নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মানুষের মন, ভাবনা, অনুভূতি ও ভালবাসা বৈচিত্র্যময় বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!https://www.facebook.com/akterbanu.alpona

আলপনা তালুকদার

ড.আকতার বানু আলপনা,সহযোগী অধ্যাপক, শিক্ষা ও গবেষণা ইন্সটিটিউট, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী

আলপনা তালুকদার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফুলকপি

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:২০



ফুলকপি

মানুষের মাথায় ভূত চাপে, আমার মাথায় চেপেছিলো ফুলকপি। কোন্ দুঃখে যে আমি সেদিন ফুলকপি নিয়ে একটা ছড়া লিখেছিলাম!!! -

"শীতের দিনে, তোমার কাছে, ফুল চাইনি প্রিয়,
সময় পেলে, রান্না করে, ভাজা ফুলকপি দিও।"

ফেসবুকে এই ছড়া পোস্ট করার পর, আমার জীবন এবং যৌবন ''ভাজা ভাজা, তিলের খাজা'' হয়ে গেছে। বউয়ের প্রশ্ন , "এই কবিতা কার উদ্দেশ্যে লিখেছো ?"

আমি সরল গলায় বললাম, "কার উদ্দেশ্যে মানে ?"

এরপর সে একদমে অনেকগুলো প্রশ্ন করলো। সব কয়টা প্রশ্ন আমার মনে নেই। অল্প কয়েকটা মনে আছে। যেমন:

১. কে তোমার প্রিয় ?

২. কে তোমাকে ফুল দেয় ?

৩. কেন দেয় ?

৪. কীভাবে দেয় ?

৪. কোথায় দেয় ?

৫. দিনে কয় বার দেয় ?

৬. কি ফুল দেয় ?

৭. আর কী কী দেয় ?

৮. কী কী দিতে বাকি রেখেছে ?

৯. তাজা ফুল না প্লাস্টিকের ফুল ?

১০. কার কাছে তুমি এই শীতে ফুলের বদলে ফুলকপি চাইছো ?

১১. এত কিছু থাকতে ফুলকপি চাইতে গেলে কেন ?

১২. কাঁচা ফুলকপি না চেয়ে রান্না করা ফুলকপি কেন চাইলে ?

১৩. অন্য কোনো মেয়ে কেন তোমার জন্য ফুলকপি রাঁধবে ?

১৪. ঘরের রান্না কি তোমার মুখে রোচে না ?

১৫. ফুলকপি মানে কি? সবজি ফুলকপি, না এর অন্য কোনো গোপন
অর্থ আছে ?

১৬. সারাজীবন ফুলকপি খেয়েও শখ মেটেনি ?

১৭. আর কত ফুলকপি খেতে চাও ?

১৮. কবে তোমার পেট ভরবে ?

১৯. বুড়ো হচ্ছো আর ক্ষিধে বাড়ছে, না ?

২০. পেয়েছো কি তুমি ?

২১. তোমাকে কি আমি খেতে দেই না ?

২২. রাস্তাঘাটে ফুলকপি চেয়ে বেড়াও ?

২৩. আজ ফেসবুকে চেয়েছো, কাল কি থালা নিয়ে রাস্তায় বসবে ?

২৪. পরশু কি পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে ?

২৫. আমার কাছে চাইলে কি আমি তোমাকে ফুলকপি দিতাম না?

২৬. তোমার এত লোভ কেন ?

আমি কোনও প্রশ্নের উত্তর গুছিয়ে দিতে পারিনি। ফলে আমার জীবন হয়ে গেছে ফুলকপিময়। সকালে রুটির সাথে ফুলকপি ভাজা, দুপুরে ভাতের সাথে ফুলকপি দিয়ে রান্না করা মাছ, রাতে ফুলকপি দিয়ে সবজি। তিন বেলায়ই ফুলকপি আর ফুলকপি । মাঝখানে ফুলকপির স্যুপ পর্যন্ত খেতে হয়েছে ।

গত এক সপ্তাহে আমি যে পরিমাণ ফুলকপি খেয়েছি, "মাটি ও মানুষ"- এর উপস্থাপক শাইখ সিরাজ সাহেবও তাঁর গোটা জীবনে এতগুলি ফুলকপি দেখেননি।

পুনশ্চ: আরেকটা প্রশ্ন ছিল। এখন মনে পড়েছে।

২৭। কি আছে ফুলকপিতে, যা আমার নেই ? (বলেই কান্না)

পুনশ্চ ২ : আরেকটা প্রশ্ন ছিল। এইমাত্র মনে পড়লো।

২৮। সত্যি করে বলো তো, আমাকে না জানিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে তুমি এ পর্যন্ত কতগুলি ফুলকপি খেয়েছো ?

রবিবার সকাল এগারোটার দিকে অত্যন্ত বিনয়ের সাথে বউকে অনুরোধ করলাম, "আদা দিয়ে একটু লাল চা করে দাও না প্লিজ, সর্দি লেগেছে।"

বউ পাথর মুখ করে চা বানাতে গেলো। আমি ভয়ে ভয়ে রইলাম। চায়ে আদার বদলে ফুলকপি দিয়ে ফেলে কিনা কে জানে ?

