নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৫ )

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:১২



শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর লেখা পল্লী-সমাজ পর্ব ১

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ২)

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৩ )

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৪ )

রমেশ উঠিয়া আসিল । জ্যাঠাইমা ব্যস্ত হইয়া বলিলেন একটু দাঁড়া বাবা একটা আলো আনতে বলে দি । আলোয় কাজ নেই জ্যাঠাইমা তুমি উঠো না । বলিয়া রমেশ অন্ধকারেই একপাশে বসিয়া পড়িল। তখন জ্যাঠাইমা প্রশ্ন করিলেন এত রাত্তিরে যে ?
রমেশ মৃদুকন্ঠে কহিল এখনো ত নিমন্ত্রণ করা হয়নি জ্যাঠাইমা তাই তোমাকে জিজ্ঞেস করতে এলুম । তবেই মুশকিলে ফেললি বাবা। এরা কি বলেন ? গোবিন্দ গাঙ্গুলী চাটুয্যেমশাই মেশ বাধা দিয়া বলিয়া উঠিল । জানিনে জ্যাঠাইমা কি এরা বলেন । জানতেও চাইনে তুমি যা বলবে তাই হবে । অকস্মাৎ রমেশের কথার উত্তাপে বিশ্বেশ্বরী মনে মনে বিস্মিত হইয়া ক্ষণকাল মৌন থাকিয়া বলিলেন কিন্তু তখন যে বললি রমেশ এরাই তোর সবচেয়ে আপনার । তা যাই হোক আমার মেয়েমানুষের কথায় কি হবে বাবা ? এ গায়ে যে আবার আর এ গায়েই কেন বলি সব গায়েই এ ওর সঙ্গে খায় না । ও তার সঙ্গে কথা কয় না একটা কাজ কর্ম পড়ে গেলে আর মানুষের দুর্ভাবনার অন্ত থাকে না । কাকে বাদ দিয়ে কাকে রাখা যায় এর চেয়ে শক্ত কাজ আর গ্রামের মধ্যে নেই । রমেশ বিশেষ আশ্চর্য হইল না । কারণ এই কয়দিনের মধ্যেই সে অনেক জ্ঞানলাভ করিয়াছিল । তথাপি জিজ্ঞাসা করিল কেন এ রকম হয় জ্যাঠাইমা ? সে অনেক কথা বাবা। যদি থাকিস এখানে আপনিই সব জানতে পারবি। কারুর সত্যকার দোষ অপরাধ আছে কারুর মিথ্যে অপবাদ আছে তা ছাড়া মামলা মোকদ্দমা মিথ্যে সাক্ষী দেওয়া নিয়েও মস্ত দলাদলি । আমি যদি তোর ওখানে দুদিন আগে যেতুম রমেশ তা হলে এত উদ্যোগ আয়োজন কিছুতে করতে দিতুম না । কি যে সেদিন হবে তাই কেবল আমি ভাবচি বলিয়া জ্যাঠাইমা একটা নিশ্বাস ফেলিলেন । সে নিশ্বাসে যে কি ছিল তাহার ঠিক মর্মটি রমেশ ধরিতে পারিল না । এবং কাহারও সত্যকার অপরাধই বা কি এবং কাহারও মিথ্যা অপবাদই বা কি হইতে পারে তাহাও ঠাহর করিতে পারিল না বরঞ্চ উত্তেজিত হইয়া কহিল কিন্তু আমার সঙ্গে ত তার কোন যোগ নেই । আমি একরকম বিদেশী বললেই হয় কারো সঙ্গে কোন শত্রুতা নেই । তাই আমি বলি জ্যাঠাইমা আমি দলাদলির কোন বিচারই করব না সমস্ত ব্রাহ্মণশূদ্রই নিমন্ত্রণ করে আসব। কিন্তু তোমার হুকুম ছাড়া ত পারিনে তুমি হুকুম দাও জ্যাঠাইমা ।

