নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ডায়রি

ইব্রাহীম সাজ্জাদ

নিজের সম্পর্কে বলার মতো তেমন কিছুই নাই

ইব্রাহীম সাজ্জাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

চিলেকোঠার সেপাইয়ের গুন্ডাকে বউ দেয়া অফিসার

২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:১৩



শিক্ষিত মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী কতটা স্বার্থপর আত্নকেন্দ্রিক অমানুষ হতে পারে তা আখতারুজ্জামান ইলিয়াস চিলেকোঠার সেপাই উপন্যাসে তুলে ধরেছেন।
বেবীট্যাক্সি থামিয়ে নিজের বউকে নিয়ে যায় গুন্ডারা আর স্বামী দন্ডায়মান। গুন্ডারা এক ঘন্টার মধ্যে ফেরত দেবে সেই প্রতীক্ষায় চুপচাপ থাকে শিক্ষিত চাকরিজীবী হ্যাজবেন্ড। স্বাধীনতার কয়েক বছর আগের এই চিত্রের কি কোন বদল হয়েছে আজকের বাংলাদেশে? তারা নিজের গন্ডির বাইরে সমাজ-রাষ্ট্রের কোন কিছু নিয়ে মাথা ঘামায় না। দুনিয়া ভেসে গেলেও তাদের কিচ্ছু যায় আসে না। এই মধ্যবিত্তরা মনে করে তারা পরিবারের জন্যই নিবেদিত । মানুষের প্রতি কোনরূপ দায়হীন সমাজের এই বৃহত্তর অংশ আসলেই কি পরিবারকে ভালোবাসে? প্রচন্ড সুবিধাবাদী এই শ্রেণি পূঁজিবাদী সমাজে সবসময় মূল্যবোধের সংকটে থাকে এবং সবকিছু থেকে গা বাঁচিয়ে চলার চেষ্টা করে। কিন্তু কতটুকু পারে?

অনেকটা ছেঁড়া কাপড়ে সম্ভ্রম ঢাকার চেষ্টা। শেষ অবধি হতে হয় দিগম্বর। সেকারণে আইয়ুব খানের এন.এস.এফের গুন্ডা কিংবা আইয়ুব খানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে ভয় পায়। কিন্তু দিগম্বর হওয়ার পর আর ঘুরে না দাঁড়িয়ে উপায় থাকেনা। সেই কারণেই দেয়ালে ঠেকে গিয়ে সেসময় মানুষ ঘুরে দাঁড়ায়। আইয়ুব খানের সমস্ত অবিচারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন শুরু করে। ইতিহাসে যা উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান নামে খ্যাত। এই ফেটে পড়ার উপমাটাকে আখতারুজ্জামান ইলিয়াস সমাজের মধ্যবিত্ত চাকরিজীবী সুবিধাবাদী শ্রেণির এই শিক্ষিত চাকরিজীবীর ব্যক্তিত্বের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।

ঈদের দিন । খিজির স্কুটার নিয়ে তার বউয়ের ছেলে জুম্মনকে খুঁজতে যায় তালতলায় । বস্তিতে খুঁজতে খুঁজতে এক সময় এক বেশ্যার দালাল খিজিরকে অফার দেয়, ' খালি খালি ঘুরাঘুরি করতাছেন। আমার লগে আসেন। গেরস্থ ভালো মাল আছে! ' লোকটি তাকে ভদ্রলোকের মর্যাদা দেওয়ায় খিজির খুশি হয়,অবাকও হয়, বিচলিত হয় আরো বেশি। গৃহস্থ ঘরের এক ভদ্রমহিলার সঙ্গে শোবে কি-না খিজির এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই লোকটি ভালো করে তার চেহেরা দেখে কেটে পড়ে। '

খিজিরের নাম হাড্ডি খিজির। উপন্যাসে তার নামের সাথে চেহারার মিল আছে শতভাগ। খিজির সেখানে জুম্মনকে না পেয়ে স্কুটার নিয়ে চলে আসে নাজিমুদ্দিন রোডে। রোডের মাথায় স্কুটারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা তরুণ দম্পতি ইন্দিরা রোডে যেতে চাইলে সে তুলে নেয়।গাড়িতে বসে তারা মিটার নিয়ে হাসাহাসি করে । খিজিরের কানে সেসব কথার প্রতিধবনি আসে মাত্র । জুম্মনকে না পাওয়ায় সেই ধন্ধই ঘুরপাক খায় খিজিরের মাথায় । দম্পতির চেহারার পরিচয় তুলে ধরা হয়েছে এভাবে, ' পুরুষটি বেশ ডাঁটের। দামী পাজামা পাঞ্জাবির ওপর কারুকাজ করা ছাইরঙ শাল। চোখে পাতলা ফ্রেমের চোশমা। এই চেহারার মানুষের হুকুম অমান্য করা কঠিন। মেয়েটার ধবধবে ফর্সা গায়েও লাল শাল। মিহি ও আদুরে গলায় সে বলে, চলো না ভাই! ' স্টার্ট দিতে গিয়েও খিজির থামে, একটু আগে ঐ ভাউরা শালা যে গৃহস্থ ঘরের মেয়ের কথা বলেছিল সে কি দেখতে এরকম হতো? চলেন। ' খিজির গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলা শুরু করে।
স্কুটার পাবলিক লাইব্রেরির সামনে এলে তিন তরুন মাইক্রো দিয়ে স্কুটার আটকিয়ে বলে , ' এতো রাতে মেয়েছেলে নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ?' জোড়ে ধমক দিয়ে খিজিরকে বলে, ' ইঞ্জিন থামা শালা! শুওরের বাচ্চা কেটে পড়ার তালে আছে, না ?
ধমকের পর ইঞ্জিন বন্ধ হয়ে যায়। ড্যাগারধারী এক তরুণ বলে, ' ভাবীর সংগে একটু ট্টিপ মেরে আসবো। আপনি ওয়েট করেন, ম্যাটার অফ এ্যান আওয়ার! '

