নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকিলিকস

আকিলিকস › বিস্তারিত পোস্টঃ

একটি সত্য ঘটনা এবং কিছু কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা কি ছাত্রলীগের হাতে জিম্মি?

০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৩১

দরজায় ঠক,ঠক আওয়াজ হচ্ছে! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১১টা। এতো রাতে আবার কে বিরক্ত করতে আসল! দরজা খুলে দিতেই হলের বড় ভাই যতটা সম্ভব গম্ভীর গলা নিয়ে বললেন, মিছিল হবে। প্যান্ট পরে নিচে আসো। দ্রুত। কেউ রুমে থাকতে পারবা না। যাকেই রুমে পাওয়া যাবে তাকেউ গেস্ট রুমে নেওয়া হবে। আর গেস্ট ‍রুম কি, জানোই তো!

ইবনুল হতাশ হয়ে ধপ করে বিছানায় বসে পড়ল। কালকে মিড টার্ম পরীক্ষা। ভ্যাটেনারি সাবজেক্টে এমনিতেই প্যারা। তার উপর এই বাধ্যতামূলক মিছিল করতে গেলে এক দেড় ঘন্টা চলে যাবে। আবার না গিয়েও তো উপায় নাই। হলে থাকতে হলে পলিটিক্স করতে হবে। সরকারি দলের পক্ষে স্লোগান দিতে হবে। তা না হলে পানিশমেন্ট তো আছেই সেই সাথে হলের রুমটা হারাবারও সমূহ সম্ভাবনা আছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন হল বানিয়েছে ছাত্রদের সুবিধার্থে। আজ সেই হলে থাকতে গিয়ে আমরা কিনা রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছি। এসব ভাবতে ভাবতে, প্যান্ট পরে হলের নিচে চলে আসল।

হলের নিচে প্রায় এক দেড়শ ছেলে পেলে। হলের বড় ভাই অর্থাৎ যিনি নেতা তিনি রাশভারি মুখ করে উঁচু একটি জায়গায় দাড়িয়ে আছেন। তিনি এইবার বক্তব্য দিবেন। নেতাজি বললেন, আমাদেরকে আজ মহড়া দিতে হবে। এন্ট্রি টিমকে সমুচিত জবাব দেবার জন্য প্রস্তূতি স্বরূপ আমরা মহড়া দিব। এই মহড়া খালি হাতে হবে না। সবার হাতে মাল (দেশীয় অস্ত্র) থাকবে। নেতার ঘোষনানুযায়ী প্রায় সবার হাতেই একটি ঘরে দেশীয় অস্ত্র অথবা মাল দেওয়া হল। ইবনুলের হাতেও একটি মাল দেওয়া হল। ইবনুল তার পাশের জনকে নিজের হাতের মালটি দেখিয়ে বলল, এইটার কি নাম? সে বিরাট আনন্দের সহিত বলল, রামদা! বেকুব! এইটাও চিনিস না।

এরপর মিছিল শুরু হল। অমুকের চামড়া তুলে নিবো আমরা। অমুক তমুকরে ধরো ধইরা ধইরা সাইজ কর। একশন একশন ডাইরেক্ট একশন। এরূপ না স্লোগানে ইবনুলদের মিছিলটি এগিয়ে যেতে থাকে। ইবনুল নিজের হাতের মালটির দিকে তাকিয়ে ভাবে হায় কি কপাল আমার! আম্মা একদিন হাতে কোঁদাল দিয়ে বললেন, যাও তো বাবা! তোমার আব্বা একাই মাঠে কাজ করতেছে। তুমিও একটু কাজ করলে তোমার আব্বার কষ্টটা কিছুটা হলেও কম হবে। কিন্তু আব্বা আমার হাতে কোঁদাল দেখে সেকি রাগ! সঙ্গে সঙ্গে আমার হাঁত থেকে কোঁদালটিকে কেড়ে নিলেন। আর বললেন, কোঁদাল তোমার হাতে কে দিল? কোঁদাল হাতে নেবার দরকার নাই। যাও গিয়ে পড়াশুনা কর। সেই আমারই হাতে কিনা ‘রামদা’। মানুষকে কোঁপানোর জন্য ‘রামদা’। হায়! এতো পড়াশুনা করে ভর্তিযুদ্ধ পেরিয়ে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আজ কসাইদের মত চামড়া ছেলার স্লোগান দিচ্ছি।

কথাগুলো সে তার রুমমেট প্লাস বন্ধুকেও বলল। দেখলি, বাড়িতে থাকতে জীবনে হাতে কোঁদালও তুলি নি। আজ কিনা হাতে রামদা নিতে হল। বন্ধুটি হেসে বলল, কি করবি বল! হলে থাকতে হলে তো এসব করতেই হবে। তা না হলে তিন চার হাজার টাকা দিয়ে ম্যাস ভাড়া নিয়ে থাকতে হবে। কিন্তু তা কি সম্ভব?

