নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রংধনু প্রকৃতি

শাবা

হাসতে হাসতে বেদনা ভোলা চাই.... আমি হেঁটে বেড়াই সীমাবদ্ধ পৃথিবী ফুরিয়ে যায়। সত্যের ভূবনে সবই সত্য শুধু মিথ্যা আমার অস্তিত্ব। * শামীমুল বারী নামে আমার অন্য একটি ব্লগ রয়েছে।

শাবা › বিস্তারিত পোস্টঃ

বানান আসর- ৫ : মূর্ধন্য-ণ’র কারসাজি

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:০০

কারসাজির কথা শুনে অনেকের হয়তো পিলে চমকে গিয়েছে, তাই না?

আসলেই তাই। মূর্ধন্য-ণ শুধুমাত্র সংস্কৃত তৎসম শব্দে ব্যবহার হওয়ায় কী কষ্ট করেই না সবার বানান শিখতে হচ্ছে, নইলে এই ণত্ব বিধানের কোন প্রয়োজনই ছিল না। এ এক ভীষণ কারসাজি আর কি! মূলত সংস্কৃত শব্দকে বাড়তি মর্যাদা দিতে গিয়ে পঁয়ত্রিশ কোটি বাঙালীর মাথা খেয়ে দিয়েছে। দেখুন এ প্রসঙ্গে 'বাংলাভাষা চর্চা' বইয়ে সুভাষ ভট্টাচার্যের একটি উদ্ধৃতি :

ইউরোপীয় ভাষাতাত্ত্বিকরা লাতিন থেকে অপরিবর্তিত অবস্থায় গৃহীত শব্দকে বলেন মো সাভাঁ (mots savants)। একটি উদাহরণ দিলেই এই মো সাভাঁ ব্যাপারটি বোঝা যাবে। লাতিনে fragile বলে একটি শব্দ আছে। উচ্চারণ ফ্রাগিলে, অর্থ দুর্বল বা ভঙ্গুর। এই শব্দটি ইংরেজিতে অপরিবর্তিত অবস্থায় ব্যবহৃত হয় - fragile. অবশ্য ইংরেজিতে উচ্চারণ ফ্রেজাইল। অর্থ দুর্বল বা ভঙ্গুর। এই লাতিন শব্দটি থেকে ফরাসি frele এসেছে। উচ্চারণ ফ্রেল্। আবার তুলনীয় একটা ইংরেজি শব্দও পাচ্ছি frail. তাহলে আমরা বলতে পারি যে ইংরেজি fragile শব্দটি একটি লাতিন তৎসম শব্দ বা মো সাভাঁ এবং ফরাসি শব্দটি তদ্ভব। এই মো সাভাঁর ব্যাপারটিও অনেকটা আমাদের সংস্কৃত তৎসম শব্দের মতো। তবে তফাত এই যে আমরা সংস্কৃত তৎসম শব্দকে একটা বাড়তি মর্যাদা দিই। তাদের বানানকে 'বিশুদ্ধ' বা অবিকৃত রাখার একটা দায়িত্ব আমরা নিয়েছি

এবার রবীন্দ্রনাথ কী বলেছেন, দেখুন:

বাংলা বর্ণমালায় আর-একটা বিভীষিকা আছে, মূর্ধন্য এবং দন্ত্য ন’এ ভেদাভেদ -তত্ত্ব। বানানে ওদের ভেদ, ব্যবহারে ওরা অভিন্ন। মূর্ধন্য ণ’এর আসল উচ্চারণ বাঙালির জানা নেই। কেউ কেউ বলেন, ওটা মূলত দ্রাবিড়ি। ওড়িয়া ভাষায় এর প্রভাব দেখা যায়। ড়’এ চন্দ্রবিন্দুর মতো ওর উচ্চারণ। খাঁড়া চাঁড়াল ভাঁড়ার প্রভৃতি শব্দে ওর পরিচয় পাওয়া যায়। –রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর (বাংলাভাষা-পরিচয়)

