নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একজন গাধামানব

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন

ডাল দিয়ে ভাত খাই, রাস্তা দিয়ে হাঁটি, মানুষ আমি ভেজাল হলে'ও আমার লেখাগুলো খাঁটি ।

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন › বিস্তারিত পোস্টঃ

Aquaman সিনেমার প্রথম খাঁটি বাংলা রিভিউ

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫০

মার্কিন দেশে থাকার অজস্র অপ্রয়োজনীয় সুবিধার একটি হচ্ছে যেকোনো হলিউডি সিনেমা মুক্তি পাবার সাথে সাথে দেখে ফেলা যায়। এই ধারণাটি আরেকধাপ বদলে গেল Aquaman সিনেমা মুক্তির আগেই দেখে ফেলার মাধ্যমে। উইকিপিডিয়া ও imdb বলছে সিনেমাটি ২১শে ডিসেম্বর মুক্তি পাবে, অথচ আমেরিকার কিছু সিনেমা হলে ১৯ তারিখেই বিশেষ কায়দায় সিনেমাটি দেখানো হল। এদের সিনেমামন্ত্রী কী বাংলার শিক্ষামন্ত্রী দ্বারা অনুপ্রাণিত? নইলে আগেভাগে সিনেমা ফাঁস হবার রহস্য কী? অনলাইনে দেখি “স্পেশাল ফ্যান ইভেন্ট” লেখা। যে চরিত্র আগে দেখি নাই, সেটার স্পেশাল ফ্যান হব কীভাবে- এই ভাবতে ভাবতে ওয়েবসাইটে গিয়ে হাসি পেল। পুঁজিবাদী রাষ্ট্র আমেরিকা। পয়সা ঢাললে এখানে ফ্যান-লাইট-টিভি সবই হওয়া সম্ভব। কিন্তু একা লেজ কাটলে বাঙ্গালী আদর্শের অবমাননা করা হয়, তাই আরও দুই বঙ্গসন্তানকে নিয়ে আমি স্পেশাল ফ্যানের কাতারে নাম লেখালাম। কিছুক্ষণের মধ্যে তাদের নিয়ে চলে গেলাম সিনেমা হলে। এখনও বিশ্বজুড়ে মুক্তি না পাওয়া Aquaman সিনেমাটির এটাই সম্ভবত প্রথম বাংলা রিভিউ। প্রথম যদি নাও হয়, তাহলে এটা খাঁটি বাংলা রিভিও… বিফলে মূল্য ফেরত পাইবেন… ইত্যাদি ভুয়া প্রতিশ্রুতি দিয়ে মূল আলোচনায় যাওয়া যাক।

