নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবীর নৈসর্গিক সৌন্দর্য আমাকে কেবলই পিছুটানে!!

কামরুন নাহার বীথি

আমি কিছুটা ভ্রমণবিলাসী আর ফুলের প্রতি আছে আমার আজন্ম ভালোবাসা

কামরুন নাহার বীথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

স্বপ্নের কাশ্মীর দেখা -( পর্ব - ৫)

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৯ রাত ১২:৫১

সোনামার্গ
---------------




সেদিন আমাদের শ্রীনগর থেকে সোনামার্গে যাবার প্রোগ্রাম। ভোরে উঠে তৈরি হয়ে ব্রেকফার্স্ট সেরে নিলাম। সকাল আটটার মধ্যে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। সেদিন ছিলো শ্রীনগরে ইলেকশন, তাই প্রাধান রাস্তাগুলো বন্ধ ছিলো। সারা শহরে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। শ্রীনগর থেকে বেরোলাম আমরা অলিগলি হয়ে। বেশ কয়েকটি বাড়িতে সাইনবোর্ড চোখে পড়লো, " MBBS From Bangladesh." কাশ্মীরের প্রচুর শিক্ষার্থী বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে পড়ে। বাংলাদেশ থেকে ডিগ্রী নেয়েটা ওদের গর্ব। দেশের বাইরে যেয়ে, বাংলাদেশী হিসেবে এই কাশ্মীরে আর কাবুলে অনেক সন্মান পেয়েছি আমরা।



শ্রীনগর থেকে উত্তর-পূর্বে ৮০ কিমি দূরে, ৮৭৫০ ফুট উঁচুতে সোনামার্গের অবস্থান, আড়াই ঘন্টার পথ, শ্রীনগর-লাদাখ মহাসড়কের পাশে। ঝিলাম নদীর ধার ঘেঁষে আকাবাঁকা পথ সোজা চলে গিয়েছে সেদিকে, যেদিকে চলেছি আমরা। একদিকে নদী, অন্যদিকে পাইন, ফারের বনাঞ্চল, সবমিলিয়ে নয়নাভিরাম শোভা। যতই এগিয়ে চলেছি, তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমছে। তখন বৈশাখ মাস, বাংলাদেশে বেশ গরম। কিন্তু বরফের দেশে যাবার জন্য প্রিপারেশন নিয়েই গিয়েছি। গোটা দুই লং সোয়েটার, উলেন টুপি সাথেই আছে। আর ওখানকার বিভিন্ন ভিউ পয়েন্টেই হালকা ছোট শাল বিক্রি হয়, আমি কিনেছিলাম হিজাব হিসেবে পড়ার জন্য। মানে ঠান্ডার সাথে দোস্তি করতে তৈরী আমি।




পথে হালকা খাবার কেনার জন্য কর্তা এক দোকানে নেমেছেন, আমি দোকান থেকে একটু দূরে গাড়ীতেই বসে। রাস্তার পাশের একটা বাড়ী থেকে ৮/৯ বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে আমাকে দেখে হাত নাড়ছে। আমিও হাত নেড়ে তার জবাব দিলাম। ধীরে ধীরে ৪/৫ জন কাছাকাছি বয়সী ছেলেমেয়ে, মেয়েটির পাশে এসে জমা হলো। ওদের দেখে আমি গাড়ী থেকে নেমে এগিয়ে গেলাম ওদের পাশে। ওদের প্রশ্নের জবাবে জানালাম বাংলাদেশ থেকে এসেছি আমি। বাংলাদেশ কোন্ দেশ, ওরা জানে না। জানতে চাইলো ইন্ডিয়াতেই, নাকি অন্য কোন দেশ? এভাবেই ওরা আমার সাথে টুকটাক গল্প করছিলো। এক সময় ভেতর থেকে কেউ একজন ডেকে আমার কথা জানতে চাইলে, মেয়েটা জানালো," মুসলমান হ্যায়!" আমি অবাক হয়ে ভাবছি, এতটুকু বাচ্চা মেয়ের ধারণা মুসলমানদের সাথে কথা বলা দোষের নয়। জানিনা, ওরা ইন্ডিয়ার হিন্দুদের সম্মন্ধে কী ধারণা পোষণ করে! বাচ্চাগুলোর ছবি তুলে আমি আবার গাড়ীতে এসে বসলাম।



