নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ডায়রি

ইব্রাহীম সাজ্জাদ

নিজের সম্পর্কে বলার মতো তেমন কিছুই নাই

ইব্রাহীম সাজ্জাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের স্ত্রী দিনময়ী দেবী

০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৪৮



ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মেধার পরিচয় ছোটবেলায় ছড়িয়ে পড়েছিল। বীরসিংহ থেকে বাবার সাথে কলকাতা আসার সময় পথের দুধারের মাইলস্টোনের লেখা দেখে One two three এসব শিখে ফেলেন। ইংরেজি স্কুলের প্রধান শিক্ষক তাঁর ছোটখাটো চেহারা দেখে এবং সদ্য গ্রাম থেকে আসা বালক হিসেবে পিতার সামনেই বলেন এই ছেলে ইংরেজি স্কুলে পড়তে পারবে না। ছোট বিদ্যাসাগর সাথে সাথেই জবাব দেন
" না আমি পারবো। " এতটুকু ছেলের এই সাহসী কথা শুনে হেডমাস্টার কিছুটা বিরক্ত আর কিছুটা অবাক হয়ে তাকে ইংরেজি যোগভাগ কয়েকটা অংক করতে দেয় । বিদ্যাসাগর সব কটা অংক ঠিক ঠিকভাবে করে দেন। স্কুলে তাকে ভর্তি করে নেয়া হয়।

এরপর বিস্মিত হলেন পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। কারণ বিদ্যাসাগরকে বাড়িতে কতটুকু বিদ্যা তিনি দিয়েছেন, সেটা তাঁর জানা। তাই জিজ্ঞেস করেন, ' কি রে আমি তো তোকে ইংরেজি 1.2.3 এসব শিখাইনি। তুই মাস্টারমশায়ের ইংরেজি অঙ্ক করে দিলি? ' বিদ্যাসাগরকে অঙ্ক তিনি শিখিয়েছিলেন কিন্তু সেটা বাংলা অক্ষরে। বিদ্যাসাগর জবাব দেন, ' কেন আমি যে পথে আসতে আসতে ইংরজিগুলো 1.2.3 এসব শিখে ফেললাম। '

বিদ্যাসাগর অঙ্ক শিখেছিলেন তাই শিক্ষকের বাংলার পরিবর্তে লেখা ইংরেজি অক্ষর বুঝতে কোন অসুবিধা হয় নি। অঙ্ক তার জানাই ছিল। শুধু অক্ষরের বদল। অতটুকু বয়সে বিদ্যাসাগর মাথাটা খাটানো শিখেছিলেন। আর মাথা খাটানোর জন্যই সাহস ছিল তার অসীম। তাই নিজের জোড়েই ভর্তি হন ইংরেজি স্কুলে।

আর বিদ্যাসাগরের এইসব বুদ্ধিমত্তার কথা ছড়িয়ে পড়েছিল। তাই অনেকেই বিদ্যাসাগরের সাথে মেয়ের বিয়ে দিতে আগ্রহী হয়ে ওঠে। যেটা এখনও গ্রাম বাংলায় দেখা যায়। বীরসিংহের পাশেই ক্ষীরপাই গ্রাম। সেই গ্রামের শ্রীযুক্ত শত্রুঘ্ন ভট্টাচার্যের মেয়ে দিনময়ী দেবী তখন বালিকা বিদ্যালয়ে পড়ে। বসয় মাত্র সাত বছর। খুব কম বয়সে বিয়ে করার ইচ্ছা না থাকলেও পিতার অনুরোধে বিদ্যাসাগর বিয়ে করেন। উল্লেখ্য সেসময় মেয়ের বিয়ে দিতে পারলে পিতার স্বর্গলাভ নিশ্চিত ছিল সেকারণে এরকম বয়সেই অনেকের বিয়ে দেয়া হতো। ভদ্রঘরের ছেলেরা বিয়ে করলেও স্ত্রী পিরিয়ড হওয়ার আগে পর্যন্ত মায়ের সাথে ঘুমাতেন। তারা স্ত্রীসহবাস থেকে বিরত থেকে ভাইবোনের মতোই সহ-অবস্থানে থাকত।

আমাদের মাথায় এক চিন্তায় আরেক চিন্তা ঢোকে তাই প্রাসঙ্গিকভাবে বিষয়টা উল্লেখ করলাম।

