নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জীবনে চলার পথের অভিজ্ঞতা নিয়ে কথা বলতে চাই ।

আমি শঙ্খচিল

জীবন যুদ্ধে পরাজিত সৈনিক

আমি শঙ্খচিল › বিস্তারিত পোস্টঃ

পারশপরিক বাস্তবতা (চরিত্র, নাম গুলি কাল্পনিক)

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৮

সকালে ভার্সিটির সামনে দাড়িয়ে আছে নাবিল , চোখে সানগ্লাস হাতে স্মার্টফোন , কিছুক্ষণ আগে এক মেয়ের সাথে কথা বলছিল নাবিল, নতুন পটিয়েছে । দেখতে সে রকম সুদর্শন নয় নাবিল, কিন্তু লম্বা এবং নিয়মিত জিম করে । মেয়েদের কাছে হ্যান্ডসাম । মেয়ে পটাতেও ওস্তাদ নাবিল । দু তিনটা গার্লফ্রেন্ড সবসময়ই থাকে তার । অপেক্ষা করছে বন্ধু রবিন এর জন্য ।

সকালে উঠতে দেরি করে ফেলেছে রবিন । আজকে ভার্সিটিতে কুইজ আছে কিছুক্ষণ আগে বন্ধু নাবিল ফোন করেছিল । বাস কাউনটার এ এসে দেখে বাসে দাড়ানোর জায়গাও নেই , কি করবে শেষ মেষ বাস এর গেট ধরে ঝুলতেই বাস ছেড়ে দিল । রবিন তার বন্ধু নাবিলের মত নয় , লিকলিকে শরীর , দেখতে কিছুটা ফর্সা । পড়াশুনায় মুটামুটি ভাল রবিন। গার্লফ্রেন্ড নেই রবিনের , থাকবেই বা কি করে , মেয়েদের সাথে কথা বারতায় খুব একটা পটু নয় সে । বন্ধু নাবিল এর কথা ভাবলে মাঝে মাঝে অবাক ই হয় রবিন , এত সহজে ও মেয়েদের পটায় কি করে !! গার্লফ্রেন্ড নেই বলে বন্ধুদের কাছে মাঝে মাঝে হাসির পাত্র ও হতে হয় রবিন কে । দুইজন দুই রকম চরিত্রের হলেও নাবিল - রবিন ভাল বন্ধু । সব জায়গায় ঘুরা ঘুরি, সবকিছুতে দুই বন্ধু একসাথে থাকে ।

সফল একজন ব্যাবসায়ি কামড়ান সাহেব , নিজের একটা অফিস আছে , টাকা পয়সার দিক থেকে সচ্ছল । নিজের টয়োটা গাড়ি ড্রাইভ করছিলেন আর সিগারেট খাচ্ছিলেন কামড়ান সাহেব । অফিস যাচ্ছেন কাজের তাড়া আছে । সংসার জীবনে সুখী নন কামড়ান সাহেব । বউ এর সাথে বনিবনা হয় না , প্রতিদিনই বউএর সাথে ঝগড়া ঝাটি লেগেই থাকে । গত রাতে বউকে ধরে পিটিয়েছেন । এক বাচ্চার বাবা তিনি, বাচ্চা ছেলেটার উপর কি প্রভাব পরবে কিছুই চিন্তা করছেন না ।

নাবিলের ফোন ব্যাস্ত পেয়ে বিরক্ত হয় শিলা । নাবিলের গার্লফ্রেন্ড সে , কিন্তু নাবিলের সাথে পেরে উঠে না শিলা , কোন না কোন ভাবে নাবিল তাকে ফাকি দিয়ে হারিয়ে যায় । দু বছরের রিলেশন অনেক চেষ্টা করে ধরে রেখেছে শিলা, নাবিলকে তার ভাল লাগে ।দু বছরের রিলেশনে কয়েকবার শারীরিক সম্পর্ক ও করেছে সে নাবিলের সাথে । নাবিলকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে শিলা । আজকে বিকালে নাবিল কে নিয়ে ঘুরতে যেতে চায় শিলা । আবার ফোন দেয় শিলা , কিন্তু ফোন বিজি ।

