নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আকিলিকস

আকিলিকস › বিস্তারিত পোস্টঃ

মধ্যযুগীয় যুগটাই আজকের একবিংশ শতাব্দির চেয়ে বেশি সভ্য ছিল।

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ বিকাল ৪:১৯

জোসেফ কনি। ২০১২ সালে জোসেফ কনি নামটি বেশ মিডিয়ার মাধ্যমে সারাবিশ্বে পরিচিতি লাভ করে। যদিও এই পরিচিতির প্রাককালে ইউটিউবের একটি ভিডিওর মাধ্যমে এই জোসেফ কনিকে বিশ্বের বুকে পরিচিত করা হয়। ভিডিওটি তিন সপ্তাহে দেখা হয়েছে ৮৪ মিলিয়ন বার, পেয়েছে ১.৩ মিলিয়ন লাইক। আর শেয়ার হয়েছে অগনিত। কে এই জোসেফ কনি?

জোসেফ কনিকে মার্কিন এবং ইউরোপীয়রা পরিচয় করিয়েছে একজন সন্ত্রাসী হিসাবে। সে তরুন ছেলে মেয়েদের ব্রেন ওয়াশ করে হত্যায় উদ্বুদ্ধ করে। এমনভাবে ব্রেন ওয়াশ করে যে, ছেলে মেয়েরা তাদের জন্মদাতা পিতা মাতাকে হত্যা করে। এইভাবে জোসেফ কনি প্রায় ২৪০০ হত্যাকান্ডের ঘটনা ঘটিয়েছে। তাই সেই সময় পশ্চিমা মিডিয়ারা এই জোসেফ কনিকে ধরিয়ে দিতে প্রচারনা চালিয়ে দিনরাত সব এক করে ফেলে। সেসময় একটি পোষ্টার দেখেছিলাম। সেই পোষ্টারে এডলফ হিটলার এবং জোসেফ কনির পাশাপাশি আলকায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেনেরও ছবি ছিল। সেখানে বিন লাদেনের ছবি দেবার যৌক্তিক কারণ কি ছিল তা আজও আমার বোধগম্য নয়। ২০০১ সালের টুইনটাওয়ার হামলার জন্য বিন লাদেনকে দায়ী করা হলেও ঘটনার ১৫ বছর পরও যুক্তরাষ্ট্র কোন প্রমান দেখাতে পারেনি। প্রমাণ ছাড়াই বিন লাদেন হয়ে গেলেন বিন জোসেফের মত ভয়ানক কিলার। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়ারা কখনো কিন্তু বলেনি, জোসেফ কনি কি করে ব্রেন ওয়াশ করে! সে কিভাবে শিক্ষিত তরুনদের ব্রেন ওয়াশ করে তাদের আপন পিতা মাতাকে হত্যায় উদ্বুদ্ধ করছে। ছোটছোট বাচ্চাদের গুম করে ফেলছে। আর তরুনীদের যৌনদাসীতে রূপান্তরিত করছে। সেই আলোচনা কিন্তু আজনও পশ্চিমা মিডিয়ারা প্রকাশ করে নি।

জোসেফ কনি একজন গোড়া খৃষ্টান। সেকারণেই হয়তো পশ্চিমা মিডিয়ারা তার ধর্মীয় পরিচয় এবং ব্রেন ওয়াশের মাধ্যমটি প্রকাশ করেননি। জোসেফ কনি নিজেকে ‘হলি স্পিরিট’ সোজা বাংলায় নবী দাবি করেন। তার দলের নাম ‘লর্ড রেসিসট্যান্স আর্মি’। একজন গোড়া খৃষ্টান ছোট ছোট বাচ্চাদের গায়েব করে দিচ্ছে, তরুনদের আপন পিতামাতাকে হত্যা করতে উদ্বুদ্ধ করছে আর তরুনীদের ধরে ধরে যৌনদাসীতে রূপান্তরিত করছে এসব প্রকাশ করতে পশ্চিমা মিডিয়ার গায়ে লাগারই কথা। তখন বলা হয়, সন্ত্রাসীদের কোন ধর্ম থাকে না। কিন্তু সব ইসলাম সন্ত্রাসের ধর্ম! মূল পার্থক্যটা এখানেই। বিধ্বংসী বোমার ধোঁয়া তুলে ইরাকে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করলেও সেটাকে অন্যায় কিংবা সন্ত্রাসী হামলা বলা হয় না। কিন্তু সেই হামলাকে প্রতিহত করলেই সে হয়ে যায়, ইসলামীক সন্ত্রাসী। সে হয়ে যায় জঙ্গি। সভ্য মানুষরা এই জায়গাতে কেমন জানি অসভ্যতার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন।