সোনামার্গের আবহাওয়ায় বৃষ্টিপাত বেশি হয়। তবু সোনালী ঘাসে ঢাকা সেই উপত্যকা। তাই সোনামার্গকে সোনার বাগিচা হিসেবেও চেনেন অনেকে। চারপাশে পাহাড় আর সোনালি ঘাসে ঢাকা সোনামার্গ নিয়ে জনশ্রুতি রয়েছে যে, এই উপত্যকার কোথাও এক কুপ আছে যার পানিতে চমৎকার সোনালি রঙ ধরে এই উপত্যকা। এই জন্য নাম সোনামার্গ অর্থাত্‍ সোনালী উপত্যকা। 




আকাবাঁকা পাহাড়ি পথ ধরে চলেছি, পথের দুধারে উঁচু বরফের পাহাড়। সোনালী রোদের আলোয় জ্বলজ্বল করছে, মনে হচ্ছে যেন সোনার খনি। বিধাতার কী অপূর্ব সৃষ্টি। নিপুণ হাতে তিনি সাজিয়েছেন এমন করে। জুন থেকে সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন রঙের ফুল ফোটে উপত্যকা জুড়ে। সে নাকি এক অপরূপ শোভা। ড্রাইভার হিন্দিতে কথা বলছে। আমি হিন্দি , ইংরেজি মেশানো জগা খিচুড়ি ভাষায় মাঝেমধ্যে এটা সেটা প্রশ্ন করছি। কথা শোনার চেয়ে প্রাণভরে দেখতেই ভালো লাগছিলো। প্রথম তুষারপাত দেখেছি আমি কাবুলে। এখানে এখন বরফ গলে যাবার সময়। পাহাড় থেকে বরফ গলে রাস্তা পেরিয়ে পানি নদিতে মিশছে। প্রচন্ড স্রোতস্বিনী নদীগুলো তাই।



একটা সময়ে আমরা গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। এরপরে বিভিন্ন ভিউপয়েন্ট দেখতে লোকাল গাড়ীতে যেতে হবে। অনেকেই গেলেন আরো উঁচু পাহাড়ের, লেকের সৌন্দর্য দেখতে। আমরা বেশ খানিকটা হেঁটে ঘুরেফিরে দেখলাম। পাশে বরফের পাহাড়ে স্কি-র আনন্দ উপভোগ করছেন কেউ কেউ, হু হু করে ওপর থেকে নিচে নামছে পর্যটকরা। স্থানীয় মানুষদের কাঠ দিয়ে বানানো স্লেজগাড়িতে চড়েছে অনেকেই, একজন সেটাকে বরফের উপর দিয়ে টেনে নিয়ে চলেছে। একজনই বসা যায় ওই স্লেজগাড়ীতে। বাইকের মত গাড়ীও চলছে, ওটাকে কি বলে আমি জানিনা। ওই দূরের বরফে ঢাকা উঁচু পাহাড়ে হিন্দি মুভি " বজরাংগী ভাইজান"-এর শুটিং হয়েছিল, জানালো একজন। বরফের মধ্যে ছোট ছোট চায়ের দোকান, কিছুক্ষণ বসলাম, চা খেলাম। আরো কিছুক্ষণ এ শোভা উপভোগ করে আবার ফিরে এলাম সে পথ ধরেই।









★★★★★★★★★★★★★★★★★★★

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জানুয়ারি, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৬

শিখা রহমান বলেছেন: ফুলের রানী আপনাকে নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

আমি পর্ব -৪ না পড়েই এটা পড়ে ফেললাম। অবশ্য এতে বুঝতে সমস্যা হয়নি। :)

ছবিগুলো কি দারুণ আর আপনার বর্ণনা খুব প্রাঞ্জল। মনে হয় সামনে বসে গল্প বলছেন।
ভালোলাগা রইলো।

ভালো থাকুন ভালোবাসায়।
সুন্দর ও শুভ হোক অনাগত দিনগুলো।

০২ রা জানুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১২:১০

কামরুন নাহার বীথি বলেছেন:
নতুন বছরের অনেক অনেক শুভকামনা আপু!!
চমৎকার আন্তরিক মন্তব্যের জন্য অনেক ভালোলাগা!
খুব ভালো থাকবেন।

২| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৬

মিরোরডডল বলেছেন:




ভ্রমণ ব্লগ এতো পছন্দ, অথচ এই ভ্রমন পিপাসু ব্লগারের সাথে কখনো পরিচয় হয়নি।
আজ প্রথম এলাম ওনার ব্লগবাড়িতে যখন উনি আমাদের মাঝে আর নেই !!!!!


৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩৮

মিরোরডডল বলেছেন:

ভালো থাকুন ওপারে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.