নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙ্গাল এক টেক্সানের সূর্যগ্রহণ দর্শন

১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫২

সূর্যগ্রহণ নিয়ে আমার প্রথম অভিজ্ঞতা ছিল স্কুল জীবনে, কয়েক যুগ আগে, যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি। বাংলাদেশে তখন পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহন ঘটেছিল, তবে সেটা দেখা গিয়েছিল সুন্দরবনের হিরন পয়েন্ট থেকে। আমরা সিলেটে ছিলাম, কাজেই ১০০% সূর্যগ্রহণ দেখার অভিজ্ঞতা সেদিন হয়নি।
হালকা হালকা যেটুকু মনে আছে তা হচ্ছে স্কুলের কিছু ছেলে বাড়ি থেকে কারোর পুরানো এক্সরে রিপোর্ট কেটে এনেছিল। সেটা দিয়েই সূর্যগ্রহন দেখা হয়েছিল। কারন গ্রহণের সময়ে সূর্যের দিকে তাকালে নাকি চোখ অন্ধ হয়ে যায়।
আর মনে আছে নানান "গুরুত্বপূর্ণ তথ্য" রটানো হয়েছিল। সবাই তখন এক্সপার্ট, সবাই তখন নাসার বিজ্ঞানী। যেমন গ্রহণ চলাকালে কিছু খাওয়া যাবেনা। যদি কেউ খায় তাহলে নাকি পুরো জীবন পেটের অসুখে ভোগে। গ্রহণের সময়ে জ্বিন ভূতেদের উৎসব শুরু হয়। প্রেতলোকের দরজা খুলে যায়। কালো জাদুকররা তন্ত্র সাধনায় মেতে উঠে। তখন একা একা বাইরে থাকলে ভূতগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আরও অনেক গুজব এখানে ওখানে উড়ছিল যার কিছু কিছু আমাদের কানে ধরা পড়ছিল, তার কোনটাই মনে নেই।

এরপরেও জীবনে কয়েকটা সূর্যগ্রহণ দেখেছি। কোনটাই পূর্ণগ্রাস ছিল না, কাজেই এই ব্যাপারে আহামরি কোন আগ্রহও ছিল না। এমনও সময় গিয়েছে যে অফিসে কাজ করছি। দেখলাম বস, টিম মেট এবং বাকিরা সবাই হই হুল্লোড় করতে করতে বাইরে বেরিয়ে বিশেষ সানগ্লাসে সূর্যগ্রহণ দেখছে, আমি ওদের সাথে যোগ দিয়েছি স্রেফ কাজে ফাঁকি দেয়ার নেক নিয়্যতেই।

তাই এইবার যখন সূর্যগ্রহণের সংবাদ পেলাম, এবং আমার বর্তমান অফিসকে অনেক আয়োজন করতে দেখলাম, তেমন কোন উৎসাহ পেলাম না। "এ আর এমন কি?"
খানিকটা বিরক্তও হলাম। মাসের শুরুর দিকে আমার কাজে চাপ থাকে। আধাঘন্টা ফালতু সময় নষ্ট করার কোন মানে হয়না।
দিন এগুতে থাকে, চারিদিকে উৎসাহও বাড়তে থাকে। এইচআর ঘোষণা করে ঐদিন জিন্স টি-শার্ট পরে অফিসে আসা যাবে। কেউ গ্রহ নক্ষত্র আঁকা জামা পরতে চাইলে স্বাগতম! অফিস সেদিন বিশেষ কম্বল উপহার দিবে যাতে আমরা বিল্ডিংয়ের ছাদে শুয়ে শুয়ে উপভোগ করতে পারি। থাকবে গুডি ব্যাগ। সেখানে "সান-চিপস" "মুন-কেক" "মিল্কিওয়ে চকলেট বার" ইত্যাদি সব নামওয়ালা চকলেট বিস্কিট থাকবে। সেই সাথে থাকবে সূর্যগ্রহণের জন্য তৈরী বিশেষ চশমা।
বাচ্চাদের স্কুল প্রিন্সিপাল ইমেইল পাঠালেন। এ নিয়ে তাঁদেরও ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানালেন। প্রতিটা বাচ্চার জন্য চশমার আয়োজন করা হয়েছে। প্রতিটা বাচ্চাকে স্কুলের মাঠে টিচারের তত্বাবধানে এই বিশেষ ঘটনার সাক্ষী করা হবে। ওদের স্কুলেও এ নিয়ে নানান আয়োজন রাখা হয়েছে।
ছোট ছেলের ডেকেয়ার অবশ্য বেশ বিরস ছিল। ওদের কোন আয়োজনের ব্যবস্থা ছিল না। ছোট ছোট শিশুদের চার দেয়ালের ভিতরেই রাখা হবে। ঠিক আমার স্কুলের মতন। মনে আছে আমরা নিয়মিত ক্লাসই করছিলাম। শুধু টিফিনের বিরতিতেই ঐ এক্সরে রিপোর্ট দিয়ে আকাশের দিকে কিছুক্ষন তাকাবার সৌভাগ্য হয়েছিল।

