নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমাকে নিয়ে লেখার মত আপাতত কিছুই নেই। যেদিন লেখার মত কিছু অর্জন করতে পারবো সেদিন না হয় সময় করে লিখে ফেলবো।

অতঃপর হৃদয়

অতঃপর একটি কাল্পনিক চরিত্র

অতঃপর হৃদয় › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথা বলা ময়না পাখি

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:২৪


নীলাদের বাসার বারান্দায় একটি ময়না পাখির খাঁচা ঝুলানো আছে। পাখিটা দেখতে বেশ সুন্দর। চোখ গুলো কি মায়াবী ভাবাই যায় না। বাজার থেকে পাখিটা কেনার সময় কি সুন্দর কথা বলছিল। কিন্তু বাসায় আনার পর থেকেই আর কথা বলছে না। কি জানি বাপু বদল করে দিয়েছে নাকি কে জানে। বাসার আশে পাশের ছোট ছোট ছেলে মেয়েরা পাখি দেখতে এসেছে। সবাই এক নজরে পাখিটার দিকে তাকিয়ে আছে। নীলার মা বললেন, ‘কিরে পাখির দিকে এক নজরে তাকিয়ে কি দেখছিস তোরা?' নজর লেগে যাবে তো। এ কথা শুনে সবাই নিজ নিজ বাসায় চলে গেল।

নীলার শখ সে পাখির সাথে কথা বলবে। তাই তার বাবা তাকে একটা কথা বলা ময়না পাখি এনে দিয়েছে। নীলা যথারীতি তার ময়না পাখিকে খাবার দেয়, গোসল করিয়ে দেয় আরো কত কি। অনেক আশা নিয়ে সারাক্ষণ বসে থাকে কখন তার ময়না পাখি তার সাথে কথা বলবে। অনেক দিন কেটে যায় তবুও তার ময়না পাখি কথা বলেনা। নীলা স্কুলে যাবার সময় প্রতিদিন ময়নার খাঁচায় অনেক খাবার দিয়ে যায়। যাতে দেরি করে ফিরলেও তার পাখিটা ঠিক মত খাবার খেতে পারে। ময়না পাখি কে নানা রকম খাবার দেয়া হয় যেমন, দুধ, বিস্কুট, রুটি, কলা ইত্যাদি। ময়না পাখিটার যত্নের কোন ত্রুতি রাখেনি। তবুও কেন যে কথা বলেনা তার কারণ খুঁজে পায়না। পাশের বাসার নিশির টিয়া পাখিটা কি সুন্দর কথা বলে। এই দেখে গা জ্বলে যায় নীলার। সে চায় নিশির টিয়া পাখি যেমন করে কথা বলে তার থেকেও যেন অনেক মিষ্টি করে তার ময়না পাখি কথা বলে। কিন্তু সেটা হয়ে উঠছে না।

বেশ কিছু মাস আগের কথা। নীলার বাবা একটা টিয়া পাখি এনে দিয়েছিল। সেই টিয়া পাখিকে অনেক আদর করে নাম দিয়েছিল আদুরি। আদুরি নাম টা মনে হয় টিয়া পাখিটির খুব পছন্দ হয়েছিল। তাই যখনই তাকে আদুরি বলে ডাকা হত তখনই সে নাচ করত। টিয়া পাখিটি ভাল করে কথা বলতে পারত না। তবে একটি নাম উচ্চারণ করতে তার কোন কষ্টই হত না। সেটা হচ্ছে হৃদয়। হৃদয় হচ্ছে টিয়া পাখির পূর্বের মালিক। নীলা অনেক চেষ্টা করেও তার পাখিটার মুখ থেকে হৃদয় নাম টা দূর করতে পারছিল না। নীলা চাচ্ছিল টিয়া পাখি যেন তার নাম বলে। কিন্তু টিয়া পাখি হৃদয়ের নাম নিয়েই পড়ে থাকত।