আপনাদের হয়তো মন খারাপ হয়ে গিয়েছে। নাহ্, তা ঠিক নয়। বিশ্বের অনেক ভাষাতেই এ রকম সমস্যা রয়েছে। দেখা যায়, সে সব ভাষায় একাধিক বর্ণ বা শব্দাংশের রয়েছে একই উচ্চারণ । অর্থাৎ একই উচ্চারণ কিন্তু বানান ভিন্ন। যেমন ইংরেজির কথাই ধরা যাক। শ-ধ্বনি লিখতে গিয়ে c, s, sh, ss, ti ব্যবহার করা হয়। এমন শব্দ ইংরেজি ভাষায় ভুরি ভুরি। উদাহরণ:
c - malicious (ম্যালিশাস)
s - sure (শিওর)
sh - fashion (ফ্যাশন)
ss - profession (প্রফেশন)
ti - fiction (ফিকশন)

আচ্ছা যেহেতু এখনো মূর্ধন্য-ণ’র বিধান রয়ে গিয়েছে, তাহলে আর কি করা? আর আমাদের মত অনেক ভাষাতেও এমন সমস্যা রয়েছে। তাই মন খারাপ না করে যত সহজভাবে শেখা যায় সেই চেষ্টা করবো আমরা।

ণত্ব বিধান
বাংলা ভাষায় সাধারণত মূর্ধণ্য-ণ ব্যবহারের প্রয়োজন নেই। সেজন্য বাংলা (দেশি), তদ্ভব, বিদেশি, বানানে মূর্ধণ্য বর্ণ (ণ) লেখার প্রয়োজন হয় না। কিন্তু বাংলায় বহু তৎসম বা সংস্কৃত শব্দে মূর্ধণ্য-ণ এবং দন্ত্য-ন এর ব্যবহার আছে। তা বাংলায় অবিকৃতভাবে রক্ষিত হয়। তৎসম শব্দের বানানে ণ এর সঠিক ব্যবহারের নিয়মই ণত্ব বিধান।

যেসব তৎসম শব্দে ণ ব্যবহৃত হবে

ক. যেসব বর্ণের পরে ণ হবে
সাধারণভাবে ঋ/র/ষ বর্ণের পরে ণ ব্যবহৃত হবে[

বিধি ১ :
ঋ-এর দুটি রূপ আছে। যথা, ঋ এবং ঋ-কার। এই দুটো রূপের পরেই ণ হবে। উদাহরণ :
১. ঋ - ঋণ
২. ঋ-কার - ঘৃণা, তৃণ, মৃণাল

বিধি ২ :
র-এর তিনটি রূপ আছে। যথা র, রেফ, র-ফলা। এই সবগুলো রূপের পরেই ণ হবে। উদাহরণ :
১. র - কারণ, ধারণ, মরণ, অরণ্য, আহরণ, উদাহরণ, সাধারণ
২. রেফ - কর্ণ, চূর্ণ, দীর্ণ, পর্ণ, অর্ণব, পূর্ণিমা, বিশীর্ণ
৩. র-ফলা - ঘ্রাণ, প্রণয়, প্রাণ, যন্ত্রণা, ভ্রূণ, মিশ্রণ, স্ত্রৈণ
লক্ষণীয় : এই নিয়মানুসারে রেফ-এর পর ণ হয় বলে তৎসম শব্দে 'রেফ-যুক্ত দন্ত-ন' সচরাচর দেখা যায় না। কিন্তু সাধিত শব্দে ঋ/র/ষ-এর পর সাধারণত (কিছু ব্যতিক্রম আছে, নিচের ‘কিছু বিশেষ নিয়ম’ শিরোনামের অংশটি দেখুন) ণ হয় না। যথা, সন্ধির ক্ষেত্রে : অহর্নিশ (অহ+নিশ), নিষ্পন্ন (নিঃ+পন্ন)। সমাসের ক্ষেত্রে : ত্রিনয়ন (ত্রি নয়ন যার)। উপসর্গের ক্ষেত্রে : পরিবহন (পরি+বহন), দুর্নীতি (দুর+নীতি, নির্নিমেষ (নির+নিমেষ), দুর্নাম (দুর‌+নাম), পরিনির্বাণ (পরি+নির্বাণ)।