সুদর্শণ আরোহী স্বামী হাত জোড় করে, ' আপনাদের পায়ে পড়ি ভাই। আমি একজন সেকশন অফিসার। বিশ্বাস করেন। ভাই শোনেন ---।'
তরুণদের একজন বলে, ' আপনার ভাই আবার কে? পা ছেড়ে দিন বলছি। '
স্বামী আবার বলে, ' প্লিজ স্যর! প্লীজ বি কাইন্ড এন্ড মার্সিফুল স্যর। আমি একজন সেকশন অফিসার স্যর, মিনিস্ট্রি অফ হোম, গভর্নমেন্ট অফ ইস্ট পাকিস্তান। আপনারা কাল সেক্রেটারিয়েটে আসেন, কাল তো ছুটি, বুধবার আসেন, আমি গেটে পাস পাঠিয়ে দেবো, ডবল প্রোটেকটেড এরিয়ার গোলাপি রঙের পাস স্যর। আপনাদের কোন সার্ভিসে আসতে পারলে স্যর--।'

তার কথা শুনে এক তরুন বলে সেকশন অফিসার? আমি আপনার মিনিস্ট্রির জয়েন সেক্রেটারি, আর উনি আপনার চীফ সেক্রেটারি। নীলডাউন অবস্থায় সেকশন অফিসার তিনজনের দিকে তাকিয়ে হাত তুলে ৩ বার স্লামালেকুম স্যর বলে। '

ড্যাগারধারী বলে প্রমোশন পাওয়ার জন্যে বৌকে বসের বেডরুমে পাস করবি না? এখন থেকে প্রাকটিস কর!'
রিভলভারধারী এক তরুন আস্তে করে ধমক দিয়ে বলে, মিসবিহেভ করো কেন? গো এহেড! তারপর সেকশন অফিসারকে আশ্বাস দেয়, নাথিং টু ওরি এবাউট। আমাদের ম্যাক্সিমাম এক ঘন্টা। কুইক মেরে দেবো। '
মেয়েটিকে পাঁজাকোলা করে তুলে ৩ জনের এই তরুনসমাজ উল্টোদিকের ফুটপাত দিয়ে রেসকোর্সের দিকে চলে যায়।

লোকটি ফ্যালফ্যাল করে তাকায়। খিজির বলে চলেন থানায় কিংবা হলের ছেলেদের ডেকে আনি। লোকটির ফোঁপানো কন্ঠস্বর গুমড়ে উঠে, না। তা হয় না। আরো বিপদ হবে। ওরা এক ঘন্টা ওয়েট করতে বললো না? এসে আমাকে না পেলে ফায়ার হয়ে যাবে। চাকরি বাকরির কথা সব বলে ফেললাম, শুওরের বাচ্চারা আমার ক্যারিয়ার নষ্ট করে দেবে। '

লোকটি খিজিরের উদ্দেশ্যে বলে, তুমি আমাকে একা রেখে চলে যেও না ভাই! '

খিজির বলে, ' অরা আপনাগো গাড়ি কইরা পৌঁছাইয়া দিবো। ' যেতে ধরে খিজির ফিরে এসে ভাড়াটা চায়। লোকটা পকেট থেকে টাকা বের করে ভিজে গলায় বলে, ' তোমরা মানুষ না! মানুষ হলে এ সময় কেউ--।'

স্কুটার রাস্তায় গড়িয়ে দিলে খিজির তার উক্তিকে স্বীকার করে চিৎকার করে, ' না '। আমরা কুত্তার বাচ্চা, মানুষ হইলেন আপনেরা। '

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১০:২১

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: জাল স্বপ্ন সপ্নের জাল

২| ২৫ শে নভেম্বর, ২০১৮ রাত ১১:২৬

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: উপন্যাসটা পড়া হয়নি। পড়তে হবে দেখছি।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ ভোর ৫:১১

ইব্রাহীম সাজ্জাদ বলেছেন: সময় করে পড়ে নিয়েন

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:৫৯

রাজীব নুর বলেছেন: উপন্যাসটা পড়েছি।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৫

বিবেকবান জড় বলেছেন: পড়তে হবে দেখছি

৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৩৮

পাঠকের প্রতিক্রিয়া ! বলেছেন: ভাই, কাহিনীটা স্রেফ গল্প। এটা সিনেমা না যে নায়ক একাই ১০০জনকে মেরে হিরোইনকে উদ্ধার করবে, এটা উপন্যাস। উপন্যাসের মূল ভিলেন যে রহমতউল্লাহ, সেটা বলবে কে?

৬| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৫১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: স্যার একজন শক্তিশালী লেখক। তার প্রতিটি সৃষ্টি তার প্রমান বহন করে।। সুন্দর শেয়ার।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:০০

ইব্রাহীম সাজ্জাদ বলেছেন: ধন্যবাদ

৭| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৮ রাত ১২:৩৩

জমাতুল ইসলাম পরাগ বলেছেন: এতটুকুতেই শেষ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.