নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।
আব্দুসসামাদ
১ম খণ্ড
(নিচে অন্য পর্বগুলোর লিঙ্ক দেয়া আছে)
দেখলাম, মাস্টার মশাই আমার পাশ দিয়ে খুব দ্রুত হেঁটে চলে যাচ্ছে। আমি দৌড়ায়ে ধরলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম, “স্যার, কই যান?”
মাস্টার মশাই বলল, “যা বলার তাড়াতাড়ি বল, সময় নাই, গঞ্জে যাব। তারপর আরও কাজ আছে”।
আমি বললাম, “স্যার, আমি আপনাকে পা ধরে একটু সালাম করবো?”
মাস্টার মশাই বললেন, “সালাম করবা কেন? সালাম করা কি খুবেই দরকার?”
আমি বললাম, “জি না স্যার, খুব বেশী দরকার নাই”।
-ঠিক আছে, তাড়াতাড়ি কর। সালাম করার সময় হাত দিয়ে পা একবার ধরবে, ২বার ধরবে না। হাতে সময় কম। রহিমুদ্দিনের নাকি একসাথে ৩ টা বাচ্চা হইছে। আসগর আলি গণক বলছে, এর মধ্যে নাকি একটা বাচ্চা অপয়া। ওটাকে আলাদা করতে হবে। তারপর মাটি চাপা দিয়ে মাটিতে পুতে ফেলতে হবে।
-বলেন কি স্যার, এটা তো খুবেই ইন্টারেস্টিং। আমারে নিয়া চলেন। আমি বাচ্চাগুলোর চোখ দেখেই বলে দিতে পারবো কোনটা অপয়া বাচ্চা। আর মাটি চাপার দায়িত্বও আমাকে দিয়েন স্যার।
-স্যার বললেন, “কি বিপদের কথা, আচ্ছা চল আমার সাথে”।
-স্যার একটা কথা জিজ্ঞাসা করব?
-হুম কর।
-স্যার, বাচ্চাটারে জীবিত মাটি চাপা দেবেন, নাকি মেরে মাটি চাপা দেবেন? মারলে কিভাবে মারবেন, লবণ খাইয়ে, নাকি গলা টিপে?”
-তোমার কি মত, কোনটা হলে ভাল হয়?
-স্যার, জীবিতই মাটি চাপা দেন। আমার বহু দিনের খায়েস ছিল, একটা মানুষকে নিজ হাতে জীবিত মাটি চাপা দেব। যাক, বড় মানুষ না হোক। ছোট মাসুম বাচ্চা হলেও চলবে। মানুষ তো মানুষই। ছোট আবার বড় কি? এতেই আমি খুশি।
আমি রহিমুদ্দিনকে জোরে ডাক দিলাম, “ও রহিমুদ্দিন, বাড়ি আছো নি?”
রহিমুদ্দিন বাড়ি থেকে হাসিমুখে বের হয়ে বলল, “আরে মাস্টার মশাই, আপনি তো এ সময় স্কুলে থাকার কথা, এখানে কি করেন? পোলা পাইনদের মতো স্কুল চুরি করেন, না? এটা কোন মতেই ভাল না, দেশ জাতি আপনাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।”
আমি বললাম, “মাস্টার মশাই তোমার বাচ্চা দেখতে আসছে। বাচ্চাগুলো নিয়ে আস। তার আগে মিষ্টিমুখ করাও। মিষ্টি ৬ টা নিয়ে আসবে। প্রতিটা বাচ্চার জন্য ২ টা করে”।
রহিমুদ্দিন একটা বাচ্চা নিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো। এসে মাস্টার মশাইকে বলল, “স্যার, দোয়া করে দেন। আপনি দোয়া করলে নির্ঘাত কাজ হবে, বিলেতে যেতে না পারুক। অন্তত আপনার স্কুলে দপ্তরির চাকরীটা পেয়ে যাবে”।
আমি রহিমুদ্দিনকে বললাম, "আরও ২ টা বাচ্চা কি করছ, ওগুলো নিয়ে আস। ওগুলোও দেখতে হবে।
রহিমুদ্দিন অবাক হয়ে বলল, “আরও ২ টা বাচ্চা পামু কই, এই ১ টাই তো হইছে!”
