নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফাগুনের জলজ আগুন

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৫২


ফিরোজ রাস্তা পেরুবার সময় বামে তাকায়। আর তাড়াতাড়ি রাস্তা পার হতে চেষ্টা করে। কিন্তু বিধিবাম। সুইটি ঠিকই দেখে ফেলে ওকে।
-এই ফিরোজ দাঁড়া। কোথায় যাচ্ছিস তুই?
-এই ঘুরছি আর কি?
-বিশেষ কোন কাজ আছে তোর?
-না আপা।
-তবে চল।রমনা পার্ক হতে ঘুরে আসি।
-তুমি যাও আপা। আমি যাবোনা।
-বড় আপার মুখে মুখে কথা বলতে হয়না । চল।
বলেই সুইটি হাত তুলে সিএনজি থামায়।
-রমনা কত নিবা?
-আড়াইশো টাকা।
-এতো বেশী কেন? দেড়শো টাকা লও।
-আজকের দিন ভাড়া বেশী।
পরে দুইশো টাকায় যেতে সি এন জি চালক রাজি হয়। সি এন জিতে সুইটি ফিরোজের গা ঘেসে বসে। ফিরোজ সুইটির শরীরের উত্তাপ উপভোগ করতে থাকে।
-আপা বাসন্তী রঙে তোমাকে পরীর মত লাগছে। পার্কে কি রায়হান ভাই আসবে ?
সুইটি মাথা নারে।
-তবে আমারে নিয়ে এলে কেন ? একাই আসতে।
-তোর কি কোন বিশেষ কাজ আছে ?
ফিরোজ কথা বলেনা। চুপ করে থাকে। সুইটি আড় চোখে ফিরোজকে দেখে। আস্তে আস্তে ফিরোজের গাল লাল হচ্ছে। ফিরোজ অসম্ভব ফর্সা। আর চুপচাপ ধরণের ছেলে। সুইটির মনে পড়ে যেদিন জোর করে ফিরোজকে ও চুমু খেয়েছিল,সেদিন ফিরোজ কেঁদে ফেলেছিল। ফিরোজ তখন ক্লাস সেভেনে পড়তো। ভাগ্যিস বাসায় সেদিন কেউ ছিলনা। সুইটি ওর শরীরের বাম দিকটা ফিরোজের পিঠে ঠেসে ধরে।

রায়হান অনেকক্ষণ যাবৎ রমনা পার্কে বসে আছে। সুইটি কখনও কথা রাখেনা। বলেছিল নয়টায় আসবে ।আর এখন পৌনে এগারো বাজে। চারপাশে তাকায়। আজ চারপাশে বাসন্তী রঙের ছড়াছড়ি। বসন্তের প্রথম দিন বলে কথা।
-ওভাবে মেয়েদের দেখছো কেন ?
রায়হান শব্দের উৎসের দিকে তাকায়। দুলে উঠে রায়হানের পৃথিবী। কি অসম্ভব সু্ন্দর লাগছে সুইটিকে। তবে ফিরোজকে দেখে মনটা ভারী হয়ে যায়। ভাবে সুইটিটা যে কি। আজকের দিনে রাঙামুলোটারে না আনলে পারতোনা।
-আপা তোমরা ঘুরে নাও। আমি এখানে বসে থাকি। রায়হানের দিকে তাকিয়ে ফিরোজ বলে।

বরকত সাহেব আর নজমুল সাহেব দীর্ঘদিন উত্তর বাড্ডায় একসাথে থাকেন। পাশাপাশি ফ্ল্যাট উনাদের। বরকত সাহেবের এক ছেলে এইচ এস সিতে পড়ে। আর নজমুল সাহেবের দুই মেয়ে। ছোট মেয়ে ক্লাস নাইনে পড়ে,আর বড়টা ইডেনে ইংরেজীতে অনার্স করছে। দুই পরিবারের মধ্যে অসম্ভব মিল।