সিটি থেকে জানানো হলো যেহেতু পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ দেখতে বাইরে থেকেও প্রচুর ট্যুরিস্ট শহরে আসছে, আমরা সবাই যেন সাবধান থাকি। ট্রাফিক জ্যাম বাড়বে, একসিডেন্ট হবে, বাসা বাড়ির ছাদের সোলার প্যানেলগুলো কাজ করবে না, নানান জায়গায় নানান অপরাধের ঘটনাও ঘটবে - ইত্যাদি নানান সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। আমি ভেবে পেলাম না, কি এমন ঘোড়ার আন্ডা ঘটতে চলেছে যে মানুষ পয়সা খরচ করে প্লেনে চেপে ফ্লাই করে আসছে?

কৌতূহল থেকেই খানিকটা ঘাঁটাঘাঁটি করে জানতে পারলাম টেক্সাসে শেষ পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ ঘটেছিল ১৮৭৮ সালে, এবং পরেরটা ঘটবে ২৩১৭ সালে। মানে হচ্ছে, আমাদের জীবিতাবস্থায় সেটা দেখার সম্ভাবনা শূন্য।
আমেরিকায় পরবর্তী সূর্যগ্রহণ দেখা যাবে ২০৪৪ সালে, তবে সেটাও ক্যানাডা থেকে ভাল দেখা যাবে। ২০ বছর পর। গ্যারান্টি কি যে সেটা দেখার জন্য বেঁচে থাকবো?
সবচেয়ে কাছাকাছি যেটা ঘটবে, সেটাও ২০২৬ সালে, এবং দেখা যাবে উত্তর স্পেন, গ্রিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড এবং আর্কটিক অঞ্চলে। যদি না আমার প্রচুর টাকা পয়সা হয়ে যায়, এতটাই যে অতিরিক্ত টাকার টেনশনে রাতে ঘুম হয় না, তবেই কেবল ওটা দেখার জন্য আমি ক্রুজ শিপের টিকেট কেটে সূর্যগ্রহণের সময়ে সেই অঞ্চলে অবস্থান করবো।
এইসব তথ্য জেনে খানিকটা আগ্রহ বোধ করলাম। এত মানুষ একটা বিষয় নিয়ে এত মাতামাতি করছে, কিছু একটাতো নিশ্চই আছে।

ঘটনার দিন অফিসে এলাম। কিন্তু আকাশ মেঘলা। আমি ছাড়া মোটামুটি সবাইকে খুবই হতাশ হতে দেখলাম। এত বিপুল উৎসাহ, আগ্রহ, উত্তেজনা, সব নষ্ট করে দিবে চৈত্র সংক্রান্তির কিছু বেরসিক মেঘ?
এদিকে সূর্যও যেন নিজের ভক্তদের হতাশ করতে রাজি নয়। সে সমানে যুদ্ধ করে যাচ্ছে।
আকাশে শুরু হলো ইন্দ্র ও সূর্যের লড়াই। এই মেঘ এই রদ্দুর। মানুষের মনের অবস্থাও তখন তাই। যেই মুহূর্তে আকাশে মেঘ জমে, সবার চেহারা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, আবার যেই মুহূর্তে সূর্য হাসে, অমনি সবাই উল্লাস করে উঠে।

আমি কাজে ডুবে রইলাম।
যথা সময়ে আমাদের হাতে গুডি ব্যাগ, কম্বল তুলে দেয়া হলো। দল বেঁধে ছাদের দিকে হন্টন শুরু হলো। জমি দখলের লড়াই শুরু হওয়ার আগেই সেখানে নিজের অবস্থান পোক্ত করতে হবে।

সূর্যে গ্রহণ লাগা এরও দুই ঘন্টা আগে শুরু হয়ে গিয়েছে। মাঝে মাঝে সানগ্লাস পরে আকাশের দিকে তাকাই। গোলাকার সূর্য ঈদের চাঁদের আকৃতি নিতে শুরু করে দিয়েছে। মেঘ তখনও হার মানতে নারাজ। আকাশে আলোর অবস্থাও স্বাভাবিক। আমরা সবাই তখন কাজের ফাঁকের আড্ডা এঞ্জয় করছি।