আমি বললাম, “মিয়াঁ ফাজলামি কর। তোমার ৩টা বাচ্চা হইছে। এর মধ্যে ১ টা বাচ্চা অপয়া, ওই বাচ্চাটাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাটিতে পুতে ফেলতে হবে। নতুবা শুধু এ গ্রাম নয়, পুরো দেশ শুদ্ধ মাইনাসের খাতায় চলে যাবে, তাড়াতাড়ি নিয়ে আস তো। নতুবা এই বাচ্চা দিয়েই কাজ সারায়ে দেব”।
রহিমুদ্দিন কিছু না বলে ঘরের ভিতর চলে গেল। ঘর থেকে বের হয়ে আসার সাথে সাথে আমি আর স্যার ভয়ে রীতিমত আঁতকে উঠলাম। দেখলাম, রহিমুদ্দিনের হাতে আড়াই ফুট সাইজের একটা রামদা। একদম চকচক করছে। মনে হয় ২/১ দিনের মধ্যে নতুন করে ধার দেয়া হয়েছে।আমি ভয় পেয়ে গেলাম, সাথে সাথে স্যারকে বললাম, "স্যার, রহিমুদ্দিনের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখছেন। কিছুক্ষণ আগেও কি সুন্দর নূরানি চেহারা ছিল। এখন দেখছেন? মনে হইতেছে, প্রতিদিন আস্ত ২টা করে মানুষ চিবাইয়া খায়। মতি গতি ভাল ঠেকছে না। বসে থাকলে ঝুঁকি আছে স্যার। আপনি আর আমাকে কেটে পিস পিস করে বারান্দায় সাজিয়ে রাখার আগ পর্যন্ত থামবে মনে হয় না। বেঁচে থাকার ইচ্ছা থাকলে, খেঁচে দৌড় দেন স্যার”।
আমি দৌড়ায়ে স্যারের বেশ আগেই চলে আসতে পারলাম। রহিমুদ্দিন একটুর জন্য স্যারকে মিস করেছে। দূর থেকে শুনলাম রহিমুদ্দিন চিৎকার করে বলতেছে, "সামাইদ্দা, দেখে নিস, তোরে গ্রাম ছাড়া করা পর্যন্ত আমার মেয়ের কোন নামই আমি রাখুম না। আর স্যার, আপনি আমার গুরুজন। আপনাকে আমি শ্রদ্ধা করি। স্কুলে থাকা কালে শুধু শুধু যতবার পিটাইছেন সব ভুলে গেছিলাম। কিন্তু আজ অতীতের সব কিছু আবার মনে আসতেছে। দেখে নিয়েন, আপনার বর্তমান চাকরীটা চুষে লেবেনচুসের মত না খাওয়া পর্যন্ত আমার শান্তি নাই”।
স্যার হাঁপাতে হাঁপাতে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "তুমি জানতে না রহিমুদ্দিন এমন?”
আমি বললাম, “জানতাম স্যার। এর আগেও ও মানুষ কোপাইছে। তবে স্যার কেউ মরে নাই। সে হিসেবে আপনি ২/১ টা কোপ খাইলেও মরার কোন সম্ভবনা ছিল না স্যার।”।
স্যার বলল, “তাহলে এসব কথা আগেই আমাকে বলনি কেন!?”
আমি স্যারকে বললাম, “আগে জানলে কি করতেন স্যার?”
স্যার বলল, “একটু সুবিধা হত, আরেক টু আগেই দৌড় দিতে পারতাম। দেখলে না, একটু হলে ধরতে ফেলতো। আর ধরতে পারলে কি করতো বুঝতে পারছ? রক্ত মাংস এক করে ফেলত”।
আমি বললাম, “স্যার, আমার মনে হয় কি জানেন, বাচ্চা মেয়েটা আসলেই অপয়া। দেখছেন না, আমরা ২ জন তার মুখ দর্শনের সাথে সাথে, এখন থেকে আমি গ্রামে থাকতে পারি কিনা মনে হয় না। তাছাড়া, মনে হয় না, আপনিও বাঁচতে পারবেন। দেখবেন, রহিমুদ্দিন আপনার চাকরীটা খেয়ে দেবে, আল্লাহর কিরা। আর যদি চাকুরী নাও খেতে পারে, দেখবেন, কাল থেকে আপনি স্কুলের ত্রিসীমানায় ঢুকতে পারবেন না, রামদা নিয়ে আপনাকে পাহারা দেবে। এখন থেকে আমাদের জীবন মরণ সব একদম রহিমুদ্দিনের হাতে চলে গেল, স্যার।”।
স্যার বললেন, “মন খারাপ করিও না, সবেই আল্লাহ পাকের ইচ্ছা। আমরা উচিলা মাত্র”।
আমিও মত দিলাম, “জি স্যার, খারাপ বলেন নাই। সবই উপরওয়ালার ইচ্ছা”।
(চলবে)
এখান থেকে পড়ুন
২য় খণ্ড
২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৮
ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: আপনাকে অনেক ধন্যবা।।
পরের পর্বটা দিয়ে দিয়েছি। পড়তে পারেন।
২| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:১৬
আহলান বলেছেন: ইন্টারেষ্টিং ...লেখায় হুমাযুন আহমেদ ভাব আছে ...
২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২
ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: সত্য বলেছেন ভাই। ধরণটা হুমায়ূন আহমেদ থেকে চুরি করা।
৩| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪২
রায়হানুল এফ রাজ বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৯
ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ
৪| ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ দুপুর ২:৪৮
বোকা মানুষ বলতে চায় বলেছেন: যাক স্টার্টিংটা ভালই হয়েছে, পরের পর্ব পড়ে আসি।
২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:১৭
ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ ভাই। চেষ্টা থাকবে।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে এপ্রিল, ২০১৬ সকাল ৯:১২
বিজন রয় বলেছেন: হা হা হা...........
পরের পর্বও পড়বো।