সোনালীর মনটা আজ বড্ড খারাপ। ও জানালার পাশে চুপচাপ বসে আছে। রাস্তা দিয়ে লোক চলাচল দেখতে থাকে। ওর সব বান্ধবীরা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরতে বেরিয়েছে আর ওই একমাত্র যে কিনা ঘরে বসে আছে।
-মা, আমি খালাম্মাদের বাসায় যাচ্ছি।
-এখন কেন ?
-ঘুরে আসি একটু।
-আচ্ছা যা।
সোনালী বরকত সাহেবের ফ্ল্যাটে যায়।
- সোনালী মা ভাল আছো ? বেড়াতে যাওনি আজকে?
-না,খালাম্মা।
সোনালী ফিরোজের ঘরে যায়। ফিরোজ ঘরে নেই। সোনালী ফিরোজের পড়ার টেবিলে গিয়ে চেয়ারে বসে। সুনীলের সেই সময় এর প্রথম খন্ড উল্টানো অবস্থায় আছে। বইটি হাতে নেয়। গন্ধ নেবার চেষ্টা করে।
-কই গেলি মা? আয় নুডলস খেয়ে যা।
-খালাম্মা আমি বই দেখছি। এখন কিছু খাবোনা।
ফিরোজের বিছানায় গিয়ে সোনালী বসে। বালিস টেনে নেয়। মুখ গুঁজে দেয় বালিসে। কেমন যেন অন্য রকম ঘ্রাণ। নেশা জাগানিয়া। সোনালীর শরীর ঝিমঝিম করে।
-খালাম্মা ,আমি ঝিন্দের বন্দী বইটি নিয়ে যাচ্ছি। ভাইয়ারে বলবেন।
-একটা মিষ্টি খেয়ে যা।
-আজকে কিছু খাবোনা।

ফিরোজ বসে বসে প্রেমিক যুগল দেখতে থাকে। সে বসে থেকেই সুইটিদের দেখতে পাচ্ছে। রায়হান ভাই সুইটি আপার হাত উনার হাতের মাঝে নিয়ে আছেন। সুইটি একটু পর পর শরীর দুলিয়ে দুলিয়ে হাসছেন। ফিরোজের বুকের মাঝে অন্যরকম অনুভূতি হতে শুরু করে।

ফিরোজ অদ্ভুত এক সম্পর্ক বয়ে বেড়াচ্ছে। কিছুতেই পারছেনা এই সম্পর্কের বেড়াজাল ছিড়তে। ওর একমন সুইটিকে প্রচন্ড ঘৃণা করে। আর একমন তীব্র আকর্ষণ বোধ করে। সুইটি আপার প্রথম চুম্বন বাদ দিলে পরবর্তী প্রতিটি চুম্বনই ওকে অজানা রহস্যের জগতে নিয়ে যায়।

রাতে সুইটি শোবার আগে বাথরুমে যায়। সুইটির মোবাইল বেজে উঠে। স্ক্রীনে জান লেখা ভেসে উঠে। সোনালী কেটে দেয় ফোন। ফোন হাতে নেয়। নাড়তে থাকে। কয়েকটি ছবি বেরিয়ে পড়ে।
-তুই আমার ফোন ধরছস কেন ? চিৎকার করে উঠে সুইটি।
সোনালীর হাত হতে মোবাইল পড়ে যায়। স্ক্রীনে ভেসে উঠে ফিরোজ আর সুইটির ঘনিষ্ট একটি ছবি। সুইটি ছোঁ মেরে মোবাইল তুলে নেয়।
-খবরদার আমার মোবাইল ধরবিনা।
সোনালী পাশ ফিরে শোয়। এক ফোঁটা জল ঝরে পড়ে ওর চোখ বেয়ে।

এরপর ? এরপর গল্পটা অনেকদূর যেতে পারতো । কিন্তু গল্পটি আর বেশীদূর এগোয়না। পরদিন দুপুরে সোনালী আত্মহত্যা করে। ঝিন্দের বন্দী বইটি ফিরোজকে ফিরিয়ে দেয় সুইটি। ফিরোজ বইটিতে এক টুকরো কাগজ পায় যাতে দুটি শব্দ লেখা ছিল-ভালবাসি তোমাকে।

13/02/2017
ময়মনসিংহ

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.