নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবে প্রেম করে যেজন, সেজন সেবিছে ঈশ্বর

দীপান্বিতা

দীপান্বিতা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১৬

২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১০:৪১

[পূর্বকথা - কৃষ্ণের কথা মত অর্জুন সরস্বতীর তীর থেকে সুভদ্রাকে হরণ করলেন...যদুবীররা ক্রুদ্ধ হয়ে তার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল ... সুভদ্রা অর্জুনের সারথি হলেন...যদুবীররা পরাস্ত হতে লাগল ..... এ সংবাদ বলরাম শুনে কৃষ্ণের উপর অভিমান করতে লাগলেন... কৃষ্ণ এসে দাদাকে বোঝালেন সুভদ্রা অর্জুনকেই স্বামী হিসেবে চান..... বলরাম অর্জুনের কাছে বিবাহ প্রস্তাব পাঠালেন ..... ]



দুর্যোধনের অভিমানে স্বদেশ যাত্রা ও পার্থের সহিত সুভদ্রার বিবাহঃ

এদিকে রাজা দুর্যোধন সব সৈন্যদের নিয়ে যাদব সৈন্যদের মাঝে গিয়ে পরল।
সেখানে সব শুনল যে পার্থ ভদ্রাকে হরণ করেছে।

মহাক্রোধে দুর্যোধন গর্জে উঠল –হে কৃপাচার্য, হে পিতামহ, আচার্য বিদুর সবাই দেখুন পান্ডুপুত্রের কান্ড। যে কন্যার জন্য বলরাম আমায় আমন্ত্রণ করলেন, দেখুন তাকেই দুষ্ট হরণ করল! আমাকে সবাই চেনে। আমি এখনই অর্জুনকে হত্যা করব, কেউ তাকে রক্ষা করতে পারবে না।

কর্ণ বলে –মহারাজ, আপনি বসে দেখুন, আজ্ঞা দিলেই আমি তাকে বেঁধে আনতে পারি।

শুনে গান্ধারী নন্দন দুর্যোধন তাকে আজ্ঞা দিল বীর কর্ণও দ্রুত লাল চোখ করে দৌড়াল।

বৃকোদর ভীম বলেন –কোথায় যাও সূতপুত্র! অদ্ভুত কথা বললে অর্জুনকে তুমি ধরবে। সুরাসুর যক্ষ যাকে যুদ্ধে হারাতে পারে না তাকে ধরতে যেতে লজ্জা করছে না! ওরে মূর্খ দুরাচার, তোমার এত অহঙ্কার! আমার সামনে এমন প্রতিজ্ঞা কর! আমার হাত থেকে বাঁচলে তখন অর্জুনের সাথে যুদ্ধ করতে যেও।

এই বলে ভীম লাফিয়ে ভূমিতে পরলেন। গদা ঘোরাতে ঘোরাতে তিনি এগিয়ে আসতে লাগলেন, যেন সাক্ষাৎ দন্ডপাণি(যম)।

বিদুর বলেন –হে দুর্যোধন, পার্থের সাথে তোমার যুদ্ধের কি প্রয়োজন! তোমাকে আমন্ত্রণ করে যিনি এনেছেন তাঁর কাছে গিয়ে সব জিজ্ঞেস করা উচিত। তিনি যেমন বলবেন তেমন না হয় করা যাবে। এখন পার্থের সাথে কলহ করা উচিত নয়।

ভীষ্ম ও দ্রোণও তাতে সম্মত হয়ে বলেন –যিনি আমন্ত্রণ করেছেন, তাঁর কাছেই আগে চল। অনেক বোঝানোর পর রাজা দুর্যোধন দ্বারাবতী যেতে সম্মত হল।

