নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঘামের কালিতে হৃদয়ের কোরা কাগজে লিখি শ্রম সাহিত্য

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু

আমি একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী ,সাইট ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ২০০৮ সাল থেকে সিঙ্গাপুরে এস-পাশ নিয়ে কাজ করছি। এর পূর্বে ১৯৯৭ থেকে ২০০৮ সাল ছিলাম সৌদি আরবের বিভিন্ন স্থানে। লেখালেখি শখ,শখের সংবাদ প্রতিনিধিও বটে.ফ্রিল্যান্স। ছোটবেলা থকে মঞ্চে নাটক করতাম।নাটক লিখতাম।নব্বইয়ের দশকে পথ নাটক আর বেইলি রোড ,গাইড হাউস সহ নানা মঞ্চে অভিনয় করেছি। পরিচালনাও করেছি।সৌদি আরবেও একাধিক নাটক ও শতাধিক অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেছি। তবে সাহিত্য জগতে পরিচিতি বিকাশ সিঙ্গাপুরে বাংলার কন্ঠ পত্রিকার মাধ্যমে।আন্তর্জাতিক রাইটার্স ফেস্টিভাল ,শ্রম ও প্রেমের কবিতা সহ বহুজাতিক সাহিত্য অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছি বাংলার কন্ঠের সাথে জড়িত থাকার সুবাদে হয়েছে.২০০০ সালে সৌদিতে একটি বই করেছিলাম কম্পিউটার প্রিন্টে। কবিতার বই ,নাম ছিল মরুমায়া।তা সংরক্ষণে নেই.২০১৫ সালে কবি গ্রন্থ \"প্রবাস থেকে বলছি,২০১৬ সালে উপন্যাস \"বন্ধু তুমি সায়াহ্নে,দুটি কাব্য গ্রন্থ একশো আশি ডিগ্রী ও কষ্ট বিলাস প্রকাশিত হয়েছে। ২০১১ সাল থেকে বাংলার কন্ঠের বিভাগীয় সম্পাদক,নিয়মিত ফিচার ,গল্প ,কবিতা ,উপন্যাস লিখছি, কবিতা হাজার ছাড়িয়েছে বহু পূর্বে।আর এখন অনলাইনে হরমেশাই লিখি,ফেসবুকতো আছেই। নিয়মিত মঞ্চ নাটক লিখছি,পরিচালনা,অভিনয় চলছে অবসরে প্রবাসের মাটিতে বাংলাদেশের সাহিত্য সংস্কৃতি নিয়ে বিদেশীদের কাচ্ছে তুলে ধরি লালা সবুজের রক্তাক্ত ইতিহাস,রক্ত স্নাত একুশের ইতিহাস,বাংলার অহংকার ঐতিহ্য় রক্ষায় দৃড় প্রতিজ্ঞ নিজেই নিজের কাছে। বাংলার কন্ঠ সাহিত্য পরিষদ ,প্রবাসী সাংবাদিক সমিতি (প্রসাস) এর সাধারণ সম্পাদক ,সিঙ্গাপুরে।এছাড়া যৌতুক প্রতিরোধ আন্দোলন,বাংলাদেশ,বাংলাদেশ কবি পরিষদ,অনুশীলন সাহিত্য পরিষদ,অনলাইন গ্রুপ এসোসিয়েশন সহ নানা সংগঠনের সাথে যুক্ত আছি. সাহিত্যের পড়াশুনা নেই,তবু ও মনে যা আসে তাই বিভিন্ন চকে ফেলে লিখি।কখন কবিতা,গল্প,উপন্যাস হয়ে যায়,বেশির ভাগ সমসাময়িক লিখি। দুই কন্যা আর স্ত্রী আছে সেই সাথে একান্ন বর্তী পরিবার। প্রবাসীর আর তেমন কিছু নেই। শ্রমিক,শ্রম সাহিত্য,প্রবাসে শ্রম প্রতিভা নিয়ে কাজের অবসরে সময় কাটাই। ধন্যবাদ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু ১৪-৫-২০১৬ ইং

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু › বিস্তারিত পোস্টঃ

আব্বু ,চলে এসো

২২ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৯:৪৭


(ঈদের সকালে একুশ শিশুতোষ গল্প )

