নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রনির জগতে স্বাগতম

আমি আহসান রনি। লিখতে খুবই ভালবসি। আমার চিন্তাভাবনা এখানে খুঁজে পাবেন।

আহসান রনি

আমি আহসান রনি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগে পড়ছি। আমি দৈনিক ইত্তেফাকে কাজ করছি ফিচার রিপোর্টার হিসেবে।

আহসান রনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের মালালা নেই,কিন্তু....

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:৫৩



১.

মেয়েটি যখন মায়ের পেটে, তখন বাবা-মা অনেক আশা করে অপেক্ষা করছিলেন নিজেদের অনাগত সন্তানের জন্য। মনের মধ্যে আশা প্রথম মেয়ে হিসেবে অনেক সুন্দর একটা মেয়ে হবে তাদের। হলোও তাই। ফুটফুটে একটি মেয়ে হলো তাদের। মা-বাবার কাছে মেয়েটি তাদের আদরের ধন হয়েই বড় হতে থাকল। সুখেই চলছিল তাদের নিত্তদিনের কাজকর্ম। কিন্তু হঠাৎ পাল্টে গেল সবকিছু। মেয়েটির মধ্যে অসুস্থতা দেখা দিল। 'মাসকুলার ডিসট্রফি' নামের দুরারোগ্য ব্যাধিতে তাঁকে অল্প বয়সেই ঘরবন্দি করে ফেলে। অবশ হয়ে যায় প্রায় পুরো শরীর।

সুখের গল্পের অল্প সময় পরেই শুরু হয় কষ্টের গল্প, দু:খের গল্প, বেদনার গল্প। মেয়েটির জীবনে নেমে আসে এক অদ্ভুত দু:সহ সময়। যে সময়ে যে কোন স্বাভাবিক মনের মানুষের ইচ্ছা হতে পারে এই পৃথিবী থেকে দুরে চলে যেতে, চলে যেতে না ফেরার দেশে। বাবা-মায়ের অসামর্থের কারণে তার এই রোগ সারানো সম্ভব হলো না। কিন্তু তারা চেষ্টা করলেন নিজেদের সর্বোচ্চটা দিয়ে। গরীব বাবা-মায়ের এই কষ্ট তার হৃদয়কে আরো নাড়িয়ে দিল। মনে হলো আর বেঁচে থেকে কি হবে। কি দরকার বাবা-মাকে এতো কষ্ট দেবার। আর যে মেয়েটি আগে নিজের দু-পা দিয়ে উড়ে বেড়াতো তার জন্য হুইল চেয়ারে বন্দি থাকা যেন পাখিকে খাঁচায় বন্দি রাখার মতো ঘটনা। পাখির কি কখনও খাঁচায় বন্দি থাকতে ভাল লাগে। যে কেউ ভেঙে পড়বে এই সময়ে। অন্য সবার মতো গল্প নয় মেয়েটির। কারণ এতো কিছুর পরেও ভেঙে পড়েনি সে। সাবরিনা সুলতানা নামের এই মেয়েটির মনকে টলাতে পারেনি এই ক্ষুদ্র রোগ। মানসিকভাবে নিজেকে তিনি আরো বেশি শক্ত করে তোলেন।

ধীরে ধীরে সাবরিনা তার দৃঢ় মনোবল নিয়ে আর দশটা সুস্থ-সবল মানুষের মতোই সচল হয়ে ওঠে। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁর সচেতনতার মাত্রা সাধারণের চেয়ে খানিকটা বেশিই। হুইল চেয়ারবন্দি সাবরিনা একদিন ফেসবুকে খুঁজে পেলেন চলৎ-প্রতিবন্ধী কয়েক বন্ধুজনকে। সকলে মিলে আলোচনা করলেন প্রতিবন্ধিদের নিয়ে কিছু করা যায় কিনা এমন চিন্তা মাথায় নিয়ে। তৈরি হলো 'বাংলাদেশি সিস্টেমস চেঞ্জ অ্যাডভোকেসি নেটওয়ার্ক' বা 'বি-স্ক্যান' নামের ফেসবুক গ্রুপ। সেখানে চলল প্রতিবন্ধী মানুষের সমস্যা, অধিকার, সম্ভাবনা নিয়ে বন্ধু-শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে আলাপচারিতা।

