নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইকবাল সুমন

"ঘোড়ার ডিমের খোঁজে নয়, ডিমওয়ালা-ঘোড়ার খোঁজে...

ইকবাল হোসাইন সুমন

আমি ইকবাল সুমন। মাঝে মাঝে টুকটাক লিখা লিখি করি। এছাড়া কোন কিছু করি না।

ইকবাল হোসাইন সুমন › বিস্তারিত পোস্টঃ

রম্য রচনা

১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১২:৫১

আব্দুসসামাদ‬
৬ষ্ঠ খণ্ড‬
(নিচে ১ম খণ্ড সহ অন্য পর্বগুলোর লিঙ্ক দেয়া আছে)

গত ৩ দিন ঋতু আমাকে ইঁদুর খোঁজা খুঁজছে। মেম্বার চাচার চালের দোকানে ১৫ বারের উপরে ফোন দিয়েছে। প্রত্যেকবারেই মেম্বার চাচার দোকানে আমার যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আমি যাইনি, যেতে ইচ্ছে হয়নি। আজ গঞ্জে এলাম অন্য একটা কারণে। মেম্বার চাচার দোকানে আসতেই চাচা আমাকে ডেকে ভিতরে নিয়ে ফোনটা ধরিয়ে দিল। হ্যালো বলতেই, ওপাশ থেকে দেখলাম ঋতু। ভাবলাম এত দিন ফোন না ধরাতে ক্ষেপে যাবে। কিন্তু কিছুই বলল না এ সম্পর্কে।
ফোনে ঋতু বলল, “তোমার খুবই ভাল একটা চাকুরীর ব্যবস্থা করেছি। কিন্তু তুমি ভেবো না তোমাকে শহরে আসতে হবে। তোমার এলাকার চাকুরীটা। খুবেই ভাল চাকুরী। আমার এক দূরসম্পর্কের ফুফু তোমাকে চাকুরীটা দেবে”
আমি বললাম, “বেতন কত? অন্য সুযোগ সুবিধে কি?”
- তুমি যে সর্বাধিক সুযোগ সুবিধার কথা চিন্তা করছ, তার থেকে বেশী সুযোগ সুবিধা দেবে। তুমি যে বেতনের কথা চিন্তা করছ তার থেকে অনেক বেশী বেতন দেবে। যা তোমার চিন্তার বাহিরে। উনার কাজ করা অবস্থায় তুমি যা চাও সেটাই দেবে। এখন খুশী তো? কিন্তু একটা কথা, যত সুবিধাই তোমাকে ফুফু দেক না কেন, যত বেতনেই তোমাকে অফার করুক না কেন, তুমি কোন সুবিধা-টুবিধা নিতে পারবা না। বুঝছ?
- তুমি আমার সাথে ফাজলামি কর!!! কাজ করবো, পারিশ্রমিক নেব না। এটা কোন কথা বল্লা?
- তোমার যত খরচ আমি তোমাকে দিয়ে দেব। যত লাগে। তবুও তুমি ফুফু থেকে কোন সুবিধা বা বেতন চাইবে না। তোমার জনতা ব্যাংকের আগের অ্যাকাউন্ট টা চালু আছে তো? আমি ফুফুর ঠিকানাটা মাস্টার চাচাকে দিয়ে দিয়েছি। ঠিকানা নিয়ে তুমি সরাসরি ফুফুর সাথে দেখা করবে। তোমার কি কাজ উনি তোমাকে বুঝিয়ে দেবে।
- গুল্লি মারি তোমার চাকুরীর। বেতন-ভাতা ছাড়া কোন চাকুরী আমি করি না। তোমার ফুফুর চাকুরী তুমি করগে।
ঋতু চুপচাপ থাকলো এবং একটু পরে বলল, “আর শুনো, আমি ফুফুকে বলে দিয়েছি তুমি আসবে। ফুফু এটাও জানে তুমি আমার বয়-ফ্রেন্ড। মনে থাকবে?”।

আমি খট করে ফোনটা রেখে দিলাম।

পরেরদিন খুব সকালে ঋতুর ফুফুর বাড়ি এসে পৌঁছে গেলাম। আমার সাথে সামসুও আসছে। ঋতুর সব কিছুর মধ্যে সামসুর খুব আগ্রহ। যখনই শুনেছে এত কাছে ঋতুর এক দূরসম্পর্কের ফুফু থাকে সাথে সাথে সামসু এখানে আসার জন্য উঠে পড়ে লেগে গেছে। আমিও না করতে পারিনি। ভাবলাম, ঋতু যখন তার এত বড় উপকার করেছে। নিশ্চয় ঋতুর সব কিছুর মধ্যে তার একটা হক আছে।
বাড়ির সামনে এসে তো আমি আর সামসু প্রায় মাথায় হাত দিয়ে দেয়ার অবস্থা। এত বড় বাড়ি এই থানা শহরে কল্পনা করা যায় না। আমরা অনেকক্ষণ গেটের সামনে দাঁড়িয়ে থাকলাম। কেউ আসলো না। অনেকক্ষণ পরে দেখলাম এক বিশাল দেহী দারোয়ান আসলো।
এসেই ধমকের সুরে বলল, “কাকে চাই?”।
আমি বললাম, “ম্যাডামের কাছে আসছি। আমার নাম আব্দুসসামাদ। আমরা তার খুবই কাছের মানুষ। উনি আমাদের নিমন্ত্রণ করেছেন। তাড়াতাড়ি দরজা খুলো”।
- কোন ম্যাডামের কাছে আসছ? ম্যাডামের নাম কি?
আমি বললাম, “নাম জানি না। নামটা খুব ইম্পরট্যান্ট ব্যাপার না। আমরা আসছি, যাইয়া শুধু এটাই বল। বলবে, আব্দুসসামাদ আসছে। আব্দুসসামাদ নামের একটা কদর আছে, বুঝছ?”।
দারোয়ান আমার দিকে কটমট করে তাকালো। বলল, “এখানে দাড়াও আমি আসতেছি।”

