নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

হিমু হবার ইচ্ছে আমার নেই, ইমু হয়েই না হয় থাকলাম।হরহামেসা খরচ হওয়া বড় নোটটগুলি না হয় হতে পারলাম না, হৃদয় নামক মাটির ব্যাংকে না হয় জমা হলাম কিছু খুচরো পয়সা হয়ে।

ন্যানো ব্লগার ইমু

ঘর পোড়া গরু হয়েও সিঁদুরে মেঘকেই ভালবাসি।।

ন্যানো ব্লগার ইমু › বিস্তারিত পোস্টঃ

জুলহাসের মৃতস্বপ্ন

২৫ শে জুন, ২০১৫ সকাল ১১:০৯

জুলহাসের সুইসাইড নোটটি পড়া যায় নি। কালো হরফে গোটা গোটা হাতের লেখা, পাঁচ তলা ছাদ থেকে লাফ দিয়ে পড়া মাত্রই রক্তে ভিজে গিয়েছিল তার পকেটে থাকা সুইসাইড নোটটি। তার মলিন মুখখানির দিকে তাকিয়ে শুধু এটুকু বোঝা গিয়েছে, হতাশা আর ব্যর্থতা তাকে গ্রাস করেছিল।
হয়তো সে আমাদের সবার মতোই চেয়েছিল সুন্দর একটা জীবন; যেখানে থাকবে মায়ের আদর, ভাই-বোনের স্নেহময় আবদার, প্রেমিকার একটুখানি ভালবাসা আর বন্ধুদের সাথে হাসি, ঠাট্রা এর সমধুর সম্পর্ক।
জুলহাসের চাওয়াগুলি খুব যে বেশি উচ্চবিলাসী ছিল তা নয়। মাঝ রাতে দবীরের চা স্টলে প্রায়ই কথা হতো। গভীর রাতে বাড়ি ফেরার পথে প্রায়ই দেখতাম জুলহাস চা স্টলের মাচালে একা মনে গলা ছেড়ে তখনো গান গাইছে। তার গানের ভক্ত-শ্রোতা বলতে বাজারের সেই নির্ঘূম কুকুরগুলি আর মাঝে মাঝে আমি।
একদিন জুলহাসের গানের গলা থামিয়ে দিয়ে সারারাত গল্প করেছিলাম। মনে আছে সেই রাত গল্প শেষে সকালে দোকান খুললে দু'জন একসাথে কলা-পাউরুটি খেয়ে দু'জন দু'জনার বিশ্রামের গৌন্তব্যে গিয়েছিলাম; আমি বাড়ির নরম বিছানায় আর জুলহাস ইউনিয়ন পরিষদের বারান্দার সিড়ির নিচের খুপড়িতে।
সেদিন রাতে শুনেছিলাম তার চাওয়া-পাওয়া এবং ভালবাসার কথা। শুনেছিলাম জুলহাস নামক পাগলাটে ছেলেটির একসময় একজন মনের মানুষ ছিল যার সত্য নামটি জানা না গেলেও জুলহাসের দেয়া নামটি জানতে পারি; যে নামটি ধরে মেয়েটিকে জুলহাস আদুরে গলায় ডেকে উঠতো 'শান্তনা' বলে। জুলহাসের ভাষ্যমতে মেয়েটি ছিল শান্ত, নিষ্পাপ আর স্নিগ্ধ। তাই তার এ নামটি দেওয়া।
জুলহাসের পড়াশুনা খুব বেশিদূর নয়। একটা ৪র্থ শ্রেনীর চাকুরীর জন্য কতবার ঐ চৌধুরীদের গোলামি করেছিল, কতবার হাত-পায়ে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিল!! কিন্তু চাকুরী না মিললেও মিলেছে আশার বাণী। সেই আশার বাণীকে বিশ্বাস করেই আজ জুলহাসের 'শান্তনা'কে অন্যের হাতে তুলে দিতে হয়েছে; পরিবারে হতে হয়ছে নিগ্রহের কারন। আর অবশেষে এলাকাবাসীর নিকট হাসির পাত্র, অবশেষে মানুষিক চাপে 'পাগল'। কিন্তু আমি জানতাম জুলহাস পাগল নয়; পাগল ছিলাম আমরা। তাই হয়তো জুলহাসের পাশে না দাড়িয়ে তার নিকট থেকে মজা নেবার চেষ্টা করে গিয়েছি।
জুলহাসের লাশ হয়তো কিছুক্ষন পর দাফন হবে। আত্মহত্যার লাশ হয়তো কবরস্থানে ঠাই পাবে না; সমাধিত হবে কোন এক আড়া-জঙ্গলে কিংবা নদীর ধারে। জুলহাস নামক হৃদয়ে বিত্তবান ছেলেটির কবরের কোন অস্তিত্ব থাকবে না। সবাই ভুলে যাবে জুলহাসের কথা। পৃথিবীর কয়েকটি প্রাণী ছাড়া জানবে না জুলহাসের আত্মত্যাগ। জুলহাসের প্যারালাইসড মা, শান্তনা, আমি এবং বাজারের কুকুরগুলি।।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.