নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

গল্পকে জাদু বানানোর প্রচেষ্টায় আছি। যে জাদুর মোহনীয়তায় মানুষ মুগ্ধ হবে, বুঁদ হয়ে ঘুম হারাবে, রাত কাটাবে নির্ঘুম।

তাহসিনুল ইসলাম

অরূপকথার জাদুকর আমি!!

তাহসিনুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ অনুভব !

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১১

হালিম সাহেব হালিম রান্না করার জন্য রান্না-ঘরে ঢুকেছেন। তার হাতের মধ্যে একটা রান্না শেখার বই। বইয়ের নাম, ‘রান্না করা কতো সহজ!’ হালিম সাহেব হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন রান্না করা আসলেই কতো সহজ। তার হাড়ের ভেতরের ক্যালসিয়ামগুলো আগুণের উত্তাপে কিলবিল কিলবিল করছে। তিনি তারপরও ক্লান্তিহীনভাবে রান্না করছেন। হালিম রান্নায় যে এতো ঝামেলা এটা তাঁর জানা ছিল না। তিনি ভেবেছিলেন ডালের মধ্যে কয়েকটা মাংসের টুকরা ছেড়ে দিলেই হালিম হয়ে যাবে।

কলাবাগান ঢালীপাড়ায় হালিম সাহেবের বাড়ি। মামা হালিম গলির পাশের গলিটাই হলো ঢালী গলি। হালিম সাহেব ইচ্ছে করলেই সেখান থেকে হালিম কিনে আনতে পারতেন। কিন্তু তিনি কিনেন নি। তিনি হালিম রান্না করছেন তাঁর মায়ের জন্য। বিশেষ হালিম। তাঁর মা রুখসানা বেগম হালিম খেতে বড়ই ভালোবাসেন।

দুই ঘণ্টা অতিক্রান্ত হয়েছে হালিম সাহেব হালিম রেঁধেই চলেছেন। রান্না-ঘরে কাউকে ঢুকতে দিচ্ছেন না। তিন ঘণ্টার কাছাকাছিতে শুভ্রবসনা একজন বৃদ্ধা রমণী রান্না-ঘরে এসে ঢুকলেন। হালিম সাহেব তাঁকে বাঁধা দিতে পারলেন না। বৃদ্ধা তাঁর কাছে এসে বললেন, ‘হালিম তুই এসব কী পাগলামি করছিস?’

বৃদ্ধার বয়স ৭১ বছর। হালিম সাহেবের আনুমানিক পঞ্চাশ। তিনি হেসে বললেন, ‘তোমার জন্য স্পেশাল হালিম রান্না করছি মা।’

‘--তোর মাথার মধ্যে স্পেশাল হালিম রান্নার ভূত চাপলো কেনো?’

--‘এমনিতেই। তুমি যাও তো মা। এখানে অনেক গরম।’

হালিম সাহেব জোর করে রুখসানা বেগমকে তাঁর রুমের মধ্যে রেখে এলেন। বৃদ্ধা আনন্দে হাসতে লাগলেন। চার ঘণ্টা পর অবশেষে হালিম সাহেব হালিম রাঁধতে সফল হলেন। হালিম বড়ই সুস্বাদু হলো। হালিম সাহেবের স্ত্রীও হালিম মুখে দিয়ে মুগ্ধ হলেন। তিনি তাঁর শাশুড়িকে প্রশ্ন করলেন, ‘মা, হালিম আপনার প্রিয় জন্যই আপনার ছেলের নাম হালিম রেখেছিলেন তাই না?’

