নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাকে কেবলই পিছুটানে!!

কামরুন নাহার বীথি

আমি কিছুটা ভ্রমণবিলাসী আর ফুলের প্রতি আছে আমার আজন্ম ভালোবাসা

কামরুন নাহার বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের কাশ্মীর দেখা! (পর্ব-১)

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৯

টিউলিপ গার্ডেন।



২০১৯ এর এপ্রিল মাসে ঠিক করলাম ইন্ডিয়া যাবো। এবার যাবোটা কোথায়! আমাদের দু'জনেরই সিদ্ধান্ত কাশ্মীর দেখতে যাবো, বিশেষ করে আমার। কারণ এপ্রিল মাসে শ্রীনগরের টিউলিপ বাগান দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেয়া হয়। বাসার কাউকে বলিনি কাশ্মীর যাবার কথা, কারণ কেউ যেতে দিবে না। বলেছি," দিল্লি, আগ্রা ঘুরতে যাবো।" তার ওপরে ইন্ডিয়ায় তখন ইলেকশন চলছিলো। ইন্ডিয়ান এক বাঙালী বন্ধু বললেন,"এ সময়ে আসাটা আপনাদের ঠিক হচ্ছে না।" ধুর, কে শোনে কার কথা! আল্লাহ যা কপালে রেখেছেন, তা' হবেই।



কাশ্মীর পর্যটকদের স্বপ্নের নিকেতন। পীরপাঞ্জাল পর্বতশ্রেণি উপত্যকাকে সমতল থেকে বিচ্ছিন্ন করেছে। কাশ্মীর হিমালয়ান পর্বতমালার সবচেয়ে বড় উপত্যকা, কাশ্মীরকে বলা হয় ভূস্বর্গ। চারপাশে তুষারধবল শৃঙ্গরাজি মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এক অনন্য রূপ তৈরি করেছে। মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর কাশ্মীরকে প্রথম তুলনা করেছিলেন স্বর্গের সঙ্গে। মোঘল সম্রাটরা দিল্লীর গ্রীষ্মের তাপদাহ থেকে নিস্তার পেতে অবকাশ যাপনের জন্য ছুটে আসতেন কাশ্মীরে। চশমেশাহী, পরিমহল, শালিমার বাগ, নিশাত বাগ, ইত্যাদি তারই স্বাক্ষ্য বহন করছে। বর্তমানে সমস্ত পৃথিবী থেকেই ভ্রমণপিপাসু মানুষেরা ভূস্বর্গ কাশ্মীর দেখার জন্য প্রতিনিয়ত ছুটে আসেন এখানে।

ট্রাভেল এজেন্টের মাধ্যমে সব ঠিকঠাক হয়ে গেলো। প্লেনের টিকেট পেতে কিছুটা ঝামেলা হলো। ঢাকা-কলকাতা, কলকাতা-দিল্লি, দিল্লিতে রাত কাটিয়ে ভোরে শ্রীনগরের উদ্দেশে যাত্রা। দশ দিনের ট্যুর প্ল্যান আমাদের হাতে দেয়া হয়েছে।

এক সকালে পৌঁছে গেলাম শ্রীনগর এয়ারপোর্টে। প্লেন থেকেই দেখলাম কাস্মীরের অনেকাংশই বরফে ঢাকা। এয়ারপোর্টে কোন ঝামেলা না হলেও অনেকটা সময় চলে গেলো ফর্মালিটি সারতে। ইন্ডিয়ান ভিসা থাকলেও কাশ্মীরে অবস্থান করবার অনুমতি নিতে হলো সব পর্যটকেরই।

এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়ে পেলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত ড্রাইভার বিলালকে, যে আমাদের সাথে থাকবে কাশ্মীরে অবস্থানকালীন দিনগুলোতে। প্রথমেই সে আমাদের স্বাদরে বরণ করে নিলো। আমাদের হাতে দিলো কাশ্মীরের একটা মোবাইল সিমকার্ড। সেদিনের ট্যুরপ্ল্যান হলো প্রথমেই যাবো টিউলিপ গার্ডেন, সেখান থেকে ফিরে দুপুরের খাবার ডাল লেকের বোট হাউজে, একটু রেস্ট নিয়ে ডাল লেকে ঘোরাঘুরি করে রাতে বোট হাউজে থাকবো। পরদিন সকালে যাত্রা করবো গুলমার্গের উদ্দেশে।

যাত্রার শুরুতেই মনটা জুড়িয়ে গেলো। এয়ারপোর্টের চতুর্দিকেই ফুলে ফুলে সাজানো। শ্রীনগরের তাপমাত্রা তখন খুব চমৎকার, না শীত, না গরম। অল্পক্ষণেই পৌছে গেলাম ইন্দিরা গান্ধী মেমোরিয়াল টিউলিপ গার্ডেন এ। রাজধানী শ্রীনগরের জাবারওয়ান অঞ্চলের ফুটহিলসে অবস্থিত এ বাগান। এর পাশেই রয়েছে বিখ্যাত ডাল লেক। বাগানটি সিরাজবাগ নামে অধিক পরিচিত। এটিই এশিয়ার সর্বোবৃহৎ টিউলিপ বাগান।

বাগানের বেরোনোর গেইট প্রথমে পেলাম, ওখান থেকে অনেকটা হেঁটে ঢোকার গেইট পেলাম। আমার হাঁটতে বেশ কষ্টই হলো। টিকেট কেটে ভেতরে ঢুকতেই বিস্ময়ে অভিভূত আমি! পথের সব ক্লান্তি আমার কোথায় উবে গেলো! মনে হলো স্বপ্নের দেশে চলে এলাম! যা এতদিন ছবিতে, মুভিতে দেখেছি সেই রূপকথার রাজ্য এখন আমার সামনে! আমি হেঁটে বেড়াচ্ছি যেন কী এক স্বপ্নের ঘোরে! চারিদিকে লাখো বিচিত্র রঙের ফুল! কোনটা রেখে কোনটা দেখি!

১৫ হেক্টর বিস্তৃত এলাকাজুড়ে প্রায় ৫০ প্রজাতির ৩৫/ ৪০ লাখ টিউলিপ এখন ফুলে ফুলে স্বর্গের সৌন্দর্য ছড়িয়ে চলেছে। এপ্রিলের শুরু থেকেই শ্রীনগর ফুলের অরণ্যে পরিণত হয়। এই একটা মাসই খোলা থাকে টিউলিপ বাগান। এপ্রিল মাসই কাশ্মীরের উপত্যকায় টিউলিপ ফোটার উপযুক্ত সময়। এ সময় বিশাল বাগানের প্রায় সমস্ত সবুজ, নানা রঙের টিউলিপের চাদরে ঢাকা পড়ে যায়।
এরকম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের জন্যই কাস্মীরকে ভূ-স্বর্গই বলা হয়। বৃষ্টিতে টিউলিপ ফুলের অনেক ক্ষতি হয়। আমি থাকাকালীন বেশ ঝুম বৃষ্টি হলো কয়েকদিন। ভেবেছিলাম হয়তো আর টিউলিপের দেখা পাবো না। কিন্তু আমি তো আমিই! শেষদিন কাশ্মীর ছেড়ে আসার শেষ মুহুর্তেও আবার টিউলিপ বাগানে ঘুরেছি। টিউলিপ ফুলের কুঁড়ি এবং ফুল, এই দুটোই বেশ আকর্ষণীয়।