আব্বু ,চলে এসো

মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বাবু

নামাজ পড়ে সবাই ঘুমিয়ে আছে.শীতের সকাল। ঘুম কাতুরে মিম আজ ঘুমায়নি। আজ তার মন ভালো নেই। ওয়ার ড্রবের ড্রয়ার খুলে পুরানো সব এলবাম বের করে। ড্রিম লাইটের আলোতে একের পর এক ছবি দেখে দু চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। হটাত শব্দ করে কেঁদে উঠে। মিমের মা মশারি থেকে দেখে মেয়ে তার কাঁদছে। কাছে এসে বুকে টেনে নেয়। জানতে চায় কি হয়েছে ,আম্মু স্বপ্ন দেখেছো। ফুফিয়ে কাঁদছিল মিম. শুধু হাতের ইশারায় একটি ছবির এলবামের দিকে ইশারা করে। মায়ের বুঝতে অসুবিধা হয় না। মেয়ে বাবার জন্য কাদছিল।
মিম এবার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। ভালো ছাত্রী। কবিতা। গান ,ইসলামী সঙ্গীত সব কিছুতেই পারদর্শি। ছোট বেলা থেকে মঞ্চে উঠে সে. কোরান তেলাওয়াতে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রথম হয়েছিল।চতুর্থ শ্রেণীতে থাকতে বাবাকে নিয়ে কবিতাও লিখেছে।ফোনে বাবাকে গান শোনায়। আসে পাশের খোজ খবর থেকে সব খবর বাবাকে শেয়ার করে। বাবা কখন ময়না পাখি,তোতা পাখি বলে ডাকেন।চাঁদের বুড়ি ও বলেন। শাসন নিয়ে মান অভিমান মায়ের সাথে লেগেই থাকে। কিছু হলেই বাবার কাছে নালিশের ভয় দেখায় তার মাকে। রাগ হলে নাক ফুলিয়ে কাঁদে। দাদা দাদু আশ পড়শী সবার আদরের মিম। চাচা ফুফা ফুফি সবাই আদর করে. তবু কেন মিম বাবার বুকে ঘুমোতে চায়. মাঝে মাঝে উদাসী হয় এই ছোট্ট বয়সে।
পড়াতে মন নেই ,খাবারে অনীহা। বাবার ফোন পেলেই আনন্দে খুশিতে নেচে উঠে মন. ঈদের সকালে একা দাড়িয়ে থাকে জানালায়। আসে পাশের সব ঘরে উঁকি দেয়। বাবার সাথে মেয়েদের আনন্দ দেখে। আনমোনা মিমকে দেখে পাশে এসে দাড়ায় ছোট বোন মৌ। সে তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে। চোখ ছল ছল দেখে মায়া লাগে মিমের।চোখ মুছে দেয়। বুঝতে পারে ,ছোট বোন ও মিস করছে বাবাকে। মৌকে নিয়ে যায় ড্রেসিং টেবিলে ,চুরি পড়ায় ,নতুন জামা পরিয়ে ,চুলে ঝুটি করে। নিজেও জামা পরে। কাউকে কিছু বুজতে না দিয়ে ,দু বোন্ হাটতে থাকে। যেখানে গত ছুটিতে বাবার সাথে ঘুরেছিলো। কলেজ রোড ,শহীদ মিনার।গ্রামের মেঠো পথ।
কলেজের শহীদ মিনারের সামনে দাড়ায়। মৌ উঠতে চায় বেদিতে। মিম বারণ করে।
মৌ জানতে চায় ,উপরে উঠলে কি হয় আপু ?
মিম বলে , ভুলে গেছ মৌ ,গত ছুটিতে আব্বু যখন এসেছিলো কি বলেছিলো ?
কি আপু ,তুমি জানো আমার মনে থাকে না কিছু।
বলছি শোন , আব্বু বলছে , এটি আমাদের ভাষা শহীদদের স্মৃতির জন্য।দেখতে ইটের পাথরের লোহা লক্করের মনে হয় , অনেকে দেব দেবীর সাথে তুলনা করে। আব্বু বলেছে তোমরা দেব দেবী নয় , একটি স্মৃতি স্তম্ভ ভাববে। জানো এক সময় এ দেশ বাংলাদেশ ছিলো না ,ছিল পূর্ব পাকিস্তান নাম, সে গল্প ও আব্বু বলেছে। তবে আজ সে গল্প, সরি সরি গল্প নয় মুক্তি যুদ্ধের ইতিহাস। পরে বলব।
এই শহীদ মিনার আমাদের ভাষা শহীদদের স্মৃতির জন্য।প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী এলে আমরা ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাই সালাম বরকত ,রফিক ,জব্বার ,আসাদ সহ যারা শহীদ হয়েছে তাদের জন্যে।
শহীদ কি আপু ,শহীদ হচ্ছে যারা দেশের জন্য,ধর্মের জন্যে জীবন দেয়.তারা।
আপু এতো জন কে মেরে ফেলেছে।
হ্যা শোন , তখন ১৯৫২ সাল ,আমাদের মায়ের ভাষা বাংলা হলেও পাকিস্থান সরকার বলে ,আমাদের উর্দুতে কথা বলতে হবে। আচ্ছা মৌ বলতো ,আমাকে আপু ডাকতে ভালো লাগবে নাকি সিস্টার।
মৌ জবাব দেয় ,আপু ,
