নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সুখ কিংবা দুঃখ!হাসি কিংবা কান্না!জীবনের এপিঠ-অপিঠ!আমি সেই জীবন নামক খেলায় পরাজিত একজন।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান

আমি মানুষটার পরিচয় নিয়ে বলার খুব বেশী কিছু নেই। পরিবারের জন্যে উৎসর্গীত বড়ো ছেলে। একজন প্রবাসী।

আংশিক ভগ্নাংশ জামান › বিস্তারিত পোস্টঃ

রূপাতে মোড়ানো ভালোবাসা

২৯ শে এপ্রিল, ২০১৯ ভোর ৫:৫১



পর্ব ১:


-------------- আমার আর শিমুলের পরিচয়টা হয়েছিলো রবি সার্কেলের মাধ্যমে।
রবি সার্কেল ছিলো রবি মোবাইল অপারেটরের একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম। পয়েন্টস খরচ করে সার্কেলের যে কাউকে শর্ট মেসেজ পাঠানো যেতো।
সেই পয়েন্টস টাকা দিয়ে কিনতে হতো।অন্যদের সাথেও শেয়ার করা যেতো। সেই সার্কেলের মাধ্যেমে অনেক অপরিচিত মানুষও পরিচিত হয়ে যেতো। এমনকি মনের লেনাদেনাও হয়ে ছোট ছোট মেসেজিং এবং পয়েন্টস শেয়ারিংয়ের মাধ্যমে।

আমার আর শিমুলের ব্যাপারটাও ছিলো ওরকম। আমার নামটাই তো এখনো বলা হয়নি আপনাদেরকে!
আমি রূপা।উহু....!
হিমুর রূপা নয় আমি। আমি শিমুলের রূপা!

এসএসসি পরীক্ষার পর নতুন মোবাইল পেয়েছিলাম। আর অবসর সময় কাটানোর জন্যে অনেকটা আগ্রহের বশেই আর বন্ধুদের সাথে কানেক্টেড থাকার জন্যেই রবি সার্কেলে রেজিস্ট্রেশন করেছিলাম আমি।
সার্কেল খোলার পর অন্যান্য যোগাযোগ মাধ্যমের মতোই অনেক অপরিচিত মেসেজ আসতো। যদিও আমি সবগুলোই ইগনোর করতাম।

একদিন এলো আমার জীবনের গতি বদলে দেওয়া মানুষটির মেসেজ। আর আমি কি মনে করে সেই মেসেজের রিপ্লাই দিলাম তা আজ পর্যন্ত বুঝতে পারিনি।হয়তো এটাকেই বলে নিয়তির খেল।
সেই থেকেই শুরু। প্রতিটা দিন এবং রাত আমাদের কথা হতো। পয়েন্টস অবশ্য সেই শেয়ার করতো।আমি মাঝেমধ্যে যদি বেশী থাকতো তবেই!

আগেই বলেছি আমি তখন সবেমাত্র এসএসসি দিয়েছি। অবসরের ফাঁকে এসব কিছুই ছিলো তখন আমার জন্যে নতুন অভিজ্ঞতা।
তাই কথা চলতো অবিরাম।

শিমুল কি ভাবতো আমি জানিনা। কিন্তু পরিচয় হওয়ার  সপ্তম দিনের সময় সে আমাকে অবাক করে দিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দিয়ে দিলো। অথচ সে কিংবা আমি তখনো কেউ কাউকে দেখিইনি।
তাই আমি আপত্তি করে তাকে আবার চিন্তা করতে বলেছিলাম। কিন্তু তার জবাবটাও আমাকে অবাক করেছিলো।
"তোমার চেহারাটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নয়। তুমি নামক মানুষটা আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ। তোমার ব্যবহার,আচরণ সবি আমাকে আকর্ষণ করে।৭ দিন কম সময় নয় আমার জন্যে। তোমার সাথে কথা হওয়ার শুরু থেকেই আমার অনুভূতি বলছিলো তুমি আমার কাঙ্খিত মনের মানুষ।
তাহলে মনের মানুষটিকে মনের কথা বলতে দেরি কেনো করবো!"  বলেছিলো শিমু্ল।

শিমুলের কথাও আমাকে ঠিক চুম্বকের মতোই আকর্ষণ করতো। আর তার এই শেষের কথাগুলো আমাকে সম্পূর্ণ অভিভূত করে ফেলেছিলো। মনের মধ্যে যা সংকোচ তাও দূর হয়ে গিয়েছিলো তার এই শেষের কথাই।
তাই তার প্রস্তাবে সাড়া দিলাম আমিও। হয়তো বোকার মতোই।
হ্যা সেটাকে বোকামিই বলবো আমি। কারণ এরকম কথার জাল বুনে চলা শতশত প্রেম মাঝ পথেই মুখ থুবড়ে পড়ে।
তবুও সেই বোকামি করলাম আমি মনের টানেই।