প্রতিদিন সকালে টিয়া পাখি কে কথা শেখানোর চেষ্টা করা হচ্ছিল। নীলা নিজে তার সাথে কথা বলতো এবং কথা বলা শেখাতো কিন্তু টিয়া পাখি কথা বলতো না শুধু শুনেই যেত। এভাবেই যাচ্ছিল দিন হঠাৎ একদিন সকালে উঠে খাঁচার দিকে তাকিয়ে দেখে টিয়া পাখি নেই। আশে পাশের বাসায় খোঁজ করা হলো কিন্তু কোথাও পাওয়া গেল না। একদিন কেটে গেল কিন্তু পাখি আর ফিরে এলোনা। নীলা তার শখের টিয়া পাখি কে হারিয়ে অনেক কষ্ট পেয়েছিল। টিয়া কে হারিয়ে ঠিক মত লেখা পড়া হচ্ছিল না। স্কুলেও যাচ্ছিল না। খাওয়া দাওয়া ঠিক মত করছিল না। সব মিলিয়ে কেমন যেন পাগলের মত হয়ে গেছিল। তাই তার বাবা তাকে শান্তনা দিয়ে বলেছিল তাকে কথা বলা ময়না পাখি এনে দেবে। কথা বলা ময়না পাখি এনে দেবার কথা শুনে মন টা কিছুটা হালকা হয়েছিল নীলার।

বাবা কথা রেখেছিলেন, ময়না পাখি এনে দিয়েছেন তবে ময়না পাখি কথা বলছে না। নীলা তার ময়না পাখি কে খুব সাবধানে রাখে যাতে আগের টিয়ার মত পালিয়ে যেতে না পারে। রাতে ঘুমানোর সময় তার শখের ময়না পাখি কে তার বিছানার কাছেই রাখে। নীলা একা একা বসে ভাবে কে বা কারা কোথা থেকে এই ময়না পাখি কে ধরে নিয়ে এসেছে কে জানে। হয়ত পাখিটার মা বাবা খুব কান্না করছে আর তার সন্তান কে খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই সে ঠিক করেছে তার ময়না পাখি যেদিন তার নাম বলবে, সেদিন তাকে খাঁচা থেকে মুক্ত করে দেবে। প্রতিদিন ময়না পাখি কে কত রকমের গল্প শোনায়। গান, কবিতা আরো কত কি শোনায় তবুও সে কথা বলেনা। শুধু শুনেই যায়। নীলা ময়না পাখির কাছ থেকে কথা শোনার জন্য এক বুক আশা নিয়ে বসে থাকে কিন্তু ময়না পাখি কিছুতেই কথা বলেনা।

শীতকালে খুব সকালে রোদ ওঠেনা। বেলা একটু গড়ালে তবেই রোদের মুখ দেখা যায়। আজ খুব সকালেই রোদ উঠেছে। শীতের সকালের মিষ্টি রোদে বসে চা খাচ্ছে নীলা। সে সকালে উঠে যে কাজ টা প্রথমে করে সেটা হচ্ছে ময়না পাখির খাঁচায় খাবার আছে কিনা সেটা দেখা। যদি না থাকে তাহলে খাঁচায় খাবার দিয়ে তবেই অন্য কাজ শুরু করে। সকালে উঠেই ময়না পাখি কে রুটি আর দুধ খেতে দিয়েছে তার পরেই নিজে চা খেতে বসেছে। চা খাওয়া শেষে ময়না পাখির খাঁচার কাছে গিয়ে বলল, ‘আমার নাম ধরে একবার ডাকলেই তুই মুক্তি পাবি! কিরে ডাকবি না? ময়না পাখি কথা বলল না শুধু নীলার চোখের দিকে তাকিয়ে রইল।

