নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ফেসবুক: https://www.facebook.com/FaridSohaiI

কাঠুরে

ফেসবুকে পেতে: https://www.facebook.com/FaridSohaiI

কাঠুরে › বিস্তারিত পোস্টঃ

"ফলিং ওয়াটার" স্থাপত্যশিল্পের অন্যতম সৃষ্টি।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৩১



বিয়ার রান উপত্যাকার ছোট ছিমছাম এক পাহাড়ী ঝর্ণা কলকল শব্দে আপনমনে বয়ে চলছে। চারপাশে ঘন সবুজ বনের আধিক্য। নিশ্চিন্তে বন্য প্রানীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে। গাছপালা চারদিক ঘিরে রেখেছে। পাতা আর ডালের আড়াল কেটে চোখে পড়ে বিশাল এক খোলা বারান্দা।
খোলা বারান্দায় দাড়ালেই চোখে পড়বে পানির ধারা আর কানে আসবে পড়ন্ত পানির সুরেলা ধ্বনি। ঝর্নার উৎস খুজতে গেল চমকে উঠবে যে কেউই কারন এ যে একদম বারান্দার নিচ দিয়েই বয়ে চলছে। পায়ের কাছে জমা হয়ে আছে বিভিন্ন বর্নের নুড়ি পাথর। সবমিলিয়ে পাহাড় কেটে তৈরী করা একটি বাড়ি বলেই ধরে নেবেন যে কেউ। প্রকৃতিকে নিয়ে কাজ করতে গিয়ে স্থপতি যেন একদম প্রকৃতির মাঝেই বিলীন হয়ে গিয়েছেন। চোখের দেখায় যা মনে আসবে বাড়িটির নাম আসলে তাইই ‘ফলিং ওয়াটার’।


(বসন্তে ফলিং ওয়াটার)

এটি স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের একটি অমর সৃস্টি যা তাকে বিশ্বব্যাপী মাস্টার আর্কিটেক্ট হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দক্ষিন পশ্চিম পেনিসেলভেনিয়ার একটি গ্রামীন এলাকায় ১৯৩৫ সালে স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইটের ডিজাইন এবং তত্বাবধানে নির্মিত হয় এই ছোট্ট পাহাড়ী কুটির। বাড়িটি স্থপতির দেয়া নাম “ফলিং ওয়াটার” হিসেবে পরিচিত হলেও বাড়ির সৌখীন মালিক ব্যবসায়ী কফম্যানের নামে এর নামে এটি “কফম্যান হাউজ” হিসেবেও পরিচিত।


(শীতকালে ফলিং ওয়াটার)

স্থপতি রাইট বিশ্বাস করতেন, মানুষ প্রকৃতির স্রস্টা না হলেও প্রকৃতিকে পূনর্জন্ম দেয়ার ক্ষমতা তার আছে। এজন্য তার প্রাথমিক আইডিয়া ছিলে, “তিনি প্রকৃতিকে কোন বিরক্ত করবেন না বরং মানুষের দৈনন্দিন জীবনের আরো কাছে নিয়ে আসবেন। প্রকৃতি চিরন্তন কিন্তু মানুষ স্বল্পস্থায়ী, একসময় হারিয়ে যাবে। সুতরাং মানুষের জন্য তৈরী স্থাপনাও হবে তেমনই।“


(বাড়ির অভ্যন্তরের দৃশ্য, লিভিং রুম)

যদিও বাড়িটি চতুর্দিকে খোলা তবে উচ্চতা কম হবার কারনে বাড়িটিতে ঢুকলে এটিকে এক ধরনের গুহার মত মনে হয়। বাড়ির মুল অংশটি মি কফম্যানের ব্যক্তিগত বাসভবন হিসেবে।এছাড়া নিজেদের প্রয়োজনীয় বেডরুম, ফ্যামিলি লিভিং, ডাইনিং স্টাডি রুম ইত্যাদির পাশাপাশি অতিথিদের জন্য একটি গেস্ট জোন তৈরী করা হয়। যার অবস্থান বাড়িতে প্রবেশের সামনের দিকে। বিশাল ড্রয়িং রুমের পুরোটাই ঝুলন্ত।

