নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্য ও ন্যায়ের কথা সহজ করে বলি

সরল কথা

সহজ করে বলি

সরল কথা › বিস্তারিত পোস্টঃ

মানুষ গড়ার আঙিনায় আর মানুষ গড়ার পরিবেশ নেই। (আজ শহীদ দিবস)

১১ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৪৯

১৯৮২ সালের ১১ মার্চ! রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সাজ সাজ রব। আজ নবীনবরণ অনুষ্ঠান। সেসময় ছাত্ররা উদ্যোগ নিয়ে নবীনদের সংবর্ধনা দিত। সেই কাজকে বাস্তবায়ন করতে একদল তেজদিপ্ত তরুন শহীদ মিনার প্রাঙনে প্যান্ডেল তৈরী করে সংবর্ধ্যনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। তাদের স্লোগান ছিল, মানুষের গড়ার আঙিনায় মানুষ গড়ার পরিবেশ চাই। শিক্ষা ও সন্ত্রাস এক সাথে চলতে পারে না। সকাল থেকেই তারা তাদের অনুষ্ঠানের প্রচারণা চালাতে থাকে। সাধারণ ছাত্র ছাত্রীদের দাওয়াত করতে থাকে। আর তাদের দাওয়াতে আকৃষ্ট হয়ে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরাও নীল প্যান্ডেলে জড় হতে থাকে। কিন্তু অন্যদিকে তখন চলতে থাকে ভয়ানক ষড়যন্ত্র!

৯টায় পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের প্রাণকাড়া সুমধুর বাণী দিয়ে নবীনবরণ শুরু হতে যাচ্ছে। অনুষ্ঠানস্থলের অদূরে শহীদ মিনারে এই তরুনদের কর্মসূচির সাথে একই সময়ে একটি সাংঘর্ষিক কর্মসূচির আয়োজন করেছিল দুষ্কৃতকারীরা। তারা লাঠি, রামদা, বল্লম, হকিস্টিক ও রড নিয়ে জমায়েত হয়েছিলো। কেবল তাদের প্রোগ্রাম বানচালের জন্যই এ কর্মসূচি। পূর্বপরিকল্পিতভাবে তথাকথিত ছাত্র পরিষদের ব্যানারে এ সমাবেশের আয়োজন করেছিল ছাত্র ইউনিয়ন, ছাত্রলীগ (ফ-চু), ছাত্রলীগ (মু-হা) বিপ্লবী ছাত্র ইউনিয়নসহ অন্যরা। ছাত্র ইউনিয়নের নেতৃত্বে তারা ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে বারবার গোলযোগ বাধাতে চেষ্টা করে। প্রতিবারই এই সকল তরুনরা অদম্য ধৈর্য নিয়ে তাদের চেষ্টা ব্যর্থ করে দেন। এরমধ্যে বাইরে থেকে তারা কয়েকটি বাস বোঝাই করে পাঁচ-ছয়শত সশস্ত্র সন্ত্রাসী এনে তরুনদের নীল প্যান্ডেল চারদিক থেকে ঘিরে ফেলে। তাদের হাতে ছিল রামদা, ভোজালি, ছোরা, বল্লম, হকিস্টিক ও লোহার রড।

হিংস্র হায়েনার মত তারা নীল প্যান্ডেলের আয়োজকদের ওপর অতর্কিতভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ছাত্র ইউনিয়নের হেলাল, ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শিশির, ছাত্রলীগের ছানা, রানা, আজাদ, সাকুর, ফজলে হোসেন বাদশা, করীম শিকদার কাদের সরকার জাসদের হতভাগা ফিরোজ প্রমুখ ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ ক্যাডারদের নেতৃত্বে অসহায় নিরস্ত্র কর্মীদের ওপর জঘন্যতম হামলা চালায়! নবীন বরণ হয়ে যায় পন্ড। অস্ত্রবাজ খুনী, নেশাখোরদের হকিস্টিক, রামদা, কিরিচ চাইনিজ কুড়ালের জঘন্য আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়। মাজলুম কর্মীরা ক্ষত-বিক্ষত রক্তাক্ত অবস্থায় হয়ে যায় দিশেহারা।

এসব নরপশুদের এই ভয়াবহ হামলা দেখেও বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি নির্বাক ছিলেন। পাশে দাড়িয়ে থাকা পুলিশরা বারবার ভিসির কাছে একশনে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। কিন্তু ভিসি কোন অনুমতি দেন নি। যার ফলে সংঘর্ষ আর ও ভয়ানক আকার ধারণ করল। সাধারণ ছাত্ররা ব্যাপকহারে আহত হওয়া শুরু করল। নিরূপায়, অসহায়, নিরস্ত্র নীল প্যান্ডেলের কর্মীরা ক্যাম্পাস থেকে মেইনগেট দিয়ে বের হয়ে চলে আসছে। আঘাতে আক্রমণে ৭০/৮০ জন মারাত্মক আহত, ক্ষত-বিক্ষত অবস্থায় দৌড়াতে আর পারছে না! মুখে শুধু আল্লাহ বাঁচাও শব্দ ছাড়া কোন আওয়াজ নেই। পূর্বপরিকল্পিতভাবেই হামলা পরিচালনা করেছিল তারা। আবারো তাদের চতুর্মুখী হামলায় আর আক্রমণে কান্না আর কান্নার রোল! আর্তনাদ আর আকাশ ফাটা চিৎকারে বাতাসও ভারী হয়ে যাচ্ছে।