সিনেমা হলে ঢোকার সাথে সাথে জানা গেল এই স্পেশাল ফ্যান ইভেন্টে উন্নতজাতের চেয়ারে বসতে দেয়া হবে। সাথে সিনেমার বিশেষ স্টিকার ও স্টিলের একটি ছোট্ট প্রতীক (নির্বাচনী প্রচারণা?) দেয়া হবে (ছবিতে সংযুক্ত)। ঘটনা এখানেই শেষ না, সাথে ফ্রি পপকর্ণ দেয়া হবে। চেয়ারের দাম জানি না, তবে পপকর্ণের ঠোঙ্গার দাম প্রায় ছয় ডলার। এই মাল ফ্রি পেয়ে ভুট্টা ও যেই শালা ভুট্টার খইকে পপকর্ণ নাম দিয়েছে তাদের উভয়কে ধন্যবাদ জানালাম। সিটে বসে প্রথম যাকে দেখলাম সে নিকোল কিডম্যান। ম্যান হবার আগে যখন কিড ছিলাম, মুহতারমা নিকোলকে তখন থেকেই বেশ ভাল লাগত। তিনি এই সিনেমায় আছেন- এই খবর জানতাম না। ফলে সিনেমা শুরুর আগেই পয়সা উসুল হয়ে গেল। তখনই বের হয়ে গেলে খারাপ হত না। কিন্তু পপকর্ণ শেষ হওয়া পর্যন্ত যাওয়া ঠিক হবে না- এই যুক্তিতে থেকে গেলাম। সিনেমা শুরু হল। লাইট হাউজের তীরে বসে থাকা এক মানবের সঙ্গে জল থেকে উঠে আসা এক সমুদ্রকন্যার প্রণয়, তাদের সন্তান Aquaman এর জন্ম। সমুদ্ররাজ্যের আইন অনুসারে সেই কন্যাকে ফিরতে হল, সমুদ্ররাজাকে বিয়ে করতে হল, সেখানে আরেক ছেলের জন্ম ইত্যাদি ইত্যাদি। মাঝখানে Aquaman মায়ের শাসন ছাড়া আনন্দময় এক ছেলেবেলা কাটিয়ে দিল। পিতার শাসন বলে কিছু নাই, কারন পিতা সারাদিন সমুদ্রের পাড়ে অর্ণবের “সে যে বসে আছে একা একা” গান গেয়ে বউয়ের (নিজের না রাজার- সেইটা আরেক আলোচনা) অপেক্ষায় থাকত। যাই হোক, আমাদের Aquaman বড় হতে হতে নিজের সুপ্ত গুণাবলী টের পেতে লাগল। বড় হবার ফাকে (ফাঁকে নয়) সে গেম অব থ্রন্স-জাতীয় নানা খেলায় বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন করল। একসময় দেখা গেল এক অনিবার্য যুদ্ধে সমুদ্র ও স্থল- দুইখানেই ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা। সেই গণ্ডগোলে Aquaman কে অংশ নিতেই হবে ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব খবর তার কাছে পৌঁছে দিত সমুদ্ররাজ্যের হবু রাণী। হবু রাজার হাবাগোবা জীবনের চেয়ে এই রানীর Aquaman কেই বেশি ভাল লাগবে এবং নানা ঘটনা ঘটবে- সেসব বলে উৎসুক জনতার কৌতূহল এখানেই বালিশচাপা দেয়া ঠিক হবে না। সিনেমার শেষে নায়ক বাংলা সিনেমার মতো জয়লাভ করবে- এটাই স্বাভাবিক। তবে এই সিনেমার নানা অংশে অন্যান্য সিনেমার কাট-কপি-পেস্টসহ নানা আলোচ্য উপাদান আছে। যেমনঃ