মুলত ভ্যাকেশন হাউজ হিসেবে বাড়িটির জন্ম।মিঃ কফম্যান চাইতেন তার বন্ধু বান্ধব আত্নীয় স্বজন নিয়ে প্রান্বন্ত অবসর কাটাতে। সুতরাং তার বড়সড় লিভিংরুম দরকার ছিলো। তাই লিভিংরুম থেকে একটি ঝুলন্ত সিরি নিচের ঝর্ণার দিকে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। শীতের সময় যেখানে পানি জমে বরফের লেয়ার তৈরী হয়ে একটি ভিন্ন অনুভুতির তৈরী হয়(৩নং ছবি)।


(লিভিং রুম থেকে সরাসরি ঝর্ণার পানিতে নেমে আসা ঝুলন্ত সিঁড়ি)

শীত শেষে বসন্ত আসা মাত্রই উল্টো চিত্র(২নং ছবি)। ঝুলন্ত বারান্দা, নিচে নেমে আসা সিড়ি, ঝির ঝির পানি আর চারপাশে হাসতে থাকা রং বেরংয়ের ফুলের মিতালী দশর্নার্থীদের জন্য প্রাকৃতিক অভ্যর্থনা দিয়ে স্বাগত জানাতে থাকে। মুল বাড়ির উল্টোদিকে পাহাড়ের ঢালে কারপার্কিং এবং সারভেন্ট কোয়ার্টার। কফম্যান হাউজের অন্তর্গত বিন্যাস মোটামোটি এমনই।


(উপর থেকে সোজাসুজিভাবে ফলিং ওয়াটারের দৃশ্য)

১৯৩৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনে ফলিং ওয়াটার এবং ফ্রান্ক লয়েড রাইটকে নিয়ে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর দর্শনার্থীর ঢল নামে এখানে। টাইম ম্যাগাজিন এটিকে অভিহিত করে স্থপতি রাইটের শ্রেস্ট সৃস্টি হিসেবে।
১৯৩৭ সালে কাজ সম্পন্ন হবার পর থেকে ১৯৬৩ সাল পযর্ন্ত কফম্যান পরিবারের নিজস্ব আবাস হিসেবেই ব্যবহৃত হয়।
১৯৬৩ সালে কফম্যান জুনিয়র এটিকে দিয়ে দেন ওয়েস্টার্ন পেনসিলভানিয়া কনজারভেন্সী নামক রাস্ট্রীয় সংস্থার হাতে। ততদিনে এটি খ্যাতি অজর্ন করেছে।
১৯৬৬ সালে এটি জাতীয় ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেব গৃহিত হয়।
১৯৯১ সালে আমেরিকান স্থপতি ইন্সটিটিউট এটিকে সবর্কালের সবর্শ্রেস্ট আমেরিকান স্থাপত্য হিসেবে ঘোষনা করে।
প্রয়োজনীয় পরিবধর্ন এবং সংস্কার শেষে পরের বছরই এটিকে উম্মুক্ত করে দেয়া হয় মিউজিয়াম হিসেবে।

[তথ্যসুত্রঃ খালিদ মাহমুদ নামের একজনের আর্কিটেক্টের লিখা থেকে যথাসম্ভব সংক্ষিপ্ত এবং পরিমার্জিত করে লিখা।
এবং ছবি গুলো গুগলের স্থাপত্য বিষয়ক ওয়েবসাইটগুলো থেকে সংগ্রহ করা। ]

আর, লিখাটি পূর্বে শুধুমাত্র ফেসবুকের পাঠশালা গ্রুপে প্রকাশ করা হয়েছিল।

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৪২

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: স্হাপত্য কর্ম হিসেবে অসাধারণ , পরিবেশ - প্রকৃতিও হয়ত 'মন্দ ভাবে' পরিবর্তিত হয়নি । এরপরও বলব ওয়াটার ফলের ওপর স্হাপণা আমার পছন্দ হয়নি । বেশী হলে টেন্ট পিচ করে একটু দূরে ক্যাম্প করা সমর্থ করতে পরি , এরচেয়ে বেশী কিছু সমর্থণ করতে পারছি না ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৬

কাঠুরে বলেছেন: সমর্থন করতে না পারান হেতু কি? যদি স্থাপনা করতে গিয়ে আমি পরিবেশ এবং ঝর্ণার বিন্দুমাত্র ক্ষতিসাধন না করে থাকি, বরং পরিবেশের মাঝেই স্থাপনাকে বিলিয়ে দেই?

২| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:০০

সাইবার অভিযত্রী বলেছেন: স্থপতি ফ্রাঙ্ক লয়েড রাইট একজন বিশ্ব স্বীকৃত মাস্টার আর্কিটেক্ট । মাস্টার যারাা তাদের কাজের মাঝে নতুন মাত্র যোগ করেন । কাজের মাঝে এতটাই মগ্ন থাকেন অন্যান অনেক কিছু তাদের চেতনায় থেকে লু্প্ত হয়ে যায় । অনেক মাস্টার চিকিৎসা বিজ্ঞানী দেখা গেছে কবর খুড়ে শবদেহ চুরি করে তার গবেষণা সাধণা চালিয়ে গেছেন । ইতিহাস সাক্ষী । কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা অনেক সময় সমকালীন প্রথাগত এথিকেল বাউন্ডারীকে অতিক্রম করেছে । তাদের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধা । সব ভুলে কাজে না ডুবলে অনেক সময় পূর্ণ আসে না ।

এরপর ও তো মাষ্টারদের কাজের কোন কোন প্রতিক্ড়িয়া নিয়ে আম জনতার ভিন্ন মত ও থাকতে পারে ! মন্তব্যটা ওনার কাজের উপরে না , ভুল বুঝবেন না । কাজের একটা প্রতিক্রিয়া বা পার্শপ্রতিক্রিয়ার উপরে । কারো কাছেশিল্প বা স্হাপত্য প্যাশন , সাধনা । কারো কাছে প্রকৃতি । শ্রদ্ধাবোধ আর ভিন্নমত দুটার-ই যুগপদ প্রয়যোনীয়তা রয়েছে - দ্বন্দ নয় ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:১০

কাঠুরে বলেছেন: অবশ্যই আমি ভুল বুঝতেছি না।
যদিও এই স্থাপনাটা নিয়ে খুব কম আমজনতারই ভিন্নমত রয়েছে। তথাপি ভিন্নমত থাকতেই পারে। আমি জাস্ট সেই ভিন্নমতটা জানতে আগ্রহী, এই আর কি।

জানালে হয়তো আমিও সেটা নিয়ে কিছুক্ষণ ভাবতাম।
ধন্যবাদ। :)

৩| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৩

রাতুলবিডি৫ বলেছেন: " এই স্থাপনাটা নিয়ে খুব কম আমজনতারই ভিন্নমত " - ঠিক এভাবে না বলে এই ওয়াটারফলটার পরিবর্তন নিয়ে বলতে পারেন । একটা মহান সৃষ্টির পিছনে অনেক ক্ষুদ্র জিনিষ বিলীন হয়ে যায় , আবার অনেক সময় বিলীন না হলেও বদলে যেত হয় । ওয়াটার ফলটা বদলানো-ই ভিন্ন মটের কারণ ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:২৮

কাঠুরে বলেছেন: কিন্তু তিনি তো ওয়াটার ফলটার গতিপথ বিন্দুমাত্র বদলায়নি, জাস্ট বাড়ীর মালিককে ওয়াটার ফলের প্রকৃত ফিলটা দেয়ার জন্য বাড়ির একটা সাইডকে ঝুলন্ত অবস্থায় ওয়াটার ফলের উপর নিয়ে গেছে কেবল। আর কিছু না। এটাতে ওয়াটার ফলের কিছুই হয়নি, ওটা যেমন ছিল তেমনই আছে আজও পর্যন্ত।

৪| ০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৯

রাতুলবিডি৫ বলেছেন: ঠিক আছে ভাই ফিজিস্ক্সের হিসেবে, hydrodynamics এর হিসেবে, ওয়াটারফল বদলায় নাই , মানছি । কিন্তু wilderness হিসেবে কি একই থাকছে ? জলবিদ্যুত প্রকল্প জীব বৈচিত্র নষ্ট করে , এরপরও পৃথিবীর অনেক দেশ - ই জল বিদ্যুত প্রকল্প করে । কেন ? উত্তর রুটি রুজি । অনেক লোক এই বিদ্যুতের সুবিধা পেয়ে জীবিকা চালাবে । অবশ্য সুন্দরবনের কয়লা - বিদ্যুতকে কোন ভাবেই লজিকে ফেলতে পারি না ।

প্রকৃতিকে বদলাতে হয়ে, পরিবর্তন করেই আমাদের বাচতে হয় । এভাবেই চলছএ - চলবে । কিন্তু কথা হচ্ছে প্রতিটা পরিবর্তনের আগে একটু হিসাব করতে মন চায় - কতটা অপরি হার্য ছিল এই পরিবর্তন ?

