নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রংধনু প্রকৃতি

শাবা

হাসতে হাসতে বেদনা ভোলা চাই.... আমি হেঁটে বেড়াই সীমাবদ্ধ পৃথিবী ফুরিয়ে যায়। সত্যের ভূবনে সবই সত্য শুধু মিথ্যা আমার অস্তিত্ব। * শামীমুল বারী নামে আমার অন্য একটি ব্লগ রয়েছে।

শাবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

সাহিত্যে শব্দ প্রয়োগ ও মননশীলতা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:৩৯

এক.

সাবাস! সাবাস!!

শব্দটি শুনে যে কেউ মনে করবে উৎসাহ দেওয়ার মতো কোন কিছু ঘটেছে এবং খুব স্বতঃস্ফুর্তভাবে উচ্চস্বরে আনন্দচিত্তে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এ শব্দটির কাছাকাছি শব্দ হলো বাহ্! বাহ! কিংবা বেশ বেশ, ধন্য ধন্য; ইংরেজিতে ব্রাভো ব্রাভো, ওয়েলডান ইত্যাদি। কিন্তু কোনটিই সাবাসের মতো এত অর্থব্যঞ্জন বা ভাবপ্রকাশক নয়। শব্দটি কবি সুকান্তের ব্যবহারে দেখা যাক--

“সাবাস, বাংলাদেশ, এ পৃথিবী
অবাক তাকিয়ে রয় :
জ্বলে পুড়ে-মরে ছারখার
তবু মাথা নোয়াবার নয়।”
(দুর্মর; সুকান্ত ভট্টাচার্য)

এখানে সাবাসের পরিবর্তে বাহ্ বাহ্ কিংবা বেশ বেশ শব্দ প্রয়োগ করে কোনভাবেই ওই অর্থ আনা সম্ভব নয়।

অবাক করা ব্যাপার হলো, এই সাবাস শব্দটি আস্ত একজন মানুষ। মানুষের এ নামটি অপভ্রংশ হয়ে সাবাস হয়েছে। শব্দটির প্রয়োগ এত ব্যাপক যে, পারস্য থেকে শুরু করে পুরো ভারতবর্ষে এ শব্দটির বিকল্প কোন শব্দ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলা, উর্দু, হিন্দি, ফার্সিসহ উপমহাদেশের প্রায় সব ভাষাতে এ শব্দটির ব্যবহার দেখা যায়। জানা যাক শব্দটির উৎপত্তি। শাহ আব্বাস নামে পারস্যে একজন বাদশাহ ছিলেন। তিনি ১৫৮৮ খৃস্টাব্দ থেকে ১৬২২ খৃস্টাব্দ পর্যন্ত পারস্য শাসন করেন। কূটনৈতিক বিচক্ষণতার কারণে কিংবদন্তিতে পরিণত হন তিনি। অনেক রাজা-বাদশার সাথে বিনা যুদ্ধে বুদ্ধির চালে বিজয়লাভ করেন তিনি। তাই তখন থেকেই লোকেরা কারো বুদ্ধিমত্তা বা বিচক্ষণতা দেখে কিংবা সাহস আর উৎসাহ যোগাবার জন্য ব্যবহার করতে থাকে শা-আব্বাস! যা রূপান্তর হয়ে সাবাসে পরিণত হয়। সে সময় ভারতের মোঘল রাজদরবারে বিপুল পরিমানে ইরানি আমির-ওমরাহ এবং বিভিন্ন প্রদেশে ইরানি রাজকর্মচারী থাকায় তাদের প্রভাবে ভারতের সর্বত্র এ শব্দটির ব্যাপক প্রয়োগ হতে থাকে। তারই ধারাবাহিকতায় বাংলা ভাষাতেও শব্দটি স্থান পেয়ে যায়। [সূত্র : Travels in the Mughal Empire (AD 1656-1668) by Francois Bernier/অনুবাদ : বাদশাহী আমল; বিনয় ঘোষ; অরুণা প্রকাশনী; কলকাতা, বৈশাখ ১৪০২; পৃ. ৫৩]