পর্ব ২:


------------ আমার আর শিমুলের মধ্যে ভৌগোলিক দূরত্বও কম ছিলোনা।
সে থাকতো ঢাকাই আর আমার পরিবার আমার বাবার চাকরির সুবাদে থাকতো চট্টগ্রামের চন্দ্রঘোনাই। এরমধ্যে শুধু মাঝেমধ্যে মুঠোফোনে কথা হতো আমাদের।কারণ পরিবারের সাথে থাকার কারণে কথা বলার স্বাধীনতা টুকু ছিলোনা।কথা বলতে হতো লুকিয়ে।
আর দূরত্বের কারণে দেখা করাটাও সহজ ছিলোনা। তাই আমাদের মনের টান যতো বেশিই হোক না কেনো আমাদের দেখাটা হয়েছিলো প্রেমের সম্পর্ক শুরু হওয়ার দেড় বছর পর।
এক্ষেত্রেও উদ্যেগটা ছিলো শিমুলের পক্ষ থেকেই। হঠাৎ করেই একদিন বললো সে চট্টগ্রাম আসতেছে।দেখা করতে চাই আমার সাথে। ইচ্ছাটা আমার মধ্যেও ছিলো প্রবল।তাই রাজি হয়ে গেলাম।

দুইদিন পরেই সে চট্টগ্রাম এলো। আর আমিও কলেজ ফাঁকি দিয়ে তার সঙ্গে দেখা করলাম একটা ক্যাফেতে।
চ্যাটিংয়ে আর মোবাইলে যতোই বকবক করিনা কেনো আমরা! সামনাসামনি দেখা হওয়ার পর দুইজনেই যেনো বোবা হয়ে গেলাম আমরা।
অনুভূতিটা ভাষাই প্রকাশ মতো নয়।সংকোচ,জড়তা,লজ্জা সবকিছুর মিশ্রন।

বোবা থেকে সবাক হতে আমাদের প্রায় ২৫ মিনিট লাগলো। সেই প্রথম দেখার অনুভূতি স্মৃতিতে সারাজীবন অমলিন থাকবে।
আমারো জড়তা কেটে যাওয়ার বকবক শুরু করলাম। মনে হলো কতো কথা জমে আছে দুইজনের মনে। অথচ প্রতিদিন মোবাইলে কতো কথাই হয়। কিন্তু সামনাসামনি প্রথম দেখা হওয়ার ব্যাপারটাই আলাদা।
যদিও ক্ষনে ক্ষনে মনে একটা বিষাদ কাজ করছিলো। কারণ শিমুল যে ঢাকাই ফিরে যাবে।আবার কখন দেখা হবে উপরওয়ালাই জানে!
সময়টা খুব জলদিই ফুরিয়ে গেলো। আমাকে বিষাদের সাগরে ভাসিয়ে শিমুল আবার ঢাকাই ফিরে গেলো।
আর আমি বাসায়। বরাবরের মতোই মোবাইলে আর চ্যাটিংয়ে কথা চলতে লাগলো।
আমাদের প্রেমটা গভীর থেকে গভীরতর হলো।


আমাদের সম্পর্কের ৫ টা বছর কেটে গেলো। এরমধ্যে আমাদের আরো ৪ বার দেখা হয়েছে।
দূরত্বের কারণে মুঠোফোনে সম্পর্কটা আটকা পড়ে গেলেও ভালোবাসাটার কমতি ছিলোনা আমাদের।  দুইজনেই দুইজনকে বিভিন্ন বিষয়ে সমর্থন দিতাম।
ঝগড়া,মান-অভিমান এসবও কম ছিলোনা।
কিন্তু দুইজনের মনে দুইজনের প্রতি বিশ্বাসটা ছিলো অটুট।
বিশ্বাসটাই ছিলো আমাদের সম্পর্কের জ্বালানি।



পর্ব ৩:




---------- সম্পর্ক সবসময় একিরকম যায়না।
ঝড়,বাধা-বিপত্তি,বিপদ,পরিবার অনেক কিছুই আসে একটা প্রেমের সম্পর্কের মাঝখানে।

আমার বাবা চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার কারণে আমার পরিবার ততোদিনে চট্টগ্রামের নোয়াখালি জেলাই চলে এসেছে।আমাকে ঘিরেও ততোদিনে শুরু হয়েছে বিয়ের গুঞ্জন।
শুরু হলো দুশ্চিন্তা।শিমুলকে বললাম তার পরিবারকে জানাতে।শিমুল বললো আমার পরিবারকে সবকিছু জানিয়ে আরো ২ বছর সময় চাইতে।