বিধি ৩ :
১. ষ - ষণ্ড, ঘর্ষণ, দূষণ, বিষাণ, অন্বেষণ, নিষ্পেষণ, ভাষণ, বিষ্ণু ইত্যাদি। ষ-এর সাথে ণ যুক্ত হলে (ষ+ণ) যুক্তবর্ণের চেহারা হবে ষ্ণ। যেমন : বিষ্ণু, কবোষ্ণ, বৈষ্ণব, উষ্ণীষ ইত্যাদি।
২. ক্ষ (ক+ষ) - ক্ষণ, ক্ষণিক, ক্ষীণ, ঈক্ষণ, তীক্ষ্ণ, সমীক্ষণ, লক্ষণ ইত্যাদি।

বিধি ৪ : একই শব্দে ঋ/র/ষ-এর পরে যদি স্বরবর্ণ অথবা ক-বর্গের বর্ণ (ক খ গ ঘ ঙ), প-বর্গের বর্ণ (প ফ ব ভ ম), এবং য য় হ–এই ১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের এক বা একাধিক থাকে, তবে তার পরে ণ হবে।

উদাহরণ : র+ও (স্বরবর্ণ) + প + ন = রোপণ
শ+র + আ (স্বরবর্ণ) + ব (প-বর্গ) + ন = শ্রাবণ
হর + অ (স্বরবর্ণ) + ন = হরণ
অর + প + ন = অর্পণ
কৃ (ক + ঋ-কার) + প + অ (স্বরবর্ণ) + ন = কৃপণ
একইভাবে, অপরাহ্ণ, পরায়ণ, অগ্রহায়ণ, গ্রহণ, প্রবহমাণ, ভ্রাম্যমাণ, শ্রবণ, ভ্রমণ, ব্রাহ্মণ ইত্যাদি।

এই একই কারণে উত্তর, পর, পার, চন্দ্র, নার, রাম–ইত্যাদি শব্দের পরে ‘অয়ন/আয়ন’ শব্দ হলে ণ হয়ে যায়। উদাহরণ :
উত্তর + অয়ন = উত্তরায়ণ [র-এর পর আ (স্বরবর্ণ) + য় (১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের একটি) + ন = ণ]
পর + অয়ন = পরায়ণ [র-এর পর আ (স্বরবর্ণ) + য় (১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের একটি) + ন = ণ]
নার + অয়ন = নারায়ণ [র-এর পর আ (স্বরবর্ণ) + য় (১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের একটি) + ন = ণ]
চন্দ্র + আয়ন = চান্দ্রায়ণ [র-ফলা-র পর আ (স্বরবর্ণ) + য় (১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের একটি) + ন = ণ]
রাম + অয়ন = রামায়ণ [র-এর পর আ (স্বরবর্ণ) + ম (প-বর্গের বর্ণ) + আ (স্বরবর্ণ) + য় (১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের একটি) + ন = ণ]
পার + অয়ন = পারায়ণ [র-এর পর আ (স্বরবর্ণ) + য় (১৩টি ব্যঞ্জনবর্ণের একটি) + ন = ণ]

লক্ষণীয় : ১. অ-তৎসম শব্দে ণ-ত্ব বিধি কার্যকর নয়। যেমন : নগরায়ন।
২. ঋ/র/ষ-এর পরে অন্য বর্গের বর্ণ থাকলে ন হবে। যেমন : দর্শন, প্রার্থনা।
৩. শব্দের শেষ বর্ণটিতে হসন্ত-উচ্চারণ থাকলেও এই নিয়ম প্রযোজ্য নয়।।যেমন : শ্রীমান।