কোথাকার কোন শাহ আব্বাস বাংলা ভাষাতেও এসে আশ্রয় নিতে পেরেছেন। অথচ আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদগুলোকে সেভাবে ব্যবহার করতে শিখে নি। যেমন বখতিয়ারের কথাই ধরা যাক। দুরন্ত সাহসের প্রতীক তিনি। এ সাহস কোন বোকামীপূর্ণ নয়, বুদ্ধিবৃত্তিক ছিল। প্রতিষ্ঠিত রাজশক্তিকে খুব স্বল্পসংখ্যক সৈন্য নিয়ে পরাজিত করার হিম্মত কয়জনই বা রাখে। পৃথিবীর ইতিহাসে এমন নজির বিরল। তাই আমরা সহজেই বুদ্ধিবৃত্তিক দুরন্ত সাহস বুঝাতে বখতিয়ার শব্দটি বা এর অপভ্রংশ ব্যবহার করতে পারতাম। গত আটশত বছরেও আমরা তা পারে নি।
শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহও (১৩৪২-১৩৫৮ খৃ.) তেমন আরেক নজির। তিনি বাঙ্গালী জাতির গোড়াপত্তন করেন। তিনি সাতগাঁও, লখনৌতি, সোনারগাঁও এ তিনটি দিল্লি সালতানাতের প্রদেশকে এক করে স্বাধীন বাঙ্গালা রাষ্ট্রের পত্তন করেন। পরে আরো বিশাল ভূ-ভাগকে এ রাষ্ট্রের সাথে যুক্ত করেন। তিনিই প্রথম দিল্লির নিয়ন্ত্রণ অস্বীকার করে বাংলার স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। যা দুইশত বছর পর্যন্ত অক্ষুণ্ন থাকে। বাঙ্গালী জাতি গঠনকারী হিসেবে বাংলাপেডিয়াসহ সকল ঐতিহাসিকগণ তাকেই কৃতিত্ব দেন। তিনি তখন যে নাম দিতেন সে নামেই এ জাতি পরিচিত হতো। অপূর্ব রণকৌশল দিয়ে তিনি বার বার দিল্লির আক্রমন থেকে বাংলাকে বাঁচিয়েছিলেন। সাতশত বছর পর সেই একই রণকৌশল অবলম্বন করে স্ট্যালিন হিটলার বাহিনীকে পরাজিত করেন। এমনকি বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের বিকাশ ঘটে মূলত দুশত বছরের এ সুলতানী আমলেই। তারা মৃতপ্রায় একটি ভাষাকে পুনর্জীবন দান করেন। কিন্তু তাদের কাউকেও আমরা আমাদের প্রতিদিনের শব্দে নিয়ে আসতে পারে নি। যেমন আমরা রাম, লক্ষ্মী, ইন্দ্র, রুদ্র ইত্যাদি নামকে শব্দ বানিয়ে কথা বলছি।

আধুনিক গবেষণায় দেখা গেছে যে, আদি বাংলা ভাষার অনেক শব্দই আরবি-ফারসি জাত। যেমন ওহী থেকে বহি হয়ে বই শব্দের উৎপত্তি। এভাবে বিশ্লেষণ করলে বাংলা অনেক শব্দের মূলই পাওয়া যাবে আরবি-ফারসি থেকে উদ্ভুত। এছাড়া আমাদের প্রতিদিনের অসংখ্য নিত্য ব্যবহৃত শব্দই আরবি-ফারসিজাত। যেমন সরকারি, দরকারি, আমলা, ইজারা, ইস্তাফা, এজমালি, খতিয়ান, খাজনা, খাসমহল, খারিজ, গোমস্তা, গোয়েন্দা, চৌহদ্দি, জমাদার, জমি, জমা, জামানত, জমিদার, জরিপ, তফসিল, দফতর, দখল, দফা, দরখাস্ত, দরবার, দাগ, দাদন, দাখিলা, দেওয়ান, দৌলত, দৌলতখানা, নক্শা, নবাব, নাজির, নামজারি, নায়েব, পরচা, পরোয়ানা, পাইক, পালোয়ান, পিলখানা, পেয়াদা, পেশকার, ফরমান, ফৌজ, বন্দুক, বন্দোবস্ত, বায়না ইত্যাদি ।

