নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস । তবু , উড়েছিনু, এই মোর উল্লাস

ফরহাদ বিন হাফিজ পরাগ

নিজ জীবনোপন্যাসের নায়ক

ফরহাদ বিন হাফিজ পরাগ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ স্বীকারোক্তি - ২

১১ ই মার্চ, ২০১৫ রাত ৯:০১

সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতে লিয়া জিজ্ঞেস করল, 'এমদাদ ভাই,কয়টা এঞ্জেলকে এপর্যন্ত স্বর্গচ্যুত করলে ? '

'স্যরি? ' বুঝতে না পেরে এমদাদের চোখে মুখে প্রশ্ন ।

লিয়া মেয়েটা অন্যরকম হয়ে গেছে । অবশ্যএকটা নির্দিষ্ট বয়সের পর সব মেয়েরাই অন্যরকম হয়ে যায় । কেমন যেন রহস্যময়ী,রহস্যময়ী । রহস্য না থাকলেও সেই রহস্যহীনতাকেও রহস্যময় করে রাখে ।

' এটাও বুঝলে না? খুব বোকা হয়ে গেলে নাকি ইদানীং ? কয়টা বাচ্চাকাচ্চা হল তোমার? '

'ওহ,তাই বল । ' এমদাদ একটু হাসল,তৃপ্তি ছড়িয়ে পড়ল সমস্ত মুখে । ' আই হ্যাভ অনলি ওয়ান । প্রিন্সেস । '

'বয়স কত হল? '

'সামনের এপ্রিলে কাঁধে ফেরেস্তা বসবে । মানে সাতে পা দেবে । ' খুব জ্ঞানের কথা বলে ফেলেছে তারপর হাসি না দিলে মানায় না । তাই বিকট করে একটা হাসি দিল । 'জানিস,অ্যামেরিকাতে একটা হাসি দিলেও মেপে মেপে দেই । কী যে অবস্থা...। "


লিয়া অ্যামেরিকা বিষয়ক আলাপের আশপাশ দিয়েও গেল না । তার মাথায় কয়েকটা লাইন বারবার ঘুরে ফিরে আসছে । আই গোনা মেক য়্যু সাফার । দিস হেল য়্যু পুট মি ইন !

'সাত বছর! পারফেক্ট ! সেই সাত বছর..হুম । সাত বছর , ইয়েস, সেভেন ইয়ার্স ! " লিয়া ভুতগ্রস্তের মতন হেসে উঠল ।

"তুই খুব বদলে গেছিস, লিউ । অনেক কিছুই বুঝতে পারিনা । তারপর? তারপর পড়াশোনা কী করছিস? "


'আর পড়াশোনা । কোনমতে ম্যাথ নিয়ে পড়ছি । আসলে বাধ্য হয়ে গিলছি আর কি! "


'ওয়ান্ডারফুল । ম্যাথ আমার ফেভারিট ছিল । তোর মেধা দেখে আমি ইম্প্রেসড । "


"কী যে বলোনা এমদাদ ভাই ! তুমি ব্রিলিয়ান্ট বললেই তো হবেনা,আমি যে গাধী সেটা আমিও জানি । তবে কীভাবে কীভাবে যেন ম্যাথ পেয়েই গেলাম । অবশ্য ম্যাথ শেখানোর ক্ষেত্রে তোমার অবদানই সবচেয়ে বেশি । '

এমদাদ এবার ইতিউতি করে তাকাল । এখানে তার অবদান কোথা থেকে আসল? জিজ্ঞাসু চোখে সে তাকিয়ে থাকল ।

লিয়ার প্রস্তাবনা শেষ । এবার উপসংহার টানার পালা । এমদাদ ভাই এত সুন্দর অংক শিখিয়েছিল যে আজো সে কৃতজ্ঞ,সেই কৃতজ্ঞতার গল্প বলার পালা ।


তোমার মনে আছে এমদাদ ভাই? এই আমি অঙ্কের স্থানীয় মান পর্যন্ত জানতাম না ? সেদিনের ভিত্তিটা তুমিই গড়ে দিয়েছিলে । তোমার মনে আছে? প্রতিদিন বিকেলবেলা অঙ্ক শেখাতে? মনে আছে? সেখানেই শুরু...