খ. যেসব বর্ণের আগে ণ হবে
এখন যে নিয়মটির কথা বলছি এটা আলাদা করে শিখতে হয় না।
ট-বর্গ–ট ঠ ড ঢ ণ। ট-বর্গের শেষ অক্ষর ণ হওয়ায় ট, ঠ, ড, ঢ–এর পূর্বে ণ যুক্ত হবে, কখনোই ‘ন’ নয়।

উদাহরণ : যুক্তব্যঞ্জনে ট-বর্গের বর্ণগুলির (ট ঠ ড ঢ ণ) পূর্বে ণ
১. ণ্ট (ণ+ট) ঘণ্টা, কণ্টক, নিষ্কণ্টক, বণ্টন
২. ণ্ঠ (ণ+ঠ) অবগুণ্ঠন, উৎকণ্ঠা, লুণ্ঠন, কণ্ঠ
৩. ণ্ড (ণ+ড) কলকুণ্ডলি, ঠাণ্ডা, লণ্ডভণ্ড, খণ্ড, দণ্ড, ভণ্ড, কাণ্ড, ঝাণ্ডা, ভাণ্ড, চণ্ডী
৪. ণ্ঢ (ণ+ঢ) ঢুণ্ঢি, ঢেণ্ঢন (তেমন প্রচলিত নয় এই শব্দগুলি)
৫. ণ্ন (ণ+ন) অক্ষুণ্ন, ক্ষুণ্ন, বিষণ্ন

দ্রষ্টব্য : ক্ষুণ্ন শব্দটির সাথে ক্ষুন্নিবৃত্তি (ক্ষুৎ+নিবৃত্তি)-র পার্থক্য লক্ষ করুন। ক্ষুন্নিবৃত্তি সাধিত (সন্ধিজাত) শব্দ, যেখানে ৎ + ন = ন্ন (ন-এর দ্বিত্ব) হয়েছে।

কিছু বিশেষ নিয়ম
১. প্র, পরি, নির–এই ৩টি উপসর্গের পর কখনো কখনো ণ হয়। যেমন : প্রণাম, প্রহ্ণে, পরিণয়, নির্ণয় [এটি আসলে মূল নিয়মকে অনুসরণ করছে]।
২. অগ্র শব্দের পরবর্তী নী ও হায়ন শব্দের ক্ষেত্রে ণ হয়। যেমন : অগ্রণী, অগ্রহায়ণ ইত্যাদি [এটিও আসলে মূল নিয়মকে অনুসরণ করছে]। ব্যতিক্রম : অগ্রনেতা।
৩. কোনো কিছুর নাম বোঝাতে এক শব্দ বিবেচিত হলে ণ-ত্ব বিধান প্রযোজ্য। যেমন : শূর্পণখা (শূর্প+নখা), অগ্রহায়ণ [এটিও মূল নিয়মকে অনুসরণ করছে]।
৪. গণ ধাতু সহযোগে গঠিত শব্দসমূহে ণ হবে। যেমন : গণিত, গণনা, গণ্য, গণৎকার, গণশক্তি, জনগণ, গণসংগীত।
৫. সাধিত কিছু শব্দে র-এর প্রভাবে ন মূর্ধন্য-ণতে পরিণত হয়। যেমন : গ্রামীণ।
৬. কতকগুলো শব্দে স্বভাবতই মূর্ধন্য-ণ হয়। এগুলোকে নিত্য ণ বলা হয়। যেমন : শাণিত, লবণ, আপণ, ভণিতা, পণ্য, বীণাপাণি, লাবণ্য, বিপণি, চাণক্য, গণেশ প্রভৃতি।