হ্যা ,এজন্য সে সময় আমাদের দেশের শিক্ষিত লোক জন,বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিক্ষক,কৃষক মুজুর সবাই বলে ,না ,আমরা অন্যের ভাষায় কথা বলবো না ,এই নিয়ে সে সময় জিন্নাহ যে ঘোষণা দেয় তার প্রতিবাদ করে আমাদের দেশের মানুষ।
অপু জিন্নাহ কে,
জিন্নাহ মনে হয় তখন এ দেশের প্রধান মন্ত্রী বা ক্ষমতাই ছিলেন। সে যাই হোক , এ ভাবে আসল একুশে ফেব্রুয়ারী , সবাই মিছিল নিয়ে রাস্তায় আসে. সরকারের নিষেধ অমান্য করে। মিছিলে গুলি চালায় পাকিস্তান সরকার,
শহীদ হয় ,সালাম বরকত ,রফিক ,জব্বার ,আসাদ।
মৌ ভয় কাতুরে গলায় বলে ,আহহারে, শহীদ মানে অন্য লোকে মেরে ফেলা তাই না আপু, ওরা এত্ত খারাপ।
তার পর বাংলা ভাষা স্বীকৃতি পায়। মানে আমরা এখন বাংলায় কথা বলতে পারছি। এ জন্য আমরা ফুল দিয়ে শহীদদের শ্রদ্ধা জানাই।
আপু দেখ দেখ ,কুকুরটা শহীদ মিনারে সি সি করে দিয়েছে, তা হলে, এক দিন ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে কি লাভ ,আপু।
মন খারাপ হয়ে যায় মিমের। কলেজের মাঝ দিয়ে রাস্তা। একটু পর পর ,মটরসাইকেল যাচ্ছে।কলেজের রাস্তায় মোড় গুলো কি ভয়ঙ্কর ! মানুষ সরে দাড়াবে সে জায়গা টুকু নেই। বাড়ির পাশে কলেজ ,মাঠ, মনে হয় নিজের বাড়ির আঙ্গিনা।মূল ভবনের সামনে আসতেই মিমের দু চোখ আবার অশ্রুতে ভরে যায়,
মৌ দেখে ,জানতে চায় ,আপু তুমি কেন কাঁদছ,
মৌ তুই ভুলে গেছিস ,গত ছুটিতে আব্বু এখানে দাড়িয়ে আমায় কোলে নিয়ে ছবি তুলেছিল।
না ,মনে নেই আপু, তুমি জানো ,আমি ভুলে যাই ।
বাড়ির দিকে ফিরে চলে ,দুই বোন ,শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে যেতে যেতে মিমের চোখ চলে যায়, শহীদ মিনারে। দেখে কুকুর শুয়ে আছে। ইচ্ছে করে তাড়িয়ে দেয়.কিন্তু সে কুকুরকে ভয় পায়। মনে মনে ভাবে ,ইস যদি আব্বু থাকতো ? নিশচয় কুকুরটাকে তাড়িয়ে দিতো।
ছোট মনে প্রশ্ন খেলা করে , আচ্ছা শহীদ মিনার কি বদ্ধ করে তালা দিয়ে রাখা যায় না?তাহলে তো আর মানুষ জুতা পায়ে উঠতো না,কুকুর এসে নোংরা করতো না.
ঈদের নামাজ শেষে দাদা, চাচা ফিরে এসেছে ঘরে , নিজেদের কক্ষে প্রবেশ করে দেখতে পায়, তার মা জানালা দিয়ে তাকিয়ে আছে ,সবুজে মাঠের দিকে,বৃষ্টিও হচ্ছে ,মায়ের পাশে এসে দাড়ায় দু 'বোন। চোখ মোছে ওদের মা। মিমের বুঝতে অসুবিধা হয়না। ঘরে এক জন মানুষ অনুপস্থিত, সে তার বাবা ,সে এক জন প্রবাসী ।
মিমের অনেক কষ্ট হয় ,যখন দেখে তার বাবা নেই ,ঘরে ভালো রান্না হয়,আনন্দ হয়। সে বুঝে না ,মানুষের জীবন ব ড়ই বিচিত্র ময়। কারো জন্যে কিছু থেমে থাকে না। থাকতে পারে না. কচি মন বার বার উদাসী হয়। বাবর লেখা গান গুন গুন করে গায় ,ওরে ও উদাসী পাখি উদাস কেন তুই. ঈদের আনন্দ শেষ হয়ে গেছে। হঠাত অসুস্থ হয় মিম। ছুটি নিয়ে চলে আসে. এসে দেখে বাড়ি শুন্য। চাচি একা। ছোট বাবুর জ্বর তাকে নিয়ে ব্যস্ত। দাদী গেছে তার বাবার বাড়ি, দাদা বাজারে , চাচ্চু বাইরে ,মৌ স্কুলে, মা পুল শিক্ষক, বাড়িতে নেই। পুরো বাড়ি শুন্য। মোবাইল বেজে উঠে। এ ঘর, ও ঘর খোজে বের করে মোবাইল ,এটি তার দাদুর মোবাইল , নাম্বার দেখে ,বুঝতে পারে ,আব্বু ফোন করেছে ,
হ্যালো ,আব্বু বলে কেঁদে উঠে মিম,
ও পাশ থেকে মিম ,কি হয়েছে ,মিম ,কথা বল মা , কথা বল ,কাঁদছিস কেন ? কি হয়েছে তোর্ ? মা ,মিম কথা বল ,
মিম কান্না জড়িত কন্ঠে বলে ,আব্বু তুমি চলে আসতে পারো না , চলে এস না প্লিজ , মিস ইউ আব্বু ,মিস ইউ। আব্বু ,চলে এসো !
সিঙ্গাপুর,

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.