লিয়া তার শৈশবের কথা বলে যাচ্ছে । সেই সাত আট বছর বয়সের শৈশবের কথা । কোন এক সন্ধ্যায় অঙ্কের একক দশক শেষ করে এমদাদ ভাই তার সাথে খেলা শুরু করলেন । চকলেট চকলেট খেলা । লিয়াকে মনে করতে হবে তার হাত বাঁধা । এমদাদ ভাই তাকে কাল্পনিক চকলেট দিবে আর সেগুলো লিয়া খাবে,হা তের সাহায্য ছাড়াই । অনেকটা স্কুলের বিস্কুট দৌড়ের মত ।

লিয়া খেলে যায় । কিছু না বোঝেই সে হাত থেকে,বিছানা থেকে,কখনোবা শুয়ে থাকা ভাইয়ের বুকের উপর থেকে চকলেট নেয় । কাল্পনিক চকলেট । এমদাদ একের পর এক জায়গা বলে যাচ্ছে আর লিয়া সেখান থেকে চকলেট উঠানোর ভাঙ্গিতে তার মুখ ঘুরিয়ে আসছে ।


এমদাদ ভাই হাসে, হাসে আর কেঁপে উঠে মাঝেমাঝে । গায়ের কাপড় খুলে খুলে নতুন চকলেটের স্থান বের হচ্ছে । লিয়ার মনে হচ্ছে এবারের বিস্কুট দৌড়ের প্রাইজ সে-ই পাবে । সে আরো দ্রুতগতিতে চকলেট তুলে নেয় । এমদাদ ভাই বলছে,'এইখানে ওইখানে । '


সাত বছরের বাচ্চাটা বুঝে না । সে খেলে যায় । কিন্তু একসময় তার ক্লান্তি লাগে,এমদাদ ভাইকে অদ্ভুত মনে হয় । নিষিদ্ধ জ্ঞান তার সামনে চলে আসে । ক্রমাগত স্ফীতি হতে থাকা চকোলেটের দিকে মন্ত্রমুগ্ধের মত তাকিয়ে থাকে । সেই সাথে ভয় আসে,আসে কৌতূহলও ।


আদম হাওয়ার নিষিদ্ধ কৌতূহল । মেয়েলি ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় তাকে ভীত করে তোলে । সে চুপ করে বসে থাকে । সেদিন হয়তো ভয়েরই জয় হত,কিন্তু মহানুভব এমদাদ ভাই ভয়কে পরাজিত করেন ।

লিয়াকে আদর করে বুঝিয়ে দেন সেই নিষিদ্ধ জ্ঞান । কৌতূহল মিটিয়ে দেন । লিয়া পায় নিষিদ্ধ জ্ঞানের প্রথম ছবক !

লিয়ার মধ্যে কোন ধরণের ব্যথা বোধ হয়না । হয়তো কৌতূহলের কারণে ব্যথা বোঝাই যায়নি । অথবা হয়তো ব্যথা বোঝার বোধটুকুই তখন ছিল না । তবে দমবন্ধ হয়ে আসছিল এটা তার মনে আছে । প্রতিবার যখন সে চোখ বন্ধ করে সেই সন্ধ্যাবেলার কথা মনে করে,তার দমবন্ধ হয়ে আসে । অনেককাল আগের না পাওয়ার ব্যথা হাজারগুণ হয়ে ফিরে আসে । একটু নিশ্বাসের জন্য সে হাঁসফাস করতে থাকে ।


লিয়া লম্বা করে একটা দম নিল । এমদাদ ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখল কপালে ঘামের বন্যা ছুটছে । অ্যামেরিকা প্রবাসী এমদাদ অস্বস্তি ঢেকে ফেলার বিদ্যা বেশ ভালভাবেই আয়ত্ত করেছে । পকেট থেকে হালকা বাদামী রঙ্গের রুমাল বের করে ঘাম মুছল । মুখের কাঁচুমাচু ভাব দূর করে চিটচিটে একটা হাসি ছড়িয়ে দিল
,'আরেব্বাস,তুই তো খুব মারভেলাস গল্প বলতে পারিস ! আই এপ্রিশিয়েট । '

'থ্যাংকু প্রিটি মাচ । তুমি কী গল্পটার শিশুকে চিনতে পারছ ? যতই ভান কর,এটাকে স্রেফ গল্প বলে উড়ানোর চেষ্টা কর--কাজ হবেনা । আমি যেমন জানি , তুমিও এই গল্পের প্রত্যেকটা চরিত্রকে চেনো ।

প্রতিটা ধাপ তোমার মনে আছে । কি? মনে নেই? না,নাহ । অস্বীকার করছো কেন? আরও ক্লু দিব? চেষ্টা করো । প্লিজ ।

এবার বুঝতে পেরেছো,এঞ্জেল স্বর্গচ্যুত করা বলতে কী বুঝিয়েছিলাম ? আই ওয়াজ দ্যাট পুওর এঞ্জেল । তুমি আমায় স্বর্গচ্যুত করেছিলে । '


লিয়ার শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে । তার আবার সেই দমবন্ধ করা অনুভূতি ফিরে আসছে । অথচ এমদাদ নির্বিকারভাবে দাঁড়িয়ে আছে । কোন কিছুই তাকে স্পর্শ করছে না । নির্মোহ কণ্ঠে শুধু বলল,'য়্যু ওকে,লিউ? '


