নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

উজানের প্রেম

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:১৩


কয়েকদিন যাবৎ শামীমা নিজেই নিজেকে ঠিক বুঝতে পারছেনা। এই যে একটু আগে ওর ছোট বোনের সাথে অযথা ব্যবহার খারাপ করলো। একমাত্র বোন ওর,এখন হয়তো ঘরে গিয়ে কাঁদছে। শামীমার খারাপ লাগতে শুরু করে। ভাবলো অযথা দুর্ব্যবহার করেছে সে ছোট বোনের সাথে। চা শেষ করে। শামীমা ঘরে আসে। চেয়ে দেখে শান্তা চুপ করে বসে আছে,চোখদুটি লাল। পাশে গিয়ে বসে।
- রাগ করিস না বোন আমার। আসলে ওভাবে বলতে চাইনি। কি যে হলো।হঠাৎ মাথাটা গরম হয়ে গেলো।
শান্তা শামীমাকে জড়িয়ে ধরে। কিছুক্ষণ চুপচাপ থাকে। তারপর বলে-
- আপা,তুমি কি কারও প্রেমে পড়েছো?
শামীমা ঠিক বুঝতে পারেনা,কি উত্তর দেবে।এরমধ্যে ওদের মা ঘরে আসে।
- দু' বোন মিলে কি গল্প হচ্ছে? আমি কি অংশ নিতে পারি?
দু'বোন সমস্বরে বলে ওঠে- কিছু না মা। এমনি বসে আসি।
- শামু মা,বিশ্ববিদ্যালয় কবে খুলবে?
- আগামী সপ্তাহে মা।
শেলী বেগম বড় মেয়ের ভেতর একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করছে।এবার বাড়িতে এসে শামীমা খুব কম কথা বলছে । যা শামীমার চরিত্রের সাথে যায়না।

দীলিপ দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে কৃষি অনুষদে। বিকেল হলেই ওরা চার- পাঁচজন বন্ধু ক্যাম্পাস ঘুরতে বাহির হয়। কোনদিন কো- ওপারেটিভ মার্কেট,কোনদিন নদীর ধারে। খুব বেশী হলে লেডিজ হলের সামনে গিয়ে বান্ধবীদের ডেকে এনে গল্প- গুজব করে।দীলিপ লক্ষ্য করে ইদানিং সজল ক্যাম্পাসের অন্য জায়গায় না গিয়ে লেডিজ হলের সামনে থাকবার জন্যে সবাইকে উৎসাহিত করে। দীলিপ কাউকে কিছু বলে না। ওরও ভালই লাগে, সবাই মিলে গোল হয়ে বসে গল্প করতে।

প্র্যাকটিকেল খাতা নিয়ে দীলিপ দীনেশের সিংগেল রুমে আসে। এসে দেখে সজল আর মিঠুও আছে রুমে।
- কিরে, তোরা প্র্যাকটিকেল খাতা কমপ্লিট করে ফেলেছিস?
- না। করিনি। দীনেশ উত্তর করে।
- তবে নে,সবাই মিলে শেষ করি। দীলিপ বলে।
- সম্ভবনা। মিঠু উত্তর করে।
- কেন কি হয়েছে? দীলিপ জানতে চায়।
- জটিল।অবস্থা খুব জটিল। সজলের হাই ফিভার। দীনেশ বলে।
দীলিপ এগিয়ে আসে। সজলের কপালে হাত রাখে।
সজল রাগতো স্বরে বলে- ইয়ার্কি করিসনা তোরা। আমি সিরিয়াস।
- বলবিতো তোরা, কি হয়েছে। আর সজলের গায়ে কোন জ্বরই নেই। দীলিপ বলে।
মিঠু বলে- এ জ্বর সে জ্বর নয়। ইহা হলো প্রেম জ্বর। সজল আমাদের ইলোরার প্রেমে পড়েছে।
- ইলোরা জানে? দীলিপ প্রশ্ন করে।
- জানবে কি করে? ও তো বলেইনি ইলোরাকে। মিঠু বলে।
- তবে আর কি, বলে ফেল। দীলিপ সজলকে বলে।

পরদিন বিকালে ওরা ক্যাম্পাসে যায়। লেডিজ হল থেকে ইলোরাকে ডেকে নেয়। তারপর ঘুরতে বেরিয়ে পড়ে। দীলিপ,মিঠু,দীনেশ ইচ্ছা করে দল ছুট হয়। সজলকে ইলোরার সাথে একা থাকতে দেয়।