আমার সৌভাগ্যের বিষয় ছিলো আমার পরিবারের মানুষগুলো আমাকে বুঝতো। আমার বাবা-মা দুইজনকেই অনেক সাহস জুগিয়ে আমার আর শিমুলের ব্যাপারটা জানালাম।
তারা সম্পর্কের ব্যাপারটাতে সম্মত হলো। কিন্তু ২ বছর অপেক্ষা করতে তারা সম্মত হলোনা।
কারণ শিমুলের পরিবার আমাদের বিয়ের ব্যাপারে সম্মত হবে কিনা সেটা ছিলো অনিশ্চিত।
এটা নিয়ে একটা টানাপোড়েন সৃষ্টি হলো আমাদের সম্পর্কের মাঝে। আমি শিমুলকে চাপ দিলাম তার পরিবারকে বলে আমার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ার জন্যে। কারণ আমাদের সম্পর্কের অনিশ্চয়তা অনুধাবণ করে আমার বাসা থেকে ততোদিনে আমার জন্যে ছেলে দেখা শুরু করেছে।

শিমুল আমাকে হারাতে রাজি ছিলোনা এই বিশ্বাসটা আমার বরাবরই ছিলো।আমার অবস্থা অনুধাবণ করে সে অবশেষে তার পরিবারকে বিষয়টা জানালো।
কিন্তু তার মা সম্মতি দিলোনা।তিনি তাদের ছেলেকে ছাত্রাবস্থাই বিয়ে করাতে সম্মত ছিলোনা।

কোনোভাবেই যখন শিমুল তার পরিবারকে বুঝাতে সক্ষম হলোনা তখন আমাদের সম্পর্কটা চূড়ান্ত অনিশ্চয়তাই পর্যবসিত হলো।
শিমুল রাগ করে ঘর ছাড়লো।সে যেকোনো ভাবেই আমাকে বিয়ে করতে সম্মত ছিলো। কিন্তু আমার পরিবারের সম্মানটা আমার কাছে আগে।

আপাতদৃষ্টিতে মনে হচ্ছিলো আমাদের সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যতই নেই। বিচ্ছেদেই যেনো আমাদের চূড়ান্ত পরিণতি।
কান্নাই যেনো আমার দিন-রাতের সঙ্গী হলো।

কিন্তু হয়তো সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছাটা ছিলো অন্যরকম।
শিমুলের পরিবারের প্রায় সবারি পছন্দ ছিলাম আমি।   তার উপর শিমুল বাসা ছেড়ে চলে যাওয়াই সবাই দুশ্চিন্তাই ছিলো। অবশেষে সবার বুঝানোতে শিমুলের মাও বিয়েতে সম্মতি দিলেন।

ঠিক হলো আপাততো আমাদের ইনগেজমেন্ট হবে। বিয়ে হবে শিমু্লের লেখাপড়া কমপ্লিট হওয়ার পর।  আমার পরিবারেরও তাতে আপত্তি ছিলোনা।
এরপরের সবকিছুই হলো আমার স্বপ্নের মতো।শিমুলের পরিবারের সবাই এলো নোয়াখালিতে আমাদের বাসায়। শিমুলের মা,আন্টি আর খালারা সবাই এলো। পুরো বাড়িতে ছিলো একটা উৎসব উৎসব ভাব।

বড়ো আপু আর আমার চাচাতো বোনরা আমাকে শাড়ি পরিয়ে সাজিয়ে দিয়েছে ইনগেজমেন্টের জন্যে।সাজানো শেষে আমাকে নিয়ে গেলো ড্রয়িং রুমে।যেখানে শিমুল আর তার পরিবার বসে আছে।শিমুল পাঞ্জাবি পরে বসে আছে সোফাতে।আমাকে বসিয়ে দেওয়া হলো তার পাশে। একটা ঘোর লাগা আবেশ পুরো পরিবেশটাতে।শিমুল যখন আংটিটা আমার হাতে পরিয়ে দিলো তখনো আমি সেই আবেশটি থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি।
আমি যেনো ছিলাম একটা স্বপ্নের ঘোরে। ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাওয়া সবার কপালে থাকেনা।
কিন্তু আমি পেয়েছি। অনেক বাধা-বিপত্তির স্বত্ত্বেও!
৬ বছরের সম্পর্ক অবশেষে স্বার্থকতা লাভ করেছে।

আমি আমার মনের মানুষটিকে অবশেষে নিজের করে পেয়েছি।
শিমুল অবশেষে তার রূপাকে নিজের করে পেয়েছে।


                                [চলমান]

বি.দ্র : সত্য ঘটনা অবলম্বনে।ছবিগুলোও আসল পাত্র-পাত্রীর।অনুমতি সাপেক্ষে ছবি সংযোজিত হয়েছে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.