কিন্তু ইংরেজ আমলে সংস্কৃত পণ্ডিতদের বদৌলতে এই স্বাভাবিক বাংলা ভাষা সংস্কৃতপ্রবণ হয়ে যায়। ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পাদ্রী ও সংস্কৃত পণ্ডিতগণের তৈরিকৃত ‘বাংলা’ সম্পর্কে প্রখ্যাত ইংরেজ ভাষাতাত্ত্বিক স্যার জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন (১৮৫১-১৯৪১) বলেন : “শতকরা নব্বইটি প্রকৃত বাংলা শব্দের স্থলে উদ্দেশ্যমূলকভাবে সংস্কৃত শব্দ বসিয়ে বাংলা ভাষাকে তথাকথিত সাধু ভাষা বানানোর চেষ্টা করেছিলেন সংস্কৃত পণ্ডিতগণ।” যে সময় ফোর্ট উইলিয়ম কলেজের পাদ্রী ও সংস্কৃত পণ্ডিতগণ বাংলা গদ্য লেখা শুরু করেন, সে সময় এ সম্পর্কে ইংরেজ পণ্ডিত বহু ভাষাবিদ এন. বি. হ্যালহেড (১৭৫১-১৮৩০) মন্তব্য করেন : “বাংলা গদ্যের এই নব রূপায়ণ ঐতিহ্য-বিরোধী এবং ভাষার স্বাভাবিক বিকাশকে ব্যাহত করেছে।”

ভাষা কখনো সাম্প্রদায়িক হতে পারে না। সবার জন্য হয়ে থাকে উন্মুক্ত, সর্বজনীন। হয়তো কোন ভাষায় কোন সম্প্রদায়ের বেশি উপস্থিতির কারণে সে ভাষায় ঐ সম্প্রদায়ের প্রাধান্য বেশি থাকতে পারে। এটা কোন দোষণীয় ব্যাপার নয়। বাংলা ভাষায় হয়েছে তার উল্টো। পৃথিবীতে বাংলা ভাষাভাষী জনসংখ্যার মধ্যে মুসলমানই বেশি। এ অবস্থা সব যুগেই ছিল। কিন্তু বাংলা ভাষার বিপুল শব্দ হিন্দু মিথ (Myth) থেকে নেয়া। সে তুলনায় মুসলিম মিথ থেকে নেয়া শব্দ খুবই কম। মূলত এমনটা হয়েছে হিন্দু লেখক-সাহিত্যিকের প্রাধান্যের কারণেই । তারা অকৃপণভাবে এসব মিথকে সাধারণীকরণ করেন। বিভিন্ন পৌরাণিক ব্যক্তিদের নামকে শব্দ বানান। বাংলা ভাষাকে তারা সমৃদ্ধ করেন। অন্যদিকে মুসলিম কবি সাহিত্যিকরা চরম অলসতার পরিচয় দেন। তারা নিজস্ব সংস্কৃতিকে স্বাভাবিকভাবে উপস্থাপন করতে পারেন নি। নতুন নতুন শব্দ উপহার দিতে পারেন নি। বরং তারা বেশি বেশি সংস্কৃতপ্রবণ শব্দ ব্যবহার করে জাতে উঠতে চেয়েছেন। মাত্র নিকট অতীতে কবি নজরুল, ফররুখ, আবুল মনসুর আহমেদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, হালের প্রবীণ কবি আল মাহমুদ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক মুসলিম শব্দ ও মিথকে শব্দ বানাতে চেষ্টা করেন। এ সময়ের বাংলাদেশী কবি-সাহিত্যিকরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। তারা একে আধুনিকতা বিরুদ্ধ মনে করেন। কিন্তু তারা যে কৃত্রিম সাহিত্য রচনা করছেন, যা কালের বিচারে উত্তীর্ণ হওয়া কঠিন, এ বোধটুকুও তাদের নেই। যেমন পারেন নি মধুসূধন ইংল্যান্ডে গিয়ে ইংরেজি সাহিত্যিক হতে। পরে ঠিকই বাংলা ভাষা তাঁকে অমরত্ব দান করে।

