নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মনের কথাগুলো বলে ফেলার জন্যে এসেছি

লিসানুল হাঁসান

নিতান্তই সাধারণ মানুষ

লিসানুল হাঁসান › বিস্তারিত পোস্টঃ

লুসিফার ইফেক্ট

৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:১৫


৯৭১ সালে আমেরিকার স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে একটা এক্সপেরিমেন্ট হয়। প্রফেসর ফিলিপ জিম্বারডো সাইকোলজি ডিপার্টমেন্ট এর বেসমেন্টকে একটা জেলখানায় রূপান্তর করে ফেলেন। দৈনিক ১৫ ডলারের বিনিময়ে কিছু ভলান্টিয়ার নেয়া হয় সেই এক্সপেরিমেন্ট এর জন্য যাদের কোন ক্রিমিনাল রেকর্ড নেই এবং মানসিক সমস্যা নেই। যাদের কে ভলান্টিয়ার নেয়া হয় তাদের দৈবচয়নের ভিত্তিতে দুইটা ভাগে ভাগ করা হয়। একদল কয়েদি এবং আরেকদল প্রহরী। প্রফেসর জিমবারডো হয়ে গেলেন জেলের সুপারিন্টেনডেন্ট। দুইও সপ্তাহ চলার কথা ছিল এই এক্সপেরিমেন্টটা। একদল জেলের কয়েদির মত থাকবে চব্বিশ ঘন্টা জেলের মধ্যে। আরেকদল প্রহরী ৮ ঘণ্টার শিফটে কাজ করবে। ওদের উপর দায়িত্ব ছিল যেভাবেই হোক কয়েদিদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। পুরো এক্সপেরিমেন্ট ২৪ ঘণ্টা ক্যামেরা আর মাইক্রোফোন দিয়ে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছিল। প্রথমেই কয়েদিদের জেলের পোশাক দেয়া হল, নামের পরিবর্তে একটা করে নম্বর দেয়া হল এবং অতঃপর তিনজনের একটা করে সেলে ঢুকিয়ে দেয়া হল।
একটা এক্সপেরিমেন্ট এর যেসব ইথিকাল আর সায়েন্টিফিক দিক আছে সেসবের অনেককিছু অনুপস্থিত থাকায় অনেকে স্ট্যানফোর্ড এক্সপেরিমেন্ট কে এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে দেখতেই রাজি নন। তবে এই এক্সপেরিমেন্ট এ কিছু চমৎকার এবং ভয়ানক অবসারভেশন পাওয়া গিয়েছিল।
দ্বিতীয়দিনেই কয়েদিরা বিদ্রোহ করা শুরু করে এবং তা দমন করতে প্রহরীরা নিষ্ঠুর আচরণ করা এবং কঠিন শাস্তি দেয়া শুরু করে। এমনকি প্রহরীরা তাদের অবসর সময়ে কয়েদিদের শায়েস্তা করা এবং জেলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলতে থাকত। কয়েদিরা যেসব কথা বলছিল তার ৯০% ই ছিল জেলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে। তাদের মধ্যে এক ধরণের নিষ্ক্রিয়তা আর মেনে নেয়ার প্রবণতা শুরু হয়েছিল। শায়েস্তা করার জন্য নেয়া পদক্ষেপের মধ্যে খাওয়ায় বন্ধ করে দেয়া, একটা সেলে নিক্ষেপ করা , বরফ শীতল গ্যাস ব্যাবহার করা, গভীররাতে ঘুম থেকে তুলে গননা করা, খুবই নগন্য এবং বিরক্তিকর কাজ বারবার করতে দেয়া , অনেকক্ষণ বুকডন দেয়া এবং এককয়েদি বুকডন দেয়ার সময় পিঠে আরেকজন চড়ে বসা, খালি হাতে টয়লেট পরিষ্কার করা - এসব ছিল।
যদিও প্রফেসর জিম্বারডোর তরফ থেকে নির্দিষ্ট কোন শাস্তির কথা ছিল না , প্রহরীরা অভিনব সব শাস্তি আবিষ্কার করতে লাগল। দিন-রাত চব্বিশ ঘন্টা জেলের ভেতরে থাকা এবং প্রহরিদের বিরুপ আচরণ কয়েদিদের উপর তীব্র মানসিক চাপ সৃষ্টি করল।
তৃতীয় দিনে কয়েদিদের কে তাদের পরিবারের সদস্যদের সাথে দেখা করতে দেয়া হল। দেখা গেল সেই উপলক্ষ্যে প্রহরীরা কয়েদিদের ভাল কাপড় আর খাবার দিল যাতে পরিবারের লোকেরা তাদের বাড়িতে ফেরত নিয়ে না যায়। কয়েদিদের মধ্যে কয়েকজন প্রহরিদের কাছে অন্য কয়েদির নামে কথা লাগাতে লাগল যাতে তাদের প্রিয়ভাজন হওয়া যায়।
নিষ্ঠুরতার তীব্রতা বেড়ে যাওয়ায় প্রফেসর জিম্বারডোর এক ছাত্রী এই এক্সপেরিমেন্ট এর নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। ছয়দিনের মাথায় এটা বন্ধ করে দিতে তারা বাধ্য হন যদিও পরিকল্পনা ছিল ১৪ দিন চালানোর। তবে এই এক্সপেরিমেন্ট এ দেখা যায় আপাততদৃষ্টিতে শান্তিপ্রিয় আর নেহায়েত নির্বিবাদ মানুষ ও কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সুযোগ পেলে। স্ট্যানফোর্ড প্রিজন এক্সপেরিমেন্ট বহু সমালোচনার সম্মুখীন হয়। প্রফেসর জিমারডো নিজেও অনেক বছর এ নিয়ে কথা বলতে চান নি। ২০০৭ সালে তিনি এই এক্সপেরিমেন্ট এর বিস্তারিত আর সাম্প্রতিক কিছু ঘটনার প্রেক্ষিতে (ইরাকের আবু গারিব কারাগারে বন্দি নির্যাতন ইত্যাদি ) একটা বই লেখেন। দি লুসিফার ইফেক্ট।

