নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ

ব্লগার মাসুদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৮ )

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৭:২১



শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর লেখা পল্লী-সমাজ পর্ব ১

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ২)

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৩ )

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৪ )
শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৫ )

শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৬ )
শ্রীশরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় এর সামগ্রি (পল্লী সমাজ পর্ব ৭ )

ইস্কুলের কথায় রমেশ একেবারে সজাগ হইয়া উঠিল । হেডমাস্টার মহাশয়কে বৈঠকখানায় লইয়া গিয়া একটি একটি করিয়া সমস্ত সংবাদ গ্রহণ করিতে লাগিল । মাস্টার পণ্ডিত চারিজন এবং তাহাদের হাড়ভাঙা খাটুনির ফলে গড়ে দুইজন করিয়া ছাত্র প্রতি বৎসর মাইনার পরীক্ষায় পাস করিয়াছে । তাহাদের নাম ধাম, বিবরণ পাড়ুইমহাশয় মুখস্থর মত আবৃত্তি করিয়া দিলেন। ছেলেদের নিকট হইতে যাহা আদায় হয় । তাহাতে নীচের দুজন শিক্ষকের কোনমতে ও গভর্নমেন্টের সাহায্যে আর একজনের সঙ্কুলান হয় শুধু একজনের মাহিনাটাই গ্রামের ভিতরে এবং বাহিরে চাঁদা তুলিয়া সংগ্রহ করিতে হয় । এই চাঁদা সাধিবার ভারও মাস্টারদের উপরেই তাঁহারা গত তিন চারি মাস কাল ক্রমাগত ঘুরিয়া ঘুরিয়া প্রত্যেক বাটীতে আট দশবার করিয়া হাঁটাহাঁটি করিয়া সাত টাকা চারি আনার বেশি আদায় করিতে পারেন নাই । কথা শুনিয়া রমেশ স্তম্ভিত হইয়া রহিল। পাঁচ ছয়টা গ্রামের মধ্যে এই একটা বিদ্যালয় এবং এই পাঁচ ছয়টা গ্রামময় তিন মাসকাল ক্রমাগত ঘুরিয়া মাত্র সাত টাকা চারি আনা আদায় হইয়াছে । রমেশ প্রশ্ন করিল আপনার মাহিনা কত ?

মাস্টার কহিল রসিদ দিতে হয় ছাব্বিশ টাকার পাই তের টাকা পনের আনা । কথাটা রমেশ ঠিক বুঝিতে পারিল না তাহার মুখপানে চাহিয়া রহিল । মাস্টার তাহা বুঝাইয়া বলিল আজ্ঞে গভর্নমেন্টের হুকুম কিনা তাই ছাব্বিশ টাকার রসিদ লিখে দিয়ে সব-ইন্‌স্পেক্টারবাবুকে দেখাতে হয় নইলে সরকারী সাহায্য বন্ধ হয়ে যায় । সবাই জানে আপনি কোন ছাত্রকে জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন আমি মিথ্যে বলচি নে । রমেশ অনেকক্ষণ চুপ করিয়া থাকিয়া জিজ্ঞাসা করিল এতে ছাত্রদের কাছে আপনার সম্মানহানি হয় না ? মাস্টার লজ্জিত হইল। কহিল কি করব রমেশবাবু বেণীবাবু এ কয়টি টাকাও দিতে নারাজ । তিনি কর্তা বুঝি ? মাস্টার একবার একটুখানি দ্বিধা করিল কিন্তু তাহার না বলিলেই নয় । তাই সে ধীরে ধীরে জানাইল যে তিনিই সেক্রেটারী বটে কিন্তু তিনি একটি পয়সাও কখনো খরচ করেন না । যদু মুখুয্যেমহাশয়ের কন্যা সতীলক্ষ্মী তিনি তাঁর দয়া না থাকিলে ইস্কুল অনেক দিন উঠিয়া যাইত। এ বৎসরই নিজের খরচে চাল ছাইয়া দিবেন আশা দিয়াও হঠাৎ কেন যে সমস্ত সাহায্য বন্ধ করিয়া দিয়াছেন তাহার কারণ কেহই বলিতে পারে না। রমেশ কৌতূহলী হইয়া রমার সম্বন্ধে আরও কয়েকটি প্রশ্ন করিয়া শেষে জিজ্ঞাসা করিল তাঁর একটি ভাই এ ইস্কুলে পড়ে না ? মাস্টার কহিল যতীন ত ? পড়ে বৈ কি । রমেশ বলিল আপনার ইস্কুলের বেলা হয়ে যাচ্ছে আজ আপনি যান কাল আমি আপনাদের ওখানে যাব । যে আজ্ঞে বলিয়া হেডমাস্টার আর একবার রমেশকে প্রণাম করিয়া জোর করিয়া তাহার পায়ের ধূলা মাথায় লইয়া বিদায় হইল ।

