নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ইমরানন

কিছু কথা থাকনা গোপন..... https://www.facebook.com/imran.hossain.aamir

ইমরানন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সিনেমা রিভিউ- A Clockwork Orange- আ ব্লাডি মাস্টারপিস

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২






"ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জ" কি ? উপন্যাসের নামে-ই পরিচালক সিনেমার নামকরণ করেন । কিন্তু এরূপ নামকরণের কারণ কি ? এখানে লেখক বেশ কিছু সাংকেতিক ভাষা্র মাধ্যমে উপন্যাসের নামকরণ করেছেন । এখানে "ক্লক" আর "ওরেঞ্জ" দিয়ে লেখক মূলত মেশিন আর মানুষকে চিহ্নিত করেছেন, যেখানে "ক্লক" বলতে আমরা স্বাভাবিক ভাবে যেই বস্তুকে বুঝি লেখক সেটাই বুঝিয়েছেন কিন্তু আসল পয়েন্ট ছিলো "ওরেঞ্জ" নিয়ে । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে লেখক লন্ডনে ফিরে আসলেও মালেশিয়ার স্বভাব বৈশিষ্ট্য লেখকের মাঝে থেকে-ই যায় । মালে ভাষায় (মালেশিয়ার ভাষাকে মালে বলা হয়) ornag বলতে "মানুষ"কে বোঝায় আর যেহেতু অ্যান্থনি বার্জেস একজন সাহিত্যিক মানুষ তার উপন্যাসের শিরোনামেও সাহিত্যের নিদর্শন রেখে গেছেন । সাহিত্যের মাধ্যমে-ই ornagকে "Orange" রূপান্তর করে দিয়েছেন । "আ ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জের" মানে দাঁড়ায় মানুষকে মেশিনে রুপান্তর । এই ছিলো সিনেমার এরূপ নামকরণের ইতিহাস । বিশ্লেষণ করলে হয়তো আরো বহু যৌক্তিক ব্যাখ্যা আমরা পাবো এই নামকরণের পেছনে ।



দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগ থেকে-ই অ্যান্থনি বার্জেস পুরো পরিবার নিয়ে মালেশিয়ায় অবস্থান করছিলেন বহুবছর, এরপর তিনি লন্ডন ফিরে আসেন, লন্ডনে আসার কিছুদিন পর তার স্ত্রী চারজন আমেরিকান মিলিটারির হাতে মারাত্মকভাবে নির্যাতিত হন । এই ঘটনাটি বার্জেসের মনে গভীরভাবে দাগ টানে, মনের ক্ষতকে মেটানোর জন্য ১৯৬২ সালে রচনা করেন "আ ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জ" যার উপর ভিত্তি করে ১৯৭১সালে কুবরিক এই সিনেমাটি নির্মান করেন । যদিও মূল বইটি ছিলো তিন খন্ডে বিভক্ত, মোট একুশটি অধ্যায় নিয়ে এই বই রচিত হয়েছিলো যার প্রতিটি খন্ডে ছিলো সাতটি করে অধ্যায় । এখানে লেখক একুশটি অধ্যায়কে মানব জীবনের প্রথম একুশ বছরকে বুঝিয়েছেন । এই একুশ বছরের গুরুত্ব/তাৎপর্য-ই ছিলো এই উপন্যাসের মূল বক্তব্য , কারণ এই ২১ বছরকে মানুষের পরিপূর্ণতা অর্জনের ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক বিবেচনা করা হয়। কিন্তু সিনেমা নির্মানের ক্ষেত্রে কুবরিক ২১তম অধ্যায়কে বাদ দিয়ে দেন, বাদ দেওয়ার পেছনে অন্যতম একটি কারণ ছিলো ১৯৮৬ সালের আগে এই উপন্যাসের মার্কিন সংস্করণে ২১তম অধ্যায়কে বাদ দেওয়া হয় আর কুবরিক সিনেমাটি নির্মান করেন মার্কিন সংস্করণের আদলে । ফলপ্রসূ, বার্জেস ব্যাপাটি ইতিবাচক হিসেবে নিতে পারেননি, মার্কিন সংস্করনের আদলে সিনেমাটি নির্মিত হওয়ার অসন্তোষ প্রকাশ করেন , যদিও পরবর্তীতে সিনেমার নির্মান কৌশলী দেখে খুব প্রশংসা করেছেন ।



সেন্সর বোর্ডের চাপে পড়ে সিনেমা মুক্তির সাথে সাথে-ই এর উপর ছুরি চালনা করেন নির্মাতা নিজে-ই, ফলে সিনেমাটি "এক্স" রেটিং-এর হাত থেকে রক্ষা পায় । "এক্স" রেটিং-এর হাত থেকে রক্ষা পেলেও পুনঃমুক্তির সময় "আর" রেটিং-এ ভূষিত করা হয়, যদিও এখন সিনেমাটির উপর "এক্স" রেটিং-এর তকমা লেগে আছে ।