'আমি ঠিক আছি । আরো ঠিক হব যদি তুই...তুমি পুরো ব্যাপারটা ব্যাখ্যা করো । '


এত কিছুর মাঝেও লিয়ার কেমন শান্তি শান্তি লাগল । জীবনের প্রথমবারের মত সে রাগ কন্ট্রোল করতে পেরেছে ।তার আর কিছু দরকার নেই । সে শুধু শুনতে চায় একটা স্বীকারোক্তি । সহজ সরল স্বীকারোক্তি । সাথে জানতে চায় কেন তার সাথে এমনটা করা হয়েছিল । এমদাদ নামের এই পশুটা স্বীকার করুক, স্বীকার করুক সেই সন্ধ্যার কথা যে সন্ধ্যা লিয়াকে প্রতিদিন প্রতিরাত দমবন্ধ করে রাখছে ।


এমদাদ খুব ব্যস্ততার সাথে তার মোবাইল বের করল, 'এক্সকিউজ মি ' বলে সামনে এগোল ।


এরপর যে দৃঢ়তাটুকু দেখাল সেটা দেখে লিয়া নিজেই অবাক হল ।
'নো এক্সকিউজ ' বলে ওর সামনে দাঁড়িয়ে মোবাইল কেড়ে নিল । আজকে সে শুনবেই ।আজ সেই দিন,স্বীকারোক্তির দিন । এমদাদ কাকতাড়ুয়ার মতন দাঁড়িয়ে রইল ।

আর কত অভিনয় করবে? আমি তোমায় মারতে যাচ্ছি না,কাটতে যাচ্ছি না । শুধু শুনতে চাইছি ।

'হ্যাঁ.. ইয়েস..হুম,ট্রু... ওয়েল । বারকয়েক কাশি দিয়ে মাঝখানের অস্বস্তি দূর করতে চাইল এমদাদ । 'দেখ্ লিয়া । তোর যেমন মনে আছে, আমারো মনে আছে । আমি ভাবিইনি এটা তুই মনে রাখবি । ইনফ্যাক্ট আমি ভুলেই গিয়েছিলাম । বিশেষ কিছু না মনে রাখার মতন । আজ হঠাৎ তোর কথায় মনে হলল,যদিও এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম । জানিস তো,বড়রা যখন কিছু এড়িয়ে যেতে চায়,এড়িয়ে যাওয়াই ভাল ...। '


'হ্যাঁ । তোমরা সব ভালর জন্যই কর। এটাও নিশ্চয়ই আমার ভালোর জন্যই করেছিলে ? '

'আহ ! শেষ করতে দে । তুই তো একতরফা খুব দোষ দিলি আমায় । কিন্তু ঠিক কেন তোর প্রতি এগোলাম সেটা ভেবেছিস ? তুমি খুব... খুব বাজে খাসলতের ছিলা । নষ্টা মেয়ে । '

লিয়া কিছুই বলল না । বলার মত কিছু পেলনা । এই কুত্তাটাকে কিছু বলে লাভ নেই । শুধু নিষ্ফলভভাবে 'তুই তুই তুই ' করল কতক্ষণ । তার কথাবার্তা জড়িয়ে যাচ্ছিল ।'আচ্ছা,তোর মেয়ে তোকে লোভ জাগায় না? সেও তো তোর কোলে বসে, বসে না? তার খাসলতটাও খারাপ? ভেবে দেখ,তোর মেয়েটার সাথে এমন হলে কেমন লাগবে ? আমি অবশ্য চাইনা কারো সাথেই এমনটা হোক । তবু তোর মতন কুত্তাকে ধন্যবাদ । তুই নিজের মুখে স্বীকার করেছিস । আমার আর কিছু চাইনা । '
***

মৌলির বিয়েতে সবাই যখন বাসর সাজাতে ব্যস্ত,লিয়া তখন নিজের রুমে অন্ধকারে বড় করে শ্বাস নিতে চেষ্টা করছিল । মাঝে মাঝে হাসি হাসি মুখে বলছিল,'স্বীকারোক্তি­­ ! 'ধর্ষণের স্বীকারোক্তি । তার ধর্ষিত হওয়ার স্বীকারোক্তি ।

***

আঈয়াজ লাল গাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে লিয়ার সামনে । লিয়ার হাতদুটো বিয়ের আগে বাচ্চা না হওয়ার শিক্ষা দিতে দিতে ক্লান্ত । একটু বিশ্রামের পর আবার শুরু করবে শিক্ষা দেওয়া ।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই মার্চ, ২০১৫ সকাল ১০:৩৩

আরণ্যক রাখাল বলেছেন: একটু বিশ্রামের পর আবার শুরু করবে শিক্ষ দেয়া| আশাজাগানিয়া বাক্য

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.