নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১২

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫২

[পূর্বকথা - সুভদ্রা বিবাহ-কারণে সত্যভামার মহাচিন্তা শুরু হল ..... কৃষ্ণের মত জেনে অর্জুন যুধিষ্ঠিরের আজ্ঞা নিলেন সুভদ্রাকে বিবাহের .....অন্যদিকে বলরাম হস্তিনায় দূত প্রেরণ করে দুর্যোধনে বিবাহের জন্য আমন্ত্রণ জানালেন ...দুর্যোধন আনন্দে বরবেশে দ্বারকায় গমন করল...যুধিষ্ঠির ও সংবাদে আশ্চর্য হলেও ভীমকে সাথে যেতে আজ্ঞা দিলেন...]

অর্জ্জুনের সুভদ্রা হরণঃ



বলরামের আজ্ঞা পেয়ে সব নারীরা পিটালি(চালগুঁড়ো গোলা), হরিদ্রা(হলুদ) নিয়ে উদ্ধর্ত্তন(মাখান) শুভকর্ম শুরু করল।
ভদ্রার চুলে আমলকী সুগন্ধী তেল মাখান হল। স্নান করাতে তাকে সরস্বতী নদীর কূলে নিয়ে চলল।
কৃষ্ণের আজ্ঞা পেয়ে দেবী সত্যভামা অনেক যুবতীর সাথে ভদ্রাকে নিয়ে চললেন।

অর্জুনকে ডেকে কৃষ্ণ বলেন –শুনেছ তো দুর্যোধন কি বলে পাঠাল। বলরাম আজ অধিবাস করাতে বলছেন। সেই কারণে আজ ভদ্রাকে সরস্বতী নদীতে স্নানে পাঠালাম। আমার রথ নিয়ে তুমি ছলনা করে মৃগয়ায় যাও। সেই পথ ধরে ভদ্রাকে নিয়ে পালাও।

কৃষ্ণ তার সারথী দারুককে ডেকে ইঙ্গিতে বলেন –অর্জুনকে নিয়ে তুমি আমার রথে যাও। অর্জুনের আজ্ঞা পালন করবে। যেখানে রথ নিয়ে যেতে বলবে, সেখানেই যাবে।
কৃষ্ণের আজ্ঞা পেয়ে দারুক দ্রুত কৃষ্ণের রথ সাজিয়ে অর্জুনের সামনে হাজির হল।
অর্জুন সুসজ্জিত হয়ে রথে উঠলেন। সঙ্গে ধনুঃশর, খড়্গ, ছুরী, গদা, শূল, চক্র নিলেন।

কৃষ্ণরথে আরোহণ করে মহাবীর অর্জুন সরস্বতীর তীরের উদ্দেশ্যে চললেন। সুভদ্রা যেখানে নারীদের মাঝে স্নান করছিলেন সেখানে পার্থ ধিরে ধিরে পদব্রজে গেলেন। ভদ্রাকে ধরে রথে তুলে ইন্দ্রপ্রস্থের পথে ছুটলেন।

অন্যান্য যুবতীরা হাহাকার করতে লাগল –‘কুন্তীপুত্র সুভদ্রা হরণ করল’-রব উঠল।
শব্দ শুনে সভাপালরা দৌড়ে এল। ‘ধর, ধর’ বলে তারা অর্জুনকে তাড়া করল –আরে পার্থ তোমার কি মতিচ্ছন্ন হল! কোন সাহসে তুমি এমন ঘরে চুরি করলে! পালিয়ে যেও না!
বলে সকলে দৌড়াতে লাগল। সিংহকে দেখে যেন শৃগালরা ডাক ছারল। পার্থ ধনুকে গুণ দিয়ে শরজালে সহজেই নিমেষে তিন লক্ষ সভাপালকে কাটল। সভাপালদের মেরে রথ চালিয়ে পার্থ দশ ক্রোশ পথ নিমেষে চলে গেলেন।

সুভদ্রার হরণ বার্তা শুনে সবাই পিছু তাড়া করতে গেল। যদুরা কেউ স্নান করছিল, কেউবা দান, ভোজন, শয়নে ব্যস্ত ছিল। সকলে এই সংবাদ শুনে তখনই সব কাজ ফেলে দৌড়াল।

কামপাল বলরাম ক্রোধে কাঁপতে থাকেন। দুই চোখ যেন স্ফুটিত কোকনদ(লালপদ্ম)। চারদিকে ‘ধর, ধর’ রব।
বলরামও যাকে সামনে পান তাকেই ‘ধর গিয়ে’ আজ্ঞা দেন। কাঁপতে কাঁপতে তিনি নীলধ্বজে উঠলেন। সঙ্গে তাঁর সাতকোটি রথ ও গজ চলল।
বলরামের আজ্ঞা পেয়ে সবার আগে কাম(কৃষ্ণ পুত্র) চললেন। সারণ(কৃষ্ণের বৈমাত্রের ভাই) এলেন সাত কোটি রথী নিয়ে। গজ, অশ্ব, পদাতিক নিয়ে কৃপ, বৃন্দ, উপগদ, কৃতবর্মা প্রমুখ যদুবীররা এল। গদ, শাম্ব(কৃষ্ণ পুত্র)ও বহু সেনা নিয়ে এল। বলরামের আজ্ঞা পেয়ে সবাই অর্জুনকে ধরতে দৌড়াল।