এমতাবস্থায় সাড়ে ১১ টার দিকে শহীদ জোহার মাজারের সামনে রড রামদা ক্রীজ এবং চাপাতি দিয়ে মারাত্নক ভাবে আহত করা হয় উপশহরের সন্তান সাব্বিরকে। তাঁতে মারাত্নক আহত অবস্থায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। কিন্তু যোহরের আজানের সঙে সঙে আল্লাহপাকের ডাকে সাড়া দিয়ে সাব্বির শাহাদাত বরণ করলেন।

শত জনতার সম্মুখে বিএনসিসির সামনে নীল প্যান্ডেলের নেতা আব্দুল হামিদের মাথার নিচে ইট রেখে অনেক ইট আর রড দ্বারা আঘাত করলে মগজ ছিটকে বের হয়ে যায়। পশু জবেহ করার পরে যেমন ছটফট করে তেমনি আবুদল হামিদের মগজ গলিত অবস্থা ছটফট করতে করতে লাফ দিয়ে রক্তধারা দেওয়ালে রেখে যান। শহীদ সাব্বিরের শোকে মূহ্যমান আবাল বৃদ্ধবনিতা এক শহীদের বেদনায় শোকাহত জনতার প্রাণে মাত্র ৮/১০ ঘণ্টার মধ্যেই শহীদ আবদুল হামিদের শাহাদাত চতুর্দিকে বাতাসের মত ছড়িয়ে পড়লো। আবারো কান্না, আহাজারি আর চিৎকার।

১১ মার্চের বেদনার আধার ভেদ করে ১২ মার্চের সোনালি সূর্য উদিত হলো। মাত্র ৩৫ ঘণ্টার ব্যবধানে আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ মার্চ প্রভুর ধ্যানে পাড়ি দিলেন শহীদ আইয়ূব। ১১ মার্চের বেদনার আধার ভেদ করে ১২ মার্চের সোনালি সূর্য উদিত হলো। মাত্র ৩৫ ঘণ্টার ব্যবধানে আহত চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১২ মার্চ প্রভুর ধ্যানে পাড়ি দিলেন শহীদ আইয়ূব।



সেদিনের শহীদদের সংক্ষিপ্ত পরিচয়ঃ

শহীদ সাব্বির আহমেদ

মো: সাব্বির আহমদ। সোনালী ব্যাংকের সাবেক নাইট গার্ড মো: জামিল খানের ছয় সন্তানের মধ্যে সবার বড় ছিলেন শহীদ সাব্বির আহমদ। রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানার অন্তর্গত উপশহরে আবাসিক এলাকায় তাদের বাড়িটি ছিল এ/২২ নম্বর। পুরাতন ধরনের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন ছিমছাম বাড়িতে বসবাসরত পরিবারে সাব্বির ছিলেন তখন ১৮ বছরের পরিশ্রমী আর প্রাণবন্ত তরুণ।


পরিবারের দারিদ্র্যের মধ্যেও যেহেতু তিনি নিজের লক্ষ্যে পৌঁছবার বিষয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, সুতরাং অর্থকড়ির যোগান দিতে কলমের কালি তৈরির প্রকল্পসহ প্রসাধনী দ্রব্যের ব্যবসা করতেন। নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই বহন করতেন শহীদ। দৈনিক সর্বোচ্চ দু’তিন ঘণ্টা সময় পেতেন পড়াশোনার জন্য। তারপরও কৃতিত্বের সাথে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন ১৯৭৯ সালে।

শহীদ আব্দুল হামীদ

পুরো নামঃ শহীদ আব্দুল হামিদ। পিতাঃ মো নাসিরউদ্দিন। স্থায়ী ঠিকানাঃ ঠাকুরগাঁ জেলার সৈয়দপুরে। সর্বশেষ পড়াশুনাঃ আরবী সাহিত্য,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

শহীদ আইয়ুব আলী

পুরো নামঃ শহীদ আইয়ুব আলী। পিতার নামঃ আইজ উদ্দিন মুন্সী। স্থায়ী ঠিকানাঃ চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা। সর্বশেষ পড়াশুনাঃ উদ্ভিদ বিজ্ঞান, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

শহীদ আব্দুল জব্বার

পুরোনামঃ শহীদ আব্দুল জব্বার। পিতাঃ মোঃ জসিমউদ্দিন। স্থায়ী ঠিকানাঃ চকময়রাম,থানাঃথামইরহাট,জেলাঃ নওগাঁ। সর্বশেষ পড়াশুনাঃ রসায়ন,রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়।

আজও শহীদদের খুনের বিচার হয় নি। সেই দিন যারা নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল আজও তারা দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। যার ফল শ্রুুতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে সন্ত্রাস। মানুষ গড়ার সেই আঙিনায় আর মানুষ গড়ার পরিবেশ নেই। আর কবির কবিতার সঙে কন্ঠ মিলিয়ে বলতে হয়, “ আমি আমার এ দু’টি আঁখি কি করে ধরে রাখি, অঝরে কান্না বেরিয়ে আসে। যখন মাসের পরে মাস পেরিয়ে ১১ মার্চ আসে”।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৩

বিজন রয় বলেছেন: আর মানুষ গড়া।

১১ ই মার্চ, ২০১৬ সকাল ১১:৫৬

সরল কথা বলেছেন: +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.