আমরা সেই থেকে ১ ঘণ্টার মত দাঁড়িয়ে থাকলাম। কেউ আসলো না।
সামসু তো অস্থির হয়ে গেল। আমাকে বলল, “ভাই মনে হয় না এখানে আমরা সুবিধা করতে পারব। আপনার চাকুরী হওয়ারও কোন নিশ্চয়তা দেখতে পাচ্ছি না। তার মধ্যে যে কোন সময় বিপদের সম্ভাবনা আছে। দারোয়ান ব্যাটার শরীরের সাইজ দেখছেন! তুলে একটা আছাড় মারলে, দ্বিতীয়টা আর মারতে হবে না। নগদে সর্গে চলে যাবেন। সময় থাকতে কেটে পড়ি, চলেন ভাই। আল্লাহ্‌ বাঁচিয়ে রাখলে আরও অনেক চাকুরী পাবেন। আপনি শিক্ষিত মানুষ”।
- দেখ সামসু, অস্থির হবা না। অস্থিরতা আল্লাহ্‌ পাকও পছন্দ করে না।

খট করে গেটের আওয়াজ হল। গেট খুলেই দারোয়ান বলল, “ভিতরে আস। তবে কোন রকম সাউন্ড করে কথা বলবা না, ভিতরে গাছের কোন ফুল বা লতাপাতা ছিঁড়বে না। ম্যাডাম এটা একদম পছন্দ করেন না।
এরপর দারোয়ান আমার দিকে তাকিয়ে বলল, “ম্যাডাম তোমার কি হয়?”
আমি বললাম, “কিছু হয় না”
দারোয়ান এবার থমকে দাঁড়ানো এবং বলল, “তোমার নাম আব্দুসসামাদ বলছিলা না?”
আমি এবার সুরটা কিছুটা নরম করে ফেললাম। এই ব্যাটার মতিগতি ভাল ঠেকছে না। বলা যায় না, কখন আমাদের ২জনকে মাথায় তুলে একসাথে আছাড় মারে। একবার আছাড় মারলেই বাঁচব বলে হয় না।

"জি, আমার নাম আব্দুসসামাদ" আমি বললাম।
দারোয়ান বলল, "ম্যাডাম তোমাদের আসতে বলছে, এটা সত্য। কিন্তু কোন সম্পর্ক না থাকল তোমাদের আসতে বলল কেন?"
আমি বললাম, “জি আপনি ঠিক ধরেছেন। ম্যাডাম আমাকে একটা চাকুরী দেবেন। অনেক বড় চাকুরী। অনেক বেতন"।

দারোয়ান আমার দিকে আবার তাকাল। তাকানোর মধ্যে দেখলাম এখনও আমার প্রতি কিছুটা সন্দেহ আছে।

আমরা যত হাঁটছি তত অবাক হচ্ছি। এত বড় জায়গা নিয়ে বাড়ি আমি আমার জীবনেও দেখিনি। সব যেন চকচক করছে। আমরা ৫/৭ মিনিট হাঁটার পরে দারোয়ান বলল, “তোমরা এখানে বসো। ম্যাডাম আসলে কথা বলবা”
আমি আর সামসু একটা জায়গায় কিছুক্ষণ বসে থাকলাম। একটু পরে দারোয়ান আসলো, এসেই বলল, “ম্যাডাম আপনাদের ডাকছে। আপনারা ভিতরে যান।”
এবার দেখলাম দারোয়ানের সুর একদম পরিবর্তন। তুমি থেকে একদম আপনিতে।
আমি দারোয়ানকে জিজ্ঞাসা করলাম, “বড় একটা পুকুর দেখলাম। ওখানে বড় মাছ হয়?
- জি হয়।
- দুপুরে আমরা খাওয়া দাওয়া করবো। বড় মাছ তোলার ব্যবস্থা কর, মাছের ওজন যেন ৩ কেজির উপরে হয়। আর শুনো, রান্না কে করবে? রান্না যেন ভাল হয়। মাছের ঝোল যেন খুবই সুস্বাদু হয়। আমি সুস্বাদু ঝোল ছাড়া ভাত একদম খেতে পারি না। আর কয়েক প্রকার ভর্তা রাখবা। ভর্তা আমার খুবই পছন্দ।
- জি আচ্ছা।
- আর শুনো, আমি প্রায় দুপুরবেলা এখানে খাব। রাতেও খেতে পারি। সব সময় সুব্যবস্থা রাখবা।
- জি আচ্ছা
এবার সামসু বলে উঠল, “পুকুরে নিশ্চয় কই মাছ পাওয়া যায়। বড় বড় দেখে কই মাছ তুলবা। আমি বড় কই মাছের মাথাটা খুব পছন্দ করি। মনে থাকবে তো?
- জি থাকবে

