নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য রচনা

১৪ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ৩:০৬

আব্দুসসামাদ‬
৫ম খণ্ড
(নিচে ১ম খণ্ড সহ অন্য পর্বগুলোর লিঙ্ক দেয়া আছে)

এত সকাল চিৎকার করে ঘুমটাই ভেঙ্গে দিল। ঘর থেকে বের হয়েই দেখি, মেম্বার চাচা সহ ২০/২৫ জন আমার বাড়িতে উপস্থিত।
মেম্বার চাচা বলে উঠল, “আব্দুসসামাদ, শুনলাম তোমার বুদ্ধিতে এই ভয়ঙ্কর সামসু চোরা ধরা পড়ছে। গতকাল অর্ধেক বিচারকার্য সম্পন্ন হয়েছে। তাই চিন্তা করলাম তোমাকে ছাড়া আর অর্ধেক বিচার কাজ সম্পন্ন করা মোটেই ঠিক হবে না। তোমার প্রতি আমাদের একটা আশা ভরসা আছে। আমি ঋতু মা’কে আনতে হাসপাতালে লোক পাঠিয়েছি। তাঁরা কিছুক্ষণের মধ্যে এসে পড়বে। গতকাল তো ঋতু মায়ের চোরের কঠিন বিচারে গ্রামের সবাই খুবই খুশি।”।

আমি মেম্বার চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “চোর কই? চোর তো দেখলাম না”
একজন সামসু চোরাকে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে আসলো। এবার আমি চোরাকে দেখলাম। দেখে কিছুটা অবাক হলাম। দেখলাম, চোরের গায়ে নতুন শার্ট, পড়নে নতুন লুঙ্গী। দুটাই এখনও ভাঁজ ভাঙেনি।, একদম নতুন। চুলেও তেল দেয়া, চিরুনি দিয়ে আঁচড়ানো চুল। সামসু চোরার একদম ফুরফুরে মেজাজ। দেখেই বুঝে নিলাম, বিচার কাজের দায়িত্বে যখন ঋতু আছে, এটা হওয়াই স্বাভাবিক। এবার আমি জালাল মিয়াঁর দিকে তাকালাম। দেখলাম, বেচারা খুশী হওয়ার পরিবর্তে কঠিন বিষণ্ণ হয়ে আছে। বুঝলাম, চোরের জন্য নতুন জামার ব্যবস্থা জালাল মিয়াঁকেই করতে হয়েছে। ঋতুর কঠিন বিচারটা এমনি হওয়া স্বাভাবিক।”

আমি মেম্বার চাচাকে বললাম, “চাচা, সামসুর জন্য লুঙ্গী, শার্টের ব্যবস্থা করেছেন ঠিক আছে, কিন্তু তার পায়ের স্যান্ডেল তো ছিঁড়া। স্যান্ডেল কিনেন নাই কেন! এটা বড়ই বে-ইনসাফ হইল!!”

মেম্বার চাচা এবার জালাল মিয়াঁর দিকে তাকিয়ে বলল, “শুনছো জালাল, ঋতু মায়ের মতই আমাদের আব্দুসসামাদেরও সবসময় হক বিচার। সামসু চোর হইলেও, যেহেতু সে আমাদের পাশের ওয়ার্ডে বসবাস করে, সেহেতু সে আমাদের মেহমান। তাকে যত্ন আপ্যায়নের কমতি করা আমাদের জন্য গুনাহের কাজ। যাও, সামসুর জন্য তাড়াতাড়ি নতুন স্যান্ডেলের ব্যবস্থা কর”।

এই সময় জালাল মিয়াঁর চেহারা একদম দেখার মত। আমি দেখেই খুব মজা পেলাম।
আমি তারেককে বললাম, “ঘরের ভিতর চেয়ার, পিঁড়ি, পাটি যা আছে, এই গুলো নিয়ে আস। সবার বসার ব্যবস্থা কর। সামসুরেও একটা পিঁড়ি দাও”।

আমি মেম্বার চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম, “চাচা, কাল রাতে সামসু ছিল কই? তার কোন অযত্ন হয়নি তো?”
মেম্বার চাচা বলল, “তওবা তওবা! কি যে বল!! ঋতু মা যেভাবে যেভাবে বলেছে সেভাবে রেখেছি। তোমার বিশ্বাস না হলে সামসুরে জিজ্ঞাসা করতে পার”

আমি সামসুর দিকে তাকালাম। সামসু আমাকে বলল, “মেম্বার সাহেব বড়ই মহৎ হৃদয়ের মানুষ। আর ঋতু ম্যাডাম তো সাক্ষাৎ ফেরেশতা”
আমি সামসুর দিকে তাকিয়ে কঠোরভাবে বললাম, “চোরের মুখ নিয়া তুমি বড় কথা বলবা না। তোমাকে আমি কিছু জিজ্ঞাসা করেছি? মুখ বাড়ায়ে কথা বল ক্যান? দাড়াও, কিছুক্ষণের মধ্যে তোমার পিঠের চামড়া তুলার ব্যবস্থা করতেছি। তখন বুঝবে, কে মহৎ, কে ফেরেশতা!!! ”