হিন্দু মিথ থেকে নেয়া কিছু শব্দের উদাহরণ দিচ্ছি যা আমরা বিভিন্ন সময় শব্দ হিসেবে ব্যবহার করি। যেমন, ইন্দ্র হলেন স্বর্গের দেবরাজ। তা থেকে হয়েছে ইন্দ্রজিত (যে ইন্দ্রকে জয় করেছে), ইন্দ্রজাল (যাদুবিদ্যা, ভেলকি), এমন কি ইন্দ্রীয় শব্দটিও এসেছে ইন্দ্র থেকে। তাদের প্রধান দেবতা ব্রহ্মা থেকে বিশ্ব অর্থ বুঝাতে এসেছে ব্রহ্মাণ্ড, অতিশয় ক্ষমতাশালী বুঝাতে ব্রহ্মাস্ত্র শব্দ ব্যবহার করা হয়। তেমনি দেবতা শিবের সাংহার রূপ হলো রুদ্র। তা থেকে রুদ্ররোষ, রুদ্রমূর্তি এসেছে। রাম থেকে রামদা, রামধনু, রামছাগল, রামলীলা প্রভৃতি শব্দের উৎপত্তি। রাবণ থেকে রামণমুখো; দেবী চণ্ডী বা চণ্ডিকা থেকে কলহপ্রিয় নারী বুঝাতে রণচণ্ডী বা উগ্রচণ্ডী এসেছে। দেবতা কৃষ্ণ কর্তৃক নিহত দৈত্যের নামে গাড়ী অর্থে এসেছে শকট শব্দটি। এভাবে অসংখ্য হিন্দু ধর্মীয় ব্যক্তিদের নাম শব্দ হিসেবে আমরা প্রতিনিয়ত ব্যবহার করছি। এ ক্ষেত্রে যদি আমরা আমাদের হাজার বছরের বাঙালি সামাজিক কৃতি ব্যক্তি, ঘটনা বা স্থানকে আমাদের ভাষায় নিয়ে আসতে পারতাম তাহলে কতই না সমৃদ্ধ হতো আমাদের গৌরবের এ মাতৃভাষা।

আমি সাম্প্রদায়িক কোন আলোচনা এখানে করতে চাই নি কিংবা দু’ জাতির প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলতে চাই নি, আমার সে ধরনের মানসিকতাও নেই। আমি মূলত এখানে আমাদের প্রকৃত দৈন্যতা তুলে ধরতে চেষ্টা করেছি এবং বলতে চেয়েছি ভাষার উন্নয়নে আমরা কী করতে পারি, আমাদের কী গ্যাপ হচ্ছে, আমরা কি আমাদের ভাষাকে কোন কৃত্রিম ভাষা বানিয়ে ফেলছি কি না... ইত্যাদি। মূলত এ লেখাটা হচ্ছে অনেকটা আত্মপর্যালোচনামূলক। কিন্তু জানি না, আমি আমার প্রকৃত মনোভাব ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি কি না?