সাবরিনা মাংসপেশিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত। শিক্ষার সুযোগ, বিনোদন, সামাজিক যোগাযোগ- সব থেকে বঞ্চিত হয়ে চার দেয়ালের মাঝেই একে একে কেটে গেছে তার জীবনের ২৬টি বছর। একপর্যায়ে জীবন নিয়ে চরম হতাশা ঘিরে ধরেছিল তাকে। সেই হতাশা থেকেই ২০০৮ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছিলেন তিনি। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে তার প্রথম যোগাযোগ সামাজিক নেটওয়ার্ক মাধ্যম ফেসবুক দিয়ে। এটি এমন একটি মাধ্যম যেখানে খুব সহজে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষের কাছে পৌঁছানো যায়। ঠিক করলেন ফেসবুকেই একটি গ্রুপ খুলে প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিটি প্রচারের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করতে শুরু করবেন। জানাতে শুরু করবেন তাদের না-বলা কথাগুলো। ঠিক এই সময়ে ফেসবুকে পরিচয় হয় তারই মতো আরেক ভুক্তভোগী পোলিও আক্রান্ত সালমা মাহবুবের সঙ্গে। সেই থেকে শুরু তাদের পথচলা। ২০০৯ সালের ১৭ জুলাই তারা দুজনে মিলে ফেসবুকে একটি গ্রুপ খোলেন। সেখান থেকেই প্রতিবন্ধীদের অধিকার রক্ষায় গড়ে ওঠে আজকের 'বি-স্ক্যান' নামের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনটি।

সাবরিনা সুলতানা নিজস্ব ভাবনা প্রকাশের পাশাপাশি প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার নিয়ে বিভিন্ন ব্লগ ও পত্র-পত্রিকায় নিয়মিত লেখালেখি করেন। মাইক্রো ব্লগ সাইট টুইটারেও তিনি সমান সক্রিয়। জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলের সেরা ব্লগ অনুসন্ধান প্রতিযোগিতায় পরপর দুবার সেরা ব্লগ বিভাগে মনোনয়ন পান তিনি। দেশি-বিদেশি একাধিক গণমাধ্যম গুরুত্বসহ প্রচার করছে তাঁর বক্তব্য।

গত চার বছরে সাবরিনাদের সংগঠন 'সর্বক্ষেত্রে প্রবেশের সুবিধা চাই' স্লোগানকে সামনে রেখে প্রতিবন্ধী মানুষের অধিকার সম্পর্কে জনসচেতনতা তৈরি করতে অসংখ্য সেমিনারের আয়োজন করেছে। প্রকাশ করেছে লিফলেট। বি-স্ক্যান সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে প্রতিবন্ধীদের সহায়ক যাতায়াত, প্রবেশগম্যতা ও একীভূত শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নকে। সাধারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই যেন প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোররা লেখাপড়ার আইনি অধিকার পায়, সে জন্য তাঁরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত প্রচার চালাচ্ছেন। অদম্য মেধাবী প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের উৎসাহ দিতে 'বি-স্ক্যান' শিক্ষাবৃত্তিও চালু করেছে। এই বৃত্তির আওতায় পাঁচজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী মাসিক ভাতা পাচ্ছেন শিক্ষার জন্য। 'বি-স্ক্যান'-এর প্রয়াত উপদেষ্টা মাহবুবুল আশরাফ স্মরণে প্রতিবছর একজন প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীকে ১০ হাজার টাকার স্মৃতি বৃত্তি দেওয়া হচ্ছে।