দিনময়ী দেবী সাথে বিয়ের পর বিদ্যাসাগরের লেখাপড়া এবং অন্যন্য কাজে মনোযোগ বাড়ে। নানা দিক থেকে উন্নতি করেন।
বিদ্যাসাগরের মনে কোনরূপ ধর্মীয় গোঁড়ামি না থাকলেও স্ত্রীর সাবীত্রী ব্রত উদযাপনে সর্বদা সহায়তা করেছিলেন।
বিদ্যাসাগর রাত জেগে জেগে বই লিখছিলেন, দিনময়ী দেবী জিজ্ঞেস করেন তুমি কি লিখছো ? জবাবে বিদ্যাসাগর বলেন, ' সীতার বনবাস। ' দিনময়ী দেবী বলেন, ' তুমি সীতাকে বোঝ? বিদ্যাসাগর বললেন, কেন বুঝবোনা। ' দিনময়ী দেবী বলেন ও পাড়ার চঞ্চলাকে আমার খুব হিংসে হয়। বিদ্যাসাগর বলেন সুন্দরী নাকি? দিনময়ী দেবী জানান, ' সুন্দরী না হলেও তার ভাগ্য ভালো, তার স্বামী বিখ্যাত বিদ্যাসাগর নয়। ' অন্য একদিন বিদ্যাসাগর লিখছিলেন, দিনময়ী দেবী বলেন,আজকাল মেয়েরাও লেখাপড়া শিখছে। বিদ্যাসাগর জানান, তুমিও শিখতে পারো। আমি আরো কয়েকটি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করছি তুমি পড়তে চাইলে ব্যবস্থা করে দেবো।, দিনময়ী দেবী বলেন আমাদের সময় বিদ্যাসাগর থাকলে আমরাও পড়তে পারতাম, এই বয়সে আর হবে না। বিদ্যাসাগর বলেন,পড়ার বয়স কি?
বিদ্যাসাগর জীবনে এত বেশী কর্মব্যস্ত মানুষ ছিলেন যে কিছু কিছু ব্যাপার সামলাতে পারেন নি। যেমন তাঁর পিতা ঠাকুরদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁকে বুঝে যতটা পথে তুলে দিতে পেরেছিলেন বিদ্যাসাগর তাঁর একমাত্র ছেলেকে সেটা পারেননি। বিদ্যাসাগরের সমস্ত কৃতিত্ব ধূলিসাৎ করে দেয়ার জন্য এক ছেলে নারায়ণ চন্দ্রই যতেষ্ট ছিল। যাইহোক এত প্রসঙ্গ এখানে শেষ করা সম্ভব নয় তাই দিনময়ী দেবীর কথায় ফিরে আসি।

বিদ্যাসাগরের বিভিন্ন জীবনী গ্রন্থ গুলিতে তাঁর স্ত্রী'র ব্যক্তিগত জীবন সম্বন্ধে বিশেষ কিছু পাওয়া যায় না। বিহারীলাল সরকার তাঁর 'বিদ্যাসাগর' গ্রন্থে লিখেছেন - "পত্নী দিনময়ী দেবী প্রকৃত গৃহিণী ছিলেন, তিনি স্বহস্তে রন্ধন করিয়া লোকজনকে খাওয়াইতে বড় ভালবাসিতেন। দানধ্যানেও তাঁর পূর্ণ প্রবৃত্তি ছিল। বর্জিতপুত্র ( ত্যাজ্যপুত্র) নারায়ণে'র জন্যে পতির সহিত তাঁহার বাদবিসংবাদ ঘটিত। তিনি গোপনে পুত্রকে অর্থ সাহায্য করিতেন। এমনকি নিজের অলঙ্কার পর্যন্ত বন্ধক দিতেন।"

দিনময়ী দেবী পুত্র নারায়ণ, তিন মেয়ে, তাঁদের জামাতা, পুত্রবধূ, পৌত্র, দৌহিত্র'দের নিয়ে সংসার করেছিলেন। কিন্তু একমাত্র পুত্র নারায়ণ চন্দ্রে'র অসৎ, নেশাগ্রস্থ জীবন যাপনের জন্য বিদ্যাসাগর পুত্রকে ত্যাগ করেন।

১৮৮৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে রক্তআমাশয় রোগে আক্রান্ত হন দিনময়ী দেবী। মৃত্যুশয্যায় তিনি স্বামীকে শেষ অনুরোধ জানান পুত্রকে ক্ষমা করার জন্য। ১৮৮৮, ১৩ আগস্ট দিনময়ী দেবী মারা যান । প্রিয়তমা পত্নীর বিয়োগ ব্যথায় বিদ্যাসাগর কাতর হয়েছিলেন। তবে তাঁর নিঃসঙ্গ জীবন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ বিকাল ৫:৫৫

বাকপ্রবাস বলেছেন: ছবিটা দেখে মা এর কথা মনে পড়ে গেল, আমার মা এর এমন একটা ছবি আছে, যেটা আমি মানি ব্যাগে রাখি।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৯

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: তিনি গোপনে পুত্রকে অর্থ সাহায্য করিতেন। এমনকি নিজের অলঙ্কার পর্যন্ত বন্ধক দিতেন।"
সকল মাতা তার মাতৃ স্নেহে কাতার থাকে,
ছেলের জন্য অকাতরে সবকি ছু প্রদানে ব্যতিব্যস্ত থাকে ।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ৮:৪০

রাজীব নুর বলেছেন: বিদ্যাসাগরের স্ত্রী খুব মমতাময়ী ছিলেন। তিনি আর তার স্বামী মিলে দরিদ্রদের খুব সাহায্য করতেন।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১১:৩৯

ওমেরা বলেছেন: বেশ ভালো লাগল দিনময়ী দেবী সম্পর্কে জেনে।

৫| ০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:০৪

সনেট কবি বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

৬| ১৩ ই নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৭

ইব্রাহীম সাজ্জাদ বলেছেন: সকলকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। আমি এই ব্লগে নতুন। কোন ভুল-ত্রুটি হলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.