---------------------
তথ্যসূত্র:
১. Francois Bernier; Travels in the Mughal Empire (AD 1656-1668) /অনুবাদক : বিনয় ঘোষ; বাদশাহী আমল; অরুণা প্রকাশনী; কলকাতা, বৈশাখ ১৪০২
২. মুহম্মদ মতিউর রহমান; শব্দ সংস্কৃতি; অক্টোবর ১১, ২০১৬; Click This Link
৩. মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান; ভাষাবিজ্ঞানী জর্জ আব্রাহাম গ্রিয়ারসন; দৈনিক ইত্তেফাক : ২৩ জানুয়ারি ২০১৩
৪. পবিত্র সরকার; হ্যালহেড: জীবন কথা; বণিকবার্তা : ফেব্রুয়ারি ১৭, ২০১৭; Click This Link
৫. গোলাম মুরশিদ; বিবর্তনমূলক বাংলা অভিধান; বাংলা একাডেমি, ঢাকা
৬. ড. মোহাম্মদ হারুন রশিদ; বাংলা ভাষায় ব্যবহৃত আরবি ফারসি উর্দু শব্দের অভিধান; বাংলা একাডেমি, ঢাকা

মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:২০

মলাসইলমুইনা বলেছেন: খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা |সাবাস শব্দটার উৎপত্তি শুনে অবাক হলাম | অনেক ধন্যবাদ |

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:০১

শাবা বলেছেন: অনেকদিন পর ব্লগে পোস্ট দিলাম।
প্রথম মন্তব্যকারী হিসেবে আপনাকে ধন্যবাদ।

২| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:২৩

আশরাফুল এষ বলেছেন: তথ্য পূর্ণ ব্লগ .। পড়ে ভালো লাগলো । অনেক ভালোবাসা

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:০৩

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ আশরাফুল এষ।

৩| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৩:৩৪

জাহিদ অনিক বলেছেন:

সাবাস !!!!!

অনেক অনেক ধন্যবাদ

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সকাল ৯:০৪

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ জাহিদ অনিক।

৪| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১২:১৩

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: খুবই সুন্দর পোস্ট। পোস্টে প্লাস।

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১০

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৫| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৪৮

শাবা বলেছেন: পোস্টটি কোন উপকারে আসলে খুশি হবো।

৬| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৫:৫৯

মলাসইলমুইনা বলেছেন: আগে বলা হয় নি, লেখাটার জন্য আপনার একটা শাহ আব্বাস অবশ্যই পাওনা হয়েছে ! এরকম লেখা আরো কিছু লিখুন না |

৭| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৪৮

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: এ কথা অস্বীকার করার জো নেই যে, মুসলমানদের আগে হিন্দুরা শিক্ষার দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল। বাংলা ভাষাটা ছিল মুসলমানদের কাছে অবহেলিত। ইংরেজি ছিল মুসলমানদের কাছে বিজাতীয় ঘৃণ্য ভাষা। তাদের ভাষা ছিল আরবি, ফার্সি আর উর্দু। সেসময়গুলোর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করলে বা সে সময়ের সাহিত্য ঘাটাঘাটি করলে দেখা যাবে শিক্ষিতরা সাহিত্য চর্চা করছেন ফার্সি ভাষায়, উর্দু ভাষায়। ফার্সি আর উর্দু ভাষার খুবই শক্তিশালী একটি শাখা কবিতা বা গজল। ফার্সিতে যার নাম 'বয়েত' আর উর্দুতে নাম 'শায়ের বা গজল'। সাহিত্যের এই দিকটি কোনো অংশেই কিন্তু দুর্বল বা সৌন্দর্যহীন নয়। তাহলে দেখা যাচ্ছে যে, মুসলমানরা যদি বাংলা ভাষাকে অবহেলা না করতেন তাহলে কিন্তু 'ইসলামি' ভাষা বলে একটা দিক প্রতিষ্ঠা পেতে পারতো। কিন্তু তা আমাদের সাহিত্যের জন্য কতটা মঙ্গলজনক হতো তা বলা কঠিন।
আরাকান রাজসভার মুসলিম কবিরা যে সাহিত্য রচনা করে গেছেন, তা কিন্তু পুঁথি সাহিত্য হিসেবে এক সময় অবহেলিতই ছিল বলা যায়। আর সে কারণেই সেসব সাহিত্য সংরক্ষণের দিকে কারো তেমন একটা মনোযোগ ছিল না। তাছাড়া সেসব পুঁথি সাহিত্য কিন্তু সমাজের উচ্চ শিক্ষিত নয় স্বল্প শিক্ষিত লোকদের মাঝেই প্রচলিত ছিল।