প্রশ্ন শুনে হালিম সাহেব ও রুখসানা বেগম দু’জনই হেসে উঠলেন। রুখসানা বেগম ছেলেকে খুশি করার জন্য হালিম একটু বেশিই খেয়ে ফেললেন। খেতে খেতে বললেন, ‘আমিই তো সব হালিম খেয়ে ফেললাম। খুকি কি খাবে? ও কোথায়? হালিম ওকে ডাক।’

খুকি হলো হালিম সাহেবের একমাত্র মেয়ে হৃদিতা। সে রুমের মধ্যে নির্জনে বসে কম্পিউটার টীপতেই পছন্দ করে বেশি। হালিম সাহেব তাকে ডাকলেন। হৃদিতা বাবার ডাক শুনে হালিমের জলসায় যোগ দিলো।

হালিম সাহেব বললেন, ‘মা মনে আছে ছোটবেলায় তুমি আমাকে স্কুলে যাওয়ার আগে জোর করে মাথায় তেল দিয়ে দিতে। এরপর চুল সিঁথি করে দিতে। স্কুলে আমাকে বন্ধুরা ঠাট্টা করে দিলিপ কুমার বলে ডাকতো। হাঃ হাঃ হাঃ । তুমি আজ আমার মাথায় তেল দিয়ে দেবে। এই যে আমি তেল নিয়ে এসেছি।’

হালিম সাহেব পকেট থেকে নারিকেল তেলের একটা ছোট ক্যান বের করলেন। ছেলের কর্মকাণ্ড দেখে রুখসানা বেগমের চোখে জল এসে গেলো। তিনি চোখের জল সংবরণ করে বললেন, ‘তুই এখনো ছোটই আছিস হালিম!’

হালিম হৃদিতারও বেশ ভালো লাগলো। সে মুখে দিয়েই বললো, ‘ওয়াও!’ খাওয়া শেষে চলে যাওয়ার সময় সে তার মা’কে বললো, ‘আম্মু তুমি আজ ফেসবুকে বসোনি?’

হালিম সাহেবের স্ত্রী বললেন, না।

‘-- ফেসবুকে একবার ঢুকে দেখো।’

হৃদিতা কথাটা বলে চলে গেলো। খাওয়া শেষে হালিম সাহেব মায়ের কাছে বসলেন তেল নিয়ে এবং তার স্ত্রী বসলেন ফেসবুকে। ফেসবুকে ঢুকে দেখলেন হৃদিতা তাকে একটা ছবি ট্যাগ করে দিয়েছে। ছবির গায়ে লেখা, হ্যাপি মাদার’স ডে। ক্যাপশনে ছোট করে লেখা, আম্মু অ্যাই লাভ ইউ মোস্ট

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:২৪

বর্ষন হোমস বলেছেন: একটি সুখি পরিবারের খানিক মুহুর্ত।


জীবন এমন হলে কত ভালই না হয়।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৩৭

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ :)
সুখী পরিবার নিশ্চয় তবে
আপনি গল্পের মূল জিনিসটা ধরতে পারেননি ভাইয়া :)

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:০২

আহা রুবন বলেছেন: গল্পের কথনভঙ্গিটি বেশ লাগল। আমি নিজেও খুব হালিম পছন্দ করি। একবার বন্ধুর সাথে আলাপে মত্ত হয়ে হালিম লেখা সাইনবোর্ড দেখে দোকানে ঢুকলাম। তখনও আমার পরষ্পর কথা বলছি। দুটো হালিম দিতে বললাম। ওরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে রইল। পরে আমরা পুরাই বেকুব বনে যাই। কেননা হালিম এটুকু পড়েই ভেতরে ঢুকেছি, পুরোটা হল 'হালিম হার্ডওয়ার...'

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:৪৫

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: হা হা হা বেশ চমৎকার অভিজ্ঞতা :)
ধন্যবাদ :)

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ১১:২২

পা্রিসা বলেছেন: ভাল লাগল।

০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৫

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ :)

৪| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:২৩

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: বেশ ভাল লাগল। ধন্যবাদ।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৫:২১

তাহসিনুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ০৩ রা জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৯:১৮

কালীদাস বলেছেন: গল্পটা ভাল লাগছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.