নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রাতের শেষে ভোর আসিবে সেই আশাতেই রই, দিনের শেষে খুঁজে ফিরি শান্তি গেল কৈ?

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন

অসামাজিক মানব

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: ধ্রুবর টুনটুনি বোন

০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৪২

চারদিকে হাজার ব্যস্ত মানুষের
কোলাহল। সেই সাথে গাড়ির ইঞ্জিন
আর হর্ণ এর শব্দতো আছেই। আরও
আছে গাছের ডালে বসে থাকা কাকের
কা কা শব্দ। এত কিছুর মাঝেই
নির্বাক হয়ে একটা বেঞ্চে বসে আছে
ধ্রুব। তার চোখ জোড়া এক দিকে
স্থির হয়ে আছে। মুখের ভাব দেখে মনে
হচ্ছে খুব মনোযোগের সাথেই কিছু
একটা দেখছে সে। একটু খেয়াল করলেই
বুঝতে কষ্ট হবে না যে, ধ্রুবর থেকে
কয়েক গজ দূরে বরাবর সামনেই দু'হাতে
মাথা গুজে বসে আছে একটা মেয়ে। চোখ
থেকে তার অঝোরে জল ঝড়ে পড়ছে।
সেই দৃশ্যটাই লোহাকে চুম্বকের
আকর্ষণ করার মতই ধ্রুবকে
আকর্ষণ করছে। মনে হচ্ছে মেয়েটির
ভিতরকার ভয়ংকর ঝড়টি এসে ধাক্কা
দিচ্ছে ধ্রুবর মনে। মনকে আর বুঝাতে
না পেরে অবশেষে মেয়েটির উদ্দেশ্যে
বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় ধ্রুব। অতঃপর
মেয়েটির পাশের চেয়ারে গিয়ে নিঃশব্দে
বসে পড়ে ও। মেয়েটি তখনো টেবিলের
উপর রাখা হাতে মাথা রেখে কেঁদে চলেছে
। এভাবেই কিছুটা সময় কাটার পর মুখ
খুলে ধ্রুব- ছেলেটা কি আপনার BF
ছিল?
নিজের অতি নিকটে অচেনা কন্ঠে
আচমকা এমন প্রশ্ন শুনে চমকে উঠে
মেয়েটা। কান্না ভেজা মুখটা নিয়েই
তাকায় সে ধ্রুবর দিকে। তার চোখে
জলের সাথে এখন বিস্ময়। মনের মাঝে
হয়ত ভয়টাও কাজ করছে। ধ্রুবর সেটা
বুঝতে কষ্ট হয় না। তাই কোমল
কন্ঠেই সে বলে- আপনি ভয় পাবেন না।
আসলে অনেকটা সময় থেকেই
আপনাদের কথা বার্তা এবং ঐ ছেলেটা
চলে যাবার পর আপনার অবস্থাটা
দেখছিলাম। শেষ পর্যন্ত নিজেকে আর
মানাতে না পেরে আপনার মনের এই
করুণ অবস্থাতেই আপনাকে বিরক্ত
করতে বাধ্য হয়েছি।
: কি বলবেন, বলেন।
কিছুটা শান্ত সুরেই কথাটা বলে
মেয়েটা। মেয়েটার নাম তিনা। নামটা
অবশ্য ধ্রুব পূর্বেই জেনে গিয়েছিল,
যখন চলে যাওয়া সেই ছেলেটার সাথে
তিনা কথা বলছিল।
: ছেলেটা কি আপনার BF ছিল।
ধ্রুবও খুব শান্ত কন্ঠেই কথা বলছিল।
তবে প্রশ্নটা শুনে তিনাকে খুব বিব্রত
লাগছিল। হয়তবা কিছুটা বিরক্তও।
তবে কষ্ট যে তার কন্ঠটাকে চেপে
ধরছে তাও বুঝতে কষ্ট হয় না ধ্রুবর।
ধ্রুব বুঝতে পারে মেয়েটা হয়ত তাকে
ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না। সেটা
ভেবেই কিছু বলতে যাচ্ছিল সে, তবে
তার কথা উপেক্ষা করেই কথা বলে
তিনা- হ্যাঁ, আমি রিসাতকে ভালোবাসি।
রিসাতও আমাকে ভালোবাসে। তবে
ইদানিং ও কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে, কি
সব করছে আর বলছে! আমি সবই মেনে
নিচ্ছিলাম। তবে আজ ও এমন কিছু
বলল যা আমি মানতে পারিনি। ফলাফলে
হয় ঝগড়া এবং ব্রেকআপ।
দূরে কোথাও শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে
কথা গুলি বলছিল তিনা। ধ্রুব আনমনা
হয়ে শুনে চলছে একটা জীবনের দুঃখের
কাহিনী। দুজনেই বেশ কিছুটা সময় চুপ
করে থাকে। যখনি ধ্রুব মুখটা খুলে কিছু
