নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

লিখতে ভালো লাগে তাই লিখি।

সুদীপ কুমার

মন যা চায়।

সুদীপ কুমার › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রেম ও নিঃসঙ্গতা

১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১:০৩


খসমস শব্দ ভেসে আসে কানে। আধো ঘুম আধো জাগরণের মাঝে ফয়সালের মনে অন্যরকম এক অনুভূতির সঞ্চার করে। শব্দ ক্রমশ এগিয়ে আসে। এবার চোখ খুলতে বাধ্য হয় ফয়সাল। প্রত্যুষের রুগ্ন আলো দরজার নীচ দিয়ে শরীর গলিয়েছে। ঠাহর করতে অসুবিধা হয় তার, ঠিক কোথায় সুইচ বোর্ড। শব্দ থেমে যায় কিম্বা মিলিয়ে যায় ।

ফয়সাল বুঝে ফেলে রুনা প্রচন্ড খেপে আছে। আজ ১৪ ফেব্রুয়ারী। ফুল আনতে ভুলে গিয়েছে একদম। রুনা দীঘির পারে পা ঝুলিয়ে বসে আছে। টেনে টেনে ঘাস ছিড়ছে। ফয়সাল পাশে গিয়ে বসে। রুনার ঘাস ছিড়ার বেগ বৃদ্ধি পায়।
-শোন আজ সকালে খুব সুন্দর একটি স্বপ্ন দেখলাম। তুমি আমাকে ভালবাসা দিবস উপলক্ষ্যে চুমু খাচ্ছো। একদম যারে বলে ভেজা চুমু। হলিউডের মত আর কি।
কথা শেষ করে ফয়সাল রুনার মুখের দিকে চায়। খুব মোহনীয় লাগে রুনাকে। ফয়সাল নিজেকে বসে রাখতে পারে না।জড়িয়ে ধরে রুনাকে। রুনার কোমল বুকে মুখ ঘষতে থাকে।

এলার্ম বাজার শব্দে ফয়সালের ঘুম ভেঙ্গে যায়। তাড়াতাড়ি এলার্ম বন্ধ করে। লুঙ্গী ঠিক করতে গিয়ে হাতে ভেজা আঠালো অনুভূতি পায়। একা একাই হেসে ফেলে ফয়সাল। নিজেকে তৈরি করে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে ফয়সাল। আজ ওর গফরগাঁও যেতে হবে। স্টেশনে এসে টিকিটের জন্য লাইন দেয়। বড্ড বিরক্তির সাথে মেনে নেয় নারীদের লাইন না মেনে টিকিট সংগ্রহ করাকে।

যথা সময়ে ব্রহ্মপুত্র প্লাটফর্মে দাঁড়ায় । বহুদিন পর ট্রেনে উঠলো ফয়সাল। প্রায় বিশ বছর। জানালা দিয়ে তাকিয়ে থাকে বাহিরে । আস্তে আস্তে চোখের সামনে উঠে আসে জব্বারের মোড়,সোহরাওয়ার্দী হল। এক রকম জোর করেই স্মৃতির ঝাঁপি বন্ধ করে দেয় ফয়সাল। ঘুরে বসে। মানুষ দেখে। যাত্রী দেখে,ভিক্ষুক দেখে। ফয়সালের কাছে নতুন যেটি ,সে হলো ট্রেনের নিজস্ব খাবার বিক্রেতা আর তাদের দায় সারা গোছের হাঁক ডাক।

কাজ আর রুনার জন্যে চিন্তা এই দু’জনের মাঝে পরে আরও একটি দিন হারিয়ে যায় ফয়সালের জীবন হতে। ঘরে ফেরে। দরজা খুলতেই অন্যভুবনের এক গন্ধ ধাক্কা মারে ফয়সালের নাকে। ফয়সাল তার উপস্থিতি টের পায়। খুব সাবধান থাকে যাতে ফয়সালকে ভয় না পায়।
-তুমি কি শুনতে পাচ্ছো আমার কথা ? কিম্বা বুঝতে পারো আমাদের ভাষা? আজ ১৪ তারিখ। সারাদিন ১৪ তারিখ। ভালবাসা দিবস আজ। অথচ রুনা আমাকে একটি বারও ফোন দিলনা। যাক আমিও ফোন দেবোনা।
সামান্য খচর মচর শব্দ হয়।
-২০১২ সালে রুনার সাথে আমার পরিচয়।
কথা বলতে বলতে খুব সাবধানে ফয়সাল জামা-প্যান্ট খুলে লুঙ্গী পড়ে।
-তুমি চলে যেওনা। আমি চট করে ফ্রেশ হয়ে আসছি। গল্প করা যাবে দু’জনে।
ফয়সাল হাতমুখ ধুয়ে ফিরে আসে। বিছানায় বসে।
-তুমি যাওনি নিশ্চয়। যদিও গন্ধটা কেমন যেন। তারপরও তোমার উপস্থিতি আমার মন্দ লাগেনা। কোথায় যেন শেষ করেছিলাম? রুনার সাথে প্রথম পরিচয়? আসলে রুনার সাথে পরিচয় অনেকদিনের। সেই ছোট বেলা হতে। তবে ২০১২ সালে প্রথম পরিচয় বলতে ওই বছরই ওকে আমি প্রেমের প্রস্তাব দিই।
-আমরা তো সম বয়সী। সম বয়সীদের প্রেম কি জমে?
রুনার কথায় হোঁচট খায় ফয়সাল। তারপরও নাছোড় বান্দার মত লেগে থাকে রুনার পিছনে। কখনও রুমা রাগ দেখায় কখনও হেসে উড়িয়ে দেয়। এভাবে একটি বছর কেটে যায়। ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০১৩ সাল। শেষ পর্যন্ত মুখোমুখি বসে দু’জনে। নীরবে সময় পার হতে থাকে। রুনাই প্রথম নীরবতা ভাঙ্গে।
-আচ্ছা ,প্রেমিক-প্রেমিকা যারা,তারা কি পরস্পরকে তুই বলে?
-কেন?
-এই যে আমি তোরে তুই বলি। তোরে আমি কিভাবে তুমি বলবো?
-নাই বা বললি।
-আমাদের বাবা-মা এই সম্পর্কটা মেনে নেবে?