সাবরিনাদের সংগঠনটি সহজে বহনযোগ্য কাঠের মাল্টিফোল্ড পোর্টেবল র‌্যাম্প [হুইল চেয়ার চলার বিশেষ ঢালু পথ] তৈরি করেছে, যা বাংলাদেশে প্রথম। জাকাত ফান্ডের সহায়তায় প্রতিবন্ধীদের অর্থ সহায়তা দিয়ে স্বনির্ভর করার উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। শারীরিক প্রতিবন্ধীদের স্বাবলম্বী করতে চালু করেছে কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কার্যক্রম।

সাবরিনা মনে করেন, পারিবারিক সচেতনতা বৃদ্ধিতেই সামাজিক সচেতনতা বাড়বে। এ জন্য প্রয়োজন প্রতিবন্ধিতা বিষয়ে ব্যাপক প্রচারণা। এর অংশ হিসেবে তারা একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও একটি প্রামাণ্যচিত্র তৈরি করেছেন। তা ছাড়া তারা নিয়মিত প্রকাশ করছেন 'অপরাজেয়' নামে একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকা। এটি ক্রমেই প্রতিবন্ধী মানুষের মুখপত্র হয়ে উঠছে। সাভারের পক্ষাঘাত পুনর্বাসন কেন্দ্রের ভেলরি টেইলর ও প্রখ্যাত লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বি-স্ক্যান তথা 'অপরাজেয়' ত্রৈমাসিকটির প্রধান উৎসাহদাতা। প্রতিবন্ধিতা দমিয়ে রাখতে পারেনি সাবরিনা সুলতানা নামের এই নারীকে। তিনি বাংলাদেশের মতো একটি অনঅগ্রসর দেশে জন্মগ্রহন করে, প্রতিবন্ধিতা বরণ করেও নিজেকে থামিয়ে দেননি বরং এগিয়ে গেছেন অন্য যেকোন মানুষের থেকে বেশি।



২.

দিনটি ছিল শনিবার। ৩ জানুয়ারি ২০০৯। একটি মেয়ে তার সমস্যাগুলো লিখছিল তার ডায়েরিতে। সে লিখেছিল, 'কাল রাতে একটা ভয়ানক স্বপ্ন দেখলাম... মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান। তবু সকালের নাশতা খেয়ে ভয়ে ভয়ে স্কুলে গেলাম। যাওয়ার পথে শুনলাম একটা লোক আমায় শাসাচ্ছে, 'তোকে মেরে ফেলব।' সোয়াতে সেনা অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে এমন স্বপ্ন আমি প্রায়ই দেখি।'

১৪ জানুয়ারি সে লিখলো,'মন ভালো নেই। কাল থেকে শীতের ছুটি পড়ছে। কিন্তু কবে খুলবে জানা নেই। প্রিন্সিপ্যালও কিছু বলেননি। আমার মনে হয় ১৫ জানুয়ারি থেকে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে তালেবান। তাই কেউই এবারের ছুটি নিয়ে খুশি নয়। আজ স্কুলের শেষ দিন। তাই একটু বেশি সময়ই খেলা হয়। বাড়ি ফেরার সময় স্কুলবাড়িটার দিকে তাকিয়ে মনে হলো আর বোধ হয় কখনো ওখানে যাওয়া হবে না।" তার বালিকাসুলভ কথাবার্তা ছিল আসলে তার এলাকার প্রতিচ্ছবি।