সে সময় সাত্যকি অর্জুনের কাছে উপস্থিত হল।
পার্থকে ডেকে মধুর বচনে সে বলে –ক্রোধ ত্যাগ করুন ধনঞ্জয়, এরা শিশু এদের উপর আক্রোশের কি দরকার! না বুঝে এরা দোষ করেছে। আপনার সাথে মিথ্যে যুদ্ধ করল। সব শুনে কৃষ্ণ-রাম দুজনেই মন্দ বলেছেন। তাই আমাকে দ্রুত পাঠালেন। আপনাকে নিয়ে যেতে আমি এসেছি। যদুবংশীয়রা ও ভোজবংশীয়রা(দ্বারকা বর্তমানে গুজরাটের অঞ্চল, ভোজ গুজরাটের কচের কাছে দ্বারকার কিছু দূরে অবস্থিত) সকলে একত্রে বসে স্থির করেছেন সুভদ্রাকে আপনার হাতেই সমর্পণ করা হবে।

সাত্যকির বিনয় বচন শুনে ফাল্গুনি(অর্জুন) শান্ত হলেন ও যুদ্ধ ত্যাগ করলেন।
সব দেখে শুনে দুর্যোধনের অভিমান হল। সে তখনই সসৈন্য নিজের দেশের উদ্দেশ্যে ফিরে চলল।

পার্থ তখন দারুককে মুক্ত করে কৃতাঞ্জলি সহকারে সবিনয়ে বলেন –কৃষ্ণ যেমন, আপনিও আমার কাছে তেমনই। আপনার প্রতি অপরাধ করেছি, আমায় ক্ষমা করুন।

দারুক বলেন –পার্থ আপনি বড় একটি কাজ করলেন। এতো আমার বন্ধন ছিল না। এ আমার ধর্ম রক্ষা করলেন। আপনি আমায় বন্ধি না করলে আজ আমি বলরামকে কি ভাবে মুখ দেখাতাম! আমাকে এই অবস্থাতেই বলরামের কাছে নিয়ে চলুন। না হলে তিনি আমার উপর খুব রাগ করবেন।

অর্জুন বলেন –তা আর উচিত কর্ম হবে না। আপনাকে বেঁধে নিয়ে গেলে কৃষ্ণ আমার উপর কুপিত হবেন। রাম অবশ্যই আমাদের ক্ষমা করবেন।

এই বলে তখনই পার্থ দারুককে মুক্ত করলেন। তারপর সব যদুবীররা সন্তুষ্ট হয়ে অর্জুনকে আদর করে দ্বারকায় নিয়ে চলল।

ভীষ্ম, দ্রোণ, কৃপাচার্য, বিদুর প্রমুখ এবং ভুরিশ্রবা, সোমদত্ত, বাহ্লিক প্রমুখদের নিয়ে সসৈন্য ভীমসেন অর্জুনের আগে আগে চললেন। পিছনে কাম প্রমুখ সকল যাদববীররা চলল।

দেব নারায়ণ কৃষ্ণ এগিয়ে এসে সকলকে অভ্যর্থনা করলেন। যদুনারীরা উলুধ্বনি দিতে লাগল।
রত্নময় সিংহাসনে ভদ্রা ও পার্থকে বসিয়ে বেদ অনুসারে তাদের বিবাহ দেওয়া হল। বসুদেব ভদ্রাকে সম্প্রদান করলেন। যদুরা আনন্দ মনে পার্থকে প্রচুর যৌতুক দান করল।

পুণ্যকথা ভারতের শুনেন পুণ্যবান। পৃথিবীতে এর সমান সুখ আর কিছু নেই।
সুভদ্রার হরণ কাহিনী যে নর শুনেন, তাঁর সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় ব্যাসদেবের বচনে।
......................................
উৎসর্গ: সকল ব্লগার বন্ধুকে
......................................
আগের পর্ব:

কথাচ্ছলে মহাভারত - ১১৫ Click This Link

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১০

ঢাকাবাসী বলেছেন: সুন্দর বর্ণনা। ভা লাগল।

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৪

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, ঢাকাবাসী!

২| ২১ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:২৩

কান্ডারি অথর্ব বলেছেন:



সুভদ্রার হরণ কাহিনী যে নর শুনেন, তাঁর সকল মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হয় ব্যাসদেবের বচনে।

এর অর্থকি আপু ? মানেটা কি এই যে, যে পুরুষ এই কাহিনী শুনবে তার সকল মনের আশা পূরণ হবে !

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৪৫

দীপান্বিতা বলেছেন: ধন্যবাদ, কান্ডারি অথর্ব! ----ঠিকই বলেছেন :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.