মাত্রাতিরিক্ত ভায়োলেন্সের কারণে অনেক নামী-দামী সমালোচক গোষ্ঠিও এই সিনেমাকে নিতে পারেননি । অনেক সমালোচক নেতিবাচক রিভিউ দিয়েছেন এই সিনেমাকে । তারা যেভাবে সিনেমাটি বিচার করেছেন আমার মনে হয় না পরিচালক সিনেমাটি ঐভাবে প্রেজেন্ট করেছেন, এখানে সিনেমার মূল প্রটাগনিস্ট "এলেক্স"কে প্রেজেন্ট করা হয়েছে একজন অপরাধ প্রবণ টিনেজ হিসেবে , কিন্তু সমালোচকগণ মনে করেছেন এখানে এলেক্সের চরিত্রটি পরিচালক নিজের মতো করে ক্রিয়েট করেছেন , যেখানে সিনেমা শেষে তাকে তার আসলে চরিত্রে-ই ফিরতে দেখা যায় । এখানে আরো একটি ব্যাপার লক্ষ্য করা উচিত যে উপন্যাসের শেষ অধ্যায় অর্থ্যাৎ ২১তম অধ্যায়টি স্ক্রিপ্টে ছিলো না, এখানে পরিচালক অন্যভাবে সমাপ্তি টানার চেষ্টা করেছেন, ঠিক এই ব্যাপারটি-ই অনেক সমালোচকদের চোখে কাটা হয়ে দাঁড়ায়, এরজন্য কোনো সমালোচক-ই সিনেমার রচয়িতাকে দায়ি করছেন না ।



সংগীত,বিশৃঙ্খল জীবন-যাপন আর উশৃঙ্খল সহচরের সমন্ময়ে গঠিত এলেক্সের গ্যাং , যাদের প্রধান কর্ম-ই ছিলো অপকর্ম সাধনে নিজেদের ব্যস্ত রাখা । চুরি-ডাকাতি-ধর্ষণ সহ সকলপ্রকার নিকৃষ্ট কাজ তারা করে বেড়াতো । এভাবে অপকর্মের এক পর্যায়ে শুরু হয় দলীয় কোন্দল । একদিন ঘটনাক্রমে এলেক্স একজন মহিলাকে হত্যা করে ফেলে , এই সুযোগে এলেক্সের বাকি সঙ্গীরা এলেক্সকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেয় । এরপর থেকে-ই শুরু হয় এলেক্সের নারকীয় বন্দি জীবন । এখানে "লুডোভিক" প্রক্রিয়ায় এলেক্সকে ট্রিটমেন্ট দেওয়া হয়, যার ফলাফল এলেক্সের জীবনকে আরো দুর্বিষহ করে তুলে । খারাপ কাজ করার মেন্টালিটির উপর কাজ করা প্রক্রিয়া-ই হলো মূলত "লুডোভিক ট্রিটমেন্ট" আরো সহজ ভাষায় বলতে গেলে একে বলা যেতে পারে "ব্রেইনওয়াশ ট্রিটমেন্ট" । এই প্রক্রিয়ায় কোনো প্রকার বল প্রয়োগ ছাড়া-ই রোগী খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকবে, কিন্তু ট্রিটমেন্টের প্রাথমিক পর্যায় খুব-ই ভয়াবহ । চিকিৎসা শেষে এলেক্সকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়ার পর এলেক্সের মানসিক অবস্থা আরো খারাপ হয়ে পড়ে । কিশোর থাকাকালীন সময় এলেক্স যাদের উপর নির্যাতন করেছে তারা এলেক্সকে পেয়ে বসে, দাগী আসামীর তকমার কারণে সমাজেও ঐভাবে কারো সাথে মিশতে পারে না এলেক্স এভাবে-ই ফুটে উঠে একজন "ক্লকওয়ার্ক অরেঞ্জ"এর শেষ পরিনতির চিত্র ।