আমি আর সামসু বিশাল এক হল রুমের মত একটা জায়গায় ঢুকলাম। দেখলাম, দূরে এক মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঋতুর ফুফু সম্পর্কে যা ভেবেছিলাম বয়স তার থেকে অনেক বেশী। ৭০ এর কমে হবে না। উনি হেঁটেই আমাদের কাছে আসলেন। তবে হাঁটা দেখেই বুঝে নিলাম এখনও বেশ শক্ত সমর্থ।

উনি এসেই জিজ্ঞাসা করলেন তোমাদের মধ্যে আব্দুসসামাদ কে?
আমি বললাম, “আমি ম্যাডাম”।
- তোমার পাশে ওটা কে?
এবার সামসু বলে উঠলো, “ম্যাডাম, আমি সামসু চোরা। অনেক বড় চোর। তবে জীবনে ২য় বার চুরি করতে যেয়ে ধরা পড়েছি। এখন আর চুরি করি না। গঞ্জে একটা মুদীর দোকান আছে। দোকানের নাম ‘সামসু চোরার মুদীর দোকান’। খুবই ভাল চলে দোকানটা ম্যাডাম। মাশাল্লাহ।
- আমি জানি সেটা। ঋতু বলেছে।
আমি বললাম, “জি ম্যাডাম, সামসু চোর হইলেও খুবই ভাল মানুষ।"
এবার ঋতুর ফুফু বলে উঠল, “যাক, এখন কাজের কথায় আসা যাক। ঋতু নিশ্চয় তোমাকে সব বলে দিয়েছে, তোমাকে কি কি কাজ করতে হবে?”
- জি না ম্যাডাম, কাজের সম্পর্কে কিছুই বলেনি। তবে ম্যাডাম কিছু ব্যাপার দেখে খুব খুশী খুশী লাগতেছে। মনে হচ্ছে, আপনার এখানে কাজ করে খুবই মজা পাব। আসার সময় দেখলাম আপনার গ্যারেজে ৩ টা গাড়ি আছে। ৩ টা গাড়িই খুবই সুন্দর। এখান থেকে সবচে ভাল গাড়িটা আমাকে ব্যবহারের জন্য দিয়ে দেবেন। আপনার এখান থেকে আমার বাসা মেলা দূর। তাছাড়া আমি গাড়ি ছাড়া মোটেই চলাফেরা করতে পারি না। এখানে ভাল কোথাও আমার জন্য থাকার সুব্যবস্থা রাখবেন। খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা আমি দারোয়ানকে বলে দিয়েছি। কোন সমস্যা হবে না। আর আমাকে টেইককেয়ার করার জন্য ২ জন মানুষ দিয়ে দেবেন।

এবার ঋতুর ফুফু আমার দিকে অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকলো। কিছু বলল না। বুঝতে পারলাম না অবাক হয়েছে নাকি ক্ষেপে গেছে! এটাও বুঝতে পারলাম না, এক্ষণই আমাদেরকে দারোয়ান ডেকে বের করে দেবে কিনা!!!
তবে আমি মনে মনে দারোয়ান আসার অপেক্ষায় থাকলাম। চিন্তা করছিলাম, এই দৃশ্যটা কেমন হবে, দারোয়ান এসে ঘাড় ধরে আমাদের বের করে দিচ্ছে। চিন্তা করেই নিজের মধ্যে খুবই পুলকিত অনুভব করলাম।

(চলবে)

এখান থেকে পড়ুন
১ম খণ্ড
২য় খণ্ড
৩য় খণ্ড
৪র্থ খণ্ড
৫ম খণ্ড

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৬ রাত ১:০৬

শরীফ শাওন বলেছেন: খুব ভালো লিখেন আপনি

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১১

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: দুঃখিত দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য।
অনেক ধন্যবাদ

২| ২২ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৯:০৫

মিঃ অলিম্পিক বলেছেন: এক বসাতেই সব পর্ব শেষ। বাকী পর্ব কই??
অনেক সুন্দর লাগলো।।।
শুভ কামনা রইলো।

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:০৪

ইকবাল হোসাইন সুমন বলেছেন: দুঃখিত দেরিতে উত্তর দেয়ার জন্য।
১০ পর্বে শেষ করার ইচ্ছে ছিল। ৭ম পর্ব পর্যন্ত গড়িয়েছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.