নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেড়াই-পড়ি-লিখি.....

সজল জাহিদ

সজল জাহিদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালোবাসা আর পোস্ট অফিস...!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:০১


রাজশাহী এই দেশের সবচেয়ে ছিমছাম শহরের একটা। অন্তত ধুলো-কলহ আর পরিবেশের কথা বিবেচনায় নিলে তো দেশের যে কোন বিভাগীয় শহরকে হার মানাবে নির্দ্বিধায়। আর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সেই শহরের প্রান বলা যায়। শহরের মাঝে এক খণ্ড বনভুমি যেন। কি নেই সেখানে গাছে গাছে আচ্ছাদিত অরণ্য, বিশাল কেওড়া আর কৃষ্ণচূড়ার সুশোভিত মসৃণ প্যারিস রোড, সবুজ গালিচার মাঝে মাঝে লাল ইটের ছোট-বড় স্থাপনা, আর হাজার-হাজার রঙ-বেরঙের ফুল-প্রজাপতি আর পাখিদের মত ছাত্র-ছাত্রীতে ভরপুর সেই স্বর্গীয় অরণ্য।

আর সেই অরণ্যর মাঝে হেলে-দুলে, এদিক-ওদিক ছুটে বেড়ানো, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে সময়কে উপভোগ করা একটি ছেলে আর একটি মেয়ে। ঠিক ভালোবাসা-বাসি ছিলোনা ওদের মধ্যে, তবে বেশ ভালো আর গভীর বন্ধুত্ত ছিল। একে-অন্যের জন্য নির্ভরতা ছিল, ছিল প্রতিদিন দেখা-কথা-বসা-হাটা-গল্প করার জন্য আকাঙ্ক্ষা। মোট কথা দুজন-দুজনকে ছাড়া এক পাও নড়েনা কোথাও! তবে ভালোবাসাটা হয়ে ওঠেনি তখনো। শুধু খুব বন্ধু দুজন।

একদিন রাজশাহীর হাড় কাঁপানো শীতে, তার উপর সেই অরণ্যের ভিতরে আরও হিম ধরানো শীতে দুজনের দেখা হল কাজলা গেটে। ছেলেটি সেখানেই থাকে একটা মেসে আর মেয়েটি বাসা থেকে বর্ণালীর লেডিস গাড়িতে করে রোজ এসে কাজলা গেটে নেমে পরে। এরপর দুজন জুবেরি ভবনের সবুজের মধ্যে মাথার সিঁথির মত মিহি যে মেঠো পথ আছে, সেই পথ ধরে হেটে যায় ধীর লয়ে।

তবে সেই রাস্তার ব্যাস এতোই কম যে দুজনে একসাথে হেটে যেতে পারেনা রাস্তা দিয়ে। একজন রাস্তায় চললে অন্যজনকে শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হাটতে হয়। যেটা নিয়ে প্রায়ই খুনসুটি বাঁধে দুজনের। কে রাস্তা দিয়ে যাবে আর কে যাবে শিশির ভেজা ঘাস মাড়িয়ে। তবে খুব একটা মন্দ লাগেনা কারোই এই খুনসুটি যদি থাকে স্বচ্ছ আকাশ, মিষ্টি রোদ আর মন ভালো থাকার জন্য না কোন ইনকোরস! (বিভাগীয় পরীক্ষা!)

একদিন ওরা দুজন হাঁটছিল সেই শিশির ভেজা সবুজ ঘাস আর মিহি সিঁথির মত কাঁচা রাস্তা দিয়ে। মেয়েটির কোন একটা চিঠি পোস্ট করতে হবে পোস্ট অফিসে। ঠিক পোস্ট নয় খামে ভরাই আছে, ঠিকানাও লেখা আছে, শুধু পোস্ট করে দিলেই হবে। প্যারিস রোডে গিয়ে মেয়েটি ছেলেটিকে বিদায় জানাতে চাইলো, ছেলেটির ক্লাস আছে তাই, মেয়েটির ক্লাস নেই তখন, তাই সে এই ফাঁকা সময়টা কাজে লাগাতে চাইছে।

কিন্তু ছেলেটিও চলল মেয়েটির সাথে সাথে, চিঠি পোস্ট করতে... আর মেয়েটিকে বলল আরে অত ক্লাস করে কি হবে বল, পাবো তো সেই সেকেন্ড ক্লাসই! তাই অমন ডু-চারটা ক্লাস না করলে কিছুই যাবে বা আসবে বলে মনে হয়না। তার চেয়ে ফাঁকা প্যারিস রোড ধরে আর উপভোগ করি সময়টাকে।

হাটতে লাগলো দুজনেই, ধীরে-ধীরে। এক সময় প্রশাসনিক ভবন, ধুলো ওরা বাস স্ট্যান্ড, নজরুল ইসলাম অডিটোরিয়াম, সাইন্স বিল্ডিং পেরিয়ে পৌঁছে গেল পোস্ট অফিসের কাছে, টুকিটাকির পাশে। তখন সকাল মাত্র সাড়ে আটটা। পোস্ট অফিস তখনো খোলেনি। পোস্ট অফিস খুলবে সেই নটায়।

তাই ওরা বসে পড়লো পোস্ট অফিসে পাশেই একটা বট গাছের নিচে, যেখানে বসার জন্য আছে সিমেন্ট দিয়ে বানানো বেঞ্চি আর পাশের পুকুরের সাথে একটি ছাপরা হোটেল, সেখানে ফাঁকা পরে আছে দুই-একটি কাঠের বেঞ্চি, তাও রাতভর শিশির পরে ভিজে রয়েছে। কোন মতে একটু শুকনো যায়গা দেখে ওরা বসলো সেই বট তলাতে। অপেক্ষা করছে কখন পোস্ট অফিস খুলবে, আর চিঠি পোস্ট করবে!