পাকিস্তানের সোয়াত উপত্যকা মিনগোরা থাকতো সে। শহরে তালেবানি ফতোয়ার জন্য আর স্কুল যেতে পারবে কি না, সে বিষয় নিয়ে তার আশঙ্কার কথা বারবার ফুটে উঠেছে সেই নিত্যদিনের লেখালেখিতে। লেখার মাধ্যমে সে যেন নিজের কাছেই জানতে চাইত, কেন সে এবং তার ভাই স্কুলে যেতে পারছে না। লিখত গোলাগুলির শব্দে রাতে ঘুম না হওয়ার বা দুঃস্বপ্নের কথা। বিবিসির এক সাংবাদিক একটি ডকুমেন্টাবি বানাতে এসে খোঁজ পেলেন মেয়েটির। বিবিসির উর্দু ওয়েবসাইটে তার নিত্যদিনের ছোট ছোট লেখাগুলো প্রকাশিত হতে থাকে। যা সাড়া ফেলে দেয়। পরবর্তীতে তার এই লেখার ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশিত হয় বিবিসির মূল ওয়েবসাইটে। বহু সংবাদপত্র ও ওয়েবসাইট সেই ডায়েরি নিয়মিত পুনঃপ্রকাশ করে। মেয়েটির নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে লেখাগুলো প্রকাশিত হতো গুল মাকাই নামে। ২০০৮ সালে পাকিস্তানি তালেবানের একটি শাখা মেয়েটির বাসস্থান তথা দেশের উত্তর-পশ্চিমের সোয়াত উপত্যকা দখল করে। ২০১১ সালে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয় গুল মাকাইয়ের প্রকৃত পরিচয়। তার নাম মালালা ইউসুফজাই। সে সারা বিশ্বকে জানায় তার এলাকার অবস্থা। তার খবর পায় তালেবানরাও। তারা তখন ১৫ বছরের কিশোরী মালালা ইউসুফজাইকে মাথায় গুলি করে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। ২০১২ সালের ৯ অক্টোবর বিদ্যালয়ে যাওয়ার পথে তালেবানের সদস্যরা মালালার মাথায় গুলি করে। কিন্তু তাকে দমিয়ে রাখা যায়নি। প্রথমে পাকিস্তানে ও পরে যুক্তরাজ্যে উন্নত চিকিৎসার ফলে তার প্রাণ রক্ষা পায়। সুস্থ হওয়ার পরও সে কথা বলতে থাকে শিক্ষার প্রচারের উদ্দেশ্য। ক্রিস্টিনা ল্যাম্বের সহযোগিতায় সে তার আত্মজীবনী প্রকাশ করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও তাঁর স্ত্রী মিশেলের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে গেছে সে। নিমন্ত্রণ পেয়েছে ব্রিটেনের রানি এলিজাবেথের কাছ থেকেও। রাষ্ট্রপুঞ্জের সাধারণ অধিবেশনে মালালা মেয়েদের শিক্ষা নিয়ে ভাষণ দিয়েছে। পরিচিত হয়ে উঠেছে সারা বিশ্বে। ২০১৪ সালে এসে সে পেল পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কার নোবেল পুরষ্কার। নোবেল কমিটি জানিয়েছে, শিক্ষার ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবারের শান্তি পুরষ্কার দেওয়া হলো মালালাকে।

তালেবানের গুলি খেয়ে মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসা অকুতোভয় শিক্ষাসংগ্রামী মালালা ইউসুফজাইয়ের এই স্বীকৃতি তার স্বদেশ পাকিস্তানের জন্য বিশেষ তাৎপর্য বহন করে। কারণ মালালার বাসভূমি সোয়াত উপত্যকায় তালেবান মেয়েদের বিদ্যালয়ে যাওয়া সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিল। তারা একের পর এক বোমা মেরে উড়িয়ে দিচ্ছিল মেয়েদের বিদ্যালয়গুলো। শুধু এই এলাকা নয় পুরো পাকিস্থানে নারী শিক্ষার চিত্র ভয়াবহ।

মালালা ও তার বাবা জিয়াউদ্দিন ইউসুফজাই তালেবানের নিষেধাজ্ঞা ও রক্তচক্ষু অগ্রাহ্য করে সোয়াতের প্রত্যন্ত অঞ্চলে মেয়েদের শিক্ষালাভের অধিকারের সংগ্রাম চালিয়ে গেছেন। তাঁদের সেই সংগ্রামের স্বীকৃতি হিসেবে মালালার জন্য নোবেল শান্তি পুরস্কারের প্রতীকী তাৎপর্য সোয়াত উপত্যকা, পাকিস্তান কিংবা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। সারা পৃথিবীর শিক্ষাবঞ্চিত শিশু, বিশেষত মেয়েশিশুদের শিক্ষার অধিকার নিশ্চিত করার সংগ্রাম উজ্জীবিত হবে মালালা ইউসুফজাইয়ের এই বিরল স্বীকৃতির মধ্য দিয়ে। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে মালালার অবদান এবং সারা জীবনব্যাপি তার সংগ্রাম তাই সারা পৃথিবীর নারীদের জন্য অনুপ্রেরণার। তার নোবেল জয় তাই জয়ী করলো নারী শিক্ষা, নারীকে।



৩.