কোনো নিয়মে যেগুলোকে ফেলা যায় না, সেগুলো স্বতঃসিদ্ধ মনে রাখার জন্য মুখস্থ করে বা লিখে লিখে অভ্যাস করে আয়ত্ত্বে আনতে হয়। নিত্য ণ-এর আরও কিছু শব্দ নিয়ে একটি প্রাচীন ছড়া :

কণা নিক্কণ ফণা চিক্কণ কণিকা গণিকা কাণ
উৎকুণ কণ মণি কঙ্কণ বাণ শাণ কল্যাণ
পিণাক কফোণি লাবণ্য ফণী বণিক নিপুণ পাণি
চাণক্য পণ মাণিক্য গণ বীণা বেণু বেণী বাণী
গুণ তূণ ঘুণ অণু মৎকুণ বাণিজ্য কিণ কোণ
পুণ্য গৌণ লবণ পণ্য ভণিতা শোণিত শোণ
স্থাণু শণ ভাণ আপণ বিপণি এণ–এই পঞ্চাশ
নিত্যসিদ্ধ ণ-কার এদের, বিধির বাহিরে বাস।

ণ/ন লিখতে ভুল হলে অর্থ কীভাবে পালটে যায় :

ণ---------------------------ন
কোণ (angle)---------------কোন (what)
গুণ (ধর্ম, স্বভাব, প্রকৃতি)----গুন (দড়ি, সুতা, পূরণ)
পাণ্ডা (সর্দার)----------------পান্ডা (চীনের বনাঞ্চলে জাত বিরল প্রজাতির প্রাণী)
করুণ (কাতর)---------------করুন (do it)

তাই আসুন সতর্ক থাকি...
এমন কোথাও দন্ত্য-ন লিখব না যেখানে শুধুমাত্র মূর্ধন্য-ণ-ই শুদ্ধ।
আবার যেখানে শুধুমাত্র দন্ত্য-ন শুদ্ধ বিনা কারণে সেখানে মূর্ধন্য-ণ-ও বসাব না। যেমন :
অশুদ্ধ --------------------শুদ্ধ
গোণা---------------------গোনা (গণনা করা)
কোণা/কোণাকুণি----------কোনা (প্রান্ত, ধার, কোণযুক্ত)/কোনাকুনি
ইস্টার্ণ--------------------ইস্টার্ন
কর্ণার---------------------কর্নার

যেসব শব্দে ন ব্যবহৃত হবে
১. সকল অ-তৎসম অর্থাৎ তদ্ভব, দেশি, বিদেশি, মিশ্র শব্দের ক্ষেত্রে ন ব্যবহৃত হবে।
উদাহরণ : ঝরনা, রানি, পুরান, ধরন ইত্যাদি।

২. যুক্তাক্ষরের ক্ষেত্রে দুটি মত প্রচলিত। বাংলা একাডেমীর প্রমিত বাংলা বানানের নিয়মের ৪.০১ অনুচ্ছেদে উল্লেখ আছে :
অ-তৎসম শব্দের যুক্তাক্ষরের বানানের ক্ষেত্রে কমিটির সদস্যগণ একমত হতে পারেন নি। একটি মতে বলা হয়েছে যে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ণ্ট ণ্ঠ ণ্ড ণ্ঢ হবে। যথা : ঘণ্টা, লণ্ঠন, গুণ্ডা। অন্যমতে বলা হয়েছে যে, এসব শব্দের যুক্তাক্ষরে ন্ট ন্ঠ ন্ড ন্ঢ হবে। যথা : ঘন্টা, প্যান্ট, প্রেসিডেন্ট, লন্ঠন, গুন্ডা, পান্ডা, ব্যান্ড, লন্ডভন্ড।
এখন আসুন এই দ্বিমতের কারণ খুঁজে দেখি।