আমি তারেকের দিকে তাকিয়ে বললাম, “তারেক, যাও সামসুকে গাছের সাথে ঝুলানোর ব্যবস্থা কর। লম্বা এবং মোটা দেখে দড়ি নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। আর একটা প্লাস নিয়ে আসার ব্যবস্থা কর। সামসুর আঙুলের সব নখ তুলে ফেলা হবে”।
এবার আমি মেম্বার চাচার দিকে তাকিয়ে বললাম, “চাচা, আপনার দাদাজানের খানদানী একটা চাবুক ছিল না। ওটা নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন”।

মেম্বার চাচা বলল, “তুমি খুব ভাল কথা মনে করেছ। অনেক দিন ধরে এটার ব্যাবহার নাই। আমি অবশ্য মাঝে মাঝে তেল দিয়ে সাইনিং করে রাখতাম। আমি এখনই নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতেছি”।
১০ মিনিটের মধ্যেই দড়ি, প্লাস, চাবুকের ব্যবস্থা হয়ে গেল। এবার সামসুর টনক নড়ল, সে এবার হাউমাউ করে কেঁদে উঠল।
এর মধ্যে ঋতু এসে পৌঁছে গেছে। সে আসার পরপরেই সবার মধ্যে অন্য ধরণের একটা শোরগোল দেখলাম। বুঝলাম, ঋতুর জনপ্রিয়তা এখন তুঙ্গে।
ঋতু সামসুর দিকে তাকিয়ে বলল, “সামসু, ভাল আছ, রাতে ভাল ঘুম হয়েছে তো?”
সামসু এবার কান্না থামিয়ে ঋতুর দিকে তাকিয়ে বলল, “জি ম্যাডাম ভাল আছি। মেম্বার সাহেব খুব ভাল মানুষ। রাতে সুন্দর বিছানায় থাকতে দিয়েছেন, অনেক আপ্যায়ন করেছেন”

ঋতু এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল, "সামসুর বিচারের কি ব্যবস্থা করলে?”
আমি বললাম, “এইতো সামসুরে এখনিই দড়ি দিয়ে গাছের সাথে ঝোলানো হবে। তারপর চাবুক মারা হবে যতক্ষণ না শরীরের ভিতরের মাংস দেখা যায়। তুমিও আধ-একটু করে চাবুক মারতে পার। খুবই ভাল লাগবে। অনেক খানদানী চাবুক। মারার সাথে সাথে একদম মাংস উঠে চলে আসবে। বড়ই কার্যকরী জিনিস। লোকমুখে শুনেছি।”
ঋতু বলল, “ সত্যি এটা খুবেই ভাল হবে। আমারও ইচ্ছা আছে”।
এবার ঋতু মেম্বার চাচার দিকে তাকিয়ে বলল, “চোরকে এতক্ষণ এভাবে রাখা ঠিক না। দেখতে ভাল লাগে না। দড়ি দিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখাটা বেশ সুন্দর দেখায়। তাড়াতাড়ি গাছের সাথে ঝুলিয়ে দেন। আর কে কে তাকে পেটাবে, সেটা ঠিক করেছেন? মোটাসোটা দেখে লোকজনকে নিয়েন। চাবুক মারতে অনেক শক্তির প্রয়োজন”।

আমি মেম্বার চাচার দিকে তাকিয়ে বললাম, “চাচা, মুরুব্বীদের পক্ষ থেকে আপনি অনুমতি দেন। সামসুরে ঝুলায়ে দেয়ই। শুভ কাজে দেরী করা ঠিক হবে না”

মেম্বার চাচা অনুমতি দিলেন। আমি তারেককে বললাম, “তারেক, আল্লাহ্‌র নাম নিয়া সামসুরে ঝুলিয়ে দাও”
এবার ঋতু বলে উঠল, “তার আগে মুরুব্বীদের অনুমতি নিয়ে আমি একটা কথা বলতে চাই। সেটা হল, সামসু মারাত্মক এক চোর। এটা ঠিক আছে। আমি কাল খবর নিয়ে জানছি, সামসুর ৬ টা ছাগল আছে। ৪ টা ছাগল দুগ্ধ দিত। ছাগল ৪ টা দুগ্ধ দেয়া বন্ধ করে দেয়ায় সে নানারকম অভাবে পড়ে যায়। সে কারণে সে জালাল মিয়াঁর ৩ টা গরু চুরি করেছে। পরের বার ২ টা গরু চুরি করতে যেয়ে সে ধরা পড়ে। যদিও তার আগে কখনো চুরি করার তথ্য পাওয়া যায় না, সামসু বড়ই ভাল মানুষ ছিল। কিন্তু আজ সে মারাত্মক চোর, সেই অনুযায়ী তার চুরি করার দায় ছাগলগুলোও এড়াতে পারেন না। তাই আমি ছাগলগুলোকেও এখানে ধরে নিয়ে আসার অনুমতি চাচ্ছি।”