গল্প দুইটি সংগ্রামি দুইজন নারীদের নিয়ে। দুজনকেই বাস্তব জীবনে অনেক বাধা অতিক্রম করতে হয়েছে। পেরোতে হয়েছে বন্ধুর পথ। গল্প হিসেবে উল্লেখ হলেও এগুলো সত্য ঘটনা। বিবিসির একজন সাংবাদিক জানিয়েছেন পৃথিবীর এমন কোন সাংবাদমাধ্যম নেই যেখানে মালালার কোন সাক্ষাৎকার করা হয়নি। অন্যদিকে সাবরিনাকে নিয়ে হয়তো দুই-একটি সাংবাদমাধ্যম লেখালেখি করেছে। আমাদের সাবরিনা হয়তো মালালার মতো বিশ্ব দরবারে পরিচিত হতে পারেনি। হয়তো সে তার কাজের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানজনক পুরষ্কারটি অর্জন করেনি। কিন্তু সে আমাদের সম্পদ। তার মতো হাজারো নারী বাংলাদেশের আনাচে-কানাচে লুকিয়ে আছে যাদের গল্প আমরা তুলে ধরতে পারিনা। কিন্তু সাবরিনা সেই সকল নারীর প্রতিচ্ছবি যারা নিরবে নিভৃতে কাজ করে যাচ্ছেন সমাজের জন্য, শিক্ষার জন্য। শত বাধা অতিক্রম করে তারা তৈরী করছেন দৃষ্টান্ত। তারা হয়তো বড় কোন পুরষ্কার পাননি কিছু তাদের অবদানও কম নয়। বরং আমি বলব মালালার পুরষ্কার শুধু তার একার নয়। বরং সাবরিনার মতো সংগ্রামী সকল নারীর। তারা হয়তো নোবেল পুরষ্কারের মঞ্চে উঠে পুরষ্কার নেবে না। তারা থাকবে না নোবেল পুরষ্কার অনুষ্ঠানে। কিন্তু এই পুরষ্কার তাদেরও। মালালা পুরষ্কারটি নেবেন সাবরিনার মতো নারীদের পক্ষ থেকেই। তাই মালালা যেমন সারা পৃথিবীর সম্পদ তেমনি সাবরিনারা আমাদের দেশের সম্পদ। তারাই প্রতিফলিত করে স্বাধীন বাংলাদেশকে। তারাই বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি, তারাই আমাদের অহংকার। আমাদের মালালা নেই কিন্তু অসংখ্য সাবরিনা আছে। আমাদের সাবরিনারাই মালালার প্রতিচ্ছবি। তাই, মালালা নিয়ে আসুক নোবেল, এই তার অর্জনের ভাগিদার সাবরিনারাও।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২২

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
সাবরিনাদের অদম্য প্রচেষ্টা সফল হোক।
মালালারাও সফল হোক।

পশ্চিমা আদর্শ ধরন করা নোবেল কমিটির সিদ্ধান্ত নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে।
কিন্তু মালালার নোবেল জয়ের মধ্যে দিয়ে ধর্মান্ধ উগ্রতার পরাজয় হয়েছে।
তবে এদেশী তালেবান বোকো-হারামজাদারা অসন্তুষ্ট হয়েছে।

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:১২

আহসান রনি বলেছেন: আমরা সবসময় সেইসব মানুষকে অনুসরণ করি এবং মনে রাখি যারা মানবজাতির জন্য কিছু করেন। মালালা যেমন করছেন তেমনি আমাদের দেশের সাবরিনারাও করছেন; সকলের প্রতি শ্রদ্ধা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.