জ্যাঠাইমা কিছুক্ষণ চুপ করিয়া ভাবিয়া বলিলেন এ রকম হুকুম ত দিতে পারিনে রমেশ । তাতে ভারি গোলযোগ ঘটবে । তবে তোর কথাও যে সত্যি নয় তাও আমি বলিনে । কিন্তু এ ঠিক সত্যি মিথ্যের কথা নয় বাবা । সমাজ যাকে শাস্তি দিয়ে আলাদা করে রেখেচে তাকে জবরদস্তি ডেকে আনা যায় না । সমাজ যাই হোক তাকে মান্য করতেই হবে। নইলে তার ভাল করবার মন্দ করবার কোন শক্তিই থাকে না এ রকম হ লে ত কোনমতে চলতে পারে না রমেশ । ভাবিয়া দেখিলে রমেশ এ কথা যে অস্বীকার করিতে পারিত তাহা নহে কিন্তু এইমাত্র নাকি বাহিরে এই সমাজের শীর্ষস্থানীয়দের ষড়যন্ত্র এবং নীচাশয়তা তাহার বুকের মধ্যে আগুনের শিখার মত জ্বলিতেছিল তাই সে তৎক্ষণাৎ ঘৃণাভরে বলিয়া উঠিল,, এ গাঁয়ের সমাজ বলতে ধর্মদাস গোবিন্দ এরা ত ? এমন সমাজের একবিন্দু ক্ষমতাও না থাকে সেই ত ঢের ভাল জ্যাঠাইমা । জ্যাঠাইমা রমেশের উষ্ণতা লক্ষ্য করিলেন কিন্তু শান্তকণ্ঠে বলিলেন শুধু এরা নয় রমেশ তোমার বড়দা বেণীও সমাজের একজন কর্তা । রমেশ চুপ করিয়া রহিল । তিনি পুনরপি বলিলেন তাই আমি বলি এদের মত নিয়ে কাজ করো গে রমেশ । সবেমাত্র বাড়িতে পা দিয়েই এদের বিরুদ্ধতা করা ভাল নয় ।
বিশ্বেশ্বরী কতটা দূর চিন্তা করিয়া যে এরূপ উপদেশ দিলেন তীব্র উত্তেজনার মুখে রমেশ তাহা ভাবিয়া দেখিল না । কহিল তুমি নিজে এইমাত্র বললে জ্যাঠাইমা নানান কারণে এখানে দলাদলির সৃষ্টি হয় । বোধ করি ব্যক্তিগত আক্রোশটাই সবচেয়ে বেশি । তা ছাড়া আমি যখন সত্যি মিথ্যে কারো দোষ অপরাধের কথাই জানিনে তখন কোন লোককেই বাদ দিয়ে অপমান করা আমার পক্ষে অন্যায় । জ্যাঠাইমা একটুখানি হাসিয়া বলিলেন ওরে পাগলা আমি তোর গুরুজন মায়ের মত। আমার কথাটা না শোনাও ত তোর পক্ষে অন্যায় । কি করবো জ্যাঠাইমা আমি স্থির করেচি আমি সকলকেই নিমন্ত্রণ করবো ।


তাহার দৃঢ়সঙ্কল্প দেখিয়া বিশ্বেশ্বরীর মুখ অপ্রসন্ন হইল বোধ করি বা মনে মনে বিরক্ত হইলেন বলিলেন তা হলে আমার হুকুম নিতে আসাটা তোমার শুধু একটা ছলনামাত্র । জ্যাঠাইমার বিরক্তি রমেশ লক্ষ্য করিল কিন্তু বিচলিত হইল না । খানিক পরে আস্তে আস্তে বলিল আমি জানতুম জ্যাঠাইমা যা অন্যায় নয় আমার সে কাজে তুমি প্রসন্নমনে আমাকে আশীর্বাদ করবে । আমার তাহার কথাটা শেষ হইবার পূর্বেই বিশ্বেশ্বরী বাধা দিয়া বলিয়া উঠিলেন । কিন্তু এটাও ত তোমার জানা উচিত ছিল রমেশ যে আমার সন্তানের বিরুদ্ধে আমি যেতে পারব না ? কথাটা রমেশকে আঘাত করিল । কারণ মুখে সে যাই বলুক কেমন করিয়া তাহার সমস্ত অন্তঃকরণ কাল হইতে এই জ্যাঠাইমার কাছে সন্তানের দাবী করিতেছিল এখন দেখিল এ দাবীর অনেক ঊর্দ্ধে তার আপন সন্তানের দাবী জায়গা জুড়িয়া বসিয়া আছে । সে ক্ষণকালমাত্র চুপ করিয়া থাকিয়াই উঠিয়া দাড়াইয়া চাপা অভিমানের সুরে বলিল কাল পর্য্যন্ত তাই জানতুম জ্যাঠাইমা । তাই তোমাকে তখন বলেছিলুম যা পারি আমি একলা করি তুমি এসো না । তোমাকে ডাকবার সাহসও আমার হয়নি । এই ক্ষুণ্ণ অভিমান জ্যাঠাইমার অগোচর রহিল না । কিন্তু আর জবাব দিলেন না । অন্ধকারে চুপ করিয়া বসিয়া রহিলেন । খানিকপরে রমেশ চলিয়া যাইবার উপক্রম করিতেই বলিলেন তবে একটু দাড়াও বাছা তোমার ভাড়ার ঘরের চাবিটা এনে দিই বলিয়া ঘরের ভিতর হইতে চাবি আনিয়া রমেশের পায়ের কাছে ফেলিয়া দিলেন । রমেশ কিছুক্ষণ স্তব্ধভাবে দাড়াইয়া থাকিয়া অবশেষে গভীর একটা নিঃশ্বাস ফেলিয়া চাবিটা তুলিয়া লইয়া আস্তে আস্তে চলিয়া গেল। ঘণ্টাকয়েকমাত্র পূর্ব্বে সে মনে মনে বলিয়াছিল আর আমার ভয় কি ? আমার জ্যাঠাইমা আছেন । কিন্তু একটা রাত্রিও কাটিল না । তাহাকে আবার নিঃশ্বাস ফেলিয়া বলিতে হইল না । আমার কেউ নেই জ্যাঠাইমাও আমাকে ত্যাগ করিয়াছেন ।

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সকাল ১১:৫৭

থিওরি বলেছেন: আপনার দেখি অনেক ধৈর্য!
ভালো উদ্যোগ।
কিন্তু! Click This Link
আমার মনে হয় আটি ভেঙে শঁাস দিতে হবে না!

২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০৩

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ লিং দেওয়ার জন্য ।
তবে যার যার কাজ তার মত করে করাই ভালো ।

২| ২৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

আমি মিন্টু বলেছেন: দারুন কালেকশন দিয়েছেনতো ভাই ধন্যবাদ ।

০২ রা অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ১:১৬

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ মিন্টু ভাই

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.