নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফারদীন নিশ্চিন্ত

ফারদীন নিশ্চিন্ত

আমি কে? যেদিন এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে সেদিন পৃথিবীতে আর একটাও রহস্য অবশিষ্ট থাকবে না।

ফারদীন নিশ্চিন্ত › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প: সত্য কিংবা অবান্তর

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২০

একজন মৃত মানুষ যদি রাত দুপুরে আপনাকে কল দিয়ে আপনার শরীর স্বাস্থের বর্তমান অবস্থার কথা জিজ্ঞাসা করে, তাহলে আপনার কেমন লাগবে? ব্যাপারটা নিশ্চই আপনার কাছে খুব সুখকর হবে না। আমার কছেও ব্যাপারটা সুখকর না। ঘুমানোর বদলে বাতি জ্বালিয়ে বসে আছি।
বাতি জ্বালিয়ে বসে থাকার কারণটা ব্যাখ্যা করার প্রয়োজন আছে কি? বাসায় আজ আমি একা। নীতু বাবার বাড়িতে গেছে। তার মা আসুস্থ্য।
নীতুর পরিচয়টা আপনাদের দেওয়া দরকার। নীতু আমার স্ত্রীর নাম। মানুষ হিসেবে আমি ভীতু প্রকৃতির হলেও নীতু অত্যন্ত সাহসী। সে থাকলে এই রাত দুপুরে এভাবে ভয়ে বাতি জ্বালিয়ে বসে থাকতে হতো না।
মায়ের অসুস্থবযতার ছুতোয় নীতু প্রায়ই বাবার বাড়ি চলে যায়। এটা নতুন কিছু না। নীতুর মা হলো পৃথীবির একমাত্র নারী, যে সারা বছরে তেরো মাস অসুস্থ্য থাকে।
জানালার পর্দা ভালো মতোই টেনে দেওয়া। তবু এক পাশে একটু ফাকা থাকে। সেখানে একটা তোয়ালে ঝুলিয়ে দিয়েছি। তবু ভয়ে আমার শরীর কাপছে। নিজের করুন অবস্থা বর্ণনা করে বুঝানো সম্ভব না।
ঘড়িতে সময় রাত দুইটা ছাপ্পান্ন। ভোর হতে আরো আড়াই ঘন্টা বকী। আজ রাতে ঘুম আমার আসবে না। চোখ বুজলেই আসিফের মৃত লাশের চেহারাটা চোখের সামনে ভেসে ওঠে। আত্মহত্যার তিনদিন পর তার লাশটা পচে গন্ধ ছড়িয়ে গিয়েছিল। পচে গিয়ে নাক মুখ ঠোট বিকৃত হয়ে গিয়েছিল। সেটা এখন থেকে আরো পাচ বছর আগের কথা।
আজ রাতে মোবাইলটা বেজে ওঠতেই ঘুমের মধ্যে প্রচন্ড বিরক্ত হয়েছিলাম। আমি ঘুম কাতুরে মানুষ। তিন বার রিং হওয়ার পর মোবাইলটা কাছে টেনে নিয়ে চোখ খুলত দেখলাম অচেনা নাম্বার। এতো রাতে অচেনা নাম্বার থেকে কল আসাটা আমার কাছে স্বাভাবিক না। তবে এই সময়ে সাধারনত দেশের নামজাদা জ্বিনের বাদশাদের কাছ থেকেই কল আসে। তারা কল দিয়েই বলে, 'আল্লা রসুলের মহব্বতে ঘুম থেকে ওঠো বাবাজি। আমার চাইরটা কথা শুনো।' এরপরেই তারা বিভিন্ন ধরনেরর প্রোলোভন দেখাবে। এক কলসি স্বর্ণমুদ্রার খোজ দেওয়ার কথা বলবে। বিনিময়ে পাঁচশত প্যাকেট মোমবাতি কেনার খরচ বিকাশ করে পাঠাতে হবে।
এই পর্যন্ত তিনজন জ্বিনের বাদশা রাত দুপুরে কল দিয়েছে আমাকে। তিন ধরনের আলাদা প্রোলোভন দেখিয়েছে। লোভনীয় প্রোলোভন। নীতু পাশে শুয়েছিল, তাই তাদেরকে মনের মতো বকা দিতে পারিনি। আজ নীতু নেই।