নাবিলের মেজাজটা কিছুটা খারাপ, রবিনটা আসতে এত দেরি করছে কেন ? পড়াশুনা খুব একটা ভাল পারেনা নাবিল , পুরাপুরি রবিন এর উপর নির্ভর করে । ওর থেকে পড়া বুঝেই আজকের পরিক্ষায় পাশ করতে হবে , কিন্তু রবিন দেরি করলে ত মহা বিপদ হয়ে যাবে । নিজের বোনের কথা চিন্তা করে খুবই মন খারাপ হয় নাবিলের । বোনের সংসারের ব্যাপারে জানে সে । জানে তার দুলাভাই তার বোনকে পেটায় । হারামজাদাকে ভাল একটা শিক্ষা দিবে নাবিল , পারলে আজকেই । সাথে রবিনকেও রাখতে হবে । রবিনকে আসতে দেখে জানে পানি আসে নাবিলের । "কিরে এত দেরি করলি কেন ?? " নাবিল জিজ্ঞেস করে । " আর বলিশ না , রাস্তায় জ্যাম , বাসে ঝুলতে ঝুলতে এলাম " , রবিন বলে । " দোস্ত আজকের কুইজে কিন্তু আমকে হেল্প করতে হবে , কিছুই পারি না " , নাবিল বলে । রবিন হেসে উত্তর দেয় " আরে টেনসন নিস না , চল ক্লাস এ, তোকে দেখিয়ে দেব " । নাবিল রবিনের কানে কানে বলে " আজকে সন্ধ্যায় রেডি থাকিস, একজনকে পেটাব । " রবিন জিজ্ঞেস করে " আবার কাকে পিটাবি ?? কোন ঝামেলা হলে " । " কোন ঝামেলা হবে না , তুই টেনসন নিস না, সব আমি সামলাব তুই সুধু ব্যাকআপ দিবি " , বলে নাবিল ।

মিলি ওর ছেলেটাকে আদর করতে করতে অনেক কিছু ভাবে কিন্তু মেলাতে পারে না । সংসার জীবনে সুখ নেই তার , স্বামী তার গায়ে হাত তোলে , শুধু ছেলেটার মুখের দিকে চেয়ে সব কষ্ট সহ্য করছে মিলি । কিভাবে তার জীবনটা এত এলোমেলো হয়ে গেল ভেবে কান্না পায় তার । জীবনের বাস্তবতার কাছে নিজেকে অসহায় লাগে ।

সন্ধ্যার সময় এক গলিতে পড়ে আছেন কামড়ান সাহেব । মাথাটা বো বো করে ঘুরছে তার । অফিস থেকে বের হতে দেরি করেছেন । গলির সামনের দোকান থেকে একটা সিগারেট ধরিয়ে একটু দূরে যেয়ে দারাতেই কে জেনো পিছন থেকে জাপটে ধরে । এর পর শুরু হয় এলোপাথাড়ি কিল-ঘুষি । নাক ফেটে গ্যাছে , পেটে ব্যাথা , মাথা ভারি ভারি লাগছে । ভেবেছিলেন হয়ত ছিন্তাইকারি হবে , কিন্তু মোবাইল টাকা পয়সা কিছুই নেয়নি ডাকাতেরা,কোনও ছুরি দিয়ে কোপ ও মারেনি । সুধু বলে গ্যাছে মিলির গায়ে এর পর হাত উঠালে হাত ভেঙ্গে দিবে । ভয়ে আধ্মরা হয়ে আছেন , গায়ে জোর পাচ্ছেন না । মিলি কি তাহলে ডাকাত ভাড়া করলো তাকে পেটানোর জন্য, ওকে ত এই রকম মনে হয়নি তার । নাকি ওর কোনও সাবেক প্রেমিক ??

রাতে এক বাসার ছাদে বসে আছে নাবিল - রবিন । সিগারেট টানছে আর সারাদিন কি করলো না করলো তাই নিয়ে কথা বলছে ।
" কাজটা কি তুই ঠিক করলি ? " , রবিন জিজ্ঞেস করে । " হুম ?? কোনটা ?" শিলাকে ম্যাসেজ করতে করতে বলে নাবিল । " নিজের দুলাভাইকে ধরে পেটানোটা কি ঠিক হল ??" , রবিন । " আরে বেশি পেটালাম কই ? আর না পেটায় বা কি করতাম ,জানিস ই ত যে হারামজাদা আমার বোনকে পেটায় " , নাবিল । " মনে হয় এইবারের ট্রিটমেন্ট এ কাজ হয়ে যাবে " । " তুই আর তোর দুলাভাই দুই জন কিন্তু খুব আলাদা কিছু না এটা জানিস ", রবিন বলে । " ধুর, কি বলিস না বলিস " , নাবিল বিরক্ত । " তুই মেয়ে মানুষ নিয়ে খেলিস , আর অই বেটা তার বউ পেটায় , তোদের দুই জনের কাজ আলাদা হতে পারে কিন্তু ঘুরে ফিরে কিন্তু বেপার একই " , রবিন । রবিনের কথা গুলি শোনে আর সিগারেট টানে নাবিল । রাতে সুন্দর বাতাস ছেড়েছে , আকাশে অনেক তারা । এগুলি দেখতে দেখতে নাবিল ভাবে , রবিন কথাটা খারাপ বলেনি । ভাবে তার জীবনের কথা , নিজের চরিত্রের কাছে সে অসহায় , নিজের বোনের অসহায় জীবনের কাছেও সে অসহায় ।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.