কুবরিক যদি আ স্পেস অডিসী নির্মান না করতেন তাহলে নির্দ্বিধায় বলে ফেলতাম "আ ক্লকওয়ার্ক ওরেঞ্জ" কুবরিকের সেরা সৃষ্টি । এটি ছিলো কুবরিকের প্রথম সোলো(একক) স্ক্রিনপ্লে । সিনেমার মূল গল্পের সাথে কুব্রিকের স্ক্রিনপ্লে সিনেমাকে অন্য পর্যায়ে নিয়ে গেছে , সিনেমার প্রথম দৃশ্যে ধীরে ধীরে জুম আউট হয়ে পুরো সেটকে ফ্রেমে বেধে ফেলার দৃশ্য এখনও চোখে লেগেছে আছে, প্রতিটা চরিত্রের ডেভলপমেন্ট নিখুতভাবে দেখানো হয়েছে । মূল প্রটাগনিস্টে্দের মেকাপ বলে দিয়েছে তার চরিত্রের বর্নণা , যে মানুষ লাইফের গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় শুধু ক্যামেরা নিয়ে কাজ করেছেন তার সিনেমায় ক্যামেরার কাজ কেমন হবে তা বলাবাহুল্য । পারফরমেন্সের বিচারে সবাই ভালো করলেও পুরো সিনেমা জুড়ে দুইজনের অভিনয়ের কথা ভোলার মতন না তাদের একজন ম্যালকম ম্যাকডাওয়েল । সিনেমা নির্মাণের সময় তার বয়স ছিলো ২৭বছর কিন্তু মূল গল্পে এলেক্সের বয়স ১৫বছরের মতন, এখানে-ই ম্যালকম ম্যাকডাওয়েল শতভাগ সফল হয়েছেন । তার বাচন ভঙ্গি থেকে শুরু করে দুরন্তপনা সবকিছু-ই একজন টিনেজারের কথা মনে করিয়ে দিবে । ট্রিটমেন্টের কিছু দৃশ্যে তার এক্সপ্রেশন দেখে ট্রিটমেন্টের ভয়াবহতা আচ করে শরীর শিহরিত হয়ে যায় । অন্য আরেকটি চরিত্র যার অভিনয় ছিলো মার্ক করে রাখার মতন তিনি হলেন Michael Gover, বদরাগী প্রিজন গভর্নর হিসেবে তাকে কাস্ট করা হয়েছে যদিও তার স্ক্রিন টাইম খুব একটা ছিলো না, সাথে তার ডায়ালগ ছিলো দু'চার লাইনের কিন্তু তার ৫/৬মিনিটের স্ক্রিনিং-এ অভিনয় ছিলো দেখার মতন ।



এতো বিতর্কের পরও এটি ছিলো ১৯৭১সালের সব'চে ব্যবসা সফল সিনেমা । অ্যামেরিকান ফিল্ম ইনস্টিটিউট এখন পর্যন্ত যতোবার একশটি সেরা সিনেমা নির্বাচিত করেছে প্রতিবার এই সিনেমা ঈর্ষনীয় স্থান দখল করেছে । অনেকে-ই মনে করেন এই সিনেমাটি UK তে ব্যান করা হয়েছে কিন্তু সত্য ঘটনা হচ্ছে কুবরিক নিজে-ই সিনেমাটি ইংল্যান্ড থেকে উঠিয়ে নিতে অনুরোধ করেছেন ওয়ার্নার ব্রাদার্স স্টুডিওকে । কারণ দুটি বাস্তব পৃথক ঘটনা এই সিনেমায় ইনক্লুড করা হয় ফলে কুবরিক ও তার পরিবারের উপর হত্যার হুমকি আসতে থাকে ।

যারা ফ্যামিলী নিয়ে সিনেমা দেখে অভ্যস্ত, দয়া করে তারা এই সিনেমা দেখবেন না, কারণ নির্মাতা এই সিনেমার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ ইংল্যান্ডের অবস্থান তুলে ধরেছে্‌ যেখানে আছে অতিরিক্ত ভায়োলেন্স সাথে অশ্লীল যৌনসংসর্গের সরাসরি দৃশ্য দেখানো হয়েছে ।



সিনেমার একটি ব্যাপার খুব মনে ধরেছে, আর তা হলো, সিনেমার শুরুতে এলেক্স মূল আকর্ষণ ধ্রুপদী সঙ্গীত (বিশেষত বেটোফেন) বলতে-ই পাগল ছিলো কিন্তু শেষে এসে সেই বিটোভেনের সুরে-ই তাকে টর্চার করা , ব্যাপারটা দাঁড়ায় কাটা দিয়ে কাটা তোলার মতন ।
পরিশেষে বলবো, মাস্টার-ক্লাস এই সিনেমাটি সবাই দেখবেন , আশা করি একা দেখবেন ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৩০

সাদী ফেরদৌস বলেছেন: ছবিটি দেখা হয়নি , দেখবো ।
রিভিউ ভালো লেগেছে । লেখক কে ধন্যবাদ ।

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ সন্ধ্যা ৭:৪৫

ইমরানন বলেছেন: কষ্ট করে মূল্যায়নের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ । দেখে ফেলেন, সময় বৃথা যাবে না ।

২| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৭

হাসান মাহবুব বলেছেন: রিভিউ খুব ভালো হৈসে। Viddy well, little brother. Viddy well ;)

২২ শে আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

ইমরানন বলেছেন: বেশ কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম সিনেমাটি নিয়ে কিছু লিখবো তাই কালকে ছুটি পাওয়ায় কি-বোর্ড নিয়ে বসে পড়লাম । মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.