নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকিলিকস

আকিলিকস › বিস্তারিত পোস্টঃ

আজ ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবস’।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:৩০

ফিলিস্তিন। এই দেশটির সঙ্গে আবেগ জড়িয়ে আছে। সারাবিশ্বের মানবতাবাদী মানুষের ভালোবাসা জড়িয়ে আছে। সেই সাথে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের দোয়া জড়িয়ে আছে। আমার স্মরণ আছে, সেই ছোটবেলাতেও দেখতাম জুম্মার নামায শেষে ইমাম সাহেব উপস্থিত মুসল্লিদের নিয়ে ফিলিস্তিনের জন্য দোয়া করতেন। ফিলিস্তিনের নির্যাতিত মানুষদের জন্য দোয়া করতেন। তখন ইমাম সাহেব এবং উপস্থিত মুসল্লিদের আমীন আমীন শব্দ এবং হুহু করে কান্নার শব্দও আমার কচি মনটাকে নাড়া দিয়ে যেত।

বছর দু’য়েক আগে অপারেশন প্রটেসটিভ এজের নামে দখলদ্বার ইসরাঈলী বাহিনী আবারো ফিলিস্তিনীদের উপর গনহত্যা চালালো। তখন তাদের জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করা ছাড়া আমাদের আর করার মত কিছুই ছিল না। তখন ফিলিস্তিন দূতাবাস থেকে মোজাহিদ এবং নির্যাতিত জনগোষ্ঠির জন্য সাহায্যের আবেদন করা হয়। আমরা কয়েকজন মুরুব্বীকে সঙ্গে নিয়ে একটি টিম গঠন করি। সেই মুরুব্বীদের অধিকাংশরাই ছিলেন ৭৫ বয়সর্ধ্ব বৃদ্ধ। তাদের বিপুল উৎসাহে আমরা ফিলিস্তিনীদের জন্য টাকা সংগ্রহে নেমে পড়লাম। আলহামদুলিল্লাহ। আমরা আমাদের আশাতীত টাকা সংগ্রহ করতে পারলাম। সেই তহবিল সংগ্রহের কাজে আমার মত যুবকের যতোটা না অংশগ্রহণ ছিল তার চেয়ে ঢের বেশি কর্মতৎপরতা ও উৎসাহ ছিল সেই বয়বৃদ্ধদের। আমি দেখেছি, হাজার মাইল দূরের সেই ফিলিস্তিনী ভাই বোনদের জন্য বাংলার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষের গভীর ভালোবাসা। আমি দেখেছি সহস্রাধিক মাইল দূরের সেই ফিলিস্তিনী শিশুদের জন্য গ্রামীণ জনপদের বয়বৃদ্ধের আহজারি। এমন গভীর ভালোবাসা এবং গভীর আবেগময় ভালোবাসার মাঝে আজও পৃথিবীর বুকে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটি মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে। যে রাষ্ট্রটিকে পৃথিবীর বুক থেকে চিরতরে মুছে দেবার জন্য জয়নাবাদি চক্র গনহত্যা চালিয়ে গেছে, তারা পুরো দমে ব্যার্থ হয়েছে। সেই গৌরবময় ফিলিস্তিন রাষ্ট্রটিকে কেন্দ্র করে আজ পালিত হচ্ছে, ‘ফিলিস্তিন সংহতি দিবস’।



ফিলিস্তিন দেশটি প্যালেস্টাইন নামেও পরিচিত। সেসময় এই দেশটির লোকসংখ্যা ছিল ১০ লাখ। তার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশই ছিল মুসলিম ধর্মানুসারী। তখনকার লীগ অব নেশন্স-এর (জাতিসংঘের পূর্বের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘জাতিপুঞ্জ’) ম্যান্ডেট অনুসারে ব্রিটিশরা এ ভূখণ্ডটি শাসন করত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশরা ইহুদিদের জন্য পৃথক রাষ্ট্র গঠনের গোপন অঙ্গীকারে আবদ্ধ ছিল। বিশ্ব যুদ্ধের পরে ১৯৪৭ সালে জাতিসংঘের ফিলিস্তিন বিষয়ক বিশেষ কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতে জেরুজালেম শহরকে আন্তর্জাতিক শহরের মর্যাদা দিয়ে ‘ফিলিস্তিন’ ভূখণ্ডকে আরব ও ইহুদি অধ্যুষিত দু’টি রাষ্ট্রে বিভক্ত করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। ব্রিটিশ ও মার্কিন সমর্থনের কারণে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে ইহুদিদের জন্য “ইস্রায়েল” রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের নানা প্রান্তের ইহুদিরা নতুন রাষ্ট্রে আবাসন গড়ে তোলে। অন্যদিকে ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য আলাদা রাষ্ট্র গঠন তো দূরের কথা, তারা নিজ আদি নিবাস থেকে বিতাড়িত হতে থাকে। তখন থেকে ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে আরব ইহুদি দ্বন্দ্বের সূত্রপাত, বর্তমানে তা গুরুতর বিশ্ব সংকটের রূপ নিয়েছে।

১৯৭৭ সালে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ ২৯ নভেম্বরকে ফিলিস্তিনি জনগণের সাথে সংহতি প্রদর্শনস্বরূপ “আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিন সংহতি দিবস” হিসেবে গ্রহণ করে। এর দশ বছর পরে ১৯৮৭ সালের ২৯ নভেম্বর ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ‘ইউনাইটেড নেশনস পার্টিশন প্ল্যান ফর প্যালেস্টাইন’ প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। এরপর থেকে এ দিনটি “আন্তর্জাতিক ফিলিস্তিনি সংহতি দিবস” হিসেবে পালিত হয়ে আসছে। ২০১২ সালে প্রথম বারের মত জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে পর্যবেক্ষক রাষ্ট্রের মর্যাদা দেয়া হয়। ইস্রায়েলসহ পাশ্চাত্য শক্তির নানা ষড়যন্ত্র চক্রান্ত মোকাবিলা করে জাতিসংঘে পূর্ণ সদস্যপদ লাভের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ফিলিস্তিন। এ বছর ২০১৫ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে জাতিসংঘের সদর দপ্তরে বিশ্বের অন্যান্য দেশের পাশে ফিলিস্তিন পতাকা স্থান পেয়েছে।

নানা ঘাত প্রতিঘাত এবং সংঘাতের মধ্যদিয়ে ফিলিস্তিন নামক রাষ্ট্রটি টিকে আছে। টিকে আছে সেই দেশের স্বাধীনতাকামী হামাস সদস্যরাও। যে হামাস ফিলিস্তিনীদেরকে আবারো স্বাধীনতা স্বপ্ন দেখাচ্ছে। ফিলিস্তিনীদের তাকালে একটি দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায়। নিজের বিশ্বাস এবং আর্দর্শের প্রতি অটল থাকলে তাদের অবস্থান দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে। সেই দৃঢ়তাই একদিন তাদেরকে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে পৌছে দেয়। আমরা বিশ্বাস করি, ফিলিস্তিনীরাও একদিন তাদের কাঙ্খিত মঞ্জিলে পৌছাতে পারবে। তারা জয় করবে তাদের হারানো ভূখন্ড। মসজিদুল আল আকসা হবে মুসলিমদের অধিকৃত সম্পত্তি। এবং সেখানে ইসরাইল নামক কোন ইহুদি রাষ্ট্রের চিন্হ না থেকে শুধুই ফিলিস্তিন নামক একটি ইসলামী রাষ্ট্র মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে থাকবে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.