১. প্রথমেই এক সাবমেরিনের পশ্চাৎদেশ কেঁপে ওঠে। দেখে মনে হয় হিন্দি Ghazi Attack থেকে এই অংশ বাটিচালান দেয়া হয়েছে।
২. সাবমেরিনের বিশাল দেহের কেবল পশ্চাৎদেশ আক্রান্ত হওয়া এবং এর নেপথ্যনায়ক Aquaman কে দেখলে অল্প সময়ের জন্য গেম অব থ্রন্সের কথা মাথায় আসা স্বাভাবিক। তখন বেচারি সাবমেরিনের জন্য কিছুটা মায়া লাগতে পারে।
৩. Marvel সিরিজের Thor চরিত্রের মতো Aquaman এরও হারানো সাম্রাজ্য, ওখানে যাবার পথের বিশেষ সেতু, সেই রাজ্যে থাকা হারানো ভাই, এবং সেই ভাই মারামারি করতে আগ্রহী- এইসব ব্যাপারে মিল আছে। যারা Thor দ্যাখেন নাই, তাদের জন্য Aquaman এক টিকিটে দুই ছবি হয়ে যাবে।
৪. হবু রাণী জলকন্যা হবার কারনে বিশেষ জলচিকিৎসায় পারদর্শী। Aquaman এর মানবপিতা পানি খেয়ে (তার আগে বিয়ার খেয়ে) বেহুঁশ হয়ে পড়ে। হবু রাণী কোন ওষুধপথ্য (এবং ঠোঁটের প্রয়োগ) ছাড়াই ফুসফুস থেকে পানি বের করে তাকে সুস্থ করে ফেলে। এই কায়দা চিকিৎসকরা শিখে ফেলতে পারলে পালমোনারী ইডিমা’র (ফুসফুসের পানি) চিকিৎসায় বৈপ্লবিক উন্নতির সম্ভাবনা আছে।
৫. সিনেমার এক অংশে গোপন ম্যাসেজ উদ্ধার করার জন্য পানি দরকার হয়। হবু রাণী তার টেকনিক ব্যবহার করে নায়কের কপাল থেকে একফোঁটা ঘাম বের করে। যেখানে মূত্র-বিসর্জন করলেই কাজ হতে পারত বলে উপস্থিত এক বাঙ্গালী চিকিৎসক উপস্থিত দর্শকদের কাছে মত প্রকাশ করেন। নায়ক Aquaman এই কথা কিছুক্ষণ পরেই বলে ওঠে। এই দৃশ্য দেখে সেই চিকিৎসক নায়কের বিচারবুদ্ধির প্রশংসা করেন।
৬. রসায়ন ও ভৌত বিজ্ঞানের ছাত্রদের জন্য এই সিনেমা শিক্ষাসফরের মতো। চোখের পানির ঘনত্ব সাগরের পানির চেয়ে সামান্য আলাদা, তাই পানির নিচেও “টলমল করে আঁখি” দেখা যায়। বিজ্ঞানের আরও নানা বিচিত্র পাঠ সিনেমার নানা অংশে বিদ্যমান।
৭. যেকোনো সিনেমা মহৎ অথবা সফল কিনা- সেটা বোঝার একটি উপায় হল সিনেমাটি দর্শকদের জীবনের সেই সিনেমার কোন প্রভাব ফেলেছে কিনা। সোয়া দুই ঘণ্টার বিরতিহীন সিনেমা দেখে বের হবার পর মার্কিন জনতাকে পিশাবখানার সামনে লম্বা লাইন দিতে দেখা গেল। Aquaman দেখে সবাই Aquaman হয়ে পড়েছে, এখন কেবল জলরাশি দিয়ে বিপ্লব ঘটানোর অপেক্ষা। সেই বিবেচনায় এই সিনেমা অবশ্যই সফল।

আর বেশি লিখলে পরিচালক-প্রযোজক মামলা কিংবা হামলা করে বসতে পারে। সিনেমা দেখুন, প্রচুর পানি গ্রহণ ও ত্যাগ করুন- এই আহবান জানিয়ে রিভিউটি এখানেই শেষ করছি।

আলভিদা।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৬

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: অ্যাম্বার হার্ড আছে B-))

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৩

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: ভাল অভিনয় করেছে

২| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫৮

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
প্রযোজকের তো মাঠে মারা যাবার কথা।
মুক্তির আগেই দর্শকের সিনেমা দর্শন।
এই সুবিধা বাতিল হওয়া দরকার।

৩| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: :P :P :P

৪| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:০৪

ইসিয়াক বলেছেন: শুভ কামনা রইলো। ধন্যবাদ

৫| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:৪৯

সাহিদা সুলতানা শাহী বলেছেন: ভাল বলেছেন।

৬| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ৯:৩২

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম।

৭| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২১

অপু দ্যা গ্রেট বলেছেন:


দারুন রিভিউ লিখেছেন

৮| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৬

মাহমুদুর রহমান বলেছেন: আমিও জানলাম।

৯| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২৯

আলাপচারী প্রহর বলেছেন: ফালতু ষ্টাইলে লেখা। ফালতু লেখা।

২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:৫৩

মোহাম্মদ মাহবুব হোসেন বলেছেন: সুন্দর ও গঠনমূলক কমেন্ট। অসাধারণ স্টাইলে লেখা অসাধারণ কমেন্ট।

১০| ২০ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২২

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: আসলে খাঁটি বাংলা রিভিউ...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.