এই সম্ভব আর অসম্ভবের দোদুল্যমান খেলায় কেটে যায় অনেক সময়। কালের পরিক্রমায় ইবনুল আজ হলের সিনিয়র নেতা। ইবনুলকে বেছে নিতে হয়েছে রাজনীতির পথ। বিশ্ববিদ্যালয়ে বীরদর্পে প্রতাপের সাথে থাকতে হলে রাজনীতিতে সক্রিয় হতে হবে। সেই সক্রিয় হতে গিয়েই গ্রামের সহজ সরল সেই ইবনুল আজ অচেনা ইবনুল। তার হাতে এখন সবসময় জলন্ত গোল্ডলিফ লাইট সিগারেট থাকে। সিগারেট ছাড়া সে এক মূহুর্তও থাকতে পারে না। আর সাথে তো আছে বিচি (ইয়াবা) আর শুকনা (গাজা)। এসবের উপর ইবনুলের জীবন গড়াগড়ি খাচ্ছে। বাবা মায়ের নাম রৌশন করতে এবং নিজের উজ্জল ভবিষ্যৎের স্বপ্ন নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা ইবনুল এখন একজন পেশাদার রাজনীতিবিদ। সে পড়াশুনার ধার ধারে না। কতগুলো সেমিষ্টারে তার গ্যাপ পড়েছে এখন তার নিজেরই স্মরন নেই। এভাবেই ইবনুলরা আজ হারিয়ে যাচ্ছে।

এই ইবনুলদের সংখ্যা নিতান্তই কম নয়। হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার এক পরিচিত মানুষকে দেখে এলাম। তারই জীবনের গল্পটিকে ইবনুলের আদলে তুলে ধরলাম। এই ইবনুলকে আমরা বলতাম নাদান। সারাদিন পড়াশুনা করত ঘর থেকে বের হতো না। মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে ক্রিকেট খেলতে আসতো। তখনই একটু আধটুকু কথা হত। সেই নাদান ইবনুল এখন ছাত্রলীগের বিশাল নেতা সেই সাথে সে এখন বিরাট পরিমাপের নেশাখোর।

ছাত্র রাজনীতি নাকি আমাদেরকে পথ দেখাবে। জাতিকে মুক্তির পথ দেখাবে। কিন্তু ছাত্র রাজনীতির নেতারা আজ ইয়াবা নামক ট্যাবলেটের কাছে জিম্মি রয়েছে। এই ছাত্র নেতারা ফেন্সিডিল নামক কফের সিরাপের মাঝে বুদ হয়ে রয়েছে। যে নেতা কফের সিরাপ খেয়ে মাতাল হয়ে থাকে সেই নেতা আমাদেরকে কি পথ দেখাবে? যারা সামান্য ইয়াবার কাছে জিম্মি হয়ে থাকে তারা জাতিকে কোন পথ দেখাবে? এই লেজুড় মার্কা ছাত্ররাজনীতির শেষ কোথায়? আর যদি লেজুড় বৃত্তি থেকে বের হতে নাই পারেন তবে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করে দিন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২

ঘূণে পোকা বলেছেন: ভাইজান যারা রাজনীতি করে সবাই কি নেশা করে ???? এভাবে ঢালাও ভাবে বলাটা কি উচিৎ ????

২| ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১১:২৭

বিচার মানি তালগাছ আমার বলেছেন: ছাত্ররাজনীতির জন্য একমাত্র দায়ী উপাচার্যগুলো। এরা এক জোট হলেই তো ক্যাম্পাস থেকে ছাত্র রাজনীতি বিদায় নিতে পারে। কিন্তু না এরা এটা নিয়ে কোনদিন বলবেনা চাকুরি চলে যাওয়ার ভয়ে...

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.