কিন্তু বাংলা ভাষার বিপুল শব্দ হিন্দু মিথ (Myth) থেকে নেয়া। সে তুলনায় মুসলিম মিথ থেকে নেয়া শব্দ খুবই কম। মূলত এমনটা হয়েছে হিন্দু লেখক-সাহিত্যিকের প্রাধান্যের কারণেই । তারা অকৃপণভাবে এসব মিথকে সাধারণীকরণ করেন। মাত্র নিকট অতীতে কবি নজরুল, ফররুখ, আবুল মনসুর আহমেদ, আবদুল মান্নান সৈয়দ, হালের প্রবীণ কবি আল মাহমুদ প্রমুখ কবি-সাহিত্যিক মুসলিম শব্দ ও মিথকে শব্দ বানাতে চেষ্টা করেন। এ সময়ের বাংলাদেশী কবি-সাহিত্যিকরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। তারা একে আধুনিকতা বিরুদ্ধ মনে করেন।

ননমুসলিম মিথকে সাহিত্যে যতটা ব্যবহার করতে সাহিত্যিকরা সাবলীল ছিলেন, ইসলামের ইতিহাসকে নিয়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে কোনো সাহিত্যিক কিছু রচনা করতে পারেন না। যদিও আপনি মিথ শব্দটাকে ব্যবহার করেছেন, অবলীলায় বলা যায় গ্রীক মিথ, হিন্দু মিথ, বা অন্য কোনো মিথ, কিন্তু আপনি কি মুসলিম মিথ বা ইসলামি মিথোলজি বলে কিছু উচ্চারণ করতে পারবেন? এমন কিছু বলতে গেলে আগে আপনার কল্লাটাকে নিরাপদে কোথাও লুকিয়ে আসতে হবে। নইলে ধর্মানুভূতিতে আঘাত প্রাপ্তরা আপনার বারটা বাজিয়ে দেবে।

আর এ কারণেই 'বখপ্তিয়ারের ঘোড়া' দ্রুতগামী কিছুর ক্ষেত্রে আমরা ব্যবহার করতে পারি না। ইসলামে কথিত মিথ নেই, মুসলিম মিথোলজি বলে কোনো শব্দ নেই। কাজেই কয়েকটি শব্দ ব্যবহার করেই কিন্তু তা সম্ভব নয়। সৈয়দ হক যখন চিত্রকল্প রচনা করেন- হোসেনের রক্তের মতো লাল সন্ধ্যার আকাশ, কিন্তু আমরা তো বলতে পারি না কোনো নবীর দাড়ির মতো বটের ঝুরি। বা এও বলা যাবে না ওহুদের মাঠের মতো রক্তভেজা আমার এ বাংলার মাটি। - এমন ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ বা কট্টরপন্থি মুসলিম হিসেবে আমি প্রতিবাদ করবো। লেখকের কল্লা চেয়ে রাজপথে স্লোগান দেবো।
কাজেই ইসলামি শব্দ ব্যবহারে সবারই কিছু না কিছু ভয় আছে। থাকবে। মুসলমান হিসেবে আমি উদার হতে পারি না। আমার ধর্মে কোনো মিথ আছে, তেমন কথা যেমন মানতে চাইবো না, অন্য কেউ তা নিয়ে কিছু বলুক তেমন সুযোগও হয়তো দিতে চাইবো না।