বাংলা বানানরীতির একটি মৌলিক এবং মজার নিয়ম স্মরণ করা যাক :
ঙ ঞ ণ ন ম–অক্ষরগুলো সবই নাসিক্য বর্ণ এবং বাংলা বর্ণমালার পাঁচটি বর্গের (ক-বর্গ, চ-বর্গ, ট-বর্গ, ত-বর্গ, প-বর্গ) শেষ অক্ষর। এ অক্ষরগুলো যখন কোনো অক্ষরের আগে যুক্ত হবে তখন এদের প্রত্যেকটি নিজস্ব বর্গীয় অক্ষর ছাড়া অন্য বর্গের কোনো অক্ষরের সাথে যুক্ত হবে না।
এখন, ট-বর্গ মানে ট ঠ ড ঢ ণ। ট-বর্গের শেষ অক্ষর ণ হওয়ায় ট, ঠ, ড, ঢ–এর পূর্বে ণ যুক্ত হবে, কখনোই ‘ন’ নয়।

যাঁরা সকল অ-তৎসম শব্দ থেকে ণ দূর করতে চান তাঁরা এক্ষেত্রে এই মৌলিক নিয়মটি উপেক্ষা করতে চাইছেন। তাই তাঁরা লিখছেন ঘন্টা, প্যান্ট, প্রেসিডেন্ট, লন্ঠন, গুন্ডা, পান্ডা, ব্যান্ড, লন্ডভন্ড। আবার কেউ কেউ অ-তৎসতম শব্দেও ণ বসাচ্ছেন, কারণ তাঁরা উল্লেখিত নিয়মটি মেনে চলতে চান। তাই, তাঁরা লিখছেন ঘণ্টা, লণ্ঠন, গুণ্ডা।

যেসব বর্ণের আগে ন হবে
এটিও একটি মৌলিক নিয়ম, তাই আলাদা করে শিখতে হয় না।
ত-বর্গ–ত থ দ ধ ন। ত-বর্গের শেষ অক্ষর ন হওয়ায় ত, থ, দ, ধ–এর পূর্বে ন যুক্ত হবে, কখনোই ণ নয়। যেমন : অন্ত, শান্ত, প্রান্ত, গ্রন্থ, পন্থা, স্পন্দন, গন্ধ, বন্ধন, সন্ধ্যা ইত্যাদি।

পূর্বের আসরসমূহ
বানান আসর -১ : ই-কার না ঈ-কার, কখন কী হবে View this link
বানান আসর -২ : ও এবং ও-কার View this link
বানান আসর- ৩ : উ-কার না ঊ-কার view this link
বানান আসর- ৪ : উঁয়ো (ঙ) ও অনুস্বর (ং)-এর ব্যবহার [link|http://www.somewhereinblog.net/blog/Shabaabdullah/30238239|view this link



