে।"
সে বললো,"ধরো তাই। কেন কষ্ট হচ্ছে?"
আমি বললাম, "ঠিক বুঝতে পারছি না।"
নবনী বিরবির করে বললো,"গাধা।"
একটু পর বললো,"একটা কাজ করতে পারবে?"
আমি বললাম,"কি কাজ?"
নবনী বললো,"আমাকে নিয়ে পালিয়ে যেতে পারবে?"
আমি বললাম,"আগে কখনো কাউকে নিয়ে পালিয়ে যাই নি। অভিজ্ঞতা নেই। মনে হয় পারবো না।"
নবনী বললো,"যাও সামন থেকে।"

আমি কিছু না বলে বেরিয়ে এলাম। এখন প্রায় সন্ধ্যে বর আসার বাকি। আমি এখন রাস্তায়। একেক সময় রাস্তার চেহারা একেক রকম হয়। সকালে একরকম। দুপুরে একরকম। বিকেলে আরেক রকম। আর এখন সন্ধ্যায় আরেক রকম। ঠান্ডা বাতাস এসে গাঁয়ে লাগছে।

হঠাৎ একটা লাল রংয়ের গাড়ি আমার পাশে এসে ব্রেক চাপলো। গাড়ির দরজা খুলে একটা মেয়ে কন্ঠ ভেসে এলো,"উঠে এসো তাড়াতাড়ি।"
আমি কিছু না ভেবে উঠে গেলাম। উঠে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের সম্মুখীন হলাম। এ যে নবনী!
আমি সামলে নিয়ে বললাম,"নবনী কোথায় যাচ্ছো?"
নবনী নাইনটি এইট পার্সেন্ট রেগে বললো,"তোমার মত গাঁধা আমি কোথাও দেখিনি। আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার সাহস তো তোমার হবে না কখনো। তাই তোমাকে নিয়ে আমি পালিয়ে যাচ্ছি। বুঝেছো?"
আমি মাথা নেড়ে বললাম,"বুঝেছি।"
একটু পর আমার ফোনে খালুর কল,"গাঁধা তুই কোথায় এখন। আমি ফিসফিস করে বললাম খালু আমি এখন একটা সুন্দর গাড়িতে বসে আছি। নবনী আমাকে নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।"
খালু রেগে মেগে আগুন,"গাঁধা তোকে আমি খুন করে ফেলবো....."
ফোনটা কেটে দিলাম এখন খালুকে বোঝানো যাবে না যে এতে আমার কোনো দোষ নেই।
গাড়ি চলেছে। কোথায় গন্তব্য জানি না। নবনী ঘুমিয়ে পড়েছে। গাড়ির ভেতরের লাইট নেভানো। রাস্তার ফিফটি পার্সেন্ট আলো এসে নবনীর হান্ড্রেড পার্সেন্ট সুন্দর মুখে পড়ছে। আমি চেয়ে আছি। আর গাড়ি চলেছে এইট্টি পার্সেন্ট অজানা গন্তব্যে!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

খাঁজা বাবা বলেছেন: ২০% জানা গন্তব্য টা কোঁথায়?

ভাল লেগেছে। :)

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৩

ফয়সাল সোহাগ বলেছেন: সেটাও নবনীকে জিজ্ঞেস করতে হবে।
অনেক অনেক ধন্যবাদ।

২| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:১১

করুণাধারা বলেছেন: ১০০% ভালো লাগলো।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৪

ফয়সাল সোহাগ বলেছেন: আপনাকেও ১০০% ধন্যবাদ!

৩| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২৭

আমি ৎৎৎ বলেছেন: ভাল লেগেছে অনেক।

ভাল থাকুন সবসময়।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৩৫

ফয়সাল সোহাগ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। আপনিও ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন সবসময়।

৪| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:২৫

রাজীব নুর বলেছেন: নবনী ভালো থাকুক।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৭

ফয়সাল সোহাগ বলেছেন: আপনিও ভালো থাকুন। ধন্যবাদ অনেক।

৫| ০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৪

মাহের ইসলাম বলেছেন: তোমরা যেন সুখী হও।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮

ফয়সাল সোহাগ বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ। সবসময় ভালো থাকুন। শুভকামনা।

৬| ০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৫৩

ওমেরা বলেছেন: এত সাহসী মে্যে গাধার কপালে কষ্ট আছে । গল্প ভাল হয়েছে।

০৩ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:৫৬

ফয়সাল সোহাগ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আপু। ভালো থাকুন সবসময়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.