নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফারদীন নিশ্চিন্ত

ফারদীন নিশ্চিন্ত

আমি কে? যেদিন এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সেদিন পৃথিবীতে আর একটাও রহস্য অবশিষ্ট থাকবে না।

ফারদীন নিশ্চিন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: একটি লাল সূর্য

২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১:৫৩

শীতকাল। অন্ধকার রাত। অন্ধকার এবং কুয়াশা মিলেমিশে একাকার।
মাঝরাত। কোথাও পাখিদের ডানা ঝাপটানোর শব্দ নেই। পোকা মাকড়েরগুলো স্তদ্ধ।
রাত বাড়ছে। বাড়ছে কুয়াশা। গ্রামের নীর্জন পথে এগিয়ে চলছে শরীররটা।
পৌষ মাসের রাতে হাড়কাপানো শীতে আসলামের শরীরটা ঠুকঠুক করে কাপছে। গায়ের চাদরটাকে সে আরো ভালো করে শরীরের সাথে জড়িয়ে নিল।
নড়বড়ে রাইফেল দিয়ে সে অনেক শত্রুকেই পরাজিত করেছে। গায়ের চাদরটা দিয়ে শীতকে কিছুতেই পরাজিত করা যাচ্ছে না।
যুদ্ধ শেষ হয়েছে কয়েকদিন ধরে। অনেক দিন পরে আসলাম ফিরেছে আপন ঠিকানায়। তার চোখে এখন আগুন নেই। উত্তেজনা নেই। নেই ক্রুদ্ধতা। হূদয় জুড়ে শুধুই আনন্দ।
কতো রাত পার হয়ে গেলো। কতোগুলো দিন শেষ হয়ে গেলো। কতোগুলো মাস কেটে গেলো। একটি ছোট্ট আশা ছিল সবার চোখে-মুখে। আপন ঠিকানায় ফিরে আসার আশা। সবার সেই আশা পূর্ণ হয়নি। রক্তাক্ত বুকে বুলেট বিদ্ধ হয়ে আশা শেষ হয়ে গেছে। পকেটের রক্তাক্ত চিঠি ভিজে নষ্ট হয়েে গেছে। একুশ জনের দলটা শেষ পর্যন্ত দশ জনের দলে এসে ঠেকেছে। শেষর দিকে আরো একজন মারা গেল জ্বরে ভুগে। ভাগ্যবান নয়জন যোদ্ধা শেষ পর্যন্ত বেঁচে রইলো। আসলাম তাদেরই একজন।
গ্রামের রাস্তা। অন্ধকার রাত। ঘন কুয়াশা। আসলাম ফিরছে আপন ঠিকানায়। হাতে একটা তির ব্যাটারির টর্স। সেই দিনটির কথা মনে পড়ছে। সাত মাস আগের কথা। তখন চারিদিকে যুদ্ধ। এখন ভোর সকালে মারের পায়ে সালাম করে আসলাম বাড়ি থেকে বের হয়েছিল যুদ্ধ করে দেশটাকে মুক্ত করতে। পেছনে ফিরে তকানোর সাহস হয়নি। তাকালে হয়তো মায়ের চোখের কোনে জলের কনা দেখতে পেত। জামরুল গাছটার নিচে পারুল ভেজা কন্ঠে শুধু বলেছিল, 'কবি ফিরে আইবেন?
আজ কুয়াশার রাতে আসলম ফিরছে আপন ঠিকানায়। হয়তো মা বেঁচে নেই। হয়তো পারুলের কিছু একটা হয়ে গেছে।
রাত বাড়ছে। বাড়ছে স্তদ্ধতা। কুয়াশা ও অন্ধকার মিলেমিশে একাকার। আসলামের হাতে একটা তিন ব্যটারির টর্স। সে ফিরছে আপন ঠিকানায়।
কধে একটা গুলি লেগেছিল দুমাস আগে। পেছন থেকে গুলি করেছিল কাপুরুষের দল। তারপর পালিয়েছে। একজন সহযোদ্ধা তাকে কাঁধে নিয়ে ক্যাম্পে ফিরে আসে। সবাই ভেবেছিল মরেই গিয়েছে সে। একজন নাকের কাছে হাত দিয়ে পরীক্ষা করল। না, সে মরেনি। দুদিন পরেই জ্ঞান ফিরেছে তার। সে বেঁচে গেছে। পিঠের সেই ক্ষত টা এখনও রয়ে গেছে। এই ক্ষত কখনোই যাবে না।
পিঠ ক্ষত থেকে রক্ত বের হচ্ছে। অপেক্ষা করছে রায়হান। সূর্য ওঠার অপেক্ষা। সূর্য ওঠলে দুর থেকে নিজের গ্রামটাকে দেখতে পাবে সে। সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মরতে চায় সে।
রক্তে জামাটা ভিজে যাচ্ছে। সে মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে এসেছে। প্রানপনে সে ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করছে। বেঁচে থাকার প্রার্থনা না। দুর থেকে নিজের গ্রামটাকে দেখার প্রার্থনা।
গাছে ভোরের পাখিটা হঠাৎ ডেকে ওঠলো। শীতের চোটে বেচারা ঠিকমত ডাকতে পারছে না।
পূর্ব দিকের গ্রামে বিলের ওপারে গাছের মাথার উপর দিয়ে সূর্য উকি দিল। কুয়াশা ভেদ করে নিজের গ্রামের দিকে তাকিয়ে কিছুই দেখতে পেল না সে। দেখতে পেল নিজের শরীরের লাল রক্ত। নিজের রক্তেভেজা হাত দুটোকে সূর্যের দিকে বাড়িয়ে ধরল সে। হাতের আঙুলের ফাকা দিয়ে সে দেখতে পেল একটি লাল সূর্য।

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৩:০২

এমএম মিন্টু বলেছেন: ভাল হয়েছে । শুভেচ্ছা

২| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:০০

জুয়েলইসলাম বলেছেন: সুন্দর

৩| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৫:৫৪

মামুন রশিদ বলেছেন: সুন্দর দেশাত্ববোধক গল্প । মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে আমাদের প্রজন্মের খুব বেশি লেখা নেই । ভালো লেগেছে ।

টর্স>টর্চ

৪| ২০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪০

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লাগলো +++++++++++

শুভেচ্ছা নিবেন :)

৫| ২১ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৩

কলমের কালি শেষ বলেছেন: সুন্দর গল্প ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.