অনুশীলনী

১. মূর্ধন্য-ণ শুধুমাত্র কোন ধরনের শব্দে ব্যবহার হয়? :
উ : ক. দেশি শব্দে খ. সংস্কৃত তৎসম শব্দে গ. তদ্ভব শব্দে ঘ. বিদেশী শব্দে
২. কোন ভাষায় মূর্ধন্য-ণ-এর প্রভাব দেখা যায়?
উ : ক. অসমীয় খ. তেলেগু গ. ওড়িয়া ঘ. মারাঠী
৩. সাধারণভাবে ঋ/র/ষ বর্ণের পরে কী ব্যবহৃত হয়?
উ : ক. দন্ত্য-ন খ. ইচ্ছে মত যে কোন একটি গ. মূর্ধন্য-ণ
৪. র-এর কয়টি রূপ আছে? তার পরে কী বসে?
উ : ক. ২টি, ন খ. ৩টি, ন গ. ২টি, ণ ঘ. ৩টি, ণ
৫. সাধারণত কোন সব ক্ষেত্রে র ও র-এর রূপের পর ণ হয় না?
উ : ক. সন্ধি, সমাস, উপসর্গ খ. কারক, সন্ধি, সমাস গ. কারক, সমাস, বাগধারা ঘ. সন্ধি, উপসর্গ, বাগধারা
৬. ‘ষ্ণ’ এই যুক্ত বর্ণটি কোন দুটি বর্ণ নিয়ে গঠিত?
উ : ক. ষ, ঞ খ. ষ, ন গ. ষ,ণ ঘ. ঞ, ষ
৭. ঋ/র/ষ-এর পরে কোন ১৩টি বর্ণ আসলে, যাদের পরে ণ হয়?
উ : ক. চ-বর্গ (৫টি), প-বর্গ (৫টি) ও য য় হ খ. ক-বর্গ (৫টি), ট-বর্গ (৫টি) ও য য় হ
গ. চ-বর্গ (৫টি), ট-বর্গ (৫টি) ও য য় হ ঘ. ক-বর্গ (৫টি), প-বর্গ (৫টি) ও য য় হ
৮. অ-তৎসম শব্দে ণ-ত্ব বিধি .............. :
উ : ক. কার্যকর খ. প্রযোজ্য গ. ন এবং ণ উভয় কার্য কর ঘ. কার্যকর নয়
৯. এখানে নিত্য ণ-এর কয়টি শব্দ দিয়ে তৈরি একটি প্রাচীন ছড়া উল্লেখ করা হয়েছে ?
উ : ক. ২০টি খ. ৩০টি গ. ৪০টি ঘ. ৫০টি
১০. শুদ্ধ শব্দগুলো বাছাই করুন এবং অশুদ্ধকে শুদ্ধ করুন?
ঝরণা, রানি, পুরান, ধরণ, অগ্রহায়ণ, গ্রহণ, ভ্রাম্যমাণ, ভ্রমণ, ঠান্ডা, কণিকা, গনিকা, অহর্নিশ, নিষ্পন্ন, ত্রিনয়ন, পরিবহণ, দুর্ণীতি, দুর্নাম

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:১০

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: দুই সপ্তাহ পরে আসলেন!!! লেখাটির অপেক্ষায় ছিলাম।

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৬

শাবা বলেছেন: আশা করি অপেক্ষার অবসান হয়েছে। কিন্তু খুব কম সংখ্যক লোকের দৃষ্টিগোচর হওয়ায় পুনরায় আগ্রহ হারিয়ে ফেলবো হয়তো।

২| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১২:২২

সোহাগ তানভীর সাকিব বলেছেন: যেকোন ভাষার ক্ষেত্রে বানান খুব-ই গুরুত্বপূর্ণ। বানান কারণে অনেক সময় অর্থের ব্যাপক পরিবর্তন বা বিপরীত অর্থও প্রকাশ পায়। এজন্য বানান বিষয়ে প্রত্যেকের সতর্ক থাকা জরুরী।
বানানের নিয়ম সম্পর্কে আপনার লেখা খুব-ই উপকারী। আশা করি খুব দ্রুত ১০ টি প্রশ্নের অনুশীলনী দিবেন। ধন্যবাদ।

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

শাবা বলেছেন: এ বিষয়ে লোকজনের আগ্রহ কম দেখছি। তাই ভাবছি আর কষ্ট করে লাভ কি? ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।

৩| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১:৫২

মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: উপকারী পোস্ট। ধন্যবাদ পোস্টটি দিয়ে আমাদের উপকার করার জন্য।

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৪৮

শাবা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ০৫ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:০১

রাজীব নুর বলেছেন: জানতে হবে। অনেক কিছু জানতে হবে।

০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৫০

শাবা বলেছেন: ঠিকই ধরেছেন, জানার কোন শেষ নেই। ধন্যবাদ।

৫| ০৫ ই মে, ২০১৮ রাত ১০:৫৫

কাওসার চৌধুরী বলেছেন: লেখতে থাকেন, আগ্রহ হারালে চলবে না। ব্লগে লেখাটি থাকবে যেহেতু দেরীতে হলেও অনেকে পড়বেন।

৬| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:০৯

রূপম রিজওয়ান বলেছেন: দারুণ পোস্ট। প্রিয়তে নিতেই হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.