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৮

শাবা বলেছেন: দীর্ঘ ও বিশ্লেষণধর্মী সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
আপনি আমার লেখার মূল বক্তব্য ধরতে পারেন নি। সে জন্য আমার কথাকে আরো পরিষ্কার করার জন্য আপনার মন্তব্যের পর লেখাটার কিছু সম্পাদনা করেছি।
আপনি যেসব উদাহরণ দিয়েছেন, সেগুলো কোন শৈল্পিক কথা নয়। নান্দনিকভাবে উপস্থাপন করতে পারলেই সেটা সাহিত্য হয়, সেটা গ্রহণযোগ্য হয়। কোন বিশিষ্ট ব্যক্তিকে কি কোথাও অশ্রদ্ধার সাথে তুলে ধরা হয়? উপমা তো সঠিক হতে হবে। আপনি যেসব উপমা দিয়েছেন তা কি সঠিক? তা কি সবাই গ্রহণযোগ্য করে ব্যবহার করে শব্দ বানাবে? আমার মূল বক্তব্য ছিল তাই যে আমরা কিভাবে বাংলা ভাষাকে সমৃদ্ধ করতে পারি। আমাদের নিজস্ব জগতকে আমাদের ভাষায় নিয়ে আসতে পারি। বাংলাদেশের নিজস্ব পরিবেশ, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি আমাদের ভাষায়, আমাদের সাহিত্যে নিয়ে আসার মধ্যেই রয়েছে আমাদের সার্থকতা। কলকাতা বা অন্য কারো নিকট থেকে ধার করে নিলে চলবে না।
বাংলাভাষার হাজার বছরের ইতিহাস রয়েছে। এ অঞ্চলের হাজার বছরের ইতিহাসকে আমাদের সাহিত্যে, আমাদের শব্দমালায় নিয়ে আসতে হবে। এ একহাজার বছর মুসলিম শাসনই বেশি ছিল। সে জন্য অন্য ধর্মের ব্যক্তিত্বদের মত মুসলিম ব্যক্তিত্বকেও আমাদের ভাষায় নিয়ে আসতে হবে। এটা আমাদেরকেই করতে হবে।
এক সময় এ অঞ্চলের বর্ণবাদী শাসকদের কারণে জনসাধারণের ভাষা বাংলা ছিল অচ্ছুত। সংস্কৃত ভাষা ছিল কুলীন। সে সময় বাংলা ভাষার কোন বিকাশ হতে দেয়া হয় নি। বাংলা ভাষার আদি নিদর্শন চর্যাপদ বৌদ্ধরা লিখেছিল বাংলার বাইরে তৎকালীন আরাকানের চট্টগ্রামে। পরবর্তীতে বাংলা ভাষার বিকাশ ঘটে সুলতানী আমলে।
আপনি লিখেছেন, এ কথা অস্বীকার করার জো নেই যে, মুসলমানদের আগে হিন্দুরা শিক্ষার দিক দিয়ে এগিয়ে ছিল। -এটা তো দুশত বছর আগের কথা, যখন হিন্দুরা মুসলমানদের চেয়ে সব দিকে এগিয়ে ছিল। কিন্তু বাংলা ভাষাতো এক হাজার বছরের। আমি সেই সময়ের কথাই বলেছি। তখন মুসলমানরা শিক্ষা-দীক্ষায় অনেক অগ্রসর ছিল। আমি আসলে এ রকম দু জাতির প্রতিদ্বন্দ্বিতার কথা বলতে চাই নি। আমি মূলত বলতে চেয়েছি ভাষার উন্নয়নে আমরা কী করতে পারি, আমাদের কী গ্যাপ হচ্ছে, আমরা কি আমাদের ভাষাকে কোন কৃত্রিম ভাষা বানিয়ে ফেলছি কি না... ইত্যাদি। মূলত এ লেখাটা হচ্ছে অনেকটা আত্মপর্যালোচনামূলক।
অসংখ্য ধন্যবাদ।

৮| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ৯:৫৩

অনিক_আহমেদ বলেছেন: সাবাশ শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে আগেই জানতাম। বাংলার সাহিত্যিকদের উদাসীনতা সম্পর্কে আপনার সাথে একমত।

দরকারি একটি পোস্ট। :)