বলবে, তখনই বলতে শুরু করে তিনা।
ধ্রুব চুপ হয়ে শুনতে থাকে।
: প্রায় এক বছরের সম্পর্ক আমাদের।
আমার প্রতি ওর ভালোবাসা দেখেই
আমি ওর প্রেমে পড়ে যাই। কিন্তু
হঠাত্ যে কি হয়ে গেল!
ওকে ছাড়া আমি নিজেকেই ভাবতে পারি
না। কিন্তু ও যা বলছে তাও মানতে
পারছি না। জানিনা কি হবে।
মেয়েটির মনের কষ্ট গুলি যেন নদীর
উপচে পড়া ঢেউ এর মত বেরিয়ে
আসতে চাইছে। চোখ থেকে গড়িয়ে
পড়ছে জল। হাত দুটি বেঞ্চে রেখে, তার
উপর মাথাটা রেখে বসে থাকে তিনা।
ধ্রুব বুঝতে পারে মেয়েটা খুব কাঁদছে।
কিছুটা সময় চুপ থেকে বলতে শুরু করে
ধ্রুব- আমার নাম ধ্রুব। ভবঘুরের মত
ঘুরে বেড়াই। আমার একটা ছোট বোন
ছিল। নাম নাইলা। আপন বোন না। তবে
আমি ওকে খুব ভালোবাসতাম। নাইলাও
আমাকে খুব সম্মান করতো,
ভালোওবাসতো। ও ওর জীবনের সব
কথা আমাকে শেয়ার করতো। তবে
ভাগ্য খুব বেশি দিন সমর্থন করেনি
নাইলা কে। ও কিছু একটা আমার কাছে
লুকাতে থাকে। আমি বুঝতে পারতাম,
তবে প্রকাশ্যে কিছু বলতে পারছিলাম
না। আমি বুঝতে পারতাম ও চেঞ্জ হয়ে
যাচ্ছে। ওর জীবনে ওর ভাই থেকেও
অধিক গুরুত্বপূর্ণ কেউ চলে এসেছে।
ধীরে ধীরে আমার থেকে অনেক দূরে
চলে যায় নাইলা। আমার কিছুই করার
ছিল না, বলারও ছিল না। এর প্রায়
চার মাস পর নাইলার একটা চিঠি পাই।
অতঃপর পকেট থেকে চিঠিটা বের করে
পড়তে শুরু করে ধ্রুব।
আমার প্রিয় ভাইয়া,
ভালো আছো তো তুমি? আমি একদম
ভালো নেই ভাই। জীবনটা এমন হতে
পারে কখনো ভাবিনি। তোমার যে
চঞ্চলা বোন টাকে তুমি টুন টুনি বলে
ডাকতে, সে আর চঞ্চল নেই। সে আজ
অনেক শান্ত একটা মেয়ে। একদম
নিশ্চুপ। রাজু আমাকে ধোকা দিয়েছে
ভাই। ও আমাকে নয়, আমার শরীর কে
ভালোবাসতো। আর যখন ও ওর চাহিদা
মিটিয়ে ফেলেছে, ছুড়ে ফেলে দেয় ও
আমাকে। এ পৃথিবীতে আর থাকতে
ইচ্ছে করছে না ভাই। চলে গেলাম
তোমাদের ছেড়ে। তোমার আর কোনো
বোন কে এভাবে চলে যেতে দিও না।
ভালো থেকো ভাই।
ইতি,
তোমার টুনটুনি।
.
চিঠি পড়তে পড়তে ধ্রুবর চোখের
কোণে জমে উঠে কয়েক ফোঁটা জল।
কিছুটা সময় নির্বাক হয়ে দূরে কোথাও
তাকিয়ে থাকে সে। তারপর বলতে থাকে
ও- চিঠিটা পেয়েই আমি ছুটে যাই
নাইলার কাছে। তবে ততক্ষনে অনেক
দেরি হয়ে গিয়েছিল। আমার টুনটুনি
বোনটা পাড়ি জমায় পরপারে। আজও
পথে ঘাটে আমি রাজুকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।
ওকে যেখানেই পাব, সেখানেই ওর সমাধি
বানিয়ে দিব।
ধ্রুবর চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল
গড়িয়ে পড়ে। তিনা তখনো হাতে মাথা
গুজে বসে আছে। অনেক টা সময় কেটে
যায় এভাবে। চোখ মুছে, বসা থেকে উঠে
দাঁড়ায় ধ্রুব। কয়েক পা আগাতেই পিছন
থেকে একটা ডাক আসে- 'ভাইয়া।'
পিছনে ফিরে আসে ধ্রুব। তিনা তখন
উঠে দাঁড়িয়েছে।
: আমি তোমার টুনটুনি বোন হতে চাই
ভাইয়া। কখনো তোমার কাছে কিচ্ছু
লুকাবো না।
কান্না ভেজা কন্ঠে কথা গুলি বলে
তিনা। ধ্রুবর চোখ জোড়া ভিজে উঠে।
এ জল কষ্টের নয়, আনন্দের। ধ্রুব
ফিরে পেয়েছে তার হারিয়ে যাওয়া বোন
টুনটুনি কে।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ ভোর ৬:৪৮

মোহাম্মদ ইমরান হোসাইন বলেছেন: অবশেষে তাহলে প্রথম পাতায় আমার লিখা প্রকাশ হল :-)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.