এই এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে একটা মুভিও তৈরি হয় এবং বেশ কবছর আগে আমি সেটা দেখি। আমি বেশ অনেকদিন ধরেই একটা জিনিস নিয়ে বেশ ভাবছিলাম। বাংলাদেশের পাবলিক ইউনিভার্সিটিগুলোর হলে রাগিং বা রাজনৈতিকমদদপুষ্ট এই ধরণের নির্যাতনের যে ঘটনা গুলো ঘটে এগুলো আসলে কিভাবে সম্ভব! আপাততদৃষ্টিতে নিরীহ, তুলনামূলক ভাল একাডেমিক ক্যারিয়ারের ছেলেমেয়েরা এখানে এসে সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়রদের শারীরিক- মানসিকভাবে আঘাত করা , অসম্মান করা ,চাঁদাবাজি করার এমনকি মেরে ফেলার মত ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ অংশগ্রহণ করে যা তাদের পূর্বের শিক্ষাগত , পারিবারিক এবং সামাজিক জীবনের সাথে একদমই সামঞ্জস্যপূর্ণ না
প্রফেসর জিমাবারডো তার বইতে এই ব্যাপারটা খোলাসা করতে আরো কিছু উদাহরন তুলে ধরেন । রুয়ান্ডা হুতুদের দ্বারা তুতসিদের উপরে যেসব নৃশংসতা সংঘটিত হয়েছিল তার পরবর্তীতে হুতু নির্যাতনকারীদের কিছু বিস্তারিত ইন্টার্ভিউতে দেখা যায় তাদের কৃতকর্মের জন্য অনেকেই দুঃখিত না । তারা ঐ সময়টায় পারিপার্শ্বিক পরিবেশ দ্বারা এতটাই প্রভাবিত ছিল যে তাদের কাছে সেই নৃশংসতাই করণীয় মনে হয়েছিল।
আমি মাঝেমাঝেই মানুষের মন মস্তিক এসব নিয়ে ভাবি আর এসব ভাবাভাবির ফলে কিছু চমৎকার আর ভয়াবহ উপলব্ধির কাছাকাছি চলে আসি। আমার মনে হয়, তবে কি আমরা নিজেদের মনুষ্যত্বের দোহাই দিয়ে যতটা ভাল দাবি করি , আসলে অতটা ভাল আমরা নই?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১:২৯

কল্পদ্রুম বলেছেন: স্ট্যানফোর্ড এক্সপেরিমেন্টের ব্যাপারে অল্প কিছু পড়েছিলাম।সম্ভবত আমরা এই বিষয়ে একই মুভি দেখেছি।পাবলিক ইউনিভার্সিটিতে র‍্যাগিং এর ব্যাপারে এক এক ক্যাম্পাসে এক এক অভিজ্ঞতা।যেমন আমার অভিজ্ঞতা ভালো।সেটা ব্যতিক্রম এটা ঠিক।কিন্তু র‍্যাগিং তো আগেও ছিলো।তখনো রাজনৈতিক ক্ষমতা কিংবা এমনিতেই ক্যাম্পাসের বড় ভাইয়ের দাপট ছিলো।তখনকার ছেলেমেয়ে ক্যাম্পাসে এসে রাজনীতিতে জড়ালেও এতো অমানবিক হতো না।অন্তত সাধারণ ছেলেমেয়েদের উপর।কিন্তু ব্যাপারটা বদলে গেছে।সময়ের সাথে সাথে র‍্যাগিং এর এই বিবর্তনের কারণ কি?এখন ক্যাম্পাসে যারা এ ধরণের র‍্যাগিং করে ক্যাম্পাসে আসার আগেই তাদের পারিবারিক,সামাজিক শিক্ষায় কোন ঝামেলা ছিলো বলে আমার মনে হয়।ক্যাম্পাসে এসে তারা নিজে থেকে রাজনীতিকে কেবল ব্যবহার করে।অনেকটা ক্ষমতা মানুষকে নিষ্ঠুর বানায় না কি নিষ্ঠুর মানুষরা ক্ষমতা দখল করে নিষ্ঠুরতা দেখানোর জন্য।আমার কাছে দ্বিতীয়টা মনে হয়।

৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১:৩৬

লিসানুল হাঁসান বলেছেন: " অনেকটা ক্ষমতা মানুষকে নিষ্ঠুর বানায় না কি নিষ্ঠুর মানুষরা ক্ষমতা দখল করে নিষ্ঠুরতা দেখানোর জন্য।" চমৎকার পর্যবেক্ষণ

২| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ২:২৪

রাজীব নুর বলেছেন: মানুষ নিজেকে যতটা ভালো মনে করে, সে আসলে ততটাই ভালো।

৩| ৩০ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:৪২

রাােসল বলেছেন: Situation says what am I? Though, most of us certify as good.

Thanks

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.