অবশেষে ১:৪০ মিনিটে যখন সূর্য পুরোপুরি ঢেকে গেল, তখন বুঝলাম কেন মানুষের মনে এত আগ্রহ, কেন মানুষ মহাজাগতিক ঘটনাকে উৎসব বানিয়ে ফেলেছে, কেন মানুষ পকেটের টাকা খরচ করে জরুরি সব কাজ ফেলে ছুটে আসছে দূর দেশে কেবল ঘটনার সাক্ষী হওয়ার উদ্দেশ্যে।
পরম করুণাময় উপরওয়ালা আমাদের উপর করুণা করলেন। পুরো দিনব্যাপী যে মেঘ ও সূর্যের লড়াই চলছিল, তাঁর হস্তক্ষেপে মেঘ ঐ চার মিনিটের জন্য পিছু হটলো। আমরা মুগ্ধ হয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
মধ্য দুপুরেও গোটা শহর সান্ধ্য অন্ধকারে ঢেকে গেল। জ্বলে উঠলো অটোম্যাটিক স্ট্রিট লাইট। প্রায় প্রতিটা বাড়িতেই পোষা কুকুরের দল ডেকে উঠলো। ওদের মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না, হঠাৎ প্রবল প্রতাপশালী সূয্যি মামার কি হয়ে গেল?
চাকতির উপর চাকতি বসে আছে। নিখুঁত, গোলাকার সোনালী একটি আংটি তখন আকাশে জ্বলজ্বল করছে। একটু পরেই আংটির এক কোণে হীরের ঝলকানি দিয়ে উঠলো। কী অবিশ্বাস্য সুন্দর!

ঘটনাটা মাত্র চার মিনিটের জন্য স্থায়ী ছিল।
দুপুরবেলায় সন্ধ্যা তারা দেখার সৌভাগ্য এই প্রথম হলো। মোবাইল ফোনের ক্যামেরা বের করে প্রচুর ছবি তুললাম, কিন্তু সেই রূপকে ধারণ করে এমন ক্যামেরা কোথায়?
মনে পড়লো পবিত্র কুরআনে বর্ণিত সূরা আন-নাজমের সেই আয়াত, যা আল্লাহ তাঁর রাসূলের মেরাজ ভ্রমন নিয়ে বলেছেন, "নিশ্চয় সে তাঁর পালনকর্তার মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করেছে।"

আমরা অতিক্ষুদ্র সামান্য মানব, আমাদের জন্য পরলোক থেকে বোরাক আসেনা, বেহেস্ত থেকে ফেরেস্তা জিব্রাইল (আঃ) নেমে মেরাজ ভ্রমনে নিয়ে যায় না, তবে আমাদের জন্যও মাঝে মাঝে আমাদের পালনকর্তা তাঁর মহান নিদর্শনাবলী অবলোকন করার সুযোগ দেন। না চাইতেও মহাজাগতিক এই বিস্ময়কর ঘটনা তিনি তাঁর অতি নগন্য দাসকে অবলোকন করার সৌভাগ্য দিয়েছেন, তাঁর প্রতি তাই অশেষ কৃতজ্ঞতা।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৫৯

BM Khalid Hasan বলেছেন: আপনার অনুভূতিটা আমি বুঝতে পাচ্ছি। আমিও ছোটবেলা থেকে এসব দেখা নিয়ে আগ্রহী ছিলাম। তখন এক্স রে পেপার না পেলে দুতিনটা কালো সানগ্লাসের কাচ খুলে নিয়ে দেখতাম। কিন্তু আংশিক গ্রহণ দেখেছি কয়েকবার। বাংলাদেশ থেকে পূর্ণগ্রাস কবে দেখা যাবে জানিনা, হয়তো আমরা দেখে যেতে পারবো না।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৯

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: দেখার আগে পর্যন্ত উপলব্ধি করি নাই, এইটা দেখার মতোই একটা জিনিস।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৫৬

আহমেদ জী এস বলেছেন: মঞ্জুর চৌধুরী,




বিরল একটি মহাজাগতিক দৃশ্যের স্বাক্ষী হয়ে রইলেন। নাসার ছবিতে যে হিরের আংটি দেখেছি তা আপনি স্বচক্ষে দেখেছেন। নিঃসন্দেহে আপনি ভাগ্যবান।
মোবাইলে ছবি যখন তুলে ফেলেছেনই তখন কিছু ছবি এখানে দিতে পারতেন।

১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:০০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ছবিগুলি ভাল আসেনাই। দেখলে মনে করবেন কি এমন অশ্বডিম্ব! অথচ খোলা চোখে এইটা আসলেই একটি অভিজ্ঞতা!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.