২০০৮ সালে তখনকার রাজ্য প্রধান গোলাম নবী আজাদ বাগানটি কাশ্মীর উপত্যকায় পর্যটকদের জন্যে প্রতিষ্ঠা করেন। নয়নাভিরাম, ভুবন মাতানো আর মন ভোলানো সৌন্দর্য্যের জন্য কাশ্মীর পূর্বের সুইজারল্যান্ড হিসেবেও খ্যাত। শীতের শেষ, শ্রীনগরের বরফ গলে গেছে, মাটি ফুঁড়ে আরো অনেক রকমের ফুল উঁকি দিচ্ছে। সত্যিই কাশ্মীরের সৌন্দর্য্য শুধু দু'চোখ ভরে দেখার মতো, প্রাণভরে উপভোগ করার মতো, বর্ণনা করে বোঝানোর মত নয়।

★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★★

































মন্তব্য ২৩ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (২৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫৩

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ওয়েলকাম ব্যাক আপু !
আর কী দারুন ভাবেই না ফিরলেন , এক্কেবারে ভূস্বর্গ নিয়ে।
লেখা আর ছবিতে ভালোলাগা।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:০৬

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
অনেক অনেক ঝামেলায় আছি আপু।
তবুও খুব ভালো লাগছে নিজের এ অংগনে এসে।
আশা করছি সবাই ভালো আছেন।

আপু, ব্লগ ডে তে আসছেন কি?
আমি এখনো রেজিষ্ট্রেশন করি নাই।

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৯:০৪

পদাতিক চৌধুরি বলেছেন: মনোজ্ঞ বর্ননা। অসাধারণ লাগলো ছবিগুলো। এপ্রিলেই তাহলে টিউলিপ বাগান খুলে দেয়? বিষয় বহির্ভূত হলেও স্রেফ জানতে ইচ্ছে করছে, টিউলিপ কি শুধু কাশ্মীরেই হয় না শীত প্রধান যেকোনো দেশে হয়ে থাকে?
শুভেচ্ছা নিয়েন।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১৫

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
হ্যা, এপিলেই খুলে দেওয়া হয় টিউলিপ বাগান।
একমাসই খোলা থাকে, সপ্তাহ খানেক এদিক সেদিকও হয়।
আমি শুনে এসেছিলাম মে মাসের ৫ তারিখ পর্যন্ত খোলা থাকতে পারে।

হ্যা, শীত প্রধান যে কোন দেশেই টিউলিপ ফোটে জানি।
অনেক শুভকামনা আপনার জন্যও।
নতুন করে আমার ব্লগ বাড়ীতে স্বাগত জানাই।

৩| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১০:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: খুব সুন্দর পোষ্ট।
আমি ঠিক করেছি সমস্ত ইন্ডিয়া ঘুরে বেড়াবো।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪১

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।
ইন্ডিয়া সত্যিই ঘুরে দেখবার মতই দেশ।

৪| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:১৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


কাশ্মীর অনেকেই যাচ্ছেন; কে কি দেখছেন, সেটাই পাঠকেরা জানতে চান।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৩

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
কাশ্মীর সব ঋতুতেই দেখবার মতই একটা দেশ।

৫| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪১

আসোয়াদ লোদি বলেছেন: এরকম টিউলিপ বাগান দেখেছিলাম অমিতাভ-রেখার সিলসিলা ফ্লিমে। খুব সুন্দর পোস্ট।

০৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৭

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
আমিও দেখেছিলাম সিলসিলা, আর সেই থেকেই এমন বাগান দেখবার স্বপ্ন বোনা।
অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।

৬| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:১০

মনিরা সুলতানা বলেছেন: আপু প্লিজ করে ফেলেন রেজিষ্ট্রেশন করে ফেলেন; আশা করছি অনেক মজা হবে।
ব্লগ দিবস আনন্দময় হোক।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৩৭

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
আচ্ছা আপু, করবো ইনশাআল্লাহ।
আমার আম্মা খুব অসুস্থ, তাই করবো কিনা ভাবছিলাম।
এখন কিছুটা উন্নতির দিকে।
দোয়া করবেন আপু।