তাই আজ মনে হচ্ছে সেই আশা পৃুর্ণ হবে। প্রবল উত্তেজনা নিয়ে কল রিসিভ করলাম। ওপাশ থেকে শুধুই খসখসে শব্দ। দীর্ঘক্ষণ পর নীরবতা ভেঙ্গে পরিচিত একটা কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম, 'হ্যালো।'
কন্ঠটা শুনার পরে বুকটা ওঠলো ধুক করে কেঁপে। পরক্ষনেই নিজের বোকমি বুঝতে পেরে মনে মনে নিজেকেই ভৎসনা দিলাম। কন্ঠটা হয়তো অন্য কারো। তাছাড়া মোবাইলে মানুষের গলা অন্যরকম শুনায়। তবে হতাশার কথা হলো, এটা কোনো জ্বিনের বাদশার নাম্বার না।
খসখসে শব্দটা এখনও হচ্ছে। আমি নার্ভাস ভঙ্গিতে বললাম, 'হ্যালো, কে বলছেন?'
কন্ঠটা বলে ওঠলো, 'আমি আসিফ। কেমন আছিস? তোর শরীর স্বাস্থের কি অবস্থা?'
শরীরের ভেতরে কপুনি অনুভব করলাম। বুকের ভেতেরে হৃদপিন্ডটা এতোক্ষনে লাফাতে শুরু করে দিয়েছে। মনে হলো হাত-পা নাড়ানোর শক্তি হারিয়ে ফেলেছি। মোবাইলটা এখনও কানের কাছে ধরে আছি। কন্ঠটা বলে যাচ্ছে, 'আমি আসিফ। চিনতে পারছিস না? হ্যালো, হ্যালো...। কথা বলছিন না কেন? এটা কি মুহিবের নাম্বার না? '
মোবাইলটাকে অনেক ভারী মনে হচ্ছে। কানের পাশে মোবাইলটা ধরে রাখতে পারছিলাম না। শরীরের লোমগুলো শক্ত হয়ে গেছে। মশারীর ভেতর থেকে লাইটের সুইচটা হাত দিয়ে খুজে পাচ্ছিলাম না।
ঘটনাটা ভুলে যেতে চাচ্ছি। কিছুতেই ভুলে যেতে পারছি না। পাঁচ বছর পর কন্ঠটা শুনতে পেয়ে জীবন্ত মানুষটার কথা মনে পরছে। সবচেয়ে বেশি মনে পরছে আসিফের বিকৃত লাশটার কথাটা। পচা লাশের গন্ধটা এখনও নাকে আসছে। এতো বছরে ভুলেই গিয়েছিলাম। আবার মনে পরে গেছে।
পুরো রুমটা পচা লাশের গন্ধে ভরে গেছে। নিশ্বাসের সাথে বিশ্রী গন্ধটা আমার নাকে ঢুকছে। আমি জানি এটা সত্য না। এটা আমার কল্পনা। মস্তিস্কের একটা অংশ ইন্দ্রিয়ের কাছে ভুল সংকেত পাঠাচ্ছে, তাই এমন হচ্ছে। প্রচন্ড ভয় বা মস্তিস্কে প্রচন্ড চাপের ফলে এমন হয়।
আমার নিশ্বাস নিতে সমস্যা হচ্ছে। হঠৎ সবকিছু অন্ধকার হয়ে এলো।
কলিংবেলের শব্দে জেগে ওঠলাম। জনালার পর্দা সরাতেই করা রোদ এসে চাখ ধাধিয়ে গেলো। কলিংবেল বেজেই যাচ্ছে। দরজা খুলে দিতেই নীতুকে দেখলাম গম্ভীর মুখে দাড়িয়ে আছে। আমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে বললো, 'এখনও ঘুমোচ্ছ? কয়টা বেজেছে জানো? মোবাইল বন্ধ রেখে ধ্যান করছিলে নাকি। ভেবেছিলাম তো মরেই গেছো।'
আমি চুপচাপ দাড়িয়ে রইলাম। নীতুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। রীতু আরো কিছু বলতে যাচ্ছিল। তার সুযোগ না দিয়ে জড়িয়ে ধরলাম নীতেুকে গভীরভাবে।