হলধর –‘ধর গিয়া’ বলামাত্র সারণ বীর সসৈন্য সত্বর চলল। উগ্রসেন, বসুদেব, সাত্যকি, উদ্ধব প্রমুখ বীররা বলরামের কাছে এলেন। ক্রোধে বলরামের শরীর থরথর কাঁপতে থাকে। শরীর ফুলে ফুলে পর্বতের আকার নেয়। প্রলয় মেঘের মত শব্দ হতে থাকে তাঁর গলা দিয়ে। শরীর থেকে তাঁর মালা ছিঁড়ে পরে।

বলরাম ক্রোধের সাথে বলেন – পান্ডবের এত গর্ব হল! শ্বা(কুকুর) হয়ে যজ্ঞহবি(যজ্ঞের ফল) নেওয়ার সাধ! চন্ডাল হয়ে ব্রাহ্মণী পাওয়ার ইচ্ছে! গরুড়কে ভুলে যেমন কালফণী মাথা তোলে, তেমনি এর আচরণ! যে পুরীতে চন্দ্র, সূর্য, বায়ুর তেজ ধিরে চলে, যেখানে শমনের(যম)ও আসার শক্তি নেই, সেখান থেকে আমার বোনকে চুরি করে নিয়ে গেল। ঐ দুরাচারের নিশ্চয়ই মতিচ্ছন্ন হয়েছে। এই দোষে তাকে আজ সমূলে মারব। বংশে বাতি দেওয়ার কেউ থাকবে না। তাঁর বংশে যে যে আছে সকলকে মারব। পৃথিবী খুঁড়ে আজ তাদের বংশ ধ্বংস করব। ইন্দ্রপ্রস্থের মাটি আজ লাঙ্গল চালিয়ে উল্টে দেব সমুদ্রের জলে। দেখি আজ আমার শত্রুকে কে রক্ষা করতে পারে। ইন্দ্র, যম, কুবের, বরুণ, পঞ্চানন কেউ আজ পাণ্ডবদের রক্ষা করতে পারবে না। আমি পাণ্ডবদের মন্দ রীতিনীতির কথা সব জানি।
কৃষ্ণ সে সব না জেনেই তাদের প্রতি সখ্যতা দেখায়। তাদের উপর সব সময় প্রীত থাকে। সেই প্রীতির ফলেই অর্জুনকে অন্তঃপুরে থাকতে দিলেন। সে জন্যই আজ এতবড় অপমান হল। যত স্নেহ করা হল তার গুণ শোধ করল। বোনকে চুরি করে কুলের মুখে চুন কালি দিল। এর প্রতিফল দুষ্ট আজই পাবে।

এই বলে রাম সুসজ্জিত হয়ে বের হলেন। বাম হাতে লাঙ্গল ধরলেন, ডান হাতে মুষল(মুদ্গর, মুগুর/গদা)। দেখে তাকে মনে হল বজ্র হাতে ইন্দ্র যেন উপস্থিত হয়েছেন।

কৃষ্ণের উদ্দেশ্যে দূত পাঠালেন –এসে দেখ তোমার প্রিয় সখার কুকর্ম!

মহাভারতের কথা অমৃত সমান। কাশীদাস কহেন সাধুজন সদা করেন পান।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১১ Click This Link

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৯

আরজু পনি বলেছেন:

দীপা, আপনি সম্ভবত আগের পোস্টের মন্তব্যের জবাব দিতে ভুলে গেছেন :(

২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

দীপান্বিতা বলেছেন: দিয়েছি - ১১১ পর্বের উত্তর ...

কেমন আছেন, আরজুপনি!

২| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:২১

আহলান বলেছেন: পড়লুম .. একটু সহজ ভাষায় বর্ণনা করলে বুঝতে সুবিধা হতো

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫৩

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, আহলান! সহজ ভাষায় লেখার চেষ্টা করছি, আসলে অনুবাদ করতে গিয়ে কিছু শব্দ পাচ্ছি যা চট করে শোনা বা ব্যবহার করা হয় না, সেগুলিও সাথে রাখার চেষ্টা করি, সাথে অর্থও দিচ্ছি, আশাকরি ভাল লাগবে ...

৩| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৩:১৪

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:

আচ্ছা আপা এখানে লাঙ্গল কেন হাতে নিলেন ?

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৫০

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, কান্ডারি অথর্ব! ... বলরামের প্রিয় অস্ত্র ছিল লাঙ্গল, তাই তিনি রেগে গেলে বা যুদ্ধে গেলেই হাতে লাঙ্গল তুলে নিতেন

৪| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: ভালো ।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, রূপক বিধৌত সাধু!

৫| ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:০৩

নীলসাধু বলেছেন: বাহ বেশ।
ভাল লাগলো কথাচ্ছলে মহাভারত।

ধন্যবাদ আপনাকে। সুন্দর থাকুন।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৮

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, নীলসাধু!

৬| ২৪ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৩৬

ঢাকাবাসী বলেছেন: শেষ হলনা তো, হঠাৎ থামিয়ে দিলেন। বলরামের রাগটা থামানো পর্যন্ত গেলেই হত। তবু ভালো লাগল।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৭

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী! আসলে এখন একটু একটু করেই দিচ্ছি :)

৭| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:১৬

দীপংকর চন্দ বলেছেন: মাঝে আপনার বেশ কিছু লেখা পড়া হয়নি।

সময় সুযোগ হলে পড়ে নেবার আশা রাখি।

ভালো লাগা থাকছে বরাবরের মতো।

শুভকামনা।

ভালো থাকবেন। অনেক। সবসময়।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪৬

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, দীপংকর চন্দ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.