আপনি টিওবি -তে ঢু মারেন , আমিও মারি । ক্যাম্প করেও তো এসব জায়গায় সাময়িক ভাবে থাকা যায় ! মি: কফ ম্যান কিন্তু মাঝে মাজেই সেখানে যেতেন ।

আমার অনেক আর্কিটেক্ট বন্ধু আছেন । অনেক দিনের আর কলহুব ঘনিষ্ট বন্ধু । ওনারা হয়ত আমার মন্তব্যে বিরক্ত হবেন । কিন্তু ঐ যে বললাম ভিন্নমতের সুযোগ আর শ্রদ্ধাবোধ এই দুটাতেই আমি বিশ্বাসী, যুগপদ।

০৩ রা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৫:১৫

কাঠুরে বলেছেন: ভাই, পাহাড় যদি ওয়াইল্ডারনেসের কোন ক্ষতি না করে থাকে, তবে এই বাড়িটিও কোন ক্ষতি করবে না বলে আমার ধারনা। ওয়াইল্ডারনেসের যাতে কোন বিচ্যুতি না হয়, সে কারণে বাড়িটির কালারও পাহাড়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে করা হয়েছে। এবং ঝর্ণার গতিপথ পরিবর্তন না হওয়ার জন্য ঝর্ণার পানি প্রবাহিত হওয়ার স্থান গুলোতে বাড়িটাকে কোন প্রকার কলাম ছাড়াই দাড় করিয়ে রাখা হয়েছে। ফ্র্যাঙ্ক লয়েড সেই ধারনা টুকুও নিয়েছিলেন পাহাড় থেকে। পাহাড়ের মাঝে অনেক পাথর দেখা যায় এমন।

আপনি বলছেন, "প্রকৃতিকে বদলাতে হয়ে, পরিবর্তন করেই আমাদের বাচতে হয় । এভাবেই চলছএ - চলবে । কিন্তু কথা হচ্ছে প্রতিটা পরিবর্তনের আগে একটু হিসাব করতে মন চায় - কতটা অপরি হার্য ছিল এই পরিবর্তন ?"

কিন্তু আমি দেখছি, ফ্রাংক লয়েড আপনার বলা এই সেই হিসাবটুকু করেই গথবাঁধা নিয়মের বাইরে গিয়ে প্রকৃতিকে না বদলিয়েই বাঁচার, এবং বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। সুতরাং অন্য কোন স্থাপনার ক্ষেত্রে আপনার এই যুক্তি গেলেও, ফ্র্যাঙ্ক লয়েডের এই স্থাপনার ক্ষেত্রে কোনভাবেই এই যুক্তি আসে না।

আর হ্যা, অবশ্যই সুন্দরবনের কয়লা - বিদ্যুতকে কোন ভাবেই লজিকে ফেলতে পারি না ।

ধন্যবাদ। :)

৫| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ দুপুর ১২:২৩

গোল্ডেন গ্লাইডার বলেছেন: সুন্দর ছবি

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০০

কাঠুরে বলেছেন: বাড়িটা, তার ৪পাশের পরিবেশটা, সব মিলিয়ে পুরো ব্যাপারটাই আমার কাছে দুর্দান্ত মনে হয়েছে। :)

ধন্যবাদ।

৬| ০৪ ঠা জুলাই, ২০১৫ বিকাল ৪:০৮

প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: আইডিয়াটা বুঝতে পারছি, দারুণ ইঞ্জিনিয়ারিং স্কিল ছিল ভদ্রলোকের।

০৫ ই জুলাই, ২০১৫ দুপুর ২:০১

কাঠুরে বলেছেন: দারুণ স্কিল মানে। বস মানুষ ছিলেন উনি।

পৃথিবীর মাস্টার আর্কিটেক্টদের মধ্যে অন্যতম। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.