১ ঘণ্টার মধ্যে সামসুর ৬ টা ছাগলকে নিয়ে আসা হল। সামসু তো এবার আরও বেশী দুঃখ এবং ভয়ে অস্থির। কারণ তার শেষ সম্বল নিয়ে সবার টানাটানি। ঋতু সামসুকে এই শর্ত দিল যে, তোমার জানের সদ্গাহ হিসেবে এই ৬ টা ছাগল বিক্রয় করে দিয়ে গ্রামের মানুষকে একবেলা ডাল-ভাত খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হবে। সামসু হ্যাঁ-না কিছু বলেনি। ঋতু অবশ্য সে তোয়াক্কাও করেনি। ঋতুর কথার উপর ভিত্তি করে মেম্বার চাচা সহ গ্রামের কয়েকজন সাথে সাথে ছাগলগুলোকে কিনে নিলো। সাথে সাথে সামসুর ছাগল বিক্রয়ের টাকা মোট নগদ ৪৬,০০০ টাকা উঠে গেল। মুরুব্বীরা সবাই মিলে টাকাগুলো ঋতুর হাতে দিল। ঋতু নিজ তত্ত্বাবধায়নে কয়েকদিনের মধ্যে এই টাকাগুলো দিয়ে গ্রামে সবার জন্য বিশাল করে এক ডাল ভাতের আয়োজন করবে। এতে একমাত্র সামসু ছাড়া সবাই খুশী।
দুপুরের দিকে সামসুকে ছেড়ে দেয়া হল। সাথে এক জোড়া নতুন জুতা। জালাল মিয়াঁ জুতা জোড়া অনিচ্ছাসত্ত্বেও সামসুকে কিনে দিয়েছে। সাথে সামসুর ২ ছেলে মেয়ে এবং বউও ছিল। তাঁরা সামসুকে অক্ষত পেয়ে খুবই খুশী।

খাদিজা খালাও কয়েকদিনের মধ্যে সুস্ত হয়ে গেছেন। মোটামুটি এখন তিনি পাড়া বেড়াচ্ছেন। আমি এখন বেশীর ভাগ সময় খাদিজা খালার বাড়িতে থাকি, একদম আগের মত। আমাকে অন্তত এখন আর খাওয়া নিয়ে চিন্তা করতে হয় না।

ঋতু শহরে চলে গেছে প্রায় ১ মাস হয়ে গেছে। কিন্তু যাওয়ার সময় সে আমাকে বলে যায়নি। একদিন সকাল বেলা তারেক খবর দেয়, সকালের ট্রেনে ঋতু চলে গেছে। এ নিয়ে আমার টেনশনও নাই। গত পরশু মেম্বার চাচার গঞ্জের চালের দোকানের টেলিফোনে ঋতুর সাথে কথা হয়েছে।

আজকেও আমাকে গঞ্জে আসতে হল। কারণ সামসু সবাইকে মিষ্টি খাওয়াবে। সামসু আমাকেও দাওয়াত করেছে। কারণ সে গঞ্জে একটা দোকান নিয়েছে। ৪৬,০০০ টাকার সাথে আরও কিছু ধার করে মোট ৭০,০০০ টাকা দিয়ে দোকানে মাল তুলেছে। মাস্টার মশাই ধারের টাকাটা দিয়েছে। ঋতু যাওয়ার আগে এইসব কিছু ব্যবস্থা করে দিয়ে গেছে। ঋতু সামসুর দোকানের একটা নামটাও ঠিক করে দিয়ে গেছে। দোকানের নাম পেয়ে তো সামসু খুবই খুশী। আমি যখন সামসুর দোকানের সামনে দাড়ালাম, দেখলাম অনেক লোকের সমাগম। সবাই খোশ গল্প করতে আর মিষ্টি খেতে ব্যস্ত। আমি দোকানের কাছে আসতেই, সামসুর দোকানের সাইনবোর্ডে দোকানের নামটা চোখে পড়ল। দোকানের নাম – “সামসু চোরার মুদীর দোকান”। কেন জানি অনেক বেশী ঋতুর কথা মনে পড়ল, যা সাধারণত মনে পড়ার কথা না।

(চলবে)

এখান থেকে পড়ুন
১ম খণ্ড
২য় খণ্ড
৩য় খণ্ড
৪র্থ খণ্ড
৫ম খণ্ড
৬ষ্ঠ খণ্ড

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.