এই কথা, সেই কথা, ওই কথা, আগের কথা, পিছের কথা, ক্লাসে কথা, বাসার কথা, পরীক্ষার কথা, রেজাল্টের কথা, আশার কথা, নিরাশার কথা, ভালো কথা, মন্দ কথা, ভাবের কথা, রাগের কথা... এমন হাজারো কথার ভিড়ে কখন যেন হারিয়ে গেল দুই ঘণ্টা ওরা বুঝতেই পারেনি! সকাল সাড়ে দশটায় যখন পুকুর পাশের দোকানি এসে তার দোকান পরিষ্কার করতে লাগলো তখন ওরা সামনে তাকিয়ে দেখে যে পোস্ট অফিস খুলেছে আর সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা লাইনে দাড়িয়ে চিঠিপত্র পোস্ট করার কাজও করে যাচ্ছে।

ওরা দুজনও সামনে গিয়ে লাইনে দাঁড়ালো। খামের মধ্যে বন্দী, ঠিকানা লেখা চিঠি পোস্ট করবে বলে। বেশ দশ মিনিট লাইনে দাড়িয়ে থাকার পরে একজনকে দেখলো, খাম কিনে, চিঠি ভিতরে ভরে, ঠিকানা লিখে, খামের মুখ বন্ধ করে, পাশের যে পোস্ট বক্স আছে সেখানে চিঠিটা ফেলে দিয়ে চলে গেল! আর এই দেখে ছেলেটি মেয়েটির দিকে আর মেয়েটি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে রইলো...

এই দুই ঘণ্টা বসে থেকে, পোস্ট অফিস খোলার পরে অন্য আর একজনকে বক্সে চিঠি ফেলতে দেখে ওদের মনে পড়লো, আরে বাইরেই তো চিঠি পোস্ট করার জন্য বক্স রাখা আছে, তবে চিঠি পোস্ট করার জন্য এতক্ষণ ঠাণ্ডার মধ্যে, শিশিরে ভিজে, শীতের বাতাসের মধ্যে বসে রইলাম কেন! হেসে ফেলল দুজনেই।

চিঠিটি ফেলে দিল, পোস্ট অফিসের বাইরের খোলা বক্সে, আর হেটে চলল ওদের ক্লাসের দিকে, একজন আর একজনকে দোষ দিতে-দিতে! যেটা প্রথমে ঝগড়া, একটু পরে খুনসুটি আর তারও পরে ভালোবাসায় রূপ নিয়েছিল! দুজনেই বুঝেছিল, কিন্তু কেউ কাউকে বুঝতে দেয়নি।

ওরা এই পোস্ট অফিসের সেদিন থেকেই অনেক কৃতজ্ঞ হয়েছিল। ওদের সেদিনের সেই ঝগড়া ঠিক আগের মতই আছে, ভালোবাসার সেই অন্ধ আবেগ আছে কি নেই খুঁজে দেখেনা আর তবে খুনসুটি আছে সেই আগের মতই, আর আছে কৃতজ্ঞতা সেই, চিঠি-পোস্ট অফিস আর ভালোবাসার প্রতি, থাকবে......!

তাই সেই গল্পের ওরা নাম দিয়েছিল......

ভালোবাসা ও পোস্ট অফিস...!!

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:


পড়লাম, লিখে যান, হাত আসুক; আপাতত পাশ করেননি

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১১

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ। হাত আসুক সে আমি চাইনা। এ আমার মনের খোরাক!

২| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৫

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: আমার প্রিয় শহর। এই পোস্ট অফিসে দীর্ঘদিন চাকরি করেছি।

ধন্যবাদ ভাই সজল জাহিদ।

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:১২

সজল জাহিদ বলেছেন: আহা, তাই নাকি? অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

৩| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:৪৮

চাঁদগাজী বলেছেন:


"লেখক বলেছেন: ধন্যবাদ। হাত আসুক সে আমি চাইনা। এ আমার মনের খোরাক! "

-মনের খোরাক? খেয়ে বসে থাকেন, প্রকাশ করছেন কেন?

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৪

সজল জাহিদ বলেছেন:
ভাইজান আপনি কি মাইন্ড করলেন? আমি কিন্তু আপনাকে হার্ড করতে চাইনি সত্যি। আপনি কিছু মনে করলে আন্তরিকভাবে দুঃখিত। ঠিক আছে তবে নাহয় হাত আসুক। প্লিজ ভুল বুঝবেন না।

৪| ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩৭

ধ্রুবক আলো বলেছেন: পড়লাম, লেখা ভালো হইছে,
লিখে যান আরও ভালো হবে আশা রাখি.,,,,,

অনেক শুভ কামনা রইলো..!

১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:০২

সজল জাহিদ বলেছেন: ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.