নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনিরুদ্ধ চেতনার দ্বারে V for Vendetta

আহমাদ ইবনে আরিফ

নিভৃতচারী নই, পড়ি-লিখি-গান গাই উল্লাসে। ক্ষ্যাপা একটা ভাব আছে পণ্য- ভোক্তা আর অর্থনৈতিক চালবাজির প্রতি। পিশাচ এবং পৈশাচিক যা কিছু আছে সেগুলো ছাড়া সবকিছুকেই বেশ ভালবাসি। সঙ্গীত আমার জ্বালানী, লাল-সবুজ হৃদয়ের রঙ। কিঞ্চিৎ লিখালিখি করি, পেশাদারী- নেশাদারী নয়- কেবল শখের বশেই। কিছু কর্ণিয়া না হয় জানল এই সত্য!

আহমাদ ইবনে আরিফ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জানুয়ারি ৭ সমাচার (ফেলানী স্মরণে)

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫

কী দুরন্ত না ছিল ও !
তাড়াহুড়ো করে কাঁটাতারটা পার হয়েই
বাবার সাথে ঢুকে পড়বে বাংলাদেশ।
সেদিন বেশ সেজেছিল ও জানিস?
ঘন কালো লম্বা চুল,
নাকে একটা ছোট্ট নোলক- ঠিক তারার মত।
গলার রুপোর চেইনটা একদম জোছনা রঙের
রুপালী আভা ছড়াচ্ছিল।
সাথে অনেক শখ করে কেনা
পুতির মালাটার ঝিকিমিকিও ছিল।
একটা বালি আর ছোট্ট রুপার আংটিটাও বাদ যায়নি সেদিন।
কাজলমেঘ মাখা টানা টানা চোখগুলোতে
এক আকাশ স্বপ্ন নিয়ে
বিয়ের পিঁড়িতে বসার যাত্রা।
কাপড়গুলোও বেশ ছিল জানিস?
টুকটুকে লাল ফ্রকে ফুলপরী মনে হচ্ছিল ওকে।

ঐ ফ্রকটাই কাল হল,
আটকে গেল কাঁটাতারের বেড়ায়।
ভয়ের চোটে চিৎকার বেরিয়ে এল ওর মুখ দিয়ে।
চিৎকার শুনে কেউ বাঁচাতে এলনা ওকে।
ষোল কোটি ভাইবোনের কেউই না।
একটা বুলেট এল শুধু।
ডান পাশ থেকে একটা অভিশপ্ত বাতাসের মত এসে
এফোড়-ওফোড় করে দিল আমার বোনটাকে।
ধারালো বুলেটটা যখন ওর চামড়া ছিঁড়ে ঢুকে যাচ্ছিল
পুরো পৃথিবীতে তখন শুধু একটা চিৎকার ছিল- আর কিছু না।

আমি ওখানে ছিলাম না।
গুলিবিদ্ধ বোনটা আমার উল্টো হয়ে ঝুলে ছিল কাঁটাতারে।
ভয়াবহ মৃত্যুযন্ত্রণায় চিৎকার করে পানি খুঁজছিল ও জানিস?
এক চুমুক পানির দয়াও হয়নি শকুনের বাচ্চাদের।
ধীরে ধীরে ওর আকুতি রূপ নিল গোঙানিতে।
বন্য পশুর মত গোঙাতে গোঙাতে মারা গেল আমার আদরের কিশোরী বোনটা।
৭ জানুয়ারী, ২০১২
অনন্তপুর সীমান্ত,
দু’পাশে দুটো অভিশপ্ত পিলার- ৯৪৭/৩ আর ৯৪৭/৪
ঠিক মধ্যখানের কাঁটাতারে দমকা বাতাসে দুলছে ফেলানীর লাশ।
ডানে-বামে দোল খাচ্ছে ওর উল্টো হয়ে ঝুলে পড়া ঘন কাল চুল।

আমি সেদিন কিছু করতে পারিনি।
আজও কী বা করেছি?
একটা বিচার চেয়েছিলাম শুধু;
ওরা একটা নাটক দেখিয়ে দিল।
জানিস আমি দুঃখ পাইনি, কাঁদিনি প্রহসন দেখে।
ওদের মানচিত্রে এক বুক ঘৃণার থুতু ছিটিয়ে এসেছি।
ঐ থুতু ছিটকে পড়েছে ওদের
টিভি চ্যানেলগুলোয়, মোটর ইঞ্জিনে, চিপস, বিস্কিটের প্যাকেটে, পেঁয়াজে, লবণে।
থুতু ছিটিয়েছি আমি ওদের সিনেমায় আর গানে।
ওদের প্রতিটি কোষ, প্রতিটি রন্ধ্রে ঢুকে গেছে আমার ঘৃণা- অমানুষিক ঘৃণা।

ওর অন্তিম উল্টো-শয্যা মাথার ভিতর খালি ঘুরপাক খায়,
প্রবল যন্ত্রণায় মগজটা খুলি ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়,
কানে বাজে-
“একটু পানি দে, একটু পানি দে না।”
ঘৃণার তেতো রস তখন আমার বুক বেয়ে জিহ্বায় চলে আসে,
আমার মুখের স্বাদ, বাঁচার সাধ সব নষ্ট হয়ে যায়।
তোর কি মনে হয়, ওদের একশো কোটি মানুষ
শকুনের বাচ্চাটাকে এভাবে মাফ করে দেবে ?
তবে তো ওগুলোও শকুন।
সব শকুনের জন্য অভিশাপ, অভিশাপ, অভিশাপ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

হঠাৎ ধুমকেতু বলেছেন: খুব শক্তিশালী কবিতা। কবিতা বুঝে এবং গলা ভাল এরকম কেউ আবৃত্তি করলে দারুন হবে। কবিতা নাটক হিসাবে মঞ্চস্থ ও হতে পারে।

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:১৯

আহমাদ ইবনে আরিফ বলেছেন: ধন্যবাদ। বিষয়টা ভেবে দেখা যায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.