বিশ্বেশ্বরীর সেদিনের কথাটা সেইদিনই দশখানা গ্রামে পরিব্যাপ্ত হইয়া গিয়াছিল । বেণী লোকটা নিজে কাহারও মুখের উপর রূঢ় কথা বলিতে পারিত না তাই সে গিয়া রমার মাসিকে ডাকিয়া আনিয়াছিল । সেকালে নাকি তক্ষক দাত ফুটাইয়া এক বিরাট অশ্বত্থ গাছ জ্বালাইয়া ছাই করিয়া দিয়াছিল । এই মাসিটিও সেদিন সকালবেলায় ঘরে চড়িয়া যে বিষ উদ্গীর্ণ করিয়া গেলেন তাহাতে বিশ্বেশ্বরীর রক্তমাংসের দেহটা কাঠের নয় বলিয়াই হউক কিংবা এ কাল সে কাল নয় বলিয়াই হউক জ্বলিয়া ভস্মস্তূপে পরিণত হইয়া গেল না । সমস্ত অপমান বিশ্বেশ্বরী নীরবে সহ্য করিলেন । কারণ ইহা যে তাহার পুত্রের দ্বারাই সংঘটিত হইয়াছিল সে কথা তাহার অগোচর ছিল না । পাছে রাগ করিয়া একটা কথার জবাব দিতে গেলেও এই স্ত্রীলোকের মুখ দিয়া সর্বাগ্রে তাহার নিজের ছেলের কথাই বাহিরে প্রকাশ হইয়া পড়ে এবং তাহা রমেশের কর্ণগোচর হয় এই নিদারুণ লজ্জার ভয়েই সমস্ত সময়টা তিনি কাঠ হইয়া বসিয়া ছিলেন ।

তবে পাড়াগাঁয়ে কিছুই ত চাপা থাকিবার জো নাই । রমেশ শুনিতে পাইল । জ্যাঠাইমার জন্য তাহার প্রথম হইতেই বার বার মনের ভিতরে উৎকণ্ঠা ছিল এবং এই লইয়া মাতা পুত্রে যে একটা কলহ হইবে সে আশঙ্কাও করিয়াছিল । কিন্তু বেণী যে বাহিরের লোককে ঘরে ডাকিয়া আনিয়া নিজের মাকে এমন করিয়া অপমান ও নির্যাতন করিবে এই কথাটা সহসা তাহার কাছে একটা সৃষ্টিছাড়া কাণ্ড বলিয়া মনে হইল এবং পরমুহূর্তেই তাহার ক্রোধের বহ্নি যেন ব্রহ্মরন্ধ্র ভেদ করিয়া জ্বলিয়া উঠিল । ভাবিল ও বাড়িতে ছুটিয়া গিয়া যা মুখে আসে তাই বলিয়া বেণীকে গালাগালি করিয়া আসে কারণ যে লোক মাকে এমন করিয়া অপমান করিতে পারে তাহাকেও অপমান করা সম্বন্ধে কোনরূপ বাছ বিচার করিবার আবশ্যকতা নাই । কিন্তু পরক্ষণেই মনে হইল তাহা হয় না । কারণ জ্যাঠাইমার অপমানের মাত্রা তাহাতে বাড়িবে বৈ কমিবে না । সেদিন দীনুর কাছে এবং কাল মাস্টারের মুখে শুনিয়া রমার প্রতি তাহার ভারি একটা শ্রদ্ধার ভাব জাগিয়াছিল। চতুর্দিকে পরিপূর্ণ মূঢ়তা ও সহস্র প্রকার কদর্য ক্ষুদ্রতার ভিতরে এক জ্যাঠাইমার হৃদয়টুকু ছাড়া সমস্ত গ্রামটাই আধারে ডুবিয়া গিয়াছে বলিয়া যখন তাহার নিশ্চয় বিশ্বাস হইয়াছিল তখন এই মুখুয্যে বাটীর পানে চাহিয়া একটুখানি আলোর আভাস তাহা যত তুচ্ছ এবং ক্ষুদ্র হোক তাহার মনের মধ্যে বড় আনন্দ দিয়াছিল । কিন্তু আজ আবার এই ঘটনায় তাহার বিরুদ্ধে সমস্ত মন ঘৃণায় ও বিতৃষ্ণায় ভরিয়া গেল ।

বেণীর সঙ্গে যোগ দিয়া এই দুই মাসি ও বোনঝিতে মিলিয়া যে অন্যায় করিয়াছে তাহাতে তাহার বিন্দুমাত্র সংশয় রহিল না । কিন্তু এই দুইটা স্ত্রীলোকের বিরুদ্ধেই বা সে কি করিবে এবং বেণীকেই বা কি করিয়া শাস্তি দিবে তাহাও কোনমতে ভাবিয়া পাইল না ।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১৮

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৪

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই । আপনার মন্তব্যে খুশি হোলাম ।

২| ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:১৩

রুদ্র জাহেদ বলেছেন: বাহ!দারুণ কালেকশন, খুব ভালো লাগলো...

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৫

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।

৩| ০২ রা জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:১৩

এহসান সাবির বলেছেন: ইংরেজী নতুন বছরের শুভেচ্ছা।

ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৬

ব্লগার মাসুদ বলেছেন: ধন্যবাদ এহসান সাবির ভাই । আপনার জন্যও নতুন বছরের শুভেচ্ছা থাকলো ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.