পুরো ঘটনাটা নীতুকে খুলে বলার পর বড় করে একটা নিঃশ্বাস নিলাম। আমার দিকে নীতু সরু চোখে তাকিয়ে আছে। হয়তো আজগুবি কথাগুলো বিশ্বাস করতে পারছে না। নীতু বলল, 'স্বপ্ন দেখেছ তুমি। ভুলে যাও। এখন গোসল করো। অমি রান্না করব।'
আমি আহত গলায় বললাম, 'এটা স্বপ্ন না, বাস্তব। বিশ্বাস করো। '
'ঠিক আছে, বিশ্বাস করলাম। এখন যাও গোসলে।।'
আমি বুঝতো পারছি, ঘটনাটা যে কউকে বিশ্বাস করানো কঠিন। ভুতের গল্প মানুষ বিশ্বাস করে। মরা মানুষের রাত দুপুরে কল দেওয়ার গল্পটা কেউ বিশ্বাস করবে না।
হঠাৎ মোবাইলটার কথা মনে হলো। আমি বললাম,' মোবাইলের কল লিস্টে নাম্বারটা পাওয়া যাবে।'
নীতু সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলল, 'সেটা দেখা যাবে। গোসল, খাওয়াদাওয়ার পর ঠান্ডা মাথায় ব্যাপরটা নিয়ে আলোচনা করা যাবে। এখন তুমি বেশি উত্তেজিত। এই অবস্থাতে যুক্তিগুলো তুমি বুঝতে পারবে না। সহজ ব্যাপারগুলো তোমার কাছে কঠিন মনে হবে। '
আমি বাধ্য ছেলের মতো নীতুর কথাগুলো মেনে নিলাম। আমার মস্তিস্ক এখন ঠিকভাবে কাজ করছে না।
দুই ঘন্টা পর আমার মোবাইলটা চোখের সামনে ধরে নীতু বলল, 'তোমার কললিস্ট তো খালি।'
নীতুর হাত থেকে মোবাইলটা নিয়ে আমি হতভম্বের মতো তাকিয়ে রইলাম। কললিস্টে কোনো নাম্বার নেই।
নীতু আমার পাশে বসে আদর করার ভঙ্গিতে বলল, 'তুমি কেন এতো ভয় পাও, সোনা?'
আমি ওকে কছে টেনে নিয়ে বললাম, 'আসিফ কল করেছিল কাল রাতে। সত্যি বলছি। স্বপ্ন নয় এটা।'
'এটা তোমার ধারনা। স্বপ্নকে কখনো কখনো আমাদের সত্যি বলে মনে হয়। এটা এক ধরনের ঘোর। অবচেতন মনের অবান্তর কল্পনা ছাড়া কিছুই না। মৃত মানৃষ কখনো কল দিয়ে কথা বলতে পারে না। তাছাড়া তুমিতো দেখতেই পাচ্ছো কললিস্ট একদম খালি। একটু যুক্তিবাদি হও, সোনা।'
আমি নিজে নিজে ব্যাপারটা নিয়ে গভীরভাবে চিন্তা করলাম। হতে পারে এটা স্বপ্ন কিংবা অবচেতন মনের অবান্তর কল্পনা। এটা নিয়ে এতো সিরিয়াস হওয়ার কোনো কারণ নেই। যতো তারাতারি ব্যাপারটা ভুলে যাওয়া যাবে, ততই মঙ্গল। আমিও ব্যাপারটা ভুলে যেতে চাই।






মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:২৯

আবু তালেব শেখ বলেছেন: গল্পটা সুন্দর। অনেক লম্বা তবুও পড়লাম।

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০১

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: ধন্যবাদ

২| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:০৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আদিভৌতিক ব্যাখ্যা থাকলে গল্পটা জমতো। এমন জায়গায় শেষ করেছেন আর গল্প রইলো না...

০৫ ই অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১১:১০

ফারদীন নিশ্চিন্ত বলেছেন: পরামর্শের জন্য ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.