৭| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:৪৮

ওমেরা বলেছেন: ইউরোপের সব দেশেই কম বেশী টিউলিপ হয় তবে নেদারল্যান্ড টিউলিপের জন্য বিখ্যাত ওখানে প্রতিবছর টিউলিপের মেলা হয় । কাশ্মীরে যে এত সুন্দর টিউলিপ হয় জানা ছিল না । অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ছবির জন্য।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৪৫

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
ঠিক বলেছেন আপনি।
শীতপ্রধান সব দেশেই টিউলিপ হয়।
কাশ্মীরের সারা দেশেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে টিউলিপ!
এই বাগানটা শুধু টিউলিপ দিয়েই সাজানো।

অনেক অনেক শুভকামনা আপনার জন্য।

৮| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:২৪

আমি তুমি আমরা বলেছেন: ঢাকা-কলকাতা-দিল্লী-শ্রীনগর, বিশাল জার্নি মনে হচ্ছে।

এখন কি পর্যটকদের জন্য কাশ্মীর খোলা?

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ সন্ধ্যা ৭:৫২

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
হ্যা, জার্নিটা খুব লম্বাই ছিলো।
ঢাকা-দিল্লী- শ্রীনগর টিকেট পাইনি আমরা।
তাহলে একদিনেই চলে যাওয়া যেতো।
ইলেকশন এর পরে পর্যটকদের যাওয়া বন্ধ ছিলো।
ঠিক এই মুহুর্তের খবর আমি জানিনা ভাই!

অনেক ধন্যবাদ!

৯| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:০৬

জুন বলেছেন: আরে আরে আরে আপনিতো দেখি দারুন ভ্রমণ করেছেন বিথী যাকে ভু-স্বর্গ । ফুলগুলো এক নজর দেখতে পেলে কতই না ভালো লাগতো। ভাগ্যিস আপনি আগেই এই সৌন্দর্য দেখে এসেছেন। এখন হলে তো যাওয়া সম্ভবই হতোই না।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় :)

+

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:২৪

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন: অনেক অনেক অনেক শুভকামনা আপু!
আগে বলুন আছেন কেমন?
অনেক দিন কথা হয় না, ফেইসবুকেও আপনাক পাই না।

হ্যা আপু, কাশ্মীরে যাওয়াই হচ্ছিলো না!
আমিতো ঘুরে এলাম, এখনকার অবস্থা মনে হয় আরো কঠিন।
পুরো কাশ্মীরটা দেখার মতই সুন্দর।
টিউলিপ গার্ডেন তো অবাক করা সুন্দর!
পরবর্তী পর্ব নিয়ে আসবো ইনশাআল্লাহ!

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১২:৩৩

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
দিগন্তজোড়া ফুলুগুলো সত্যিই চমৎকার আপু।

১০| ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:০০

শিখা রহমান বলেছেন: বিথী আগেই পড়েছিলাম। আবারো পড়তে ভালো লাগলো।
চোখ ধাঁধানো সব ছবির জন্য মুগ্ধতা রইলো।

শুভকামনা ও ভালোবাসা ফুলের রানী। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।

০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১১:৪৬

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
অনেক অনেক শুভকামনা আপু!
ব্লগ বন্ধ থাকায় কাশ্মীর ভ্রমণের কয়েকটা পর্ব ফেইসবুকে পোস্ট করেছি!
আশা করছি কিছু আবারও পোস্ট করবো!
আমার ভালোলাগা সবখানেই শেয়ার করবো আপু!

১১| ০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ৮:০৯

সাদা মনের মানুষ বলেছেন: খুব ইচ্ছে ছিল কোন এক এপ্রিলে টিউলিপদের সাথে দেখা করতে যাবো, কিন্তু ওখানকার যা অবস্থা জানিনা আদৌ কখনো ওদের সাথে দেখা হবে কিনা।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১:২৩

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
সেটাই তো মনে হচ্ছে! তবে এখন নাকি পর্যটকদের পারমিশন দেয়া হচ্ছে!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.