নীলা বারান্দায় বই নিয়ে পড়তে বসেছে। ময়না পাখি নীলার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বই পড়া শেষ করে যখন ময়না পাখির খাঁচার দিকে এগিয়ে গেল তখন হঠাৎ দেখলো আজ তার ময়না পাখি কে খুব মায়াবী দেখাচ্ছে। নীলা কাছে গিয়ে ময়না পাখি কে তার নাম ধরে ডাকতে বলল কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। মন খারাপ করে খাঁচার কাছ থেকে ফিরে আসতেই হঠাৎ “নীলা” নাম টা আওয়াজ হলো! পরক্ষণে সে পেছনে তাকালো দেখলো কিছুই না। সে ভেবেছিল হয়ত তার ময়না পাখি তার নাম ধরে ডেকেছে কিন্তু সেটা ভুল ভেবে আবার কিছুদূর এগিয়ে গেল। এবার স্পষ্ট শুনতে পেল তার ময়না পাখি তাকে ডাকছে নীলা! নীলা! নীলা!

নীলা ময়না পাখির খাঁচার কাছে গেল এবং প্রাণ ভরে তার নাম ময়না পাখির মুখ থেকে শুনলো। নীলা আজ খুব খুশি কারণ তার ময়না পাখি তার নাম ধরে ডেকেছে। ময়না পাখি কে খাঁচা থেকে বের করে এনে নীল আকাশের পানে তাকিয়ে উড়িয়ে দিল। ময়না পাখি নীলার নাম বলতে বলতে নীল আকাশে উড়ে গেল। নীল আকাশে উড়ে যাওয়া ময়না পাখিটা দূরে যেতে যেতে আস্তে করে মিলিয়ে গেল।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ বিকাল ৫:৪৯

মোহাম্মাদ আব্দুলহাক বলেছেন: অবশেষ সুখ

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৭

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: ধন্যবাদ।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:০০

নেওয়াজ আলি বলেছেন: অপূর্ব , পাঠে মুগ্ধ।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:২৮

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২০

চাঁদগাজী বলেছেন:


গল্পের শেষটা ভালো হয়েছে; তবে, লেখাটাকে টেনেটুনে রাবারের মতো অনেক লম্বা করে ফেলেছেন।

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৩০

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: অনেক দিন লেখা থেকে দূরে ছিলাম। ধন্যবাদ।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ৮:৪৬

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টের সাথে যে ছবি দিয়েছেন সেটা কোণ পাখির?

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৪১

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: পাখিটির নাম 'রেইনবো লরিকেট।' যদিও লেখাটি ময়না পাখি নিয়ে লেখা, তবে এই পাখিটি সুন্দর দেখতে তাই এটি দিয়েছি।

৫| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১২:০০

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
ছোট গল্পের সীমা অতিক্রেম করেছে
তবে শেষ ভালো যার সব ভালো তার,
গুনাহ মাফ !!

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ২:৪১

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।

৬| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪৩

শায়মা বলেছেন: এতদিন পরে পথ ভুলে এলে নাকি!

৭| ২১ শে এপ্রিল, ২০২১ রাত ৮:৪৫

শায়মা বলেছেন: ছবির পাখিটার মত একলেসটাস বার্ড আছে আমারও। এখনও আছে। তবে দুঃখের কথা ওর পালক ঝরে যাচ্ছে। পাখির ডক্টরের কাছে নেওয়া হয়েছিলো ওষুধ দিয়েছে। রোজ ওকে এলোভেরা দিয়ে গোসল করানো হয় তবুও পালক ঝরে গিয়ে কি যে করুন দশা। কি যে ভীষন কষ্ট হয় আমার ওর জন্য। কি রেশম কোমল লাল আর নীল রঙের টিয়া ছিলো এটা অথচ আজ তার চেহারা এমনটা হয়েছে।

৮| ১৪ ই নভেম্বর, ২০২১ দুপুর ২:১৬

শায়মা বলেছেন: আহা কোথায় হারালে !

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.