ফয়সাল শ্বাস টানে ।ঘ্রাণ নেয়। বুঝবার চেষ্টা করে তার উপস্থিতি।অনেকক্ষণ কোন শব্দ শুনেনি ফয়সাল। একটু নড়াচড়া করে। এবার খচর মচড় শব্দ হয়।
-তুমি তাহলে আছো ঘরে? তুমি হয়তো আমার মতই নিঃসঙ্গ। তাই আমার ঘরে আসো বারবার। তোমার সাথে গল্প করতে ভালই লাগছে আমার। হ্যাঁ,রুনার কথা যা বলছিলাম। আমরা মফস্বল শহরে থাকতাম। ফলে যেখানে সেখানে ডেটিং করা আমাদের পক্ষে সম্ভব ছিলনা। আমরা ডেটিং করতাম লুকিয়ে। রুনার বাবা এডভোকেট আর মা কলেজের শিক্ষিকা। ফলে উনারা বেশ পরিচিত শহরে। তবে একই পাড়াতে থাকার সুবাদে ওদের বাড়িতে আমার অবাধ যাতায়াত ছিল। প্রথম চুম্বন? কি যে কষ্ট হয়েছিল রাজি করাতে! অবশ্য পরবর্তিতে ও খুব ক্রেজি হয়ে যেত চুমু খাওয়ার সময়। তবে অন্য একটি প্রস্তাবে রুনা রাজি হয়ে গিয়েছিল খুব সহজে। আমার ব্যকুলতার জন্যই হয়তো।

-শুধু দেখা। আর কিছু নয়। আমার গা ছুঁয়ে বল।
-শুধু দেখা।
-কাল দুপুরে আসবি আমাদের বাড়িতে।
রুনাই দরজা খুলে দেয়। গাঢ় বেগুনী রঙের শাড়ি পড়ে আছে রুনা। শাড়ি পড়লে মেয়েরা কেমন বদলে যায়। মনে মনে ভাবে ফয়সাল।
-ভেতরে আসবিনা।
ফয়সাল যেন স্বপ্নের ঘোরে হাঁটছে। রুনার পিছে পিছে রুনার বেডরুমে আসো।এক মায়াবী আলো-আঁধারীর খেলা চারপাশে কেউ কোন কথা বলেনা। রুনা শাড়ীর আঁচল ফেলে দেয়। একে খুলে ফেলে সব পোষাক।
-আলো জ্বালবিনা?
ফয়সাল যেন এক ভূতে পাওয়া মানুষ তখন। আলো জ্বেলে দেয়। ওর গলা শুকোতে থাকে।হাতের তালু ঘেমে ওঠে।

খচর মোচড় শব্দ বেড়ে যায়।
-তোমার জানতে ইচ্ছে করছে রুনা এখন কোথায়?
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে ফয়সাল। ল্যাপটপ ওপেন করে।
-তোমারে একটা মেইল পড়ে শুনাই তবে।

প্রিয় ফয়সাল,
আমি মেইলে প্রথমবারের মত তুমি বলছি। আমি নিজের সাথে অনেক লড়াই করেও হেরে গেলাম। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে,আমি কোন দিনই তোমারে বলিনি আমি তোমারে ভালবাসি।আমি স্বীকার করছি তুমি আমারে বলেছো। আর সম-বয়সীদের বিবাহ উত্তর জীবন একটি পর্যায়ে এসে ধাক্কা খায়। দেখো একজন পঁয়তাল্লিশ উত্তর পুরুষ আর একটি নারীর যৌন চাহিদা একই থাকে। আমার মনে হয় আমি জীবনের একটি সময়ে এসে তোমায় সুখী রাখতে পারবোনা।

প্রিয় আমার,আমাকে ভুলে যেও।আমি লন্ডন হতে দেশে আর ফিরে আসবোনা।
ইতি
রুনা

ফয়সাল ঘরের বাতি নিভিয়ে দেয়। চুপ করে বসে থাকে বিছানার উপর। ঘড়ি দেখে। রাত পৌনে একটা। মোবাইল বেজে ওঠে। রুনার নাম মোবাইলে। মোবাইলের শব্দে প্রাণীটি বেরিয়ে যায় ঘর হতে-চিক চিক শব্দ করতে করতে।
-গল্প লেখা শেষ?
-হ্যাঁ।
-এবার ঘুমিয়ে পড়।

১৪/০২/২০১৭
ময়মনসিংহ

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ৩:১৪

অতঃপর হৃদয় বলেছেন: হুম ভাল ছিল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.