খানিকবাদে ও আদা চা নিয়ে এলো। হাতে আরেকটা বাটি। বাটিতে কি আছে দেখতে পাচ্ছিনা। গলাটা একটু কোমল করে বউ বলল, "খালি পেটে চা খাবে না। ফুলকপির বড়া ভেজেছি। ওটা খেয়ে তারপর চা খাও।"

বউয়ের নরম গলা শুনে আমি মহাখুশী হয়ে উপরওয়ালাকে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানালাম এযাত্রা বউয়ের রাগ থেকে বাঁচানোর জন্য। নিশ্চিন্ত মনে ফুলকপির বড়া খাচ্ছি। এমন সময় গিন্নী দরজা খুলতে খুলতে বলল, "চা খেয়ে ব্যাকইয়ার্ডে এসো।"

ছুটির দিন। আরামে বসে টিভি দেখব, পেপার পড়ব। তা না। ব্যাকইয়ার্ডে যাব কেন? আমি শুনে আঁৎকে উঠলাম। কিন্তু অত্যন্ত স্বাভাবিক গলায় রাণীর চাকরের মত 'যথাআজ্ঞা স্বরে' বললাম, "নিশ্চয়! কিন্তু কেন সোনা?" ফাঁসির আদেশ পড়ে শোনানো বিচারকের মত নির্লিপ্ত গলায় বউ বলল, "বাজার থেকে ফুলকপির চারা এনেছি। লাগাবে এসো।"

আমি বউয়ের পা চেপে ধরব কিনা ভাবছি। এমন সময় আমার একমাত্র ছেলে ব্যাগ ঘাড়ে নিয়ে তার ঘর থেকে বের হয়ে এসে আমাকে বলল, "বাবা, আমি হোস্টেলে চলে যাচ্ছি। রাতদিন ফুলকপি আমি খেতে পারব না। বাই।"

আমার মনে হল, "কিংকর্তব্যবিমূঢ়" শব্দটা আমার জন্যই আবিষ্কৃত হয়েছে।



(বন্ধুরা, লেখাটি আমার নয়। লেখাটির লেখকের নাম রহমতুল্লাহ ইমন। উনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। আমার বন্ধু ও বড় ভাই। বর্তমানে উনি আমেরিকার বল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের একজন নামী অধ্যাপক। আমি ওনার লেখার একজন বড় ভক্ত। ওনার লেখাটা পোস্ট করলাম দুটো কারণে। এক, তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশের জন্য। কেননা লেখালেখিতে আমাকে দীর্ঘদিন পর উনিই জোর করে টেনে এনেছেন বলে। আর দুই, লেখাটি পড়ে আমি খুব হেসেছিলাম। ক'দিন ধরে কাজের মেয়ে নির্যাতন বিষয়ক পোস্টগুলো পড়ে ও লিখে যে মানসিক ক্লান্তি তৈরী হয়েছে, সেটা কাটানোর জন্য। আশা করছি আপনাদেরও লেখাটা ভাল লাগবে।)

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩৬

মধ্য রাতের আগন্তক বলেছেন: ফেসবুকে আগে পড়েছিলাম।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৪০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: তাই? আমি কিন্তু বেশ কিছুটা এডিট করেছি। ধরতে পেরেছেন?

ধন্যবাদ।

২| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ২:০০

অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য বলেছেন: ফুল কপি খাওয়া তো বোধহয় স্বাস্থের জন্য ভালো ।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ ভোর ৬:৫১

আলপনা তালুকদার বলেছেন: জ্বি। ভাল। এটা আসলে রম্য রচনা। ধন্যবাদ।

৩| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৪:২৯

আরাফআহনাফ বলেছেন: এ রকম ওয়াই-ফাই(!) থাকলে কলম্বাস মিয়া আম্রিকা আবিস্কার করতে পারতো না! শুধু প্রশ্নের জ্বালায় সে ভ্রমন বাদ দিয়া দিতো, আম্রিকা আবিস্কার হতো না আর আমরা আজকের বিশ্বে আরেকটু ভালো থাকতে পারতাম!

বাই-দ্য-ওয়ে, কৃতজ্ঞতা প্রকাশে আপনার প্রকাশভংগি ভালো লাগলো।
ভালো থাকুন।

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: হা হা হা! ধন্যবাদ।

৪| ১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১০

মূর্ক্ষের পিতা হস্তী মূর্ক্ষ বলেছেন: Mom What is it ? Is it poem ? Is he poet ? Who is he ? You professor & phd holder. Do not forget it . Your standard will be high . You writer & blogger not Facebook famous . Comeback your position or go to hell . Stay well.

১৩ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১১:১৮

আলপনা তালুকদার বলেছেন: উনি গল্প, উপন্যাস, কবিতা লেখেন। ওনার স্মৃতিচারণ ও সচেতনতামূলক লেখাও আছে। এটা একটা রম্য গল্প। আমার ভাল লেগেছিল। তাই ব্লগের পাঠকদের জন্য পোস্ট দিয়েছিলাম।

৫| ১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১২:০৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ইনি কিনী?. আই মিন কে? মোটামোটি লেখা

১৫ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:০০

আলপনা তালুকদার বলেছেন: ইনি রহমতুল্লাহ ইমন। উনি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষক। আমার বন্ধু ও বড় ভাই। বর্তমানে উনি আমেরিকার বল স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের একজন নামী অধ্যাপক। আমি ওনার লেখার একজন বড় ভক্ত। তবে উনি ব্লগে লেখেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.