পাশ্ববর্তি রাষ্ট্র মিয়ানমার অথবা বার্মা যে নামেই চিনুন না কেন, সেখানে কি হচ্ছে একটু হলেও আপনার জানার কথা। ক্রমাগত রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করা হচ্ছে। যেমন গতদিন বিবিসিতে রিপোর্ট পড়লাম, সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার দায়ে এক রোহিঙ্গা মুসলিমের গলাকাটা লাশ পাওয়া গেছে।



এই গলাকাটার কাজটি করছে, ‘জীবহত্যা মহাপাপ’ আদর্শে বিশ্বাসী বৌদ্ধধর্মালম্বীরা। এই জীবহত্যা মহাপাপ এমন বিশ্বাস কিন্তু কতক নাস্তিককেও বিশ্বাস করতে দেখি। কুরবানীর ঈদ এলেই এদের জীবপ্রেম উতলে ওটে। কিন্তু আজ মিয়ানমানের নির্যাতিত মানুষদের প্রতি তাদের সামান্যতমও প্রেম প্রত্যক্ষ করা যায় না। যে প্রেম মুশফিকুর রহীমের ফেসবুক ওয়ালে কুরবানীর ছবিকে স্থায়ী হতে দেয় না সেই প্রেম নাফ নদীতে লাশের মিছিল দেখেও উদ্বেলিত হয় না। এরাই নাকি আবার মানবতাবাদে বিশ্বাস করে। সবখানেই বুঝ দেবার প্রচেষ্ঠা।

মানবতা নাকি ছাই। যার গরুর রক্ত দেখে হৃদয়ে রক্তক্ষরন হয় তার নাফ নদীতে রোহিঙ্গা মানুষদের রক্ত দেখে চোখে সামান্য পানিও আসে না। একেই বলে জার্মানীর টাকায় জীবপ্রেম। রোহিঙ্গাদের হত্যায় উদ্বুদ্ধ করতে প্রতিদিন বৌদ্ধভিক্ষুরা গ্রামে গ্রামে পূজার আয়োজন করছে। সেই আয়োজনে তারা এই রোহিঙ্গা মুসলিমদের হত্যা করতে আহব্বান এবং উৎসাহ প্রদান করছে। কিন্তু সেই নরপিশাচদের বিশ্বমিডিয়া বৌদ্ধসন্ত্রাসী কিংবা জঙ্গি বলবে না। যা কিছু ঘটবে সব ইসলাম আর মুসলিমের দোষ। মুসলিম ব্যতিত আর যে ব্যক্তিই কিছু করুক না কেন, সেখানে ধর্ম উঠে আসে না। যেমন জোসেফ কনি এবং ইরাক আফগানিস্তানে আগ্রাসন চালানো লাল ফৌজ ও ন্যাটোর সেনা সদস্যরা। আর্মির পোশাক পরে হাজার তরুনীকে ধর্ষণ করেও তাদের ধর্মীয় চেতনাটিকে মিডিয়া প্রত্যক্ষ করে না। কিন্তু এই ধর্ষনের প্রতিবাদ করে মুসলিমরা আন্দোলন করলেই তা হয়ে যায় সন্ত্রাসী হামলা কিংবা জঙ্গি হামলা।

এতোসব বকবক করে কি লাভ! লাভ ক্ষতির হিসাব করে জীব প্রেম পশু প্রেম এবং মানবতা প্রেম জেগে ওঠে। কিন্তু মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গা মুসলিমদের প্রতি আমাদের মানবিকতা জেগে ওঠে না। এই একবিংশ শতাব্দিকালে এসে মনে হচ্ছে, বইয়ের পৃষ্ঠায় বোল্ড করে লেখা ‘মধ্যযুগীয় যুগ’ আমাদের চেয়ে বেশি সভ্য ছিল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.