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৯

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ অনিক আহমেদ।

৯| ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৫

মলাসইলমুইনা বলেছেন: @জুলিয়ান সিদ্দিকী, আপনার " কোনো নবীর দাড়ির মতো বটের ঝুরি। বা এও বলা যাবে না ওহুদের মাঠের মতো রক্তভেজা আমার এ বাংলার মাটি। - এমন ক্ষেত্রে ধর্মান্ধ বা কট্টরপন্থি মুসলিম হিসেবে আমি প্রতিবাদ করবো। লেখকের কল্লা চেয়ে রাজপথে স্লোগান দেবো।কাজেই ইসলামি শব্দ ব্যবহারে সবারই কিছু না কিছু ভয় আছে। থাকবে। মুসলমান হিসেবে আমি উদার হতে পারি না। আমার ধর্মে কোনো মিথ আছে, তেমন কথা যেমন মানতে চাইবো না, অন্য কেউ তা নিয়ে কিছু বলুক তেমন সুযোগও হয়তো দিতে চাইবো না "- এই কথাগুলোর সাথে খানিকটা দ্বিমত করলাম | দেখুন, একটা দেশ বা অঞ্চলের সাহিত্য গড়ে উঠে তার সংস্কৃতিকে ঘিরেই যার মধ্যে ধর্মও আছে | সেই সংস্কৃতি যা এলাউ করে সেভাবেই সাহিত্য হবে, তাকে অগ্রাহ্য করেতো সাহিত্য হবে না | আমরা যে মুসলিম মিথ তৈরী করতে পারিনি তার কারণ ইসলাম অনুদার তা নয় | সেটা পুরোই আমাদের সাহিত্যিকদের ব্যর্থতা | এখানে আরেকটা কথা - একজন নবীর দাড়ির ব্যাপারটা নিয়ে মিথের চিন্তা করতে হবে কেন? আপনি আমাদের দেশে দেশের জাতির পিতা নিয়েও তামাশা করতে পারবেন না |এটা দেশের আইন |এখন দেশের আইনটা মানতে হবে না?সব সংস্কৃতিতেই কিছু কিছু জিনিস করা যায় না | আপনি নিশ্চই জানেন ফিদা মকবুলের বিরুদ্ধে হিন্দু দেবীদের ফটো আঁকায় অশ্লীলতার অভিযোগ আনা হয়েছিল খোদ ভারতে -পৃথিবীর সবচেয়ে বড় গণতান্ত্রিক দেশে ? তেমন ইসলামও কিছু জিনিস রক্ষণশীল ভাবে দেখে যার কিছু আপনি বলেছেন | সেগুলো ব্যবহার না করেও কিন্তু ইসলামের অন্য অনেক বিষয়ই সাহিত্যে ব্যবহার করা যেত আমরা সেটা পারিনি আমাদের ব্যর্থতার জন্যই | " এ সময়ের বাংলাদেশী কবি-সাহিত্যিকরা এ ব্যাপারে সম্পূর্ণ উদাসীন। তারা একে আধুনিকতা বিরুদ্ধ মনে করেন" -এটাই সত্যি আপনি যেমন বলেছেন |ইসলাম অনুদার সে জন্য নয় | অনেক ধন্যবাদ আপনার অনেক চিন্তা ভাবনা করে করা মন্তব্যের জন্য |

৩০ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:১১

শাবা বলেছেন: সুন্দর প্রতিউত্তর। আপনার বক্তব্যের সাথে সহমত।

১০| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:৫৪

শামচুল হক বলেছেন: দারুণ পোষ্ট

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৪

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ শামচুল হক ।

১১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১:০৭

মনিরা সুলতানা বলেছেন: দেরিতে হলেও লেখা টা পড়লাম ,এটাই সার্থকতা । চমৎকার বিশ্লেষণ আর ইতিহাস তুলে এনেছেন !!!!!

২৭ শে এপ্রিল, ২০১৮ রাত ১২:৩৮

শাবা বলেছেন: লেখক, সাহিত্যিকদের নিজের শিকড় সম্পর্কে সম্যক ধারণা থাকলে লেখনিতে গভীরতা আসে। আমি সে চেষ্টা করেছি। ধন্যবাদ মনিরা সুলতানা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.