নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পারিবারিক নাম পরিচয় থাকলেও নিজের কাছে আমি নাম-পরিচয়হীন । আমি খুব বন্য । আমার ধর্ম-সমাজ কেবলই \'আমি\' । আমি তথাকথিত সমাজের \'অসামাজিক\'...

নাফিয়া মারিয়া

আমি পথ ভোলা এক পথিক, তবু চলন্ত ঘূর্ণি...

নাফিয়া মারিয়া › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভয়!

২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:০০



যখন ছোটো ছিলাম, গ্রামের বাড়িতে গেলে প্রায়ই দেখতাম কোনো হিন্দু ভিক্ষুক বাড়িতে ভিক্ষা চাইতে আসলে দূর! দূর! করে তাড়িয়ে দেয়া হতো । আর মুসলিম, পাঞ্জাবি-টুপি পরা কোনো ভিক্ষুক আসলে তাকে ভিক্ষা দেয়া হতো । মনে প্রশ্ন জাগতো, "অভাব দেখে ভিক্ষা দিতে হয় নাকি ধর্ম দেখে?" প্রশ্নটা একটু ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বড় কাউকে জিজ্ঞেস করতাম । উত্তর আসতো, "হিন্দুদের ভিক্ষা দিলে গুনাহ হয় । হাশরের ময়দানে আল্লাহ যখন জিজ্ঞেস করবে, টাকা-পয়সা কোন দিকে খরচ করেছো, তখন যদি বলি, শিরককারীদের দিয়ে এসেছি তাহলে আল্লাহ সাথে সাথে অগ্নিশর্মা হয়ে জাহান্নামে পাঠাবেন ।" শুনে মনটা বিদ্রোহ করে উঠতো । মনে প্রশ্ন জাগতো, "ক্বোরান মতে আল্লাহ-ই তো অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের ভাগ্য নির্ধারন করে দিয়েছেন সে কোন ধর্মের হবেন, তাদের পরকালে কিছু থাকবে না । তাহলে তাদের দারিদ্র্যের ভারটাও তো তাঁর-ই নেয়া উচিত । উল্টো তিনিই তাদের বঞ্চিত করবেন?" প্রশ্নটা করতে পারতাম না । ভয় লাগতো, আল্লাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করলে যদি গুনাহ হয়!

যখন আরেকটু বড় হলাম, বাসায় একজন হুজুর আসতেন ক্বোরান-হাদিস শেখাতে । অনেক সময় অনেক প্রশ্ন করতাম । প্রত্যেকটা প্রশ্নের পরে একটাই উত্তর পেতাম, "আল্লাহ-ই ভালো জানেন ।" আবার প্রশ্নগুলো বড় অনেককেই জিজ্ঞেস করতাম । তাদেরও একই উত্তর । আর এসব প্রশ্নের কারণে অনেকে আমাকে অনেক বাজে কথা বলতেন । কেউ কেউ বলতেন, "স্কুলে পড়াইলে তো মাইয়ারা এমনই হয় ।" আর দাদী-নানীদের মুখে শুনতাম, "ইংরেজি শিক্ষা, বিজ্ঞান শিক্ষা মানুষকে মিথ্যা কথা বলে ভাওতা দিয়ে ধর্ম থেকে দূরে নিয়ে যায় ।" কিন্তু বিজ্ঞান তো প্রমাণ ছাড়া কথা বলে না!

যখন হাইস্কুলে উঠলাম, বাবা একদিন বললো তার একজন হুজুর ছিলেন, অনেক বড় আলেম । তিনি ঢাকা এসেছেন । মা বললো দেখা করে আসতে । বাবা বললো "যাওয়া যাবে না, কারণ তিনি যদি শুনেন আমার মেয়েরা স্কুলে পড়ে তাহলে ছিঃ ছিঃ বলবেন ।" শুনে খুব আঘাত পেয়েছিলাম সেদিন ।