সন্ধ্যায় ফেরার পথে মিঠু সজলের কাছে জানতে চায়,সজল ইলোরাকে ওর ভালবাসার কথা জানিয়েছে কিনা। সজল জানায়, ও বলতে পারেনি। ইলোরা সামনে থাকলে ওর কেমন তালগোল পাকিয়ে যায়। এভাবে প্রায় একমাস পেরিয়ে যায়। সজলের আর বলা হয়না ওর ভালবাসার কথা।

- আচ্ছা,ইলোরা আর শামীমা খুব ঘনিষ্ট বান্ধবী। সজলতো শামীমাকে দিয়ে বলাতে পারে। দীনেশ প্রস্তাব করে সবার কাছে। প্ল্যানিংটা সবার মনপুত হয়। কারণ শামীমা, ইলোরা আর সজল একই প্র্যাকটিকেল গ্রুপে।

শামীমাকে নিয়ে ওরা বিকেলে ঘুরাঘুরি শুরু করে। তবুও বিষয়টির কোন ফয়সালা হয়না। একদিন দীলিপ শামীমাকে সবকিছু ভেঙ্গেই বলে। সজল যে অনেকদিন যাবৎ ইলোরার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর তা ইলোরাকে জানাতে পারছেনা। শামীমা জানায় সে বিষয়টাতে মধ্যস্ততা করে দেবে। এভাবে বেশ কিছুদিন পেরিয়ে যায়।দ্বিতীয় বর্ষ শেষ হয়। ওরা তৃতীয় বর্ষে উঠে যায়। তৃতীয় বর্ষে দীলিপের সেকশান বদলে যায়। দীলিপ আর দীনেশ বি সেকশানে চলে যায়। ফলে আগের মত একসাথে ঘুরাঘুরি কিছুটা কমে যায়। দীলিপ খোঁজ নেয়, সজলের প্রেম কতটুকু এগিয়ে গেলো। সজল মাথা নাড়ায়। আর তাই দেখে দীনেশ হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ে, আর টিপ্পনি কাটে - দেখিস ভাই, বেড়ায় যেন ক্ষেত না খেয়ে ফেলে।

একদিন করিডোরে ইলোরা দীলিপকে ধরে বসে, বলে আগামীকাল দুপুরে তুমি আমারে সময় দিবা। আমার একজন গেষ্ট আসবে।আমি,তুমি আর শামীমা ওর সাথে থাকবো।
- সজলকে নিয়ে আমি চলে আসবো। দীলিপ বলে।
- না, তুমি আসবা শুধু। ইলোরা জানায়।

- এ হলো রায়হান।বুয়েটে পড়ে। ইলোরা দীলিপের সাথে রায়হানের পরিচয় করিয়ে দেয়।
ওরা অনেকক্ষণ গল্প করে। ঘুরাঘুরি করে। কোন এক সময় দীলিপ খেয়াল করে ও আর রায়হান একা পড়ে গিয়েছে। ইলোরা আর শামীমা অনেক পিছনে।

- ইলোরার সাথে আপনার পরিচয় কিভাবে? দীলিপ জানতে চায়।
- আমরা একই কলেজের ছাত্র- ছাত্রি। আর সেই এইচ এসসি হতে আমরা দু' জন দু' জনকে ভালবাসি।
দীলিপ আর কথা বাড়ায় না। ইলোরার উদ্দেশ্য ও বুঝে ফেলে।

সেদিনের পর হতে দীলিপ ওদের সবার কাছ হতে খুব ধীরে ধীরে নিজেকে সরিয়ে নেয়। আর ফাইনাল ইয়ারে উঠে সবাই পড়াশুনার খুব চাপে পড়ে যায়। তবুও মাঝে মাঝে সজলের সাথে ইয়ার্কী মারে ওর বোবা প্রেম নিয়ে।

ফাইনাল পরীক্ষার পর রাজনৈতিক কারণে দীলিপ হল ছাড়তে বাধ্য হয়। আর পারিবারিক কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ে পোষ্ট গ্রাজুয়েশনও আর করা হয়না। তবে অনেকদিন পর চাকুরী জীবনে সব পুরানো বন্ধুকে ফিরে পায়। বাস্তবে নয়। ভার্চুয়েল জগতে। ফেসবুকে। আর আশ্চর্যের সাথে লক্ষ্য করে সজল আর শামীমা আজ স্বামী- স্ত্রী।

১২/০২/২০১৭

ময়মনসিংহ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.