যখন মাধ্যমিকে উঠলাম, জীবন দেখে দেখে আস্তে আস্তে সবকিছু সম্পর্কে বিশ্বাস উঠে যেতে শুরু করেছিলো । সে সময়কার একটা ঘটনা- মানুষের মানসিক সমস্যা সম্পর্কে খুব আগ্রহী ছিলাম । তো একদিন নানীর কি যেন হলো । অনেকদিন থেকেই সমস্যা, কিন্তু সেদিন খুব বেড়ে গেলো । সবাই খুব ভয় পেয়ে গেলো । আমি আবিষ্কার করলাম, নানী সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত । সবাইকে ব্যাপারটা বোঝাতে চেষ্টা করলাম, সবাই বললো আমিই পাগল হয়ে গেছি । কারণ তাদের কাছে স্পষ্টত সেটা 'জ্বিনের আছর' । মসজিদের ইমাম আসলেন, আমি তাকে বললাম, তিনি আমার কথাকে পাগলের প্রলাপ হিসেবে ধরে নিয়ে পানি পড়া দিয়ে চলে গেলেন । খুব অদ্ভুত লেগেছিল ব্যাপারটা ।

আর এখন শুনি, মানুষ যতই বেশিদূর পড়ালেখা করে, ততই ধর্মে বিশ্বাস উঠে যায় । উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে খুব কম মানুষকেই মুসলিম হিসেবে পাওয়া যায় । কথাগুলো শুনে মনে একটা প্রশ্নই জাগে, "তার মানে যুক্তির সামনে ধর্ম টিকে থাকতে পারে না, তাই নয় কি???"
বিশ্বাসটা এখন আর একটা ক্যাটাগরিতে আবদ্ধ নেই । তাই এখন ভয় হয়... প্রচন্ড ভয় হয়.... বিদ্রোহ করতে চাই, কিন্তু কষ্ট পাই... এটাই বোধহয় স্বাভাবিক । প্রকৃতির নিয়ম নাকি আল্লাহর নিয়ম জানি না ।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:০৫

কলাবাগান১ বলেছেন: "নানী সিজোফ্রেনিয়ায় আক্রান্ত"
আরে না চাইপা ধরলে নানীর জীন বাপ বাপ করে পালাবে

২| ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:০৭

বিজন রয় বলেছেন: নিজের কাছে যা ভাল মনে হয় তাই করুন।
কোন ভয় নেই।

৩| ২৭ শে মে, ২০১৬ রাত ১১:১৭

শ্রাবণধারা বলেছেন: আপনি লেখাটা শুরুই করছেন মিথ্যা কথা দিয়ে, "গ্রামের বাড়িতে গেলে প্রায়ই দেখতাম কোনো হিন্দু ভিক্ষুক বাড়িতে ভিক্ষা চাইতে আসলে দূর! দূর! করে তাড়িয়ে দেয়া হতো " । আপনার হয়ত জানা নেই যে বাংলাদেশে হিন্দু ভিক্ষুকের সংখ্যা নগন্য।

এইসব চাপাবাজী বাদ দিয়ে মানুষ হন।

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২০

নাফিয়া মারিয়া বলেছেন: আমাদের ইউনিয়নের ১৭ টা গ্রামের মধ্যে ১৪টাই হিন্দু গ্রাম । তাই ভিক্ষুকও বেশিরভাগ হিন্দু ।

৪| ২৮ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৪৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: ধন্যবাদ বোন, মানুষের মনে যখন স্রস্টা সম্পর্কে প্রশ্ন আসে তখন তা স্রস্টা থেকে তার প্রতি হেদায়েতের লক্ষণ (এক ধরণের)। সময়টা খুব বিপদজনক। এসময় ইবলিশের নজর সেই বান্দার দিকে বেশী থাকে। ইবলিশ একান্তই চায় না সেই বান্দা অবশেষে আল্লাহ্‌র হেদায়েত লাভ করুক। আপনি শিক্ষিত, আপনাকে আল্লাহ্‌ ক্ষমতা দিয়েছেন জ্ঞান অর্জন করার জন্য, একই সাথে ঐ রকম পরিবারে (আপনি যেরকম উল্লেখ করেছেন) জন্মেও আপনি উচ্চ শিক্ষার পথে অগ্রসর হচ্ছেন এটা আল্লাহ্‌র নেয়ামতও বটে।

আপনি ইসলাম ধর্ম নিয়ে পড়াশোনা করেন, সব উত্তর আপনি পেয়ে যাবেন। মনে রাখবেন আল্লাহ্‌ আপনাকে যখন জ্ঞান অর্জন করার শক্তি দিয়েছেন, সেই শক্তির মর্যাদা রক্ষা করার দায়ীত্ব আপনারই। আমি আপনার সব কথার উত্তর দিতে পারতাম। কিন্তু দিব না। এ কারণে যে, আমিও আপনার মতই কস্টে ছিলাম। প্রচন্ড কস্টে। কিন্তু এখন ধীরে ধীরে মুক্তি পাচ্ছি। আমি নিজেও এই জ্ঞান অর্জনের রাস্তার পথিক। আমার হাতে অতটা সময় নেই যে, আপনার সব জিজ্ঞাসার উত্তর আমি দিতে পারব। তবে এটুকু আস্থা দিতে পারি, সঠিক পথে জ্ঞান অর্জন করুন - উত্তর পেয়ে যাবেন। আমি আপনার শেষের কিছু কথার উত্তর দিচ্ছি -

আপনি বলেছেন - "আর এখন শুনি, মানুষ যতই বেশিদূর পড়ালেখা করে, ততই ধর্মে বিশ্বাস উঠে যায় । উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে খুব কম মানুষকেই মুসলিম হিসেবে পাওয়া যায় । কথাগুলো শুনে মনে একটা প্রশ্নই জাগে, "তার মানে যুক্তির সামনে ধর্ম টিকে থাকতে পারে না, তাই নয় কি???"
বিশ্বাসটা এখন আর একটা ক্যাটাগরিতে আবদ্ধ নেই । তাই এখন ভয় হয়... প্রচন্ড ভয় হয়.... বিদ্রোহ করতে চাই, কিন্তু কষ্ট পাই... এটাই বোধহয় স্বাভাবিক । প্রকৃতির নিয়ম নাকি আল্লাহর নিয়ম জানি না ।"

পড়ালেখার সাথে ধর্মে বিশ্বাস উঠে যাওয়ার কোন সম্পর্ক নেই। বিষয়টা ঘটে তখনই যখন আপনি পড়াশুনাকে অতিরিক্ত গুরুত্ব এবং সময় দিচ্ছেন। এটা শুধু পড়াশুনা না, যে কোন কাজের বেলায়ও প্রযোজ্য। যারা ব্যবসাকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় তারা ধর্ম পালন করতে পারে না। যারা সাংসারিক কাজকে খুব বেশি গুরুত্ব দেয় তারাও পারে না। সুতরাং এটা সব ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। ধর্ম পালন করলে তবে না ধর্মের ওপর আপনার বিশ্বাস আসবে, ধর্ম পালন না করলে বিশ্বাসটা কোথা থেকে আসবে শুনি? আপনি মুসুলমান মেয়ে, সুতরাং আল্লাহ্‌র ওপর আপনার একটু হলেও বিশ্বাস আসবে, তাই বলে কি কোন হিন্দু পুরোহিত এসে আপনাকে হিন্দু ধর্মের সত্যতার জ্ঞান দিলে হিন্দু ধর্মের ওপর বিশ্বাস চলে আসবে? আসবে না। কারণ আপনি হিন্দু ধর্ম পালন করছেন না।

এবার আসি উচ্চশিক্ষিতদের মাঝে খুব কম মুসুলমান - এ প্রসঙ্গে।
হ্যা, এখনকার প্রেক্ষাপটে হয়ত কথাটা সত্য। কিন্তু ইসলামের স্বর্ণযুগের সময়কার কথাটা বিবেচনা করে দেখুন, আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন। কিন্তু তাই বলে এটাও সত্য না যে, আপনি মুসুলমান হলে উচ্চশিক্ষিত হতে পারবেন না, কিংবা উচ্চশিক্ষিত হলে আপনি আর মুসুলমান থাকবেন না। সম্পূর্ণ বিষয়টা আপনার নিজের হাতে, ঠিক না? সুতরাং আপনি মুসুলমান এবং উচ্চশিক্ষিত হতে পারবেন। এবং যেহেতু আপনি হতে পারবেন, সুতরাং কথাটা মিথ্যা।

এবার আসি - "তার মানে যুক্তির সামনে ধর্ম টিকে থাকতে পারে না, তাই নয় কি???" - এ প্রসঙ্গে।
আচ্ছা, আপনাকে যদি ১ আর ১ যোগ করতে বলা হয়, তাহলে নিশ্চয়ই পারবেন। কিন্তু ১ টা কলা আর ১টা গরু যোগ করতে বলা হয় তাহলে পারবেন? পারবেন না।

কোন যুক্তির সামনে ধর্ম টিকে থাকতে পারে না, দুই একটা উদাহরণ দিবেন কি? এ কথাটা আঁতেল শ্রেণীর কিছু বিকৃত মস্তিস্কের মানুষের উদ্ভট কথা। ধরে নিচ্ছি আপনি ডাক্তার না, সুতরাং আপনি কোন রোগীকে প্রেসক্রিপশন দিবেন না। কি, ঠিক বলেছি? কিন্তু এখন দেখা যায়, ধর্ম সম্পর্কে জানে না, ধর্ম সম্পর্কে বিন্দু মাত্র পড়াশুনা করে নি এমন মানুষরাও ধর্ম সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বলে ফেলে। এদের সাথে তর্কে যেতেও রুচিতে বাঁধে। একজন ডাক্তার হতে গেলেও আপনাকে ন্যূনতম ৪ বছর মেডিক্যালে পড়াশুনা করতে হবে। আর স্রস্টা কিংবা ধর্ম নিয়ে কথা বলতে গেলে যে জ্ঞান দরকার তা এক জীবনেও সম্ভব না। সুতরাং বিষয়টা আপনি বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়ই।

আপনি আগে জ্ঞান অর্জন শুরু করুন, তখন জানতে পারবেন আপনি কতটা কম জানেন। তখন আপনি বুঝতে পারবেন এক জীবন কতটা কম সময়। এর আগে যারা কথা বলে তারা মূর্খ ছাড়া আর কিছুই না।

আপনার জন্য দোয়া রইল।

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:৩৪

নাফিয়া মারিয়া বলেছেন: কথাগুলোর বিপক্ষে অনেক কথাই তোলা যায় । অনেক দূর গড়াবে তর্কটা, অহেতুক তর্ক । আমার বিশ্বাস যেখানটায় উঠেছে সেখানটার যুক্তি স্পষ্ট । যে বোঝার সে একবারেই বুঝবে, যে না বোঝার তাকে সারাবছর ধরে বুঝালেও বুঝতে পারবে না । তাই চুপ হয়ে যাওয়াই বরঞ্চ ভালো ।

৫| ২৮ শে মে, ২০১৬ সকাল ১০:৩৪

রায়ান মুন্সী বলেছেন: আমার এই ক্ষুদ্র জীবনে একবারের জন্যেও কমআমি কোন হিন্দু ভিক্ষুক দেখিনি! এসি রুমে বসে, স্ট্যাটাস আপডেট করলে যা হয় আর কি!

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২৮

নাফিয়া মারিয়া বলেছেন: এসি রুম জীবনে খুব কমই চোখে দেখেছি । আর জীবন থেকে অনেক কিছুই দেখেছি, শিখেছি । শুধু এতোটুকু বলবো, পোস্টের একটা ঘটনাও মিথ্যা নয় । ভেবে নেবার দায়িত্ব সামনের মানুষটার ।

৬| ২৮ শে মে, ২০১৬ দুপুর ১২:২৮

পবন সরকার বলেছেন: তার মানে যুক্তির সামনে ধর্ম টিকে থাকতে পারে না, তাই নয় কি???" কথাটা ঠিক নয় ধর্মেরও যথেষ্ট যুক্তি আছে।

২৯ শে মে, ২০১৬ রাত ১২:২৯

নাফিয়া মারিয়া বলেছেন